মানব দেহের একক বৃহৎ অঙ্গ। শরীরের আবরণ হিসেবে কাজ করে বিধায় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বাগ্রে ত্বকে পরিলক্ষিত হয়। ষড়ঋতুর প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে লক্ষণীয় পরিবর্তন না হলেও, শীত এবং গরমের প্রভাব ত্বকের উপর সুস্পষ্ট। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম এবং আদ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকের বিশেষ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখতে দেয়।
গরমে ত্বকের উপর পরিবর্তন দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
সূর্যালোকের কারণে ত্বকের পরিবর্তন :
সূর্যালোকের কারণে ত্বকে সোলার ডার্মাটাইটিস বা সানবার্ন, সোলার একজিমা, সোলার আর্টিকেরিয়া, একনিটিক রেটিকুলয়েড, ত্বকের ক্যান্সার এবং মেছতা বা ক্লোজমা হতে পারে। সূর্যালোকের আলট্রা ভয়োলেট রশ্মিই সাধারণত এ জন্য দায়ী। গরমে সূর্যালোকের কারণে হিট-স্ট্রোক বা সানবার্ন হতে পারে
গরমে সৃষ্ট ঘামের কারণে পরিবর্তন :
গরমের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ত্বকের সোয়েট গ্লানড বা ঘর্মগ্রন্থি নিৎসরিত ঘাম তৈরি হয়। ঘামের কারণে #ঘামাচি দেখা দেয়। এ ছাড়া ঘামে ডার্মাটাইটিস্, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের রোগ বিস্তার লাভ করে।
#ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের রোগ যেমন ইমপেটিগো বা সামার বয়েল, ফলিকুলাইটিস, ইরাইসিপেলস, ফারাঙ্ককেল, কারবাংকেল ইত্যাদি। শিশুরা গরমে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয় যা সামার বয়েল নামে পরিচিত।
গরম এবং আদ্র আবহাওয়ায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে যা ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে টিনিয়া ভারসিকলার/ছুঁলি, ক্যানডিডিয়াসিস, ইরাইথ্রাসমা, দাদ জাতীয় রোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস, টিনিয়া পেডিস, টিনিয়া কর্পোরিস) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গরম এবং ঘামের কারণে ব্রণ এবং এ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়।
আমাদের দেশে এ সময়ে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যে কারনে মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে ত্বক লালচে ছোপছোপ চুলকানি হয়।
চিকিৎসা :
গরমে ত্বকের সমস্যা জটিল হতে পারে। কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।
প্রতিরোধের উপায় :
*সরাসরি সূর্যালোকে যাবেন না, ছাতা, হ্যাট এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
*দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকবেন না, সান ব্লকের লোশন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন।
*ভারী জামা-কাপড়, টাইটফিট অন্তর্বাস পরিহার করুন।
*নাইলন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি সিনথেটিক পোশাক পরিধান না করে, সুতি এবং প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পোশাক ব্যবহার করুন,
*একবার ব্যবহার করা পোশাক ও অন্তর্বাস পুনরায় ধৌত করার পর ব্যবহার করুন;
*ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলুন বা মুছে নিন, প্রয়োজনে গোসল করতে পারেন;
*প্রচুর পরিমানে পানীয় পান করুন।
*ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন না। পাউডার ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয় ফলে ঘামাচি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
*সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক:
ডাঃ এম আর করিম রেজা
ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ
No comments:
Post a Comment