Wednesday, March 4, 2020

করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা এবং ফেসমাস্ক


বিশ্বজুড়ে কোভিড ১৯ ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত ৭০টি দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩২০০ মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে ৬ জন আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত কারও দেহে এই ভাইরাস সনাক্ত হয়নি। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সংক্রামক রোগের মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই। কী করবেন *আ্যলকোহল সমৃদ্ধ জীবাণুনাশক হ্যান্ড রাব (স্পিরিট, হেক্সিসল), সাবান বা সাবান জাতীয় জিনিস দিয়ে ঘনঘন হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। *অপ্রয়োজনে নাক, চোখ, মুখে হাত দেয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। *অপরিচিত কারো সাথে হ্যান্ডশেক করার পর হাত ধোয়া না পর্যন্ত নাক, কান, চোখমুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। *রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ এবং পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার সময় সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। *জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। *যেখানে সেখানে কফ, থুথু ফেলবেন না। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় সতর্ক থাকুন। *গলা ভিজিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত পানীয় পান করুন। *শুধু মাস্ক ব্যবহার কোভিড ১৯ সংক্রমণ রোধে কার্যকরী নয়। নিজে সর্দি-জ্বর, হাঁচি-কাশি, ফ্লুতে আক্রান্ত হলে এই মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেটি অন্যকে আক্রান্ত করার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ফেসমাস্ক চীনের উহানে করোনা ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হওয়ার পর থেকেই দেশে দেশে সুস্থ মানুষের মধ্যে ফেসমাস্ক কেনা এবং ব্যবহার করার হিড়িক লেগেছে। এই সুযোগে প্রস্ততকারক কোম্পানির ব্যবসা ভালো হলেও সেটি কোভিড ১৯ প্রতিরোধে কতোটা কার্যকর তা জেনে নেয়া উচিত। সাধারণ ফেসমাস্ক বায়ুদূষণ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ দিলেও রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে না। সংক্রমণ প্রতিরোধে N95 নামে রেসপিরেটরি মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। তবে এই মাস্ক পরিধানকারীর শরীর থেকে রোগ ছড়ানো যতোটা প্রতিরোধ করে, বাহির থেকে শরীরে রোগ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ততোটা কার্যকর নয়। শুধু তাই নয় সঠিকভাবে ব্যবহার না জানলে এই মাস্ক থেকেই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু আক্রান্ত রোগীর যত্ন নেয়া এবং সংস্পর্শে আসলে এই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ফেসমাস্ক ব্যবহারের নিয়ম *হাত পরিষ্কার করে মাস্ক লাগাতে হবে। *নাকমুখ ঢাকার পর মুখমণ্ডল এবং মাস্কের ভিতর কোন ফাঁক রাখা যাবে না। * হাত পরিষ্কার না করে কখনো পরিধান করা মাস্ক স্পর্শ করা যাবে না। *খোলার সময় পেছন থেকে খুলতে হবে, মাস্ক স্পর্শ করা যাবে না। *মেয়াদত্তীর্ণ অপরিস্কার, নোংরা মাস্ক যত দ্রুত সম্ভব আবর্জনা বাক্সে ফেলে দিন। মনে রাখবেন কোভিড ১৯ ভাইরাস হাঁচি-কাশি ছাড়া সাধারণভাবে স্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় না। কাজেই হুজুগে ফেসমাস্ক ব্যবহার না করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।

Saturday, February 15, 2020

কিটো ডায়েট


 
অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও শরীরের জন্য ভালো কি মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। 
একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিটো ডায়েট শুরু করার পর অসুস্থতাবোধ এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। 
কিটো ডায়েট অনুযায়ী শরীরবৃত্তীয় চাহিদা মেটাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার (চাল, ভুট্টা, গম ইত্যাদির তৈরি খাবার) পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করার ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কম বা গ্রহন না করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের মুল উদ্দেশ্য। 
ইনসুলিন একদিকে যেমন শর্করা ভাঙ্গে অন্যদিকে চর্বি ও প্রোটিন জমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু শর্করা না থাকলে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে পারে না। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে গেলে চর্বি ভেঙ্গে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। কিটো এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। 

মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙ্গে তৈরি হয়। স্মবাভাবিকভাবে মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। তবে দীর্ঘদিন কিটো ডায়েটিং করলে একসময় মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু কিটোন মস্তিষ্কের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় এখন পর্যন্ত কোন গবেষণা লব্ধ ফলাফল নেই। দীর্ঘমেয়াদে কিটোডায়েট করার ফলে স্মৃতি ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। 
কিটো ডায়েট চলাকালীন চর্বি ভেঙ্গে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে জমে তা বন্ধ করে দিতে পারে। যা হার্ট এ্যটাকের কারণ হতে পারে। রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। 
কিটো ডায়েট চলাকালীন শুধুমাত্র চর্বিই ভাঙ্গে না প্রোটিনও ভাঙ্গে। শরীরের বাহ্যিক গঠন যেমন মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রধানত প্রোটিন দিয়েই তৈরি। কিটো ডায়েট চলাকালীন মাংসপেশী এবং হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলে। ক্রীড়াবিদদের হাড়ে ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটিন ভেঙ্গে অপুষ্টির মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে। 
সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী কম শর্করা জাতীয় খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। কিটো ডায়েট গ্রহণকারীদের মধ্য মৃত্যুর হারও বেশি বলে গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। 
মনে রাখবেন সুস্থ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অস্বাভাবিক কিটো ডায়েট নয়। উঠতি বা যুবা বয়সে কিটো ডায়েট ক্রেজে আক্রান্ত না হয়ে বরং সুষম খাবার উপভোগ করে সেটি পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঝড়িয়ে ফেলার পর বিশ্রাম নিন, জীবনটাকে উপভোগ করুন। 

Wednesday, November 13, 2019

বায়ুদূষণ এবং ত্বকের রোগ


ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়া ত্বকের অন্যতম প্রধান কাজ। মূলত আধুনিক মানুষের কর্মকাণ্ডে বায়ুমন্ডল দুষিত হয়ে পড়েছে ইতিমধ্যেই। 
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণের আশংকাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে উপমহাদেশে। বায়ুদূষণের কারণে মানবদেহে নানাধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বা প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। বায়ুদূষণের কারণে ত্বকের রোগ হতে পারে সেটি সাধারণভাবেই অনুমান করা যায়।

নানা ধরনের গ্যাস, ধুলি কণার সমন্বয়ে বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। দুষনের কারণে সৃষ্ট ধোয়াশা আবহাওয়ার কারণে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় এবং কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখতে শরীরবৃত্ত ক্রিয়ার কারনে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। 
√ত্বকের প্রদাহের কারণে একজিমা, ডার্মাটাইটিস, এলার্জি, ব্রণ ইত্যাদি রোগ বাড়িয়ে দেয়। বায়ু দূষণের কারণে সৃষ্ট ত্বকের শুস্কতার কারণে চুলকানি বেড়ে যায়।
√বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন কমে যাওয়ার প্রভাবে শরীরবৃত্ত ক্রিয়ার কারনে ত্বকের কোলাজেন ভেঙ্গে যায়। ফলে ত্বকের স্বাভাবিক মসৃণতা নষ্ট হয়ে ভাজ, দাগ ইত্যাদি বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণ আবির্ভাব হয়।
√বায়ুদূষণে কার্বন কণা বৃদ্ধির কারণে ত্বকের ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। 
√বায়ুদূষণের কারণে মাথার চুল পড়া বৃদ্ধি পেয়ে টাক পড়তে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়
√নিয়মিত সানস্ক্রিন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
√বাহির থেকে এসেই গোসল করে ফেলুন, অন্তত মুখমণ্ডল এবং হাত পা ক্লিন্জার বা কম ক্ষারীয় সাবান দিয়ে পরিস্কার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
√বাইরে চলাফেরার সময় ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন এবং গৃহাভ্যান্তরে বায়ূ পরিশোধক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারেন।
√শাকসবজি, ফলমুল বেশি খাবেন। পর্যাপ্ত পানীয় পান করুন।
সমস্যা অনুভূতির সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সমস্যা অনুভূতির সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
 


Tuesday, August 20, 2019

ত্বক ফর্সা করার আগে একটু ভাবুন!


প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই অপেক্ষাকৃত গাঁড় বর্ণ বা কালো ত্বকের মানুষের মধ্যে ফর্সা হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। আধুনিক যুগের বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত তারকা মাইকেল জ্যাকসন ফর্সা এবং সুন্দর হওয়ার প্রচেষ্টায় ধারণাতীত অর্থ এবং সময় নষ্ট করেছেন, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাহ্যিক সৌন্দর্য বিচারে সাধারণ মানুষের মধ্যে ত্বকের রঙ্গ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত। গবেষণায় প্রমাণিত যে সৌন্দর্য নিয়ে হীনমন্যতায় ভুগতে থাকা সুস্থ মানুষ ফর্সা হওয়ার চেষ্টা করে থাকে। মজার বিষয় কালো বর্ণের মানুষের চেয়ে মিশ্র বর্ণ বা শ্যামলা বর্ণের মানুষের মধ্যে এই প্রবনতা সবচেয়ে বেশি। উপমহাদেশ এবং দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার মানুষ রঙ্গ ফর্সা করার চেষ্টা করে থাকে সবচেয়ে বেশি। মানুষের এই দুর্বলতাকে পুঁজি করে বিশ্বব্যাপী বিপুল বাণিজ্য চলছে, যার আর্থিক মূল্য ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। বাজারে ত্বক ফর্সা করার প্রসাধনী ক্রিম বা সাবান যেমন রয়েছে, তেমনি বিউটি পার্লার এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসকরাও ত্বক ফর্সা করার জন্য সেবা দিয়ে থাকেন।
কিভাবে কাজ করে
ত্বকে মেলানিন নামে এক ধরনের রঞ্জক থাকে যা ত্বকের বর্ণ নির্ধারণ করে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব যতো বেশি ত্বক ততটাই গাঁড় বর্ণের হয়ে থাকে। প্রসাধনী বা ঔষধ এই মেলানিনের ঘনত্ব এবং উৎপাদন কমিয়ে দেয়, ক্ষেত্র বিশেষে ধ্বংস করে থাকে।
*প্রসাধনী
ক্রিম বা সাবান হিসেবে ত্বক ফর্সা করার অগুনিত প্রসাধনী বাজারে পাওয়া যায়। বিশ্বের নামিদামি কোম্পানি থেকে স্থানীয় অখ্যাত ভেষজ কোম্পানি নানা ধরণের ত্বক ফর্সাকারি প্রসাধনী প্রস্তত করে থাকে। এসব প্রসাধনীতে কজোয়িক এসিড, আলফা হাইড্রোক্সি এসিড, গ্লুটাথিয়ন, মারকারি, হাইড্রোকুইনন, ইত্যাদি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন এসব প্রসাধন সামগ্রী ব্যবহারে ত্বক অপেক্ষাকৃত ফর্শা করতে সাহায্য করে থাকে।
*বিউটি পার্লার
প্রশিক্ষিত বিউটিসিয়ানদের ফেসিয়াল ক্লিন্সিং করার জন্য ৫% এর নীচে গ্লাইকোলিক বা স্যালেসাইলিক এসিড ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া হয়ে থাকে। এরচেয়ে বেশি ঘনত্বে শুধুমাত্র চিকিৎসকরাই প্রয়োগ করতে পারেন।
*চিকিৎসক
ত্বকের দাগ বা রোগের কারনে সৃষ্ট গাঁড় রঙ্গ দূর করতে সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞরা রোগীর অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে বিভিন্ন ঘনত্বের গ্লাইকোলিক বা স্যিলেসাইলিক এসিড পিলিং এবং লেসার চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। আধুনিক সময়ে ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধির নামে উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করেই ত্বক ফর্সা করা হয়ে থাকে। নিয়মিত ব্যবহার করার জন্য ক্রিম বা জেলও চিকিৎসক প্রেসক্রিপশন করে থাকেন।
জটিলতা
নানাবিধ অনাকাঙ্ক্ষিত জতিলতার কারনে বিভিন্ন দেশে এসব ত্বক ফর্সাকারি প্রসাধন সামগ্রীর উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা হয়েছে। প্রসাধনীর গায়ে সম্ভাব্য ঝুঁকি উল্লেখ করে সাবধান বানী দেয়া থাকে। প্রসাধনিতে থাকা মারকারি ত্বকের অসাড়তা থেকে উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ু রোগ বা কিডনি নষ্ট করার মতো নানাবিধ স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারন হতে পারে। ত্বকের প্রদাহ বা ডারমাটাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। আক্রান্তদের ব্রন বাড়িয়ে দেয়, বা নতুন ব্রন তৈরি করে থাকে। ত্বকের রঙ্গের ভিন্নতার কারনে ছোপ ছোপ গাঁড় দাগের উদ্ভব হতে পারে।
সাবধানতা
ত্বকের বর্ণ নিয়ে হীনমন্যতা দূর করুন, নিজের ত্বকের রঙ্গ নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে সাইকোথেরাপি নিন। ত্বক ফর্সাকারি প্রসাধনী ব্যাবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সম্ভাব্য ঝুঁকি সমন্ধে জানুন। প্রসাধনী কেনার আগে গায়ে লেখা উপাদান এবং সতর্কতা ভালো করে দেখে নিন।
ডাঃ এম আর করিম রেজা
জাকার্তা প্রবাসী ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Saturday, July 13, 2019

গোসলে কি সবসময়ই সাবান ব্যাবহার করা উচিত?


ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ যা রোগ প্রতিরোধ এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখে। সাবান বা ক্লিনজার ত্বক পরিস্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। বার, ক্লিঞ্জার, বডি ওয়াশ, শাওয়ার জেল এ সব কিছুই সাবানের নানা ধরন। চর্বি বা তেলের সাথে ক্ষার মিশিয়ে সুগন্ধি যোগ করে এগুলো তৈরি করা হয়। কিন্তু এই সাবানই আবার ত্বকের ক্ষতির কারন হতে পারে। এজন্য সাবান বা ক্লিঞ্জারের বাবহার নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। আসুন জেনে নেই সাবান ত্বকে কি ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় ত্বকে একধরণের প্রোটিন এবং তেল থাকে যা রোগ প্রতিরোধে দেয়াল হিসেবে কাজ করে থাকে। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহযুক্ত ত্বকে খুব সহজেই নানা ধরনের জীবাণু আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বক শুষ্ক করে, একজিমা, অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয় ত্বকের গ্রন্থি থেকে একধরনের তেল নিঃসৃত হয় যা ত্বকের উজ্জ্বলতা এবং মসৃণতা রক্ষা করে থাকে। সাবান বাবহারে এই তেলও পরিস্কার হয়ে যাওয়ার ফলে ত্বক রুক্ষ এবং শুষ্ক হয়ে পরে। শুষ্ক ত্বকে চুলকানি অনুভুত হয়। যাদের একজিমা, অ্যালার্জি রয়েছে সেটি বেড়ে যেতে পারে। সাবান তৈরিতে ব্যাবহার করা সুগন্ধির কারনেও অ্যালার্জি হতে পারে। ব্রণ বেড়ে যেতে পারে সাবান ব্যাবহারে ত্বকে জলীয় এবং তৈলাক্ততা কমার সাথে সাথেই তেল নিঃসরণকারি গ্রন্থি গুলো আগের তুলনায় বেশি তেল তৈরি করতে থাকে। যা ব্রণ তৈরিতে সহায়তা করে। আক্রান্তদের ব্রণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। বলিরেখা বাড়িয়ে দেয় সাবান বাবহারে তেল এবং সেরামাইড চলে যাওয়ার ফলে ত্বকের ভাঁজ এবং বলিরেখা বেশি গোচরীভূত হয়। সমাধান কি? • বার/বডি ওয়াশ/ ক্লিঞ্জার/শাওয়ার জেল কেনার সময় ক্ষারীয় মাত্রা দেখে কিনুন। ৭ হলে সবচেয়ে ভালো না হলে কাছাকাছি মাত্রার কিনুন। • গ্লিসারিন, সেরামাইড যুক্ত বার/বডি ওয়াশ/ ক্লিঞ্জার/শাওয়ার জেল কেনার চেষ্টা করুন। • সাবানের পরিবর্তে অয়েল বেজড ক্লিঞ্জার ব্যবহার করতে পারেন, যা সাবানের মতোই ত্বক পরিস্কার করে থাকে। • গোসলের সময় মুখ এবং শরীররে সন্ধিস্থান (বগল, কুচকি) ছাড়া অন্যস্থানে প্রতিদিন সাবান ব্যাবহার না করাই ভাল। • গোসলের পর ময়েশচারাইজার ব্যবহার করতে পারেন।

Friday, May 31, 2019

প্রসাধন সামগ্রী (কসমেটিক) কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?



ধারনা করা হয় মানুষ প্রায় ৬ হাজার বছর ধরে রূপচর্চার জন্য প্রসাধনী ব্যাবহার করে আসছে। দিনে দিনে প্রসাধন সামগ্রীর ব্যাবহার যেমন বেড়ে চলেছে তেমনি এগুলো ব্যাবহারে সৃষ্ট পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ঝুঁকিও বাড়ছে। অনেক গবেষক ইতিমধ্যেই বাছ বিচার না করে প্রসাধন সামগ্রী ব্যাবহার করার প্রবণতাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হিসেবে অভিহিত করেছেন। 
বর্তমানে সারাবিশ্বে অসংখ্য কোম্পানি নানা ধরনের প্রসাধন সামগ্রী প্রস্তুত করছে। এসব প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করতে কমবেশি ১৩ হাজার ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। মুলত এই রাসায়নিক দ্রব্যগুলোই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জটিলতা তৈরির জন্য দায়ী। দৈনন্দিন ব্যাবহার করা প্রসাধন সামগ্রী তৈরি করতে সাধারণত যেসব রাসায়নিক ব্যাবহার করা হয় এবং সেগুলো থেকে কি ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে, আসুন একটু ধারনা নেই।
ইউরিয়াঃ বেবি কেয়ার থেকে শুরু করে সবধরনের প্রসাধন সামগ্রিতেই এটির উপস্থিতি রয়েছে। এর কারণে ত্বকের অ্যালার্জি, ক্যান্সার, এমনকি বিকলাঙ্গ শিশুও জন্ম নিতে পারে। 
 ডাই-অক্সেনঃ সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, মাউথওয়াসে থাকে। ত্বক, স্তন এবং লিভার ক্যান্সারের ঝুকি রয়েছে। 

ফরমালডিহাইডঃ নষ্ট হওয়া রোধ করতে সব ধরনের প্রসাধনিতেই ফরমালিন ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। এটি অ্যালার্জি এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করে থাকে। 

ভারী ধাতুঃ লেড, আর্সেনিক, কেডমিমাম, নিকেল, মারকারি ইত্যাদি ভারি ধাতু রঙ্গিন প্রসাধন সামগ্রিতে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। স্বল্পমেয়াদে এগুলো ত্বকের অ্যালার্জির কারন হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ব্যাবহার করলে এগুলো ত্বকের নিচে জমার পর শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে শ্বাসকষ্ট, বুকে বাথা, বমি, মাথ বাথা, ডাইরিয়া, ক্যান্সার, হাড় ক্ষয়, স্নায়ু, লিভার এবং কিডনি রোগের কারন হতে পারেন।
  
প্যারাবেনঃ এটি জীবানুনাশক গুনের কারনে পচন রোধে প্রসাধনীর উপাদান হিসেবে থাকে। সাধারনত ডিওডরেন্ট, লোশন, এবং চুলের প্রসাধন সামগ্রিতে থাকে। ক্যান্সার এবং ত্বকের অ্যালার্জির কারন হতে পারে। 
থেলেটঃ নেল পলিশ, লোশন, পারফিউম, চুলের প্রসাধন সামগ্রিতে থাকে। স্তনের ক্যান্সার এবং বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দেয়ার কারন হতে পারে 
ট্রাইক্লোসানঃ সাবান এবং শ্যাম্পুতে জীবাণুনাশক হিসেবে থাকে। হরমোনজনিত সমস্যা, লিভার এবং কিডনি রোগের কারন হতে পারে। 
  রঙ্গ এবং সুগন্ধিঃ প্রসাধনী তৈরিতে নানা ধরনের কৃত্রিমম রঙ্গ এবং সুগন্ধি যোগ করা হয়, যেগুলো ত্বকের অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ক্যান্সারের কারন হতে পারে। 

উল্লেখিত রাসায়নিক উপাদানগুলো ছাড়াও আরও অনেক রাসায়নিক দ্রব্য দৈনন্দিন ব্যাবহার করা প্রসাধনিতে থাকে। ঔষধের রাসায়নিক নিয়ে যতোটা পরিক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণার পর অনুমোদন দেয়া হয় প্রসাধনীর ক্ষেত্রে ঠিক ততোটা নিয়মকানুন মানা বা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয় না। 

বাংলাদেশে ভেজাল প্রসাধন সামগ্রীর কথা বাদ দিলেও, স্বয়ং ইউরোপ আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতেও প্রসাধনিতে ব্যাবহার করা রাসায়নিক দ্রব্যের মাত্র ১০% নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা বা গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা কোন প্রসাধনী বাজারজাত করার অনুমোদন দিয়ে থাকে। কাজেই প্রসাধনী ব্যাবহারে ব্যক্তিগত সচেতন‌‌তা বড় ভুমিকা পালন করে থাকে। 
প্রতিরোধে করণীয় 
 • ত্বকে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, লাল হয়ে যাওয়া ইত্যাদি অ্যালার্জির লক্ষন। এগুলো কোন প্রসাধন সামগ্রি ব্যাবহার করার সাথে সাথে বা কিছু দিনের মধ্যেই আচ করা যায়। আঁচ করার সাথে সাথে বন্ধ করে দিন। 
• তবে দীর্ঘ মেয়াদে যেসব শারিরিক সমস্যার তৈরি করে তা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন না হলে মেকআপ নেয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজন শেষে যত দ্রুত সম্ভব মেকআপ পরিস্কার করুন। 
 • নতুন প্রসাধন সামগ্রী কেনার সময় গায়ে লিখিত উপাদান দেখে নিতে পারেন। ব্যাবহার করার আগে ত্বকের চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 
 • সাবান এবং সুগন্ধি কম ব্যাবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। দৈনন্দিন ব্যবহারে শুষ্ক ত্বক মসৃণ করার জন্য প্রসাধনী কোম্পানির তৈরি সামগ্রী ব্যাবহার না করে, প্রাকৃতিক তেল যেমন অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল ইত্যাদি ব্যাবহার করতে পারেন। 
  লেখকঃ এম আর করিম রেজা জাকার্তা প্রবাসী ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Monday, January 30, 2012

সোরিয়াসিস: নিয়ন্ত্রণ করুন,স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকুন


সোরিয়াসিস/psoriasis ত্বকের একটি প্রদাহ জনিত রোগ। জনসংখ্যার ২-৪% এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে এবং আক্রান্তদের এক তৃতীয়াংশ বংশগতভাবে অর্জন করেন । নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন বয়সীরা এ রোগে আক্তান্ত হতে পারেন তবে তিরিশর্ধোরা বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন।এটি কোন সংক্রামক রোগ নয়, কাজেই সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় না।

সাধারণত আমাদের ত্বকের কোষ সমূহ একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধধমে নির্দিষ্ট সময় পর পর ঝরে যায় এবং নতুন কোষ তৈরি হয়। প্রক্রিয়াটি খুবই সমন্বিত ভাবে হয়ে থাকে বিধায় স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায় না।সোরিয়াসিস রোগে ত্বকের ইপিডারমিস এ অবসশিত কোষ সমূহ খুব দ্রুত ব্রিধি পায় এবং ত্বকের উপরে এক ধরণের প্লাক/plaque তৈরি করে। লক্ষ্মণ ও মাত্রা অনুযায়ী এ রোগ কয়েক ধরনের হতে পারে।

দেখতে কেমন এবং লক্ষ্মণ কি?

আক্রান্ত অংশে রুপালী সাদা আঁশ দ্বারা আবৃত,উজ্জ্বল লালচে বর্ণের প্লাক/খত দেখা যায়।সাধারণত মৃদু চুলকানি অনুভুত হতে পারে।

কোন অংশ আক্রান্ত হয়?

সাধারণত কনুই, হাঁটু,মাথা, হাত ও পা এর নখ হয়।তবে ধরন ভেদে বিভিন্ন অংশ এমনকি পুরো শরীর আক্রান্ত হতে পারে।

কি কারণে হয়?


বংশগত কারণ ছাড়া,এ রোগ এর নির্দিষ্ট কোন কারণ নির্ণয় করা দুরহ তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দ্রুত ব্রিধি হতে পারে যেমন কোন ধরনের সংক্রামন, ত্বকে আঘাত জনিত কারনে,আবহাওয়াজনিত শীতে বেশি এবং কিছু ওশধ সেবনের কারনে।

চিকিৎসা 

রোগ এর ধরন অনুযায়ি চিকিথশা দেয়া হয়ে থাকে,

অল্প অংশ আক্রান্ত হলে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ক্রিম,লশান,জেল ইত্তাদি রুপে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয়ে থাকা;

অনেক বেশি অংশে ছড়িয়ে পড়লে মুখে খাবার ওষুধ,ultraviolet ray,PUVA থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয়।

মনে রাখবেন ত্বকের অন্য রোগেও সরিয়াসিস এর মত প্লাক দেখা দিতে পারে।এ রোগ কখনই পুরোপুরি ভাল হয় না এবং কখনই জীবন হানীর কারন হয় না।নিয়মিত চিকিথশা গ্রহনের মাধ্যমে এটিকে নিয়ন্ত্রণ করা জায়। কাজেই নিয়মিত চিকিথশা নিয়ে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।

দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...