Sunday, June 4, 2023

প্লাষ্টিক দূষণ ও জনস্বাস্থ্য


 প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এই বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'প্লাষ্টিক দূষণ দুর করো'। 

প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। নমনীয় ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বত্র এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাষ্টিক দূষণ।

বর্তমান পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্লাষ্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাষ্টিকের তৈরি। ব্যবহত প্লাষ্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাষ্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহত প্লাষ্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ে। তবে চিন সহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের ৫১% প্লাষ্টিক দূষণকারী। প্লাষ্টিক দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য (বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস ইত্যাদি) মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে নিঃসরণ করে।

ন্যানো এবং মাইক্রো কণা হিসেবে এসব ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্য চক্র ও পানির মাধ্যমে প্রাণীকুলের দেহে প্রবেশ করছে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাষ্টিক কণায় থাকা এসব পদার্থ যে কোন জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বিরুপ পরিবর্তন ঘটাতে পারে। 

প্লাষ্টিক বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণায় থাকা ক্ষতিকর পদার্থ মানুবদেহে বিরাজমান হরমোনজনিত পরিবেশ পরিবর্তন করে শুক্রানু ও ডিম্বানু তৈরি ব্যাহত করতে পারে। স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হতে পারে। কোষের জীনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সহ আরো নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও প্লাষ্টিক পণ্যের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকের রোগ হতে পারে।

প্লাষ্টিকের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। প্লাষ্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করে দূষন নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ সেজন্যই যৌক্তিক নয়। বহুল ব্যবহৃত প্লাষ্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। পলিথিনের পরিবর্তে কাগজ, পাট বা প্রাকৃতিক তন্তের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে পলিথিনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। তবে পলিথিন ও অন্যান্য প্লাষ্টিক দ্রব্য সহ সকল ধরনের বর্জ্যের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্লাষ্টিক দূষণ। আন্তর্জাতিক ভাবে ইতিমধ্যেই গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।

Monday, March 6, 2023

ছোঁয়াচে রোগ জলবসন্ত


শীতের শেষে বসন্তের আগমনে বাংলাদেশে জল ও গুটি, দুটি বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত একসময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জীবনহানিকর মারাত্মক গুটি বসন্ত চার দশক আগে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছে। তবে জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়েছে। বসন্ত ঋতু ছাড়া অন্য সময়েও এই রোগটি দেখা গেলেও তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা হিসেবে নগন্য। জলবসন্ত জীবনহানিকর মারাত্মক কোন রোগ নয়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সীদের এই রোগ হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। পুনঃ সংক্রমণের কারণে অনেকসময় হারপিজ জোষ্টার নামে আরেকটি রোগ হয়ে থাকে।

◆কি কারণে হয়

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ, যা ভেরিসেলা জোষ্টার নামে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। 

◆কিভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি, ত্বকের সংস্পর্শ, ব্যবহত পোশাকের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২ দিন আগে থেকে শুকিয়ে যাওয়া ফুস্কড়ির খোসা থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি এবং ফুস্কড়ির খোসা বাতাসে বাহিত হয়েও ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটি ছড়াতে শুরু করে।

◆লক্ষণ কি

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে। ত্বকে প্রথমে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে যা ফুস্কড়িতে পরিণত হয়। ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২/৩ আগে থেকেই শরীর ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেট ব্যথা হতে পারে। লালচে ফুস্কড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়। ফুস্কড়িতে পানি জমে যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়।কাশি এবং পাতলা পায়খানা হতে পারে। সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকে একমাস পর্যন্ত এই রোগের স্থায়িত্ব হয়ে থাকে। 

◆জটিলতা

আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।

◆প্রতিরোধ

আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে। যে কোন বয়সীরা জল বসন্তের টিকা নিতে পারেন। একবার আক্রান্ত হলে সাধারণত পুনঃ সংক্রমণ হয় না।

◆চিকিৎসা

ভাইরাস জনিত রোগ বিধায় এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন ও পরামর্শ মেনে চললে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। যেমন জ্বর বা চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। আবার রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে কখনো কখনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নাশক ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে।

মনে রাখবেন জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই সাধারণ তবে ছোঁয়াচে একটি রোগ। সাবধানতা অবলম্বন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কোন রকম জটিলতা ছাড়াই এটি থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়।

Sunday, February 19, 2023

উপশমকারী চিকিৎসা



আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু বেঁচে থাকা ৩৯ তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ২০১৫ সালে লিভারের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারপর থেকে ৯৮ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মানুষটি বৃদ্ধ বয়সে নানা শারীরিক জটিলতায় নিয়ে হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। গতকাল তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িতে থেকেই উপশমকারী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ারের (Hospice palliative care) সঠিক বাংলা করা কষ্টকর। তবে এই পদ্ধতিতে কোন রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমে আর রোগ নিরাময়ের উপায় না থাকলে তখন সেই রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে রোগের যন্ত্রনা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়া থাকে। বাড়ি বা চিকিৎসা কেন্দ্রে এই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। পারিবারিক পরিবেশে উপশমকারী চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের তত্ত্বাবধানে এই পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি পরিবারের উপর চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝাও লাঘব হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এধরনের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসা নেয়া রোগীর চেয়েও বেশিদিন বেঁচে থাকেন। এধরনের চিকিৎসায় রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য নয় বরং ব্যাথা কমানো, ঘুম বা রোগীর প্রশান্তির জন্য দরকারি ঔষধ ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বয়সের ভারে ন্যুজ একজন মানুষের শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় হয় না কখনো। কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে যে সব রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু মোটামুটি নিশ্চিত তাদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনে আইসিইউতে অচেতন জীবনের চেয়ে বাড়িতে পরিবার পরিজন বেষ্টিত অবস্থায় মৃত্যু অনেক বেশি প্রশান্তিকর।

আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখনো প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি গড়ে উঠেনি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার চিকিৎসার নামে আইসিইউতে এধরনের রোগীর চিকিৎসা করাতে নিঃস হয়ে পড়ার অগুনিত ঘটনা ঘটছে। বিত্তবানদের ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধা না হলেও পরিবারের সদস্যরা শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে চরম মানসিক চাপ ও কষ্টে ভুগে থাকেন। আক্রান্ত রোগীও জীবনের শেষ মুহূর্তে পরিবার পরিজন বেষ্টিত হয়ে প্রশান্তি সহকারে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

Friday, February 10, 2023

অকালে চুল পাকা


অল্পবয়সে অকালে চুল পেকে গেলে মনঃকষ্টে ভোগেন অনেকে। চুল পেকে যাওয়া মানুষের জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জাতি-গোষ্ঠির ভিন্নতায় বিভিন্ন বয়সে চুল পাকা শুরু হয়। যেমন ককেশীয়দের ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর বয়সেই চুল পাকতে শুরু করে। আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর এটি শুরু হয়। এই বয়সের আগে চুল পাকলে তাকে অকালপক্ব চুল (premature grey hair) বলা হয়। 

ত্বকের মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে মেলানিন নামে রঞ্জকের ঘনত্বের উপর ত্বকের রং নির্ধারিত হয়ে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব বেশি হলে কালো এবং কম হলে সেই অনুযায়ী গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত ফর্সা হয়ে থাকে। চুল যেখান থেকে গজিয়ে থাকে ত্বকের সেই গোড়ার জায়গার মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতার উপর চুলের রঙ নির্ধারিত হয়ে থাকে। কোন কারণে মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা কমে বা নষ্ট হয়ে গেলে চুল পাকতে শুরু করে। সাধারণত যেসব কারণে চুল পাকে, সেগুলো হলো,


◆বংশগত

চুল পাকার সঙ্গে জেনেটিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্যই কারো কারো ক্ষেত্রে চুল অন্যদের তুলনায় আগে পাকা শুরু করে।

◆রোগ জনিত

থাইরয়েডের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জনিত রোগ, শ্বেতি, আ্যলার্জি, পরিপাকতন্ত্রের রোগ, রক্ত শুন্যতা, প্রোজেরিয়া ও প্যানজেরিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে কম বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।

◆খাবার উপাদানের ঘাটতি জনিত

শরীরে ভিটামিন বি১২, বি ৬, বায়োটিন, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন ই, আয়রন ও কপারের ঘাটতির কারণে অকালে চুল পাকতে পারে।

◆ ঔষধ

কিছু ঔষধ যেমন ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা ঔষধ, ম্যালেরিয়ার ঔষধ ইত্যাদির কারণে সাময়িকভাবে চুল পেকে যায়।

◆ দুশ্চিন্তা

অতিরিক্ত চিন্তা চুলের বৃদ্ধি ও গঠন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপান অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে।


●সমাধান

কোন রোগের কারণে চুল পাকতে শুরু করলে সেই রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পাকা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। বংশজনিত কারণে চুল পাকার প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করা যায় না। খাবার উপাদানের ঘাটতি পুরণের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ফল ও শাক-সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মদ্যপান ও ধুমপান নিয়ন্ত্রণ বা পরিত্যাগ করতে হবে।

●চিকিৎসা

চুল পড়ে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। সরাসরি চুলের গোড়ায় ষ্টেম সেল, গ্রোথ ফ্যাক্টর বা পিআরপি চিকিৎসা চুল পাকা রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে অনেকসময়‌।

মনে রাখবেন চুল পাকা মারাত্মক জীবনহানিকর কোন রোগ নয়। মূলত সৌন্দর্য বিচারে বেশিরভাগ মানুষ মন খারাপ করে থাকেন। চিকিৎসার মাধ্যমে অকালে চুল পেকে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ না পেলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। দরকার হলে পছন্দ মতো চুলে রঙ ব্যবহার করতে পারেন।

Wednesday, January 18, 2023

হাত দিয়ে খাবার উপকারিতা


পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে কাঁটাচামচ এবং পুর্ব এশিয়ায় চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করার রীতি রয়েছে। বাদবাকি বিশ্বে হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সংস্কৃতির অংশ। পাশ্চাত্যের রীতি অনুসরণ করে এখন অনেকে নিজেকে আধুনিক ও সভ্য প্রমানের চেষ্টায় আবহমান কালের সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেন। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণকে অসভ্যতা এবং অপরিস্কার জীবনযাপনের অংশ বলে নাক সিঁটকাতেও দেখা যায় কাউকে। 

অনেকেই হয়তো জানেন না হাত পরিস্কার করে খাবার গ্রহণ করা বরং স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যেস। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে গবেষণায় প্রমাণিত কিছু উপকার জেনে নেই।


©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। খাবার মাখানোর সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত স্নায়ু খাবার ধরন মস্তিষ্কে জানিয়ে দেয় এবং সেই অনুযায়ী পরিপাকতন্ত্রে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিপাক রস নিঃসরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কাঁটাচামচ বা চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে হজম সহায়ক এই ধাপটি বাদ থেকে যায়। 

হাতের ত্বকে হজমসহায়ক একধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে, যা হাত পরিস্কার করার পরেও থেকে যায়। যারা বদহজমে (Irritable bowel syndrome) ভুগে থাকেন তাদের জন্য হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমে সহায়তা করে থাকে।

© গবেষণায় দেখা গিয়েছে দ্রুত খাবার গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কাঁটাচামচ বা ষ্টিক দিয়ে হাতের তুলনায় তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাই হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ ডায়াবেটিস-২ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ স্নায়ুর মাধ্যমে পরিমিত খাবার গ্রহণ করার জন্য মস্তিস্কের মাধ্যমে পাকস্থলীকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে, যা স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে থাকে।

সর্বোপরি হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে খাবারের নানা পদ সংমিশ্রণ করে স্বাদের বৈচিত্র্য এবং পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। মনে রাখবেন খাবার আগে সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ ডিটারজেন্ট দিয়ে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে।

Friday, January 13, 2023

ভাতঘুম



অনেকে দুপুরে খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নেন, যাকে বাংলায় বলা হয় ভাত-ঘুম। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোকে যদিও অনেক সময় আলসেমি মনে করা হয়, কিন্তু ভাত-ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। দিনভর কাজের চাপের মাঝে কম্পিউটারের 'রিফ্রেশ বাটনের' মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। এমনকি নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো মানুষকে আরও বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করে।

ভাত-ঘুম বাঙালির বদভ্যাস বলে মনে করা হলেও এই সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশেই। ইউরোপের অনেক ভাষায় ভাত-ঘুমকে বলা হয় 'সিয়েস্তা', আর ইংরেজিতে 'পাওয়ার ন্যাপ'। গ্রীস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমনকি ইউরোপের কিছু শহরে কর্মজীবী মানুষের জন্য সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।

রাতে ঘুমের পর যে ধরনের কর্মস্পৃহা নিয়ে দিনের শুরু হয় সেটি সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমে আসতে শুরু করে। ন্যাপ বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে, যা কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। জেগে থেকে কাজ করার সাথে সাথে মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে। ভাত-ঘুমের সময় এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মন-মেজাজে ভালো বোধ করি।

ভাত-ঘুমের স্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নানামতে এটি সর্বনিম্ন ২০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইদানিং বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য ভাত-ঘুমের উপযোগী চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে।

Wednesday, January 11, 2023

ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

করোনা মহামারি ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ডিজিটাল করার চলমান প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মহামারির সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব চলাকালীন দেশটির যানবাহনে চলাচল এবং শপিংমল বা যে কোন জনসমাগমস্থলে প্রবেশাধিকারের জন্য ২০২১ সালে একটি আ্যপ চালু করা হয়। এই আ্যপে করোনা পরীক্ষা, টিকা দেয়ার রেকর্ড এবং অন্যান্য কয়েকটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি করার পর প্রত্যেকের জন্য আলাদা একটি কিউআর কোড তৈরি হয়, যেটি ব্যবহার করে চলাচল বা প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। স্মার্টফোনে এই আ্যপটি ব্যবহার শুরু করার পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির চলাচলের একটি ম্যাপিংও স্বয়ংক্রিয়ভাবে  তৈরি হয়।

২০২৩ সালের শুরুতে ইন্দোনেশিয়া করোনা মহামারির জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কাজেই মহামারির জন্য চালু করা আ্যপটিও ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ভবিষ্যতে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সমন্বয় করার বিষয়টি মাথায়  রেখেই এই আ্যপটি চালু করা হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার সকল স্বাস্থসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, প্যাথোলজি পরীক্ষা কেন্দ্র ও ফার্মেসি এই আ্যপের মাধ্যমে সংযুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে সেবাগ্রহনকারীর স্বাস্থ্য রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। তবে এই আ্যপের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের ঔষধ কেনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত  সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সেবাদানকারী যেকোন প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোডের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার রেকর্ড দেখতে পারবেন। সেবাগ্রহীতাও তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ড দেখতে পারবেন এবং প্রেসক্রিপশনসহ যে কোন রিপোর্ট আ্যপের মাধ্যমেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ২০২৩ সালের মধ্যেই এই সমন্বয় করার প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী বছর থেকে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য সেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দুর করা স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু করার বিকল্প নেই। দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নিতে হবে অবশ্যই।


দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...