Sunday, May 10, 2020

রেমডেসিভির করোনার ঔষধ নয়!


চলমান কোভিড ১৯ মহামারি চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে। নিশ্চিত কোন ঔষধ না থাকায় মুলত উপসর্গের উপর ভিত্তি করেই এ রোগের চিকিৎসা চলছে। এই তালিকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের আ্যন্টিবায়োটিক, আ্যন্টি-ভাইরাল, আ্যন্টি ম্যালেরিয়াল এমনকি খুজলী-পচরার ঔষধও ব্যবহার করা হয়েছে এ পর্যন্ত। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (FDA) গিলিয়াড সায়েন্স (Gilead Sciences Inc) নামে একটি কোম্পানীর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির (Remdesivir) কোভিড ১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সাথে সাথেই বিশ্বের অনেক ঔষধ কোম্পানী এই ঔষধ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন এবং ভাইরাস বিরোধী আ্যভিগানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ঔষধটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অনুমোদন চেয়েছে। তবে এই ঔষধ নিয়ে যেমন অতি আশাবাদী বা উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই, ঠিক তেমনি এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। #রেমডেসিভির একটি ভাইরাস বিরোধী ঔষধ, যা ইতিপূর্বে হেপাটাইটিস সি, ইবোলা, মার্স এবং সার্স করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কোনটিতেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে চীনে কোভিড ১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে ফলাফল সন্তোষজনক নয় বলে সেখানকার গবেষকরা মতামত প্রদান করেছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস সহ আরো কয়েকটি দেশে কোভিড ১৯ রোগীদের উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী রেমডেসিভির শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ৩২% কোভিড ১৯ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সময় ৪/৫ দিন কমিয়ে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান। গবেষণা অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মৃত্যুহার কমিয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোন সায়েন্টিফিক জার্ণালে প্রকাশিত হয় নি। শুধুমাত্র গিলিয়াড কোম্পানি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল জানিয়েছে, তবে একইসাথে তারা এই বিষয়ে আরো গবেষণা করার সুপারিশও করেছে। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড ১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধটির জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মুলত আমেরিকার কারণেই বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং উৎপাদনের হিড়িক লেগে গিয়েছিল। পরবর্তীতে গবেষণায় কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসায় এটির ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত হয়েছে। রেমডেসিভির মুখে খাওয়ার ঔষধ নয়, বরং শিরায় প্রয়োগ করার একটি দামি ঔষধ। প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫/৬ হাজার টাকা, যেটি রোগীর অবস্থাভেদে ১০-১৫টি প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের একটি ঔষধ উৎপাদন করা গেলেও সেটি বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বহুলভাবে প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কাজেই শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে নয়, বরং যথাযথ এবং যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করেই এই ঔষধটির বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া উচিত। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

No comments:

বেঙ্গল ক্যাট 🐈😺

বঙ্গদেশের জংলি বিড়াল ও মিশরের গৃহপালিত বিড়ালের মধ্যে প্রজনন ঘটিয়ে নুতন জাতের একটি বিড়াল প্রজাতির উদ্ভাবন করা হয়, যা বর্তমানে বেঙ্গল ক্য...