অল্পবয়সে অকালে চুল পেকে গেলে মনঃকষ্টে ভোগেন অনেকে। চুল পেকে যাওয়া মানুষের জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জাতি-গোষ্ঠির ভিন্নতায় বিভিন্ন বয়সে চুল পাকা শুরু হয়। যেমন ককেশীয়দের ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর বয়সেই চুল পাকতে শুরু করে। আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর এটি শুরু হয়। এই বয়সের আগে চুল পাকলে তাকে অকালপক্ব চুল (premature grey hair) বলা হয়।
ত্বকের মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে মেলানিন নামে রঞ্জকের ঘনত্বের উপর ত্বকের রং নির্ধারিত হয়ে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব বেশি হলে কালো এবং কম হলে সেই অনুযায়ী গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত ফর্সা হয়ে থাকে। চুল যেখান থেকে গজিয়ে থাকে ত্বকের সেই গোড়ার জায়গার মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতার উপর চুলের রঙ নির্ধারিত হয়ে থাকে। কোন কারণে মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা কমে বা নষ্ট হয়ে গেলে চুল পাকতে শুরু করে। সাধারণত যেসব কারণে চুল পাকে, সেগুলো হলো,
◆বংশগত
চুল পাকার সঙ্গে জেনেটিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্যই কারো কারো ক্ষেত্রে চুল অন্যদের তুলনায় আগে পাকা শুরু করে।
◆রোগ জনিত
থাইরয়েডের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জনিত রোগ, শ্বেতি, আ্যলার্জি, পরিপাকতন্ত্রের রোগ, রক্ত শুন্যতা, প্রোজেরিয়া ও প্যানজেরিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে কম বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।
◆খাবার উপাদানের ঘাটতি জনিত
শরীরে ভিটামিন বি১২, বি ৬, বায়োটিন, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন ই, আয়রন ও কপারের ঘাটতির কারণে অকালে চুল পাকতে পারে।
◆ ঔষধ
কিছু ঔষধ যেমন ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা ঔষধ, ম্যালেরিয়ার ঔষধ ইত্যাদির কারণে সাময়িকভাবে চুল পেকে যায়।
◆ দুশ্চিন্তা
অতিরিক্ত চিন্তা চুলের বৃদ্ধি ও গঠন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপান অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে।
●সমাধান
কোন রোগের কারণে চুল পাকতে শুরু করলে সেই রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পাকা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। বংশজনিত কারণে চুল পাকার প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করা যায় না। খাবার উপাদানের ঘাটতি পুরণের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ফল ও শাক-সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মদ্যপান ও ধুমপান নিয়ন্ত্রণ বা পরিত্যাগ করতে হবে।
●চিকিৎসা
চুল পড়ে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। সরাসরি চুলের গোড়ায় ষ্টেম সেল, গ্রোথ ফ্যাক্টর বা পিআরপি চিকিৎসা চুল পাকা রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে অনেকসময়।
মনে রাখবেন চুল পাকা মারাত্মক জীবনহানিকর কোন রোগ নয়। মূলত সৌন্দর্য বিচারে বেশিরভাগ মানুষ মন খারাপ করে থাকেন। চিকিৎসার মাধ্যমে অকালে চুল পেকে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ না পেলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। দরকার হলে পছন্দ মতো চুলে রঙ ব্যবহার করতে পারেন।