Wednesday, April 27, 2022

মুদিক: ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে বাড়ি ফেরা

ইন্দোনেশীয় ভাষার 'মুদিক' শব্দটির বাংলা অর্থ 'বাড়ি যাচ্ছি'। মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে ইন্দোনেশিয়ার কয়েক কোটি মানুষ তাদের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন।

চীনা নববর্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। এরপরই ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ উল ফিতরের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভ্রমণ করে থাকে।


বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত দুই বার, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় আমরাও মানুষের ঘরমুখী যাত্রা দেখি। উড়োজাহাজ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ফেরি, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল—যে যেভাবে পারেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরেন। এমনকি পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাড়ির ফেরা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আবার একই রকম ভোগান্তি সহ্য করে সবাই ফেরেন কর্মস্থলে।

 ভোগান্তির চিত্র কমবেশি আমাদের সবারই জানা। তবে, এই যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। একসঙ্গে অনেক মানুষের চাপ পড়ায় উড়োজাহাজ, বাস, লঞ্চসহ প্রায় সব যানবাহনের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। যাদের স্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করা কঠিন, তাদের জন্য এই বাড়তি ভাড়া হয়ে ওঠে অসহনীয়।

করোনা মহামারির ২ বছরে ইন্দোনেশিয়ায় মুদিক ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা কম ছিল। তবে, এ বছরের মুদিক ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি থেকে ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করবেন এ বছর।

মুদিক যাত্রার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের একটি বিশেষ শাখা মাসখানেক আগে থেকে কাজ শুরু করে। দ্বীপ দেশটির এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতের ব্যবস্থা আকাশ বা জলপথে। এ বছর ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ জলপথে, ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ আকাশপথে এবং ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ ট্রেনে মুদিক যাত্রা করবেন। ইন্দোনেশিয়ায় শুধু জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপে রেল যোগাযোগ রয়েছে। বাকি ৬ থেকে ৭ কোটি মানুষ সড়কপথে মুদিক যাত্রা করবেন।

একই দ্বীপে মুদিক যাত্রার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সড়কপথ। তবে এ ক্ষেত্রে গণপরিবহন বাস ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ইন্দোনেশিয়ানরা। যার ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল এক্সপ্রেস হাইওয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ হলেও নন-টোল ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলে মানুষ মুদিক যাত্রা করেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলে মুদিক যাত্রা নিরুৎসাহিত করতে লরি, ট্রেন, জাহাজে গন্তব্যস্থলে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এ বছর কেবলমাত্র করোনার বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়া নাগরিকরা মুদিক ভ্রমণ করতে পারবেন। সেইসঙ্গে মুদিক যাত্রীদের সেবা দিতে মহাসড়ক, স্টেশন ও বন্দরে প্রায় ১৪ হাজার জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।ইন্দোনেশিয়ার সরকার দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় সাহায্য করে থাকে। দেশটির ৮ থেকে ৯ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মুদিক যাত্রার জন্য জাহাজ, ট্রেন, বাসের টিকেট বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। এ বছর দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার বাস।

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের বড় অবদান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে শহরে আসা এই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ ঈদে বাড়িমুখী হয় তাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। ইন্দোনেশিয়ার মতো ব্যবস্থা এ দেশেও নেওয়া হলে তাদের ঘরে ফেরার আনন্দটা বেড়ে যেতে পারে।

Wednesday, April 13, 2022

চৈত্র সংক্রান্তি/বৈসাবি


আজ চৈত্র মাসের শেষ দিন 'চৈত্র সংক্রান্তি'। বাংলা সন ১৪২৮ বিদায় নেবে, আসবে নতুন বছর ১৪২৯।

চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে লোকউৎসব। বাংলা সনের শেষ দিনটিকে ঘিরে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম করে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চড়ক পুজা, বেসম পুজা, শাকান্ন উৎসব, নীল উৎসব, ইত্যাদি নানা আয়োজনে পালন করে থাকে।
চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব ছিল #চড়ক পুজা এবং মেলা। বৈশাখের উদ্দীপনায় চাপা পড়ে গেলেও গ্রামবাংলায় একসময় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে আচার অনুষ্ঠানের অন্ত ছিল না। সারারাত ধরে চলতো কীর্তন, গৃহিণীরা সংক্রান্তি উপলক্ষে ঘরদোর লেপা-পোছা করতেন। সংক্রান্তি উপলক্ষে গৃহস্থ নারীরা মাসজুড়ে ব্রত পালন করতেন স্বামী, সংসার এবং ফসলের শুভ কামনা করে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা মেয়ে-জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থরা সকলকে নতুন জামাকাপড় উপহার দিতেন এবং হরেক রকম খাবার-দাবারের আয়োজন করা হতো।
পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করা উপলক্ষে উপজাতীয়রা তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব সেই প্রাচীনকাল থেকে পালন করে আসছে। চাকমারা #বিজু', মারমারা #সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা #বৈসু বলে অভিহিত করলেও পুরো পার্বত্য জেলায় তা #বৈসাবি নামেই পরিচিত। বৈসাবি অহিংসার প্রতীক, বন্ধুত্বের প্রতীক এবং মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন।
'

বৈসাবির প্রথম অক্ষর 'বৈ' দিয়ে, বৈশাখী বলা যেতে পারে। বৈ+সা+বি=বৈসাবি অর্থাৎ 'বৈ' মানে 'বৈসু'_ এটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'সা' মানে 'সাংগ্রাই', এটি মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'বি' মানে বিজু, এটি চাকমা সম্প্রদায়ের ভাষা। সুতরাং বছরের প্রথম দিনকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় 'বৈসু', মারমা সম্প্রদায় 'সাংগ্রাই' এবং চাকমা সম্প্রদায় 'বিজু' নামে অভিহিত করে থাকে। তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত হয়েছে 'বৈসাবি'।

Tuesday, March 22, 2022

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

বিগত পরপর তিনবছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ কবলিত দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের রাজধানী শহরের তালিকায় দিল্লির পরেই দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগে মারা যায়। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু সরাসরি বায়ুদূষণের কারণে ঘটেছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মোট জিডিপির ৩- ৪%।

বায়ুদূষণ কি: বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ থাকে। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এটির মাত্রার উপর ভিত্তি করে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী দৈনন্দিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রতি ঘনমিটারে পিএম-২.৫ এর মাত্রা ১০ এর নিচে থাকা প্রয়োজন। 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২১ সালে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ৭৬.৯, যা গ্রহনযোগ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ গুন বেশি।

বায়ুদূষণের কারণে কি রোগ হয়: ক্যান্সার, হৃদ্‌রোগ, ত্বকের বিভিন্ন রোগ, হাঁপানি সহ ফুসফুসের অন্যান্য অসুখ এবং আরো অনেক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ বায়ুদূষণ। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণের কারণে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে স্নায়বিক এবং প্রজনন সমস্যা হতে পারে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে। গর্ভবতী মায়ের দেহে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাবের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বায়ুদূষণের কারণে। সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং গড় আয়ু কমিয়ে দেয়।

বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত থাকার উপায় কি: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত। কলকারখানা, যানবাহন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণেই মুলত বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। জনগণকে বায়ুদূষণের বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করলে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব থেকে কিছুটা মুক্ত থাকা যায়।


Wednesday, February 17, 2021

সাইরাস দি গ্রেট

 পার্সিদের কাছে তিনি পিতা এবং ব্যাবিলনীয়দের কাছে মুক্তিদাতা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। মানব সভ্যতার ইতিহাসে শাসনব্যবস্থা, সমাজ সংস্কার, মানবাধিকার, রাজনীতি ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তিনি যে প্রভাব রেখে গিয়েছেন তা পৃথিবীর অন্য কেউ পারেনি। বর্তমান ইরানের জাতিসত্তার ভিত্তি তিনিই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

তিনি একমাত্র অ-ইহুদি ব্যক্তিত্ব, যাকে বাইবেলে মেসিয়াহ বা স্রষ্টার প্রতিশ্রুত প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মুসলিম ধর্মালম্বীদের কেউ কেউ তাঁকে কোরআন শরীফে বর্ণিত যুল কারনাইন বলে দাবি করে থাকে। তার গুণে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং #আলেকজান্ডার দি গ্রেট, যিনি নিজের উপরে তাঁকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে স্থান দিয়েছেন। তিনি পারস্যের আকিমেনিড সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (যেটি ইউরোপ থেকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া হয়ে ভারত উপমহাদেশের সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল এবং পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল)। তিনি শুধু একজন যুদ্ধজয়ী বীর ছিলেন না, বরং একজন দক্ষ মহান শাসক হিসেবে স্বীকৃত। কোন রাজ্য বিজয়ের পর সেখানকার প্রজাদের তিনি তাদের নিজেদের ধর্ম ও সংস্কৃতি অনুসরণে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। প্রজাদের তিনি সন্তানের মতো স্নেহপূর্ণ আচরণ করতেন, যার কারণে তাদের কাছে তিনি পিতা হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। ব্যবিলন জয় করে সেখানে আটক ইহুদিদের মুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। তিনি প্রজাদের প্রতি যে আচরণ করতেন সেটিই ইতিহাসে মানবাধিকারের প্রথম পাঠ হিসেবে United Nations কর্তৃক স্বীকৃত। 

বিশাল সাম্রাজ্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করে তিনি রাজ্য বিভক্তির মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণা পত্র প্রণয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। তিনিই সর্বপ্রথম পোষ্টাল সার্ভিস প্রবর্তন করেছিলেন। বিজ্ঞান ও স্থাপত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। #পাসারগেদে নামে পরিকল্পিত রাজধানী গড়ে তুলেছেন, যেটি এখন ইরানে মানবসভ্যতার ঐতিহ্য হিসেবে UNESCO কর্তৃক সংরক্ষিত।

#সাইরাস দি গ্রেট এর জন্মতারিখ ও ধর্ম পরিচয় জানা যায় নি। তিনি পার্সীয়ান সাম্রাজ্যের আনসানে খৃষ্টপূর্ব  ৬০০ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন বলে ধারণা করা হয়। খৃষ্টপূর্ব ৫৫৯ থেকে ৫৩০ সাল পর্যন্ত তিনি আকিমেনিড সম্রাট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।


Wednesday, February 10, 2021

ইকথায়োসিস: জানুন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন

ইকথায়োসিস ত্বকের একটি রোগ। এ রোগে ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ, ফাটা আঁশের মতো হয়ে থাকে। গ্রীক শব্দ ‘ইকথাইস’ মানে মাছ। যদিও সবক্ষেত্রে আক্রান্ত ত্বক মাছের আঁশের মতো নাও হতে পারে।

প্রায় ২৫ ধরনের ‘ইকথায়োসিস’  থাকলেও, ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ‘ইকথায়ওসিস ভালগারিস’ নামে জন্মগত রোগ হিসেবে এটি প্রকাশ পায়। জন্মের পর প্রথম বছরেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। জন্মগত ত্রুটি ছাড়াও পরবর্তীতে অনেকে এ আক্রান্ত হতে পারেন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বর্ণের ও সব বয়সীরাই এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

সাধারণত প্রতি ৩০০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ত্বক ছাড়াও  এ রোগের লক্ষণ চোখেও দেখা দিতে পারে। শীত ও শুষ্ক মৌসুমে এই রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। ইকথায়োসিস কোনো মারাত্মক জীবনহানিকর জটিল রোগ নয়। সংক্রামক নয় বলে এই রোগ সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।

কিভাবে হয়?

আমাদের ত্বকের কোষগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়ে থাকে। পুরাতন কোষ ঝরে গিয়ে সেখানে নতুন কোষ জায়গা করে নেয়। কোনো কারণে পুরাতন কোষ ঝরে পড়ার প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে কিংবা খুব দ্রুত নতুন কোষ তৈরি হতে থাকলে এ রোগ দেখা দিয়ে থাকে।

লক্ষণ কি?

এই রোগে সামান্য শুষ্কতা থেকে ত্বক ফেটে যাওয়া, ফোস্কা পরার মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সাধারণত আক্রান্ত ত্বক শুষ্ক, রুক্ষ, আঁশের মতো হয়ে থাকে। প্রায় সমস্ত শরীরের ত্বকে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেয়ে থাকে। আঁশের রঙ সাদা থেকে গাড় বাদামি হতে পারে। চুলকানি অনুভূত হতে পারে।

চিকিৎসা

এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ করা যায় না। তবে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।

* যাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ শুধু শুষ্ক ত্বক তারা বিভিন্ন ধরনের ময়েশ্চারাইজারিং লোশান ক্রিম বা গোসলে মেডিকেটেড ওয়েল ব্যবহার করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় মেডিকেটেড সাবান ব্যবহার করতে হবে।

* কী ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হবে তা সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির লক্ষণের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে।ত্বকে ব্যবহারের বিভিন্ন ওষুধের পাশাপাশি অনেক সময় মুখে খাবার ওষুধ দেওয়া হয়ে থাকে।

* আক্রাক্ত রোগীকে সচেতন ও রোগটি সম্পর্কে জানানো দেওয়া এই রোগের চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে।

জটিলতা

* ত্বকের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে বিধায় এ রোগে আক্রান্তদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

* ত্বক ফেটে যাওয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপনে চলাফেরায় অসুবিধা হতে পারে।

* ত্বকে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হতে পারে।


* চোখ আক্তান্ত হলে দৃষ্টি সমস্যা হতে পারে।


মনে রাখবেন অন্যান্য জন্মগত জটিল রোগের লক্ষণ  হিসেবে বা একই সঙ্গে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া সোরাইয়াসিস, একজিমা ইত্যাদি রোগেও একই ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এ রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি, যা রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবনযাপনে সাহায্য করবে।


Saturday, December 12, 2020

প্রতিদিন গোসল করা কি প্রয়োজন?

 শীতের দিনে গোসল করা নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠায় থাকেন, বিশেষ করে গরম পানির ব্যবস্থা না থাকলে। গোসলে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ময়লা দুর হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রতিদিন গোসল করা কি জরুরি? আসলে প্রতিদিন গোসল করা একটি সামাজিক রীতি এবং কিছুটা ব্যক্তিগত অভ্যাসও বটে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন গোসলের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয় জেনে নেই।


কতবার গোসল প্রয়োজন?

প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও সপ্তাহে ঠিক কতবার গোসলের প্রয়োজন এই বিষয়ে নানা মত রয়েছে। ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন কিংবা ১/২/৩ দিন পরপর গোসল করা যেতে পারে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা ১/২ দিন পরপর আর যাদের  ত্বক শুস্ক তারা সপ্তাহে ১/২ দিন গোসল করতে পারেন। তবে যাদের ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম তৈরী হয়, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করেন কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে কাজ করেন তাদের প্রতিদিনই গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন না থাকলেও হাত এবং মুখ পরিস্কার ও যত্ন নিতে হবে অবশ্যই।

প্রতিদিন গোসলের ক্ষতি কি?

আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয় যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও ত্বকের বাইরে স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু বাস করে যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভুমিকা রাখে। গোসলের সময় ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং এসব জীবাণু পরিস্কার হয়ে যায়, যা ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসখসে রুপ নিতে পারে, যে কারণে চুলকানি অনুভূতি হতে পারে। ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রামক রোগও হতে পারে।


কিভাবে গোসল করবেন?

• কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে দ্রুত গোসল সেরে ফেলুন।

• গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় এবং তেলযুক্ত সাবান ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন শরিরের সব স্থানে এবং প্রতিবার গোসলেই সাবানের প্রয়োজনীয়তা নেই। হাত, মুখ, বগল,এবং উরু এলাকায় সাবান ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

• গোসলের সময় বেশি জোরে ত্বক ঘষাঘষি করবেন না। নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করেতে পারেন।

• গোসল না করলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে পারেন।

• গোসলের পর নিজের পছন্দমত বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।


মনে রাখবেন শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকে তাই প্রতিদিন গোসল নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোন‌ কারন নেই, বরং প্রতিদিন গোসল না করাই স্বাস্থ্যকর। তবে এজন্য ধুলা-বালি এবং স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি একবারে গোসল না করলেও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে।  প্রতিদিন গোসল না করলে হাত, পা এবং মুখ নিয়মিত পরিস্কার এবং যত্ন নিতে হবে অবশ্যই। তাই আপনার ত্বকের ধরন এবং পেশার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে গোসলের রুটিন ঠিক করে নিন। ত্বকের ধরন নির্ণয় করতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।



লেখক

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 22, 2020

শীতকালে ত্বকের যত্ন

ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজেই সুস্থ ও সুন্দর ত্বক সুস্থ শরীরের জন্য অপরিহার্য একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এজন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে।

ত্বকে অবস্থিত গ্রন্থির নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুস্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস এবং অ্যালার্জি জনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদেরও এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম প্রতিপালন করে শীতে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।


গোসল

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুস্ক হয়ে যায়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বাথ, সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার

একজিমা, সরিয়াসিস,ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করা উচিত। ময়েসচারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তার পাশাপাশি  ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। ক্রিম, লোশান, জেল এমনকি সাবান হিসেবেও এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

পোশাক

টাইট ফিট এবং সিনথেটিক/কৃত্রিম তন্তুর পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারন হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিনেন, নাইলন ইত্যাদির পরিবর্তে কটন, সিল্কের তৈরি পোশাক পরিধান করুন।

হিউমিডিফায়ার

কক্ষে জলীয় বাস্প ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যাবহার করতে পারেন। এটির মাধ্যমে রুমের জলীয় বাস্প ৪০-৬০% এ রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

মনে রাখবেন একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন শীতকালে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস এবং পরজীবিজনিত ত্বকের সংক্রামণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কাজেই শীতে তকের যত্ন নিন। সর্বোপরি খোলামেলা আলোকিত পরিবেশে দুঃশ্চিন্তামুক্ত, পরিস্কার-পরিছন্ন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন।

লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...