ত্বক মানবদেহকে পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে থাকে, যেমন শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, ত্বকে অবস্থিত সংবেদনশীল স্নায়ুর মাধ্যমে ব্যথা স্পর্শ, চাপ, গরম ও ঠাণ্ডা অনুভূত করা ইত্যাদি। বয়ঃবৃদ্ধির লক্ষণ সর্বপ্রথম ত্বকে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সে পরিবর্তন লক্ষণীয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ পরিবর্তন হয় তবে ঋতু বন্ধ হওয়ায় নারীদের বেশি অনুভূত হতে পারে। বয়ঃবৃদ্ধির কারণে ত্বকের বিভিন্ন স্তর অপেক্ষাকৃত হালকা হতে থাকে এবং উক্ত স্তরসমূহে বিভিন্ন কোষ সংখ্যা কমে যায়। কানেক্টিভ টিস্যু বা যোজন কলা কমে যাওয়ার কারণে ত্বক স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে ফেলে এবং বিভিন্ন স্থানে ভাগ পরিলক্ষিত হয় যেমন চোখ ও গলার নিচে, মুখমণ্ডল ইত্যাদি স্থানে। পানি ধারণ এবং তেল নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। রক্তশালী সূ্থল ও ভঙ্গুর হয় একই সঙ্গে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ত্বকের সঙ্গে সঙ্গে নখের বৃদ্ধি ও আকার পরিবর্তন হয়। চুল কমে যেতে থাকে এবং রক্তও ধূসর হতে থাকে। বয়ঃবৃদ্ধির কারণে ত্বকের সমস্যাসমূহ নিম্নরূপে ভাগ করা যেতে পারে,
ত্বক পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণ : ত্বকের পানি ধারণ ও তৈল নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় শুষ্ক ও রুক্ষ হয় এবং চুলকানি অনুভূত হয়। একে সেনাইল ডার্মাটাইটিস বা জেরোসিস বলা হয়ে থাকে। যোজন কলা কমার জন্য ত্বকের শক্তি ও স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় যা ইলাসটোসিস নামে পরিচিত। স্বাভাবিক তৈল নিঃসরণ কমে যাওয়ার কারণে উজ্জ্বলতা কমে যায়। ঘর্মগ্রন্থি বা সোয়েট গ্রান্ডের ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। মেলানিনের পরিবর্তনের কারণে লেনটিগো বা লিভার স্পট, কেরাটোসিস ইত্যাদি দেখা দেয়। অনুভূতি কমার ফলে তাপ, ঠাণ্ডা বা স্পর্শজনিত আঘাতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
রক্তনালী স্থূল ও ভঙ্গুর এবং রক্তপ্রবাহ হ্রাসের কারণ : ত্বকে রক্ত জমাট হতে পারে, আলসার বা ক্ষত দেখা দেয়। চেরী অ্যানজিওমা, পার্পুরা, ব্রুইজ ও গ্যাংরিন হতে পারে। ডায়াবেটিক আক্রান্তদের ক্ষেত্রে গ্যাংরিনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার কারণ : বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস ও পরজীবি সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় যেমন_ পায়োডার্মা, হারপিজ, দাদ, খোসপাচড়া ইত্যাদি।
টিউমারের সম্ভাবনা বৃদ্ধির কারণ : বিভিন্ন ধরনের টিউমার যেমন লিটকোপ্লাকিয়া, ইপিথেলিওমা, মেলানোমা বা সারকোমা দেখা দিতে পারে। এদের মধ্যে কোনো কোনোটি ক্যান্সারে রূপান্তরিত হয়, যেমন ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা,যা জীবনহানির কারণ হতে পারে। এছাড়া ডার্মাটাইটিস, একজিমা, অ্যালার্জিজনিত সমস্যা যেমন আর্টিকেরিয়া বা ওষুধের প্রতিক্রিয়া বেড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য রোগের লক্ষণ হিসেবেও ত্বকের পরিবর্তন হতে পারে।
চিকিৎসা : বয়সজনিত ত্বকের স্বাভাবিক পরিবর্তন কখনই রোধ করা সম্ভব নয় তবে জীবন পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে গতি কমানো যায়। বয়ঃবৃদ্ধিজনিত ত্বকের রোগ নির্ণয়ের পর সঠিক চিকিৎসা করলে আরোগ্য লাভ করা যায়।
এছাড়াও
অতিরিক্ত গরম ও ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলুন, দীর্ঘক্ষণ রোদ পরিহার করুন।
গোসলের সময় অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যবহার করুন এবং গোসলের পর ময়েশ্চারাইজার যেমন পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করুন।
আঁচড় কাটা থেকে নিবৃত থাকুন।
সুষম খাদ্য বিশেষ করে ফলমুল, শাক-সবজি, তৈলাক্ত মাছ ও পানীয় গ্রহণ করার অভ্যাস করুন।
ত্বকে কোনো ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা মাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যথাসময়ে চিকিৎসা গ্রহণ না করলে গ্যাংরিন, ত্বকের ক্যান্সার হতে পারে। এজন্য সময়মত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
ডা. এম আর করিম রেজা
Published in the 'daily banagladesh protidin' on 09/05/2011
http://www.bd-pratidin.com/?view=details&archiev=yes&arch_date=09-05-2011&type=gold&data=Tourist&pub_no=371&cat_id=3&menu_id=15&news_type_id=1&index=2
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
রানি ভিক্টোরিয়া ও তাঁর মুনশী আব্দুল করিম
বিলেতের রাজ-পরিবারের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী এবং সুদীর্ঘ ৬৩ বছর সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন রানি ভিক্টোরিয়া । ভিক্টোরিয়ার সুবর্ণ জয়ন্তীর উপহা...
-
Carbonated water is water that has been infused with carbon dioxide gas under pressure. This produces a bubbly drink that’s also known as...
-
গ্রীষ্মকালে ঘামাচি আক্রান্ত হয়ে থাকেন অনেকেই। বিশেষ করে শিশুদের ঘামাচি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। অপেক্ষাকৃত শীতল আবহাওয়ার স্থান...
-
শৌর্যবীর্যের প্রতীক বাঘ খুব পছন্দ করতেন মহীশুরের শের টিপু সুলতান । তার ব্রাঘ্যপ্রীতির সবচেয়ে বড় নিদর্শন কাঠের তৈরি করা একটি বাঘের মূর্তি, ...
No comments:
Post a Comment