Wednesday, February 17, 2021

সাইরাস দি গ্রেট

 পার্সিদের কাছে তিনি পিতা এবং ব্যাবিলনীয়দের কাছে মুক্তিদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে শাসনব্যবস্থা, সমাজ সংস্কার, মানবাধিকার, রাজনীতি ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তিনি যে প্রভাব রেখে গিয়েছেন তা পৃথিবীর অন্য কেউ পারেনি। বর্তমান ইরানের জাতিসত্তার ভিত্তি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি একমাত্র অ-ইহুদি ব্যক্তিত্ব, যাকে বাইবেলে মেসিয়াহ বা স্রষ্টার প্রতিশ্রুত প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম ধর্মালম্বীদের কেউ কেউ তাঁকে কোরআন শরীফে বর্ণিত যুল কারনাইন বলে দাবি করে থাকে। তার গুণে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং #আলেকজান্ডার দি গ্রেট, যিনি নিজের উপরে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে স্থান দিয়েছেন। তিনি পারস্যের আকিমেনিড সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (যেটি ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া হয়ে ভারত উপমহাদেশের সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল)। তিনি শুধু একজন যুদ্ধজয়ী বীর ছিলেন না, বরং একজন দক্ষ মহান শাসক হিসেবে স্বীকৃত। কোন রাজ্য বিজয়ের পর সেখানকার প্রজাদের তিনি তাদের নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুসরণে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। প্রজাদের তিনি সন্তানের মতো স্নেহপূর্ণ আচরণ করতেন, যার কারণে তাদের কাছে তিনি পিতা হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। ব্যবিলন জয় করে সেখানে আটক ইহুদিদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি প্রজাদের প্রতি যে আচরণ করতেন সেটিই ইতিহাসে মানবাধিকারের প্রথম পাঠ হিসেবে United Nations কর্তৃক স্বীকৃত। 

বিশাল সাম্রাজ্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে তিনি রাজ্য বিভক্তির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র প্রণয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তিনিই সর্বপ্রথম পোষ্টাল সার্ভিস প্রবর্তন করেছিলেন। বিজ্ঞান ও স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। #পাসারগেদে নামে পরিকল্পিত রাজধানী গড়ে তুলেছেন, যেটি এখন ইরানে মানবসভ্যতার ঐতিহ্য হিসেবে UNESCO কর্তৃক সংরক্ষিত।

#সাইরাস দি গ্রেট এর জন্মতারিখ ও ধর্ম পরিচয় জানা যায় নি। তিনি পার্সীয়ান সাম্রাজ্যের আনসানে খৃষ্টপূর্ব  ৬০০ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হয়। খৃষ্টপূর্ব ৫৫৯ থেকে ৫৩০ সাল পর্যন্ত তিনি আকিমেনিড সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


Wednesday, February 10, 2021

ইকথায়োসিস: জানুন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন

ইকথায়োসিস ত্বকের একটি রোগ। এ রোগে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ, ফাটা আঁশের মতো হয়ে থাকে। গ্রীক শব্দ ‘ইকথাইস’ মানে মাছ। যদিও সবক্ষেত্রে আক্রান্ত ত্বক মাছের আঁশের মতো নাও হতে পারে।

প্রায় ২৫ ধরনের ‘ইকথায়োসিস’  থাকলেও, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘ইকথায়ওসিস ভালগারিস’ নামে জন্মগত রোগ হিসেবে এটি প্রকাশ পায়। জন্মের পর প্রথম বছরেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। জন্মগত ত্রুটি ছাড়াও পরবর্তীতে অনেকে এ আক্রান্ত হতে পারেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বর্ণের ও সব বয়সীরাই এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

সাধারণত প্রতি ৩০০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ত্বক ছাড়াও  এ রোগের লক্ষণ চোখেও দেখা দিতে পারে। শীত ও শুষ্ক মৌসুমে এই রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। ইকথায়োসিস কোনো মারাত্মক জীবনহানিকর জটিল রোগ নয়। সংক্রামক নয় বলে এই রোগ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।

কিভাবে হয়?

আমাদের ত্বকের কোষগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। পুরাতন কোষ ঝরে গিয়ে সেখানে নতুন কোষ জায়গা করে নেয়। কোনো কারণে পুরাতন কোষ ঝরে পড়ার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে কিংবা খুব দ্রুত নতুন কোষ তৈরি হতে থাকলে এ রোগ দেখা দিয়ে থাকে।

লক্ষণ কি?

এই রোগে সামান্য শুষ্কতা থেকে ত্বক ফেটে যাওয়া, ফোস্কা পরার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ, আঁশের মতো হয়ে থাকে। প্রায় সমস্ত শরীরের ত্বকে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। আঁশের রঙ সাদা থেকে গাড় বাদামি হতে পারে। চুলকানি অনুভূত হতে পারে।

চিকিৎসা

এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায় না। তবে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।

* যাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ শুধু শুষ্ক ত্বক তারা বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজারিং লোশান ক্রিম বা গোসলে মেডিকেটেড ওয়েল ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় মেডিকেটেড সাবান ব্যবহার করতে হবে।

* কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে তা সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।ত্বকে ব্যবহারের বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি অনেক সময় মুখে খাবার ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।

* আক্রাক্ত রোগীকে সচেতন ও রোগটি সম্পর্কে জানানো দেওয়া এই রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

জটিলতা

* ত্বকের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে বিধায় এ রোগে আক্রান্তদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

* ত্বক ফেটে যাওয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপনে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।

* ত্বকে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে পারে।


* চোখ আক্তান্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে।


মনে রাখবেন অন্যান্য জন্মগত জটিল রোগের লক্ষণ  হিসেবে বা একই সঙ্গে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া সোরাইয়াসিস, একজিমা ইত্যাদি রোগেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি, যা রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনে সাহায্য করবে।


Saturday, December 12, 2020

প্রতিদিন গোসল করা কি প্রয়োজন?

 শীতের দিনে গোসল করা নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠায় থাকেন, বিশেষ করে গরম পানির ব্যবস্থা না থাকলে। গোসলে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ময়লা দুর হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রতিদিন গোসল করা কি জরুরি? আসলে প্রতিদিন গোসল করা একটি সামাজিক রীতি এবং কিছুটা ব্যক্তিগত অভ্যাসও বটে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন গোসলের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয় জেনে নেই।


কতবার গোসল প্রয়োজন?

প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও সপ্তাহে ঠিক কতবার গোসলের প্রয়োজন এই বিষয়ে নানা মত রয়েছে। ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন কিংবা ১/২/৩ দিন পরপর গোসল করা যেতে পারে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা ১/২ দিন পরপর আর যাদের  ত্বক শুস্ক তারা সপ্তাহে ১/২ দিন গোসল করতে পারেন। তবে যাদের ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম তৈরী হয়, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করেন কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে কাজ করেন তাদের প্রতিদিনই গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন না থাকলেও হাত এবং মুখ পরিস্কার ও যত্ন নিতে হবে অবশ্যই।

প্রতিদিন গোসলের ক্ষতি কি?

আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয় যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও ত্বকের বাইরে স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু বাস করে যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভুমিকা রাখে। গোসলের সময় ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং এসব জীবাণু পরিস্কার হয়ে যায়, যা ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসখসে রুপ নিতে পারে, যে কারণে চুলকানি অনুভূতি হতে পারে। ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রামক রোগও হতে পারে।


কিভাবে গোসল করবেন?

• কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে দ্রুত গোসল সেরে ফেলুন।

• গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় এবং তেলযুক্ত সাবান ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন শরিরের সব স্থানে এবং প্রতিবার গোসলেই সাবানের প্রয়োজনীয়তা নেই। হাত, মুখ, বগল,এবং উরু এলাকায় সাবান ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

• গোসলের সময় বেশি জোরে ত্বক ঘষাঘষি করবেন না। নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করেতে পারেন।

• গোসল না করলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে পারেন।

• গোসলের পর নিজের পছন্দমত বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।


মনে রাখবেন শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকে তাই প্রতিদিন গোসল নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোন‌ কারন নেই, বরং প্রতিদিন গোসল না করাই স্বাস্থ্যকর। তবে এজন্য ধুলা-বালি এবং স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি একবারে গোসল না করলেও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে।  প্রতিদিন গোসল না করলে হাত, পা এবং মুখ নিয়মিত পরিস্কার এবং যত্ন নিতে হবে অবশ্যই। তাই আপনার ত্বকের ধরন এবং পেশার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে গোসলের রুটিন ঠিক করে নিন। ত্বকের ধরন নির্ণয় করতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।



লেখক

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 22, 2020

শীতকালে ত্বকের যত্ন

ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজেই সুস্থ ও সুন্দর ত্বক সুস্থ শরীরের জন্য অপরিহার্য একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এজন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে।

ত্বকে অবস্থিত গ্রন্থির নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুস্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস এবং অ্যালার্জি জনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদেরও এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম প্রতিপালন করে শীতে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।


গোসল

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুস্ক হয়ে যায়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বাথ, সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার

একজিমা, সরিয়াসিস,ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করা উচিত। ময়েসচারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তার পাশাপাশি  ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। ক্রিম, লোশান, জেল এমনকি সাবান হিসেবেও এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

পোশাক

টাইট ফিট এবং সিনথেটিক/কৃত্রিম তন্তুর পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারন হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিনেন, নাইলন ইত্যাদির পরিবর্তে কটন, সিল্কের তৈরি পোশাক পরিধান করুন।

হিউমিডিফায়ার

কক্ষে জলীয় বাস্প ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যাবহার করতে পারেন। এটির মাধ্যমে রুমের জলীয় বাস্প ৪০-৬০% এ রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

মনে রাখবেন একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন শীতকালে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস এবং পরজীবিজনিত ত্বকের সংক্রামণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কাজেই শীতে তকের যত্ন নিন। সর্বোপরি খোলামেলা আলোকিত পরিবেশে দুঃশ্চিন্তামুক্ত, পরিস্কার-পরিছন্ন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন।

লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 8, 2020

শ্বেতি ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক রোগ নয়


শ্বেতী নামে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত ত্বকের রোগটি চিকিৎসা পরিভাষায় ভিটিলোগো (vitiligo) বলা হয়ে থাকে। এটি ত্বকের বিবর্ণজনিত একটি রোগ, যা ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক নয় তবে সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে থাকে অবশ্যই। সাধারণত যাদের গাঢ় বা শ্যামলা বর্ণের ত্বক তাদের মধ্যেই শ্বেতী বেশি দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সকলেই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের যে কোন স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে। এমন কি চোখের ভ্রুসহ সমস্ত শরীর বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এই রোগে আক্রান্তের হার  ১-২ শতাংশ। তবে এশিয়ান ও আফ্রিকানদের মধ্যে এটির প্রাদুর্ভাব বেশি। 
ঝুঁকিপূর্ণ রোগ না হলেও সৌন্দর্য হানি এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণে আক্রান্তরা মানসিক হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। আক্রান্তদের অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার শ্বেতি আর কুষ্ঠ (leprosy) একই রোগ বলে ভুল ধারনা পোষণ করেন। কুষ্ঠ একটি জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ কিন্তু শ্বেতি তা নয়। 
 
কিভাবে বুঝবেন 
এ রোগে ত্বকের এক বা একাধিক স্থানে রং হালকা থেকে দুগ্ধসাদা হয়ে যেতে পারে। রং পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ অন্যকোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে হালকা চুলকানি অনুভূত হতে পারে। এটি খুব ধীরগতিতে বিস্তার লাভ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটতে পারে। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত মুখ, কনুই, হাঁটু, হাত, পা এবং কোমরে বেশি দেখা যায়।
 
কিভাবে শ্বেতি হয় 
ত্বকে মেলানিন (melanin) নামে এক ধরনের পিগমেন্ট/রঞ্জক থাকে, যার কারণে রং গাঢ় বা ফর্সা হয়। যাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তারা কালো এবং যাদের কম তারা ফর্সা হয়ে থাকেন।
 সারা শরীরে একই অনুপাত বা ঘনত্বে মেলানিন থাকে যা, ত্বকের বর্ণ হিসেবে প্রকাশ পায়। মেলানোসাইট নামে একধরনের কোষ মেলানিন উৎপাদন করে থাকে।কোনো কারণে মেলানিন নষ্ট বা তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটলে নির্দিষ্ট স্থানে বিবর্ণ হতে থাকে। শ্বেতি আক্রান্ত স্থানে ত্বকের অন্য স্বাভাবিক স্থানের চেয়ে মেলানিন কম বা থাকে না।
 
কি কারণে হয় 
শ্বেতির নিশ্চিত কোনো কারণ অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে প্রধান দুটি কারণ হলো বংশগত (১০-১৫%) এবং শরীরে এক ধরনের স্ব-প্রণোদিত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় স্থানভেদে মেলানিন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও আরো কিছু কারণে শ্বেতি হতে পারে,
 √রোগ : থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, ডায়াবেটিস এবং বিশেষ ধরনের রক্ত শূন্যতা।
 √পুষ্টিজনিত ঘাটতি যা কোনো রোগ অথবা খাদ্যজনিত কারণে হতে পারে।
 √ত্বকে সংক্রমণ বা আঘাতজনিত
 √অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও রোদ্রতাপ
 √কিছু ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ।
 
কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
শ্বেতির প্রকৃত কারন না জানার কারণে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি।
 জটিলতা : সাধারণভাবে এটি কোনো জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোদে পুড়িয়ে যাওয়া বা সান বার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের সামান্য ঝুঁকি রয়েছে।
 
চিকিৎসা
এ রোগের কোন নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নির্ণিত হয়নি। চিকিৎসার মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বেতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। নানা উপায়ে শ্বেতির চিকিৎসা করা হলেও ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। শ্বেতির চিকিৎসা সাধারণত যেভাবে করা যায়, সেগুলো হলো,
 
√খাবার ঔষধ এবং ত্বকে ব্যবহার করার ঔষধের মাধ্যমে;
 √আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি এবং লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে ;
 -√শ্বেতির সম্ভাব্য কারণসমূহ নির্ণয় করে সেটির চিকিৎসা। যেমন পুষ্টিজনিত ঘাটতি বা থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা।
 √সার্জারির মাধ্যমে মেলানিন উৎপাদন কারী কোষ মেলানোসাইট গ্রাফট বা সম্পূর্ণ স্কিন গ্রাফট।
 
মনে রাখবেন কুষ্ঠ এবং ত্বকের আরো কিছু রোগে ত্বক বিবর্ণ হতে পারে। ত্বকের কোনো স্থান বিবর্ণ বা সাদা হয়ে গেলে তা শ্বেতি বা অন্য কারণে হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শ্বেতির লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। চিকিৎসায় ভালো না হলেও ত্বকের রঙের ক্রিম/জেল/লোশান ব্যবহার করেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। এগুলো ৩-৭দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।
কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে শ্বেতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি কোনো ছোঁয়াচে  বা মারাত্মক রোগ নয়। শ্বেতি রোগে আক্রান্তের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করুন এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন-যাপনে উৎসাহিত করুন।

Sunday, October 25, 2020

চুল পড়া রোধে পিআরপি থেরাপি

চুল ঝরে যাওয়া এবং টাক নিয়ে আধুনিক মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, যা ব্যক্তি বিশেষে আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে থাকে। অদ্যাবধি টাক মাথায় চুল গজানোর কোন আশাব্যাঞ্জক চিকিৎসা আবিষ্কার না হলেও (হেয়ার গ্রাফ্টিং বাদে), ব্যয়বহুল অপচিকিৎসার শিকারে পরিনত হয়ে থাকে অনেকেই। 

চুলের বাইরের অংশ ত্বকের নিচে থাকা গোঁড়া থেকে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে জীবনচক্র শেষে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে চুলের বাইরের অংশ ঝরে যায়, তবে গোড়া থেকে যায় যা থেকে আবার নুতন চুল গজায়। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৫০-১০০টি চুল পড়ে যায়। অনেকসময় একসাথে গজানো অনেক চুল একসাথে ঝরে যেতে পারে, যেটি নিয়ে অনেকে উৎকণ্ঠায় ভূগে থাকেন। আবার কিছু রোগ এবং বংশজনিত কারণেও চুল পড়ে থাকে। পুরুষ মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের মাথার দুই পাশের চুল হালকা হতে থাকে যা পুরো মাথায় বিস্তৃত হয়ে টাকে পরিনত হয়। এটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যেক্ষেত্রে গোঁড়া সহ চুলের বিলুপ্তি ঘটে।

কোন কারণে ত্বকের নিচে থাকা গোঁড়া নষ্ট হয়ে চুল পড়ে গেলে তা আর গজানোর কোন সম্ভবনা থাকে না। কোন কারনে চুলের বাহিরের অংশ ঝরে পড়লেও গোঁড়া অটুট থাকে, যা থেকে পরবর্তীতে স্বাভাবিক চুল গজিয়ে থাকে। যদি গোঁড়া অক্ষত থাকে তাহলে কিছু চিকিৎসা চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। তারই একটি #পিআরপি চিকিৎসা।

পিআরপি অর্থ প্লাজমা রিচ প্রোটিন থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর দেহের রক্ত আহরণ করে তা থেকে কিছু উপাদান যন্ত্রের মাধ্যমে আলাদা করে প্লাজমা সমৃদ্ধ করা হয়ে থাকে। তারপর এই প্লাজমা সমৃদ্ধ রক্তের অংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে পড়ে যাওয়া চুলের গোঁড়ায় প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সাধারনত প্রথম তিন মাস প্রতিমাসে একবার এই চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তারপর প্রতি চার মাস অন্তর এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়। চুল গজানোর উপর ভিত্তি করে কতদিন চিকিৎসা প্রদান করা হবে তা চিকিৎসক নির্ধারণ করে থাকেন।

মনে রাখবেন চুলের গোঁড়া সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে এই চিকিৎসা কোন উপকারে আসবে না। তবে চুল ঝরতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন, যিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত দিবেন। চিকিৎসা নেয়ার আগে চুল গজানোর সম্ভাবনা এবং সম্ভাব্য খরচ সমন্ধে জেনে নেয়া উচিত।

Tuesday, September 22, 2020

চুল গজাতে বায়োটিনের অপব্যবহার

 ইদানিং


অনেকে চুল পড়ে যাওয়া রোধ করতে বা চুল গজাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা দামি #বায়োটিন ঔষধ হিসেবে খাচ্ছেন। কিছু চিকিৎসক রোগীদের বায়োটিন গ্রহনে উৎসাহিত করছেন বলেও প্রতীয়মান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বায়োটিন চুল গজাতে কাজ করে কি, কিংবা বাড়তি বায়োটিন আদৌ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা। সাধারণত অপুষ্টিতে না ভুগলে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে বায়োটিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।

*বায়োটিন কি

বায়োটিন ভিটামিন বি গোত্রের একটি ভিটামিন, যা ভিটামিন এইচ নামেও পরিচিত। এটি শরীরে তৈরি হয় না, কাজেই দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমেই চাহিদা পুরন করতে হয়। আবার বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলেও এটি শরিরে জমে থাকে না, বরং সমস্যা তৈরি করতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০-১০০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন প্রয়োজন হয়, যা দৈনন্দিন খাবার থেকে মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বায়োটিনের ঘাটতি ছাড়াও চুল পড়ার আরো অনেক কারণ রয়েছে। ঘাটতি নিশ্চিত না হয়ে ঢালাওভাবে বায়োটিন গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।


*বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার: 

যে কোন ধরনের ডাল, সয়াবিন, চাল,গম, ভুট্টা, বাদাম, ফুলকপি, ডিমের কুসুম, কলিজা, কলা, মাশরুম, চিনা/কাজু বাদামে যথেষ্ট পরিমাণ বায়োটিন থাকে। 

দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাদ্যের যে কোন একটি থাকলেও বায়োটিন ঘাটতির সম্ভাবনা নেই।


*কি কাজ করে

চুল, ত্বক, এবং নখের গঠনে বায়োটিনের ভুমিকা রয়েছে। এ ছাড়াও বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো, প্রদাহ বা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরল কমানো বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে এটি।

*অভাবে কি ঘটে?

বায়োটিনের অভাব ঘটলে ত্বক খসখসে বা লাল হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়া ত্বরান্বিত করে। তবে বায়োটিন চুল গজিয়ে উঠতে কাজ করে কিনা এই বিষয়ে অদ্যাবধি কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ বা গবেষণা নেই। 


*করণীয়

দৈনন্দিন খাবার তালিকায় বায়োটিন সমৃদ্ধ খাদ্য রাখুন।

শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োটিন ঔষধ হিসেবে গ্রহন করতে পারেন।


লেখক

এম আর করিম রেজা

ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ


দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...