বয়কট শব্দটি এখন বাংলাদেশে বেশ আলোচিত। পণ্য, সিনেমা, প্রতিষ্ঠান, দেশ বা ব্যক্তি কোন কিছু অপছন্দ হলেই সামাজিক মাধ্যমে ‘বয়কট’-এর (Boycott) আহ্বান উঠে আসে। ইতিহাসে অনেক শক্তিশালী আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে ‘বয়কট’। বৃটিশ শাসনামলে বিলেতি পণ্যের বিরুদ্ধে ‘বয়কট’-এর ডাক দেয়া হয়েছিল। শুধু এদেশে নয়, বিদেশেও যথেষ্ট জনপ্রিয় শব্দটি। কিন্তু এই শব্দটি অভিধানে সংযুক্ত হওয়ার পেছনে একটি ইতিহাস রয়েছে।
১৮৮০ সালের ঘটনা। চার্লস কানিংহাম বয়কট নামে ব্রিটিশ আর্মির এক অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আয়ারল্যান্ডের মায়ো কাউন্টির জোতদার লর্ড আর্নের খাজনা আদায়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। ফসলের ফলন কম হওয়ায় জমি বর্গা নেয়া চাষীরা ২৫ শতাংশ খাজনা মওকুফের দাবি তোলে। দাবি আমলে নিয়ে লর্ড আর্নে ১০ শতাংশ খাজনা মওকুফের ঘোষণা দেন।কিন্তু চাষীরা লর্ড আর্নের ঘোষণা না মানলে এজেন্ট বয়কট কয়েকজন বর্গা চাষীকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করেন।
সেই সময় আয়ারল্যান্ডে ভূমি সংস্কারের পক্ষে আন্দোলন করছিলেন রাজনীতিবিদ চার্লস স্টুয়ার্ট পার্নেল। তিনি এক ভাষণে বলেছিলেন, কোনো জমি থেকে বর্গাচাষিকে উচ্ছেদ করা হলে, সে জমি যেন অন্য চাষিরা বর্গা না নেন। জমির মালিক উচ্ছেদের হুমকি দিলে অহিংসভাবে তাঁকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।
বয়কটের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্থানীয় বর্গাচাষিরা চার্লস ষ্টুয়ার্ট পার্নেলের বাতলে দেয়া কৌশল বেছে নিয়েছিলেন। গৃহকর্মী থেকে দিনমজুর সবাই তার কাজ বর্জন করেন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করতে থাকেন। এমনকি স্থানীয় ডাকঘরের পিয়নও চিঠি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। বয়কট চেষ্টা অন্য এলাকা থেকে লোকজন কাজ লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তার এই উদ্যোগও সফল হয়নি। সামাজিকভাবে একঘরে এবং অর্থনৈতিক ব্যাপক ক্ষতি হয় বয়কটের। এই ঘটনা অন্যান্য অবিবেচক ভূমি মালিকের বিরুদ্ধেও প্রয়োগ হতে থাকে।
এখনকার #ভাইরাল কাহিনীর মতো এই ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল এই সফল অহিংস প্রতিবাদের ঘটনা। একসময় বয়কট শব্দটি এই ধরনের ঘটনার সমার্থক হয়ে ইংরেজি অভিধানে স্থান করে নেয়।
No comments:
Post a Comment