Sunday, November 14, 2010

শুষ্ক ত্বক : শীতের প্রভাবে না রোগজনিত?


শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে সঙ্গেই ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করেছে, লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই। শীতের সময় বায়ুতে জলীয়বাষ্প কমে যাওয়ার কারণে ত্বক থেকে পানি শুষে নেয়ার প্রভাবে ত্বক রুক্ষ হয়ে যায়। আবহাওয়া পরিবর্তন ছাড়াও আরও নানাবিধ কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় এটিকে ঢবৎড়ংরং বলা হয়ে থাকে। এটি এমন একটি সমস্যা যাতে কমবেশি সব বয়সীরাই আক্রান্ত হতে পারেন। সাধারণভাবে হাত, পা এবং পেটের উভয় দিক আক্রান্ত হয় বেশি। তবে অন্য স্থানেও এ পরিবর্তন হতে পারে।

কিভাবে হয় : 
ত্বকের 'ইপিডার্মিস'-এ 'স্ট্যাটম কর্নিয়াম' নামে একটি স্তর থাকে। এটি অনেকটা পলিথিনের আবরণের মতো আমাদের শরীরকে আবৃত রাখে। এই স্তরই পানি ধারণ করে ত্বককে মসৃণ রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। কোনো কারণে এই স্তর ক্ষতিগ্রস্ত/পাতলা হয়ে গেলে পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায় এবং সমস্যাটি তৈরি হয়।

কি কি কারণে হয় : 
নানা কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে পারে যেমন,

আবহাওয়া : ঋতু পরিবর্তনে বাতাসে জলীয়বাষ্প কমে গেলে, ত্বক থেকে পানি শুষে নেয় এবং ত্বক রুক্ষ ভাব ধারণ করে। শীতে শুষ্ক ত্বকের প্রবণতা এ কারণেই হয়ে থাকে। তাছাড়া ব্যবহৃত রুম হিটার, এয়ারকন্ডিশনারের কারণেও রুমের ভেতর জলীয়বাষ্প কমে গিয়ে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

বয়স : সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ বয়সীদের ত্বকের ইপিডার্মিস পাতলা হতে শুরু করে এবং ত্বকের পানি ধারণক্ষমতা কমে যায়। এর ফলে ত্বকও শুষ্ক এবং রুক্ষ হতে শুরু করে। যাদের বয়স ষাটোর্ধ্ব তারাই বেশি আক্রান্ত হন। মহিলাদের মাসিক বন্ধ (মেনপজ) হওয়ার পর এ সমস্যা প্রকাশ পেতে থাকে।

সূর্যালোক : সরাসরি সূর্যালোকের কারণে যে কোনো ঋতুতেই ত্বক শুষ্ক হতে পারে। কারণ সূর্যের উত্তাপে ত্বকের পানি ও নিঃসরিত তেল শুকিয়ে যায় এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।

সাবান ও ডিটারজেন্ট : সাবান, ক্লিনজার ও ডিটারজেন্ট ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করার সময় ত্বকের পানি ও তেল শুষে নেয়। এর ফলে ত্বক শুকিয়ে যায়। সাধারণত এগুলো যতবেশি ক্ষারীয় ততবেশি তেল ও পানি শুষে নেয়।

রোগজনিত কারণ : শরীরে কিছু রোগে ত্বকের পানি ধারণক্ষমতা কমে যায় এবং ত্বক রুক্ষ হয়। ত্বকের রোগ যেমন এটপিক ডার্মাটাইসিস, সোরাইয়াসিস, ইকথায়োসিস ইত্যাদিতে ত্বক রুক্ষ হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে রুক্ষতা ছাড়াও চুলকানি, ত্বক ফেটে যাওয়া, ত্বকে প্রদাহ এবং স্কেলিং লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাছাড়া কিডনিজনিত রোগ, পুষ্টিজনিত অভাব এবং ভিটামিন (এ/ই)-এর ঘাটতিতে ত্বক রুক্ষ হতে পারে।

ওষুধ : কিছু কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবে ত্বক শুষ্ক হতে পারে।

কিভাবে মুক্ত থাকবেন
সাধারণভাবে শীতে শুষ্ক ত্বক থেকে পরিত্রাণ পেতে ত্বকের যত্নে বর্ণিত নিয়মগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।

√কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন।
গোসলের সময় কোমলভাবে সারা শরীর পানিতে ধুয়ে ফেলুন, কখনই শরীর ঘষবেন না।
√সাবান ও ক্লিনজার যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করুন, আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী এগুলো নির্বাচন করুন।
√গোসলের পর শরীরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
√রুমের ভেতর 'হিউমোডিফায়ার' ব্যবহার করুন।
√প্রচুর পানীয় পান করুন।
√খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ রাখুন।
√সাবান ক্লিনজার ও ময়েশ্চারাইজার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

নিয়মগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার পরও যদি ত্বকের শুষ্ক ও রুক্ষতা থেকে পরিত্রাণ না পান, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।

published on the daily bangladesh protidin,15th november 2010

No comments:

রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর মুনশী আব্দুল করিম

বিলেতের রাজ-পরিবারের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী এবং সুদীর্ঘ ৬৩ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া । ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণ জয়ন্তীর উপহা...