Monday, November 4, 2024

কলকাতার সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে অবাঙালি নবাব

সময়টা উনিশ শতক। ব্রিটিশ শাসন পুরোপুরি কায়েম হয়ে গেলেও কিছু কিছু দেশীয় রাজ্য তখনও স্বমহিমায় বিরাজ করছে। তেমনই এক রাজ্য অযোধ্যা। বসন্ত এসেছে, রঙ লেগেছে নবাবের মনেও। কবে যে আবির মেখে উদযাপন করবেন! কিন্তু হঠাৎ নবাবের কানে এল, হিন্দুরা নাকি এবছর হোলি খেলবে না। কিন্তু কেন? রাজদরবারে ডাক পড়ল কয়েকজন ব্রাহ্মণের। তাঁরা নবাবকে জানালেন, যেহেতু একই দিনে মহরম এবং হোলির দিন পড়েছে, তাই সেবছরের জন্য রং মাখার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে রংকে হারাম মনে করা হয়। শরীরের কোথাও রঙ লেগে থাকলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে প্রবেশ করেন না। কিন্তু হোলির দিনে তো গোটা শহর রঙে ভরে উঠবেই। অওধে হিন্দুদের এই কথা শুনে মৌলভিদেরও ডেকে পাঠালেন নবাব। আর জানিয়ে দিলেন, দুই ধর্মের অনুষ্ঠানই একইরকম মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হবে। নিজে মুসলমান পরিবারে জন্মালেও প্রজাদের ধর্মই যে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ধর্ম। সেখানে হিন্দু মুসলমান ভেদ নেই। সেবারের হোলির অনুষ্ঠানে যথারীতি রং মেখে হাজির হয়েছিলেন নবাব নিজেও। 

ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাসে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ এক কিংবদন্তি। ১৮৫৫ সালে প্রবল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যেও তিনি অযোধ্যার হনুমান গঢ়ী মন্দির রক্ষা করেছিলেন। তবে ব্রিটিশ সরকারকে চিনেছিলেন শত্রু বলেই। চরম এক প্রতিকূল পরিবেশে অনেক বাধা বিপত্তি এড়িয়ে রাজ্য চালাতে হয়েছে তাঁকে। 

সময়টা ১৮৫৬ সাল। কোম্পানির কাছে অযোধ্যার নবাবী হারালেন ওয়াজেদ আলী শাহ। পেনশন নিয়ে লখনউয়ের কোনও প্রাসাদে নিশ্চিন্তে থাকতেই পারতেন। তবে লখনৌ থেকে বেনারস হয়ে তাঁর বজরা নিয়ে পৌঁছলেন কলকাতার বিচালিঘাটে। তার ইচ্ছে ছিল কোম্পানির কাছে সওয়াল করবেন সিংহাসন উদ্ধারের জন্য। সফল না হলে যাবেন লন্ডনে, রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে। ইংরেজের ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে তাঁর মোহ তখনও কাটেনি। 

বছর না ঘুরতেই ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে যোগ দিল অযোধ্যা। কলকাতায় গ্রেফতার করে ওয়াজিদ আলী শাহকে রাখা হলো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে। মহাবিদ্রোহের পরাজয় দিয়েই লক্ষ্ণৌ শহরে নবাবি শাসনের ইতি ঘটল।‌ দুই বছর বন্দি জীবন শেষে তিনি কলকাতাতেই পেনশন নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে গড়ে উঠল নির্বাসিত নবাবের নতুন নবাবিয়ানা। যতই নির্বাসন হোক, নবাবিয়ানায় সহজে ছেদ পড়া মুশকিল। নবাব ওয়াজেদ আলি তাই সঙ্গে করে আনলেন ফেলে আসা স্মৃতি। জাঁকজমক বজায় রাখতে কলকাতা শহরের মধ্যেই গড়ে তুলেছিলেন তাঁর পরিচিত দ্বিতীয় এক টুকরো লক্ষ্মৌ। নবাবি সংস্কৃতি, আমোদ আহ্লাদ, এমনকি নবাবি খাবারও তাঁর হাত ধরে কলকাতায় পাড়ি দিল। একদিকে চিড়িয়াখানা, বাইজি সংস্কৃতি আর অন্যদিকে বিরিয়ানি কিংবা পাখির লড়াই অথবা ঘুড়ি ওড়ানো কলকাতার অন্দরমহলে দিব্যি জায়গা করে নিল তাঁর আমলে। 

তবে জৌলুশ জাঁকজমকপূর্ণ নবাবি সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজিদ আলী শাহ ছিলেন সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্যশিল্পের অনুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক। মেটিয়াবুরুজে নবাবের বাসগৃহ রীতিমতো শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছিল। লখনউয়ে ওয়াজিদ আলির দরবারেই ঠুমরি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায়। আর মেটিয়াবুরুজ থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বুকে।

অনেক গান রচনা করেছেন তিনি। মাতৃভূমি লখনউ থেকে তাঁর বিচ্ছিন্নতা প্রকাশ করতে গিয়ে 'বাবুল মোরা নাইয়াহার ছুটো হি যায়ে (বাবা, আমার বাড়ি এখন আমার কাছে হারিয়ে গেছে)' রচনা করেছিলেন। এই ঠুমরির মধ্যে আছে তাঁর বিলাপ, 'আংরেজ বাহাদুর আয়ে, মুলক লেঁই লিহোঁ (সাহসী ইংরেজরা এসে দেশ কেড়ে নিয়েছে)।'

তাঁর দরবার যন্ত্রসংগীতেও ছিল তুলনাহীন। সরোদ, সানাই, তবলাকেও কলকাতায় জনপ্রিয় করে তোলেন তিনি। কত্থক নৃত্যশৈলীকে তিনি এতটাই আত্মস্থ করেছিলেন যে অনেক নৃত্যনাটিকাও তৈরি করেছিলেন। তিনি কত্থকের নতুন এক লখনউ ঘরানা তৈরি করে ফেলেছিলেন। কত্থক সর্বভারতীয় নৃত্যকলায় জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব তাঁর।

লেখনী ও মঞ্চেও পারদর্শী ছিলেন এই নবাব। ১৮৪৩ সালে লেখা নাটক ‘রাধা কানহাইয়া কা কিস্সা’ মঞ্চস্থ করেন। এই কিস্সাকেই বলা যায় প্রথম আধুনিক উর্দু নাটক। হিন্দুস্তানি থিয়েটারের প্রথম নাট্যকার হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। 

বাংলায় যখন নবজাগরণের ঢেউ চলছে ঠিক তখন লক্ষ্ণৌ ঘরানার সাংস্কৃতিক চর্চা চলছিল নবাবের মেটিয়াবুরুজের দরবারে। ঘুড়ি উৎসব, আলু বিরিয়ানি, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই কলকাতার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিনত করার কৃতিত্ব নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে দেয়া হয়ে থাকে।

(সংগৃহিত ও সম্পাদিত)

Friday, November 1, 2024

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা


 মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় একটি সবজি। এটির রয়েছে নানা রকম উপকারিতা এবং পুষ্টিকর গুনাগুণ, যার জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের 'পাওয়ার হাউস' বলা হয়ে থাকে। বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদানেও সমৃদ্ধ এই সবজি। তাই মিষ্টি কুমড়া মানবদেহে নানা উপকারী ভূমিকা পালন করে।

ত্বক

মিষ্টি কুমড়ায় থাকে ভিটামিন এ, সি এবং ই- যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। ভিটামিন সি কোলাজেন বাড়ায়,  আর ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’ থেকে সৃষ্টি ক্ষতি পূরণ করতে ভূমিকা পালন করে। কুমড়ায় থাকা বেটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ যে পরিনত হয়, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে প্রতিরোধ করে।

চোখ

ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। মিষ্টি কুমড়ায় লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন থাকে। বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে এই দুইটি উপাদান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা 

উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ এবং সি থাকার কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া।অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া ক্যানসার প্রতিরোধেঝ সাহায্য করে।

হৃৎপিন্ড ও রক্তচাপ 

পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কুমড়া হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে নানা ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

 পটাসিয়ামের উৎস

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। স্বাভাবিক রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন ও মাংসপেশীর কার্যকারিতার জন্য পটাশিয়াম অপরিহার্য। এছাড়াও পটাসিয়ামের অভাবে কিডনিতে পাথর হওয়া ও হাড় ভঙ্গুর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।

পরিপাকতন্ত্র

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা আঁশ পাকস্থলীর জন্য উপকারী। কুমড়া প্রোবায়োটিকসের উৎস, যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য দরকারি। আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। রক্তে কোলেস্টেরল ও কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা ঠিক রাখতেও ভূমিকা রাখে আঁশ।

মিষ্টি কুমড়ার আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজেও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। এছাড়াও জিঙ্ক থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

Friday, October 18, 2024

হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ


২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (এইচএফএমডি) ছড়িয়ে পড়েছিল। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলেন অভিভাবকরা। ভাইরাসজনিত এই রোগটি আগে আমাদের দেশে বেশি দেখা যেত না। তবে এটি খুবই ছোঁয়াচে ও সংক্রামক।মূলত শিশুদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা গেলেও, যেকোনো বয়সীরা এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

কক্সাকি নামক এক ধরনের ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী। এটি মারাত্মক জটিল কোনো রোগ নয়, জীবনহানির ঝুঁকিও নেই।

✓কিভাবে ছড়ায় 

আক্রান্ত ব্যক্তির ফোস্কা থেকে নির্গত রস, হাঁচি কাশি, ব্যবহৃত পোশাক এবং স্পর্শ করা যেকোনো জিনিস, এমনকি মলের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়।

জনসমাগম যেসব জায়গায় বেশি, সেখান থেকেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

✓লক্ষণ কি

এ রোগ হলে হালকা জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, শরীরে নানা জায়গায় পানিভর্তি ফুসকুড়ি, মুখের ভেতরে ক্ষত, মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা নিঃসরণ, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। 

হাত, পা ও জিহ্বাতে সাধারণত ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও হতে পারে।

ত্বকের ফোস্কা বা ফুসকুড়ি অনেকটা জলবসন্তের মতো। 'ফুট অ্যান্ড মাউথ' নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যার সঙ্গে এটির কোনো সম্পর্ক নেই।

✓চিকিৎসা

ভাইরাসজনিত এই রোগের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারণত আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। 

অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই এই রোগের চিকিৎসায়।

সাধারণত লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরিচর্যা, পর্যাপ্ত পানীয় দিতে হবে। তবে ফলের জুস মুখ ও গলাব্যথা বাড়াতে পারে বলে এগুলো থেকে দূরে থাকাই ভালো। রোগীকে নরম ও কম মশলাযুক্ত খাবার দেওয়া উচিত।

✓প্রতিরোধ

শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এবং হাঁচি-কাশি থেকে দূরে থাকতে হবে।

এছাড়া, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত শিশুকে স্কুলে পাঠানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই।

Tuesday, October 8, 2024

দুর্গাপূজার ইতিহাস



বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। যে দেবীকে উৎসর্গ করে এই উৎসব তার নাম দুর্গা। দেবী দূর্গার উৎপত্তি হয় বেদ পরবর্তী যুগে।‌ বেদের কোথাও দূর্গার নাম নেই। 
আর্য সভ্যতার আগে সমাজে কৃষিজ উৎপাদনের উৎস রূপে অম্বিকারূপী দূর্গাতে পরিণত হয়েছেন। বৈদিকযুগের পর যখন এশিয়া মাইনর এলাকা থেকে যাযাবর মেষপালক গোষ্ঠী পাঞ্জাবে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে, তখন থেকেই অনার্যদের সাথে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও মিথষ্ক্রিয়া তৈরি হয়। যার ফলে অনার্যদের লোকায়ত স্তরের কিছু দেব- দেবীর আর্যীকরণ ঘটে। অসুরবধের উদ্দেশ্যে উৎপত্তির গল্প ছাড়া‌ দেবী দুর্গার কোন জন্ম ইতিহাস পাওয়া যায় না‌। আনুমানিক খ‌ষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে তৃতীয় শতকের মধ্যভাগে পারস্যের সাথে ব্যবসা আর যোগাযোগের সুত্রে সিংহবাহিনী দুর্গার জন্ম।
উপমহাদেশে দুর্গাপূজার ইতিহাস পাওয়া যায় সুলতানি যুগে। এখন যে পূজার প্রচলন তা শুরু হয় ইসলামী শাসনের সময়ে। হিন্দু নবজাগরণের জন্য ষোড়শ শতকের পন্ডিত রঘুনন্দনের পুস্তকে দুর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে। 
বাংলাদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন হয় মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে, ষোড়শ শতাব্দীতে। মোগল সম্রাট বিদূষক কুল্লুকভট্টের পিতা উদয়নারায়ণের পৌত্র অর্থাৎ কুল্লুকভট্টের পুত্র তাহিরপুরের রাজা (বর্তমান রাজশাহী) কংসনারায়ণ রায় প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয় করে প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবে আয়োজন করেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাদুরিয়ার (রাজশাহী) রাজা জয় জগৎ নারায়ণ প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় করে বাসন্তী দুর্গোৎসব করেন। তারপর থেকে রাজা ভুঁইয়ারা নিয়মিতভাবে দুর্গাপূজা আরম্ভ করেন। 
অবিভক্ত বাংলায় দুর্গাপূজা বলতে ১৬১০ সালের লক্ষীকান্ত মজুমদারের পূজাকেই বোঝায়। কলকাতার এই পূজায় ভক্তির চেয়ে বেশি ছিল বিত্ত বৈভবের প্রদর্শনী। এ সময়ে প্রভাবশালী জমিদার, সামন্তরাজরা ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য এই পূজার চল করেন। আঠারো উনিশ শতকের পূজা মূলত জমিদারদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল।

দেবী দুর্গা ঢাকায় ঠিক কবে এসেছিলেন তা বলা বেশ শক্ত।ঢাকার দুর্গাপূজা উদযাপনে সবচেয়ে আগের তথ্য পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনী থেকে। ১৮৩০ সালের সূত্রাপুরের একটি পূজার উল্লেখ করেছেন তিনি। ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন ঘটে নবাব সলিমুল্লাহর আমলে। সে সময় সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি ও বিক্রমপুর হাউসে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হতো। ১৯২২-২৩ সালে আরমানিটোলার জমিদার ছিলেন বিক্রমপুরের রাজা ব্রাদার্সের বাবা শ্রীনাথ রায়, তার বাড়ির পূজাও সে সময় বিখ্যাত ছিল।
বিংশ শতকের শুরুতেও বাংলায় অভিজাতদের পারিবারিক উদযাপন ছিল দুর্গাপূজা। যেহেতু কেবল বাবুগিরি আর ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্যই পালিত হত এ উৎসব, সে কারণেই ধর্মীয়ভাবের চেয়ে সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেত আমোদ-প্রমোদ। কিন্তু বিত্তবান বাবুরা দুর্গোৎসবের যে জোয়ার আনতে চেষ্টা করেছিলেন তাতে পঙ্কিলতাই ছিল বেশি । বাবুদের অর্থকৌলিন্য প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা লাভের উপায়ও ছিল এই উৎসব।
অভিজাতদের বাইরে এখন যে সার্বজনীন পূজা প্রচলিত, তা শুরু হয় গত শতকের তিরিশের দশকে । বাংলাদেশে সার্বজনীন পূজা ব্যাপক আকারে শুরু হয় ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর। দেশ ভাগের পর এককভাবে পূজা করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে, যার কারণে ব্রাক্ষ্মণ-অব্রাক্ষ্মণ নির্বিশেষে মিলেমিশে পূজা করার চল শুরু হয়। তবে পুরান ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে এখনো পারিবারিক পূজার চল রয়ে গেছে। সনাতন ধর্মী সকলকে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। (সংগৃহিত ও সম্পাদিত)
#BMW #durgapuja #trend #Photography #MRKR

Wednesday, October 2, 2024

ইন্দোনেশিয়ার সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা



স্বাস্থ্য সেবার মান এবং গুনগত বিচারে পার্শ্ববর্তী সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির বিপুল সংখ্যক নাগরিক চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং হংকং ভ্রমণ করে থাকে। তবে সকল নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে আছে দেশটি। 

জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প চালু করে ইন্দোনেশিয়া, যা পৃথিবীতে সর্ববৃহৎ বীমা প্রকল্প হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। চাকরিজীবীদের মাসিক বেতন এবং অন্যদের মাসিক আয় অনুযায়ী প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। আর গরিব ৯-১০% (মাসিক আয় ৩০০ ডলারের নিচে) জনগণের প্রিমিয়াম সমাজকল্যাণ দপ্তর থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে। 

২০২৩ সালের হিসেব অনুযায়ী জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% এই স্বাস্থ্য বীমার আওতায় এসেছে। বিত্তবান শ্রেণীর অনেকে  অপছন্দ করলেও এই সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা বঞ্চিত গরীব জনগণের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করেছে অবশ্যই। প্রথম ৫ বছর এই স্বাস্থ্য বীমা বাধ্যতামূলক ছিল না, তবে এখন সেবা গ্রহণ না করলেও সকল নাগরিককে এই বীমার প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে হবে। দেশটির ২৩২৯৫টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে শুরু করে সকল স্তরের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এটির সঙ্গে যুক্ত। বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যেই এই স্বাস্থ্য বীমা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষ এই সেবা গ্রহণ করে থাকে। প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা থেকে নিবিড় পরিচর্যা পর্যন্ত সেবার খরচ এই বীমার মাধ্যমে পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশটির সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার সাফল্য বিশ্বে নজর কেড়েছে। জাপান সহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এই জনকল্যাণমূলক সেবা নিয়ে গবেষণা করছে।

২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক আর্থিক মূল্য কমবেশি ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ কমবেশি ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর সমাজ কল্যাণ দপ্তরের মাধ্যমে ১.৫ থেকে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয়িত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু করার বিকল্প নেই। বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তুলতে স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

Saturday, September 28, 2024

চৌর্য পুঁজিবাদ


যেসব দেশে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলি দুর্বল, সুশাসন ও ন্যায় বিচার অনুপস্থিত সেখানে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পুর্ন ভাবে বিকশিত হওয়ার আগের ধাপে ক্রনি ক্যাপিটালিজম বা চৌর্য পুঁজিবাদ গড়ে উঠে। সরকারের সঙ্গে যোগসাজশে এই ব্যবস্থায় দেশের কিছু পুঁজিপতি চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পুঁজি সংগ্রহ করে থাকে।

তারা চুরি করা অর্থের একটি অংশ শিল্প কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগ করেন। ফলে দেশের মানুষের বড় একটি অংশের কর্মসংস্থানও ঘটে। বাংলাদেশে পতিত ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের সময় বেক্সিমকো, বসুন্ধরা, সামিট, এস আলম, ইউনাইটেড, ওরিয়ন ইত্যাদি গোষ্ঠী এই চৌর্য পুঁজিপতিদের উদাহরণ। এই চৌর্য পুঁজিপতিরা তাদের চুরি করা অর্থ শিল্পে বিনিয়োগ করে বিপুল স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করেন। চুরি করা অর্থের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার করলেও দেশে থাকা স্থাবর সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী পর্যায়ে তারা নিজেদের স্বার্থে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগী হন। এই পর্যায়ে তাদের চুরির সুযোগ সংকুচিত হয় বটে, তবে ইতিমধ্যেই অর্জিত বিপুল ধন সম্পদের সুরক্ষা করা নিশ্চিত হয়। থাইল্যান্ড বা দক্ষিণ কোরিয়া এই পুঁজিবাদী রূপান্তরের উদাহরণ।

বাংলাদেশের চৌর্য পুঁজিপতিরা দেশে থাকা তাদের স্থাবর সম্পত্তির সুরক্ষা নিয়ে মোটেও চিন্তিত ছিলেন বলে মনে হয় না। স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্ট মাফিয়া  সরকার কাঠামোতে নির্বাহী বিভাগ নিয়ন্ত্রণে তাদের অসীম ক্ষমতা এবং দাম্ভিকতায় তারা নিজেদের ফেরাউন মনে করা শুরু করেছিলেন। চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে নিজেদের অর্জিত সম্পদের সুরক্ষায় দেশে মোটামুটি ধরনের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি তাদের চিন্তাভাবনায় ছিল না। যার ফলে যে স্বৈরাচারী ফ্যাসিষ্ট মাফিয়া সরকারের যোগসাজশে তারা অর্থ সম্পদ অর্জন করেছিলেন সেটি পতনের সঙ্গে সঙ্গেই চৌর্য পুঁজিপতি অনেকের স্থাবর সম্পত্তিতে হামলা বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা হয়েছে।

গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে এসব চৌর্যপুজিদের উচিত দেশে সুশাসন ও ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়তা করা। তাতে তাদের চুরির সুযোগ হয়তো কমে যাবে তবে ইতিমধ্যে চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে অবশ্যই। একইসঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াও সহজভাবে সম্পন্ন হবে।

#BMW #Photography #Trend #TrendingPost #CronyCapitalism

Thursday, September 26, 2024

Exfoliation



Do you experience dull, dry or rough skin? Do you get congestion or breakouts? Exfoliation can help you achieve healthy, smooth and clear skin.

Dermatologists recommend regular exfoliation to support healthy skin function as an effective way to tackle a variety of skin concerns. 

Human skin typically goes through a 28-day cycle, from new cells being born at the bottom of the epidermis to shedding off at the surface. This process called desquamation, gets slower with aging. Skin gets more dull, drier or an increase in texture over the years.

Exfoliation can help to speed up this decline by increasing cell renewal to give you brighter and smoother skin. It also sloughs off surface, dull dead skin cells, this delivers a smoother surface. Exfoliation can make aging skin appear instantly brighter, as it is increasingly smooth and can reflect the light more effectively. Exfoliation helps to putting the best face forward. 

Traditionally exfoliants were commonly physical. Physical exfoliants are granular scrubs that simply buff off dead skin cells from the surface of the skin.

Chemical exfoliants are also known as Hydroxy Acids. Salicylic Acid or Lactic Acid, two popular examples of chemical exfoliants to effectively resurface and smooth the skin. They are available in different brands and formulations. Exfoliation boosts cell renewal, deliver fresh, plump skin cells.

It is recommended to consult with #dermatologist before selecting any chemical exfoliants.

#Skin #beauty #Aesthetic #BMW #healthylifestyle

কলকাতার সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে অবাঙালি নবাব

সময়টা উনিশ শতক। ব্রিটিশ শাসন পুরোপুরি কায়েম হয়ে গেলেও কিছু কিছু দেশীয় রাজ্য তখনও স্বমহিমায় বিরাজ করছে। তেমনই এক রাজ্য অযোধ্যা। বসন্ত এসেছে, ...