Tuesday, October 8, 2024

দুর্গাপূজার ইতিহাস



বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। যে দেবীকে উৎসর্গ করে এই উৎসব তার নাম দুর্গা। দেবী দূর্গার উৎপত্তি হয় বেদ পরবর্তী যুগে।‌ বেদের কোথাও দূর্গার নাম নেই। 
আর্য সভ্যতার আগে সমাজে কৃষিজ উৎপাদনের উৎস রূপে অম্বিকারূপী দূর্গাতে পরিণত হয়েছেন। বৈদিকযুগের পর যখন এশিয়া মাইনর এলাকা থেকে যাযাবর মেষপালক গোষ্ঠী পাঞ্জাবে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে, তখন থেকেই অনার্যদের সাথে সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্ব ও মিথষ্ক্রিয়া তৈরি হয়। যার ফলে অনার্যদের লোকায়ত স্তরের কিছু দেব- দেবীর আর্যীকরণ ঘটে। অসুরবধের উদ্দেশ্যে উৎপত্তির গল্প ছাড়া‌ দেবী দুর্গার কোন জন্ম ইতিহাস পাওয়া যায় না‌। আনুমানিক খ‌ষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে তৃতীয় শতকের মধ্যভাগে পারস্যের সাথে ব্যবসা আর যোগাযোগের সুত্রে সিংহবাহিনী দুর্গার জন্ম।
উপমহাদেশে দুর্গাপূজার ইতিহাস পাওয়া যায় সুলতানি যুগে। এখন যে পূজার প্রচলন তা শুরু হয় ইসলামী শাসনের সময়ে। হিন্দু নবজাগরণের জন্য ষোড়শ শতকের পন্ডিত রঘুনন্দনের পুস্তকে দুর্গাপূজার উল্লেখ রয়েছে। 
বাংলাদেশে প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন হয় মোগল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে, ষোড়শ শতাব্দীতে। মোগল সম্রাট বিদূষক কুল্লুকভট্টের পিতা উদয়নারায়ণের পৌত্র অর্থাৎ কুল্লুকভট্টের পুত্র তাহিরপুরের রাজা (বর্তমান রাজশাহী) কংসনারায়ণ রায় প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয় করে প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসবে আয়োজন করেন। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাদুরিয়ার (রাজশাহী) রাজা জয় জগৎ নারায়ণ প্রায় ৯ লাখ টাকা ব্যয় করে বাসন্তী দুর্গোৎসব করেন। তারপর থেকে রাজা ভুঁইয়ারা নিয়মিতভাবে দুর্গাপূজা আরম্ভ করেন। 
অবিভক্ত বাংলায় দুর্গাপূজা বলতে ১৬১০ সালের লক্ষীকান্ত মজুমদারের পূজাকেই বোঝায়। কলকাতার এই পূজায় ভক্তির চেয়ে বেশি ছিল বিত্ত বৈভবের প্রদর্শনী। এ সময়ে প্রভাবশালী জমিদার, সামন্তরাজরা ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য এই পূজার চল করেন। আঠারো উনিশ শতকের পূজা মূলত জমিদারদের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল।

দেবী দুর্গা ঢাকায় ঠিক কবে এসেছিলেন তা বলা বেশ শক্ত।ঢাকার দুর্গাপূজা উদযাপনে সবচেয়ে আগের তথ্য পাওয়া যায় অর্থনীতিবিদ ভবতোষ দত্তের আত্মজীবনী থেকে। ১৮৩০ সালের সূত্রাপুরের একটি পূজার উল্লেখ করেছেন তিনি। ঢাকা শহরে সর্বপ্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন ঘটে নবাব সলিমুল্লাহর আমলে। সে সময় সিদ্ধেশ্বরী জমিদার বাড়ি ও বিক্রমপুর হাউসে জাঁকজমকপূর্ণ পূজা হতো। ১৯২২-২৩ সালে আরমানিটোলার জমিদার ছিলেন বিক্রমপুরের রাজা ব্রাদার্সের বাবা শ্রীনাথ রায়, তার বাড়ির পূজাও সে সময় বিখ্যাত ছিল।
বিংশ শতকের শুরুতেও বাংলায় অভিজাতদের পারিবারিক উদযাপন ছিল দুর্গাপূজা। যেহেতু কেবল বাবুগিরি আর ইংরেজদের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্যই পালিত হত এ উৎসব, সে কারণেই ধর্মীয়ভাবের চেয়ে সেখানে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেত আমোদ-প্রমোদ। কিন্তু বিত্তবান বাবুরা দুর্গোৎসবের যে জোয়ার আনতে চেষ্টা করেছিলেন তাতে পঙ্কিলতাই ছিল বেশি । বাবুদের অর্থকৌলিন্য প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদা লাভের উপায়ও ছিল এই উৎসব।
অভিজাতদের বাইরে এখন যে সার্বজনীন পূজা প্রচলিত, তা শুরু হয় গত শতকের তিরিশের দশকে । বাংলাদেশে সার্বজনীন পূজা ব্যাপক আকারে শুরু হয় ১৯৪৭ এর দেশ বিভাগের পর। দেশ ভাগের পর এককভাবে পূজা করাটা বেশ ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে ওঠে, যার কারণে ব্রাক্ষ্মণ-অব্রাক্ষ্মণ নির্বিশেষে মিলেমিশে পূজা করার চল শুরু হয়। তবে পুরান ঢাকাসহ দেশের অনেক স্থানে এখনো পারিবারিক পূজার চল রয়ে গেছে। সনাতন ধর্মী সকলকে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা। (সংগৃহিত ও সম্পাদিত)
#BMW #durgapuja #trend #Photography #MRKR

No comments:

দুর্গাপূজার ইতিহাস

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা । যে দেবীকে উৎসর্গ করে এই উৎসব তার নাম দুর্গা । দেবী দূর্গার উৎপত্তি হয় বেদ পরবর্...