Wednesday, June 25, 2025

পুরুষ সমকামীদের মধ্যে যৌনবাহিত রোগের উচ্চ হার: একটি বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ

যৌনবাহিত রোগ (এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি, এইচপিভি) বিশ্বজুড়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি সমস্যা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বছরে প্রায় ২০% মানুষ কোন না কোন যৌন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সমকামীদের মধ্যে যৌন রোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি। পুরুষ সমকামীদের (MSM – men who have sex with men) মধ্যে এসব রোগের সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। তুলনায় নারী সমকামীদের (WSW – women who have sex with women) মধ্যে এই হার অনেক কম।

এই পার্থক্য কেবল যৌন পরিচয় বা নৈতিকতার কারণে নয়, বরং শারীরিক, আচরণগত, সামাজিক এবং স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের পার্থক্য—এসবই এর পেছনে মূল কারণ।

✅ এইডস আক্রান্তের পরিসংখ্যান ও বৈশ্বিক চিত্র

🔸 UNAIDS-এর তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিশ্বে নতুন এইচআইভি সংক্রমণের প্রায় ২০–২৫% MSM সম্প্রদায়ের মধ্যে ঘটেছে, যদিও তারা জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্র অংশ।

🔸 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে CDC জানায়, MSM গোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণের হার সাধারণ জনগণের তুলনায় বহু গুণ বেশি।


✅ যৌন সংযোগের শারীরিক ঝুঁকি

🔹 অ্যানাল সেক্স এবং টিস্যু ভঙ্গুরতা

পুরুষ সমকামীদের মধ্যে অধিকাংশ যৌন সম্পর্কই পায়ু মাধ্যমে ঘটে, যেখানে রিসিভিং পার্টনারের (যিনি গ্রহণ করছেন) টিস্যু খুবই পাতলা এবং সহজে ছিঁড়ে যায়। এতে রক্তপাত ঘটে এবং ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সহজেই প্রবেশ করতে পারে। কাজেই HIV, সিফিলিস, হেপাটাইটিস B ও C-এর ঝুঁকি বহুগুণ বেশি।

🔹 ভ্যাজাইনাল সেক্সের তুলনায় অ্যানাল সেক্সে সংক্রমণ হার বেশি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, পায়ু সঙ্গমে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি সাধারণ ভ্যাজাইনাল সেক্সের তুলনায় প্রায় ১৮ গুণ বেশি।


✅ যৌন আচরণ ও সংক্রমণ প্রবণতা


🔹 অধিক সংখ্যক যৌন সঙ্গী

গবেষণায় দেখা যায়, অনেক MSM সম্প্রদায়ে একাধিক যৌন সঙ্গীর প্রবণতা বেশি, বিশেষ করে বড় শহরের উদার পরিবেশে। এর ফলে সংক্রমণের সুযোগ বেড়ে যায়।

🔹 অনেক ক্ষেত্রে অরক্ষিত যৌনতা (Unprotected sex)

নানা কারণে অনেক MSM ব্যক্তি নিয়মিত কনডম ব্যবহার করেন না—বিশেষ করে যদি সঙ্গীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয়। এতে STI ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে।

🔹 Chemsex" কালচার

কিছু সম্প্রদায়ে যৌনতার সময় ড্রাগ গ্রহণের প্রবণতা (যেমন meth বা GHB) দেখা যায়, যাকে বলা হয় chemsex। এতে যৌন চেতনা, সময় ও সতর্কতা বেড়ে যায়, ফলে অরক্ষিত যৌনতার সম্ভাবনাও বাড়ে।


✅ নারী সমকামীদের মধ্যে ঝুঁকি কম কেন?


🔹 যৌন সংযোগের ধরন

নারী সমকামীদের যৌন আচরণে পায়ু সঙ্গম সাধারণত থাকে না, ফলে রক্তপাতজনিত সংক্রমণের ঝুঁকি কম।

এছাড়া যৌন তরল আদান-প্রদানও তুলনামূলকভাবে সীমিত হয়।

🔹 STI এর ট্রান্সমিশনের সম্ভাবনা

যেসব STI সরাসরি রক্ত বা বীর্য তরলের মাধ্যমে ছড়ায়, সেগুলোর ঝুঁকি WSW গোষ্ঠীর মধ্যে তুলনামূলক কম।

🔹পারস্পরিক মনোযোগ ও কম সঙ্গী

গবেষণায় দেখা যায়, অনেক নারী সমকামী সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী, এবং কম সঙ্গীর সঙ্গে সীমিত থাকে, যা STI ঝুঁকি কমায়।


✅ স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা ও সামাজিক সংকোচ


🔹 গোপনীয়তা ও ভয়

অনেক MSM ব্যক্তি তাদের যৌন পরিচয় গোপন রাখেন, বিশেষ করে রক্ষণশীল সমাজে। ফলে তাঁরা নিয়মিত STI পরীক্ষা করান না।

🔹 চিকিৎসা পরামর্শ নিতে অস্বস্তি

অনেক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে MSM ব্যক্তিরা নিজের যৌন আচরণ নিয়ে খোলামেলা মুক্ত আলোচনা করতে পারেন না, ফলে সঠিক পরামর্শ ও চিকিৎসা পান না।


✅ চিকিৎসা ও সচেতনতা ব্যবস্থায় ভিন্নতা


🔹 PrEP (Pre-Exposure Prophylaxis) এর সীমিত ব্যবহার

যদিও HIV সংক্রমণ ঠেকাতে PrEP অনেক কার্যকর, অনেক MSM এখনো এই ওষুধ সম্পর্কে জানেন না বা চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে পারেন না।

🔹 স্বাস্থ্য প্রচারও অনেক সময় পুরুষ-নারী সম্পর্ক কেন্দ্রিক

অনেক STI সচেতনতা ক্যাম্পেইন শুধুই হেটারোসেক্সুয়াল (বিপরীতলিঙ্গী) সম্পর্কের দিকেই বেশি মনোযোগী। এতে MSM বা WSW গোষ্ঠী পিছিয়ে পড়ে।


✅ উপসংহার

পুরুষ সমকামীদের মধ্যে STI এবং এইডসের সংক্রমণ বেশি—এটা কোনো নৈতিক ব্যর্থতা নয়, বরং একটি জনস্বাস্থ্যগত বাস্তবতা, যার পেছনে রয়েছে যৌন আচরণের ফলে দৈহিক জটিলতা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকারের ঘাটতি এবং সামাজিক অগ্রহনযোগ্যতা।

অন্যদিকে, নারী সমকামীদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি কম থাকলেও তা একেবারে নেই—এমন বলা যায় না।


প্রতিরোধ সম্ভব—যদি তথ্য, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ উন্মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। রোগ নয়, মানুষকে বোঝা এবং সহযোগিতা করাই আমাদের সভ্যতার মূল শক্তি।

---

#SexualHealth #STIRisks #MSMAwareness #BMW #LGBTQHealth #ScienceNotStigma #viralpost  #InclusiveHealthcare #MRKR #health #AIDS #trend  #lesbian #homosexuality #disease #doctor

No comments:

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি!

 🧬অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে মানবসভ্যতা যেন এক নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। আগে যেসব সংক্রমণে মানুষ মৃত্যুবরণ করত, সেগুলো অ্যান্টিবায়ো...