Wednesday, September 20, 2023

বিষাক্ত তেলাপিয়া

সংবাদমাধ্যমে বিগত কয়েকদিনে আমেরিকায় তেলাপিয়া 🐟 মাছ খাওয়ার কারনে এক নারীর হাত-পা কেটে ফেলার খবর প্রকাশ হয়েছে। হেডলাইন দেখে সাধারণ মানুষ তেলাপিয়াকে বিষাক্ত মাছ মনে করতে পারে। এই ভুল বার্তা নিম্নবিত্ত মানুষেরা দৈনন্দিন প্রোটিন গ্রহণে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। আসলে যে কোন মাছ বা সি-ফুড থেকেই এই ধরনের মারাত্মক খাদ্য বিষক্রিয়াজনিত জটিলতা হতে পারে।


ভিব্রিও ভালনিফিকস (Vibrio vulnificus) নামে একটি ব্যাকটেরিয়া পানিতে থাকে, যেটি মানুষের দেহে সংক্রমণের কারণে জীবনহানি ঘটতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কমবেশি ৮০ হাজার মানুষ এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। ঠান্ডা পানিতে এটি বংশবিস্তার করতে পারে না। যে পানিতে ভিব্রিও ভালনিফিকস থাকে সেখানে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীর শরীরেও এটি থাকে। জলজ প্রানীর জন্য ক্ষতিকর বা জীবনহানির কারণ না হলেও এটি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

কিভাবে ছড়ায়?

©কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ বা কম রান্না করা মাছ, সি-ফুড ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণত শেলফিস এবং ওয়েষ্টার থেকেই সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।

©এছাড়া ত্বকের ক্ষত দিয়ে পানির মাধ্যমে সরাসরি শরীরে প্রবেশ করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া।

লক্ষণ কি

খাওয়ার পর বমি, পাতলা পায়খানা, তীব্র পেটব্যথা ও জ্বর হয়ে থাকে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ এগুলো। ত্বকে সংক্রমিত হলে আক্রান্ত স্থান লালচে হয়ে ব্যাথা, গরম অনুভুতি, ফুলে কালচে বর্ণ হয়ে যেতে পারে। ক্ষতস্থান দিয়ে জ্বলীয় নিঃসরণ হতে পারে।

সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে জীবনহানির শংকা সৃষ্টি হয়। সাধারণত যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা লিভারের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। রক্ত নালীতে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা ও গ্যাংরিন হতে পারে। সেপটিক শকে মৃত্যু ঘটে থাকে।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

©কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাছ বা সি-ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

©পানিতে নামার পর ত্বকের কোন স্থানে লালচে, ফুলে যাওয়া, ব্যাথা ইত্যাদি অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

©ত্বকে ক্ষত থাকলে পুকুর, নদী বা সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকুন।

©মাছ বা সি-ফুড খাওয়ার পর উল্লেখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Tuesday, August 8, 2023

হাঁটাহাটি করি, উৎফুল্ল থাকি!


 সুস্থতার জন্য হাঁটাহাটির প্রয়োজনীয়তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাড়ের ক্ষয়রোধ ইত্যাদি নানা দৈহিক সমস্যায় হাঁটাহাটি অত্যাবশ্যক বলে চিকিৎসা সেবায় গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু হাঁটাহাঁটির সঙ্গে মানসিক চাপ কমানো বা বিষন্নতা থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টি তেমনভাবে আলোচিত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলেই মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা অনেকাংশে কমে যায়।

হাঁটাহাঁটির সময় মানুষ সাধারণত পারিপার্শ্বিক বিষয় থেকে বিমুক্ত হয়ে নিজের মনের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে পারে। মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। যে কারণে এন্ডোরফিন নামে #সুখী হরমোন বেশি নিঃসরণ হয়ে থাকে। এড্রেনালিন নামক আরেকটি হরমোনের নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়, যেটি মনকে চাঙ্গা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ঘুমের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে, সেটি সবাই অবগত। হাঁটার সময় ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোন নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়। মাংসপেশীর কাঠিন্য কমে যায়। ফলে ভালো ঘুম হয়ে থাকে। তবে সেজন্য শোয়ার আগে হাঁটাহাটি করতে হবে।

ঘরের ভিতর হাঁটাহাটি বা ট্রেডমিল করে মানসিক চাপ বা বিষন্নতা কমাতে তেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। মানসিক চাপ কমাতে বা বিষন্নতা দূর করতে বাইরে হাঁটার বিকল্প নেই।

Saturday, August 5, 2023

জন্মদিন


 মানুষের জীবনে বছরের একটি বিশেষ দিন হলো জন্মদিন। কারন এই দিনটি পঞ্জিকা বর্ষের সেই দিন যেদিন তার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। মানুষ এই দিনটি উদযাপন করার জন্য নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী রীতিনীতি তৈরি করেছে।

মানুষের জন্মদিন পালন শুরুর সঠিক ইতিহাস জানা নেই। তবে মিসরে ফেরাউনদের বার্ষিক উদযাপনের রীতি ছিল। সাধারণ মানুষের জন্মদিন পালনের রীতি চালু হয় প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে। খৃষ্টধর্ম প্রবর্তনের পর এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।

জন্মদিন উদযাপনের একটি শক্তিশালী মানসিক প্রভাব রয়েছে।  দিনটি মূল্যবান এবং প্রিয় বোধ করার একটি উপলক্ষ কারণ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা এই দিনে শুভেচ্ছা এবং উপহার দিয়ে থাকে। দিনটি প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো এবং শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার একটি সুযোগ তৈরি করে। শুধুমাত্র উদযাপন নয়, বরং

এই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের কৃতজ্ঞতা এবং প্রশংসার একটি উপলক্ষ হলো জন্মদিন।

যে কোন ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতে জন্মদিন মানব জীবনের একটি বিশেষ এবং অনন্য মুহূর্ত।


 

Saturday, July 8, 2023

দেশের স্বাস্থ্য সেবা রক্ষার্থে দৃষ্টি আকর্ষন

 স


রকারি দলের মহাসচিব, ক্ষমতাধর মন্ত্রী মহোদয় মধ্য রাতে বুকে ব্যাথা নিয়ে #বিএসএমএমইউ জরুরি বিভাগে হাজির হলেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক পাঁজরের হাড়ের উপর শক্ত চাপ দিয়ে হৃদযন্ত্র সচল রেখেছেন। সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তাঁর মৃত্যু ছিল অবধারিত। পরবর্তীতে তাঁকে চিকিৎসা দিতে প্রতিবেশী দেশের বিশ্বখ্যাত হার্ট সার্জন এসেছিলেন। অবস্থার উন্নতি হলে সেই ক্ষমতাধর রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে উড়ে যান।

বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক নিউইয়র্কে গেলেন বৃহদান্ত্রের সার্জারি করতে। অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় তাঁর পরিপাক নালী ফুটো হয়ে গিয়েছিল। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নামী মানুষ হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপুল অর্থ প্রাপ্তির সম্ভবনা ছিল।

বেসরকারি হাসপাতালের নামী বিশেষজ্ঞ নিজের একটি রোগের রোবটিক সার্জারির জন্য সিঙ্গাপুরের নামীদামী হাসপাতালে গেলেন। অথচ তার নিজের হাসপাতালেই রোবট ছাড়া এই চিকিৎসা অহরহ চলে। বড় রক্তনালী কেটে যাওয়ার কারণে অপারেশন টেবিলেই তার মৃত্যু ঘটে। যে সার্জন রোবট দিয়ে অপারেশন করছিলেন তিনি ও তাঁর দল এই বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। তারপরও এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয় নাই। কোন মামলা হয়নি বা পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি মতামত দেন যে 'জটিলতা বা মৃত্যু চিকিৎসার অংশ। তাঁরা এই রোগীর চিকিৎসায় কোন গাফিলতি করেননি, নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।'

ঘটনা তিনটি স্মরণ করলাম দেশের চিকিৎসাসেবায় বিরাজমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে দুয়েকটি কথা বলাই উদ্দেশ্য। কোন চিকিৎসক স্বেচ্ছায় রোগীর চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি হতে পারে। সেজন্য বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে সভ্য দেশগুলোতে। রোগী বা স্বজন অভিযোগ তুললেই চিকিৎসককে দায়ি করা যৌক্তিক হতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ, মামলা বা আদালত সমাধান দিতে পারে না। কারণ তারা এই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন না। তবে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চিকিৎসককে দায়ি করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালত তার শাস্তির রায় দিতে পারেন।

শুধুমাত্র রোগী বা স্বজনের অভিযোগের ভিত্তিতে কোন চিকিৎসক বা হাসপাতালের মিডিয়া ট্রায়াল এবং পুলিশি হয়রানি এদেশের চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে ইতিমধ্যেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে জরুরি চিকিৎসাসেবায় দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীর জীবন বাঁচাতে কোন ঝুঁকি নেয়ার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন, উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়াই রোগীর মৃত্যুর ঘটবে তখন। আবার দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে সাধারণ চিকিৎসার জন্যও দেশের মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাবে আরো বেশি বেশি। রোগীর নিজের অর্থের অপচয় এবং দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হবে এজন্য।

এধরনের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ করার বিকল্প নেই। চিকিৎসাসেবা প্রদানে সকল অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তাদের। তদন্ত কমিটি গঠন করে চিকিৎসায় অবহেলা বা গাফিলতি সহ চিকিৎসা সেবায় বিরাজমান নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য দায়ী সকলের শাস্তি নিশ্চিত করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয়কেই।দেশের সংবাদমাধ্যম, পুলিশ ও আদালত এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ উঠলেই সংবাদ প্রচার/গ্রেফতার করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজের সকল স্তরের দায়িত্বশীল ভূমিকা বিরাজমান এই সংকট থেকে উত্তরণে সহায়তা করবে।

Sunday, June 4, 2023

প্লাষ্টিক দূষণ ও জনস্বাস্থ্য


 প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এই বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'প্লাষ্টিক দূষণ দুর করো'। 

প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। নমনীয় ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বত্র এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাষ্টিক দূষণ।

বর্তমান পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্লাষ্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাষ্টিকের তৈরি। ব্যবহত প্লাষ্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাষ্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহত প্লাষ্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ে। তবে চিন সহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের ৫১% প্লাষ্টিক দূষণকারী। প্লাষ্টিক দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য (বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস ইত্যাদি) মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে নিঃসরণ করে।

ন্যানো এবং মাইক্রো কণা হিসেবে এসব ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্য চক্র ও পানির মাধ্যমে প্রাণীকুলের দেহে প্রবেশ করছে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাষ্টিক কণায় থাকা এসব পদার্থ যে কোন জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বিরুপ পরিবর্তন ঘটাতে পারে। 

প্লাষ্টিক বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণায় থাকা ক্ষতিকর পদার্থ মানুবদেহে বিরাজমান হরমোনজনিত পরিবেশ পরিবর্তন করে শুক্রানু ও ডিম্বানু তৈরি ব্যাহত করতে পারে। স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হতে পারে। কোষের জীনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সহ আরো নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও প্লাষ্টিক পণ্যের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকের রোগ হতে পারে।

প্লাষ্টিকের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। প্লাষ্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করে দূষন নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ সেজন্যই যৌক্তিক নয়। বহুল ব্যবহৃত প্লাষ্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। পলিথিনের পরিবর্তে কাগজ, পাট বা প্রাকৃতিক তন্তের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে পলিথিনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। তবে পলিথিন ও অন্যান্য প্লাষ্টিক দ্রব্য সহ সকল ধরনের বর্জ্যের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্লাষ্টিক দূষণ। আন্তর্জাতিক ভাবে ইতিমধ্যেই গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।

Monday, March 6, 2023

ছোঁয়াচে রোগ জলবসন্ত


শীতের শেষে বসন্তের আগমনে বাংলাদেশে জল ও গুটি, দুটি বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত একসময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জীবনহানিকর মারাত্মক গুটি বসন্ত চার দশক আগে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছে। তবে জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়েছে। বসন্ত ঋতু ছাড়া অন্য সময়েও এই রোগটি দেখা গেলেও তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা হিসেবে নগন্য। জলবসন্ত জীবনহানিকর মারাত্মক কোন রোগ নয়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সীদের এই রোগ হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। পুনঃ সংক্রমণের কারণে অনেকসময় হারপিজ জোষ্টার নামে আরেকটি রোগ হয়ে থাকে।

◆কি কারণে হয়

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ, যা ভেরিসেলা জোষ্টার নামে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। 

◆কিভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি, ত্বকের সংস্পর্শ, ব্যবহত পোশাকের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২ দিন আগে থেকে শুকিয়ে যাওয়া ফুস্কড়ির খোসা থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি এবং ফুস্কড়ির খোসা বাতাসে বাহিত হয়েও ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটি ছড়াতে শুরু করে।

◆লক্ষণ কি

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে। ত্বকে প্রথমে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে যা ফুস্কড়িতে পরিণত হয়। ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২/৩ আগে থেকেই শরীর ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেট ব্যথা হতে পারে। লালচে ফুস্কড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়। ফুস্কড়িতে পানি জমে যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়।কাশি এবং পাতলা পায়খানা হতে পারে। সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকে একমাস পর্যন্ত এই রোগের স্থায়িত্ব হয়ে থাকে। 

◆জটিলতা

আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।

◆প্রতিরোধ

আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে। যে কোন বয়সীরা জল বসন্তের টিকা নিতে পারেন। একবার আক্রান্ত হলে সাধারণত পুনঃ সংক্রমণ হয় না।

◆চিকিৎসা

ভাইরাস জনিত রোগ বিধায় এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন ও পরামর্শ মেনে চললে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। যেমন জ্বর বা চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। আবার রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে কখনো কখনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নাশক ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে।

মনে রাখবেন জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই সাধারণ তবে ছোঁয়াচে একটি রোগ। সাবধানতা অবলম্বন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কোন রকম জটিলতা ছাড়াই এটি থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়।

Sunday, February 19, 2023

উপশমকারী চিকিৎসা



আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু বেঁচে থাকা ৩৯ তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ২০১৫ সালে লিভারের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারপর থেকে ৯৮ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মানুষটি বৃদ্ধ বয়সে নানা শারীরিক জটিলতায় নিয়ে হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। গতকাল তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িতে থেকেই উপশমকারী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ারের (Hospice palliative care) সঠিক বাংলা করা কষ্টকর। তবে এই পদ্ধতিতে কোন রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমে আর রোগ নিরাময়ের উপায় না থাকলে তখন সেই রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে রোগের যন্ত্রনা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়া থাকে। বাড়ি বা চিকিৎসা কেন্দ্রে এই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। পারিবারিক পরিবেশে উপশমকারী চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের তত্ত্বাবধানে এই পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি পরিবারের উপর চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝাও লাঘব হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এধরনের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসা নেয়া রোগীর চেয়েও বেশিদিন বেঁচে থাকেন। এধরনের চিকিৎসায় রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য নয় বরং ব্যাথা কমানো, ঘুম বা রোগীর প্রশান্তির জন্য দরকারি ঔষধ ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বয়সের ভারে ন্যুজ একজন মানুষের শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় হয় না কখনো। কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে যে সব রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু মোটামুটি নিশ্চিত তাদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনে আইসিইউতে অচেতন জীবনের চেয়ে বাড়িতে পরিবার পরিজন বেষ্টিত অবস্থায় মৃত্যু অনেক বেশি প্রশান্তিকর।

আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখনো প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি গড়ে উঠেনি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার চিকিৎসার নামে আইসিইউতে এধরনের রোগীর চিকিৎসা করাতে নিঃস হয়ে পড়ার অগুনিত ঘটনা ঘটছে। বিত্তবানদের ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধা না হলেও পরিবারের সদস্যরা শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে চরম মানসিক চাপ ও কষ্টে ভুগে থাকেন। আক্রান্ত রোগীও জীবনের শেষ মুহূর্তে পরিবার পরিজন বেষ্টিত হয়ে প্রশান্তি সহকারে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

History of Fish & Chips in UK!

Most people think that Fish and Chips originated in England, this is not actually true. The real history of Fish and Chips is traced back t...