শরীরের কোনো স্থানের ত্বকের রং অন্য অংশের চেয়ে আলাদা যেমন হালকা বা গাঢ় হয়ে গেলে চিন্তিত হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। নানা কারণে ত্বকের রং গাঢ় ,বাদামি, কালচে হতে পারে। একটি বিশেষ স্থানে বা বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের পরিবর্তন হয়ে থাকে। যেসব কারণে ত্বকের রং গাঢ় হতে পারে সেগুলো হলো,
* মেছ্তা
* থাইরয়েডের রোগ
* শরীরে আয়রনের আধিক্য
* লিভার সিরোসিস
* অ্যাডিসনস রোগ
* ত্বকের প্রদাহজনিত বা ক্ষত পরবর্তী অবস্থা
* কিছু ওষুধ সেবনের কারণে ।
শরীরের অনাবৃত অংশে যেমন মুখাবয়বে ত্বকের রংয়ের পরিবর্তন হলে সাধারণত চিকিৎসা নেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মেছতা তেমন একটি পরিবর্তন। এটি কোনো রোগ নয়। ইংরেজিতে ক্লোজমা/ মেলাসমা বলা হয়ে থাকে। সাধারণত ত্রিশোর্ধ্ব নারীরা আক্রান্ত হন। তবে পুরুষরাও (৫%) আক্রান্ত হতে পারেন। গর্ভবতী নারীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সর্বাধিক এবং এটিকে তখন প্রেগন্যান্সি মাস্ক বলা হয়ে থাকে। গাঢ় বর্ণের ত্বকের লোকদের যেমন এশিয়ান ও হিসপ্যানিকদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
মেছতা কি : সাধারণ দাগের মতো ত্বকের অনাবৃত অংশে গাঢ় বাদামি বা কালো রংয়ের পরিবর্তন। ত্বকের রংয়ের পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো লক্ষণ থাকে না। গাল, ঠোঁট, নাক, কপাল এমনকি হাতের খোলা অংশে দেখা দেয়। সাধারণত শরীরের উভয় পাশে সমভাবে আক্রান্ত হয়ে থাকে।
কিভাবে মেছতা হয় : ত্বকে মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক বা পিগমেন্ট থাকে। আর শরীরে একই অনুপাত বা ঘনত্বে মেলানিন থাকে, যা বর্ণ হিসেবে প্রকাশ পায়। যাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তারা কালো এবং যাদের কম তারা ফর্সা হয়ে থাকেন। কোনো কারণে মেলানিনের পরিমাণ বা উৎপাদন বেড়ে গেলে ওই স্থান গাঢ় হয়ে থাকে। মেছতার ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রক্রিয়া হয়ে থাকে।
কি কারণে মেছতা হয় : মেছতার ক্ষেত্রে কি কারণে মেলানিনের উৎপাদন বা পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তা নিশ্চিত না হলেও নিম্নবর্ণিত কারণের যে কোনোটি হতে পারে,
* গর্ভাবস্থায় হরমনজনিত পরিবর্তন
* সূর্যালোক
* জন্মনিয়ন্ত্রণের বড়ি সেবন
* কিছু প্রসাধনী ব্যবহারের জন্য
* কিছু ওষুধ সেবনের কারণে
* বংশগত এবং
* কোনো প্রকার কারণ ছাড়া।
লক্ষণ : ত্বকের গাঢ় রংয়ের পরিবর্তন ছাড়া অন্য কোনো লক্ষণ দেখা যায় না।
চিকিৎসা : ত্বকের গাঢ় রংয়ের পরিবর্তন মেছতার কারণেই হয়েছে, এটি নিশ্চিত হওয়ার পর চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। গর্ভাবস্থার কারণে হয়ে থাকলে গর্ভ-পরবর্তী অবস্থায় সাধারণত ধীরে ধীরে ত্বক পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। মেছতা আক্রান্ত স্থানের গভীরতার ওপর অনেকাংশেই চিকিৎসার ফলাফল নির্ভর করে থাকে। বেশি গভীর হলে চিকিৎসার ফলাফল আশানুরূপ হয় না। নানাভাবে মেছতার চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে যেমন,
* ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে : হাইড্ডাকুইনন, অ্যাজেলিক এসিড, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড, স্যালিসাইলিক এসিড, রেটিনসেড এবং স্টেরয়ের প্রয়োগের মাধ্যমে। কখনো কখনো একাধিক ওষুধের মিশ্রণ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। রোগীর অবস্থার ওপর বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
* সানস্ক্রিন ব্যবহার এবং সূর্যালোক পরিবহার
* কেমিক্যাল সিলিং, ডার্মাব্রেশন / মাইক্রোডার্মাব্রেশন এবং লেজারের প্রয়োগের মাধ্যমে।
মেছতা চিকিৎসার অগ্রগতি খুবই ধীরগতিতে হয়ে থাকে। যে পদ্ধতিতেই চিকিৎসা প্রদান করা হোক না কেন অনেক ক্ষেত্রেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না এবং আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। মনে রাখবেন, মেছতা ছাড়াও ত্বকের গাঢ় রংয়ের পরিবর্তন অন্য রোগের কারণে হতে পারে। আপনার ত্বকের পরিবর্তন মেছতার কারণেই হয়েছে কিনা এবং কোন পদ্ধতিতে চিকিৎসা নেবেন সেজন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
ডা. এম আর করিম রেজা
কনসালটেন্ট, চর্ম ও কসমেটিকজনিত রোগ,
এশিয়ান জেনারেল হাসপাতাল, প্রগতি সরণী, দক্ষিণ বারিধারা, ঢাকা
Published in the daily 'Bangladesh Protidin',dated 11/02/2011http://www.bd-pratidin.com/index.php?view=details&feature=yes&type=gold&data=Study&pub_no=288&cat_id=3&menu_id=15&news_type_id=1&index=1
Thursday, February 17, 2011
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর মুনশী আব্দুল করিম
বিলেতের রাজ-পরিবারের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী এবং সুদীর্ঘ ৬৩ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া । ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণ জয়ন্তীর উপহা...
-
Carbonated water is water that has been infused with carbon dioxide gas under pressure. This produces a bubbly drink that’s also known as...
-
গ্রীষ্মকালে ঘামাচি আক্রান্ত হয়ে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে শিশুদের ঘামাচি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অপেক্ষাকৃত শীতল আবহাওয়ার স্থান...
-
শৌর্যবীর্যের প্রতীক বাঘ খুব পছন্দ করতেন মহীশুরের শের টিপু সুলতান । তার ব্রাঘ্যপ্রীতির সবচেয়ে বড় নিদর্শন কাঠের তৈরি করা একটি বাঘের মূর্তি, ...
No comments:
Post a Comment