জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী মহামারি পরিস্থিতিতে রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। #লকডাউন তেমনি একটি ব্যবস্থা, যেটি সমগ্র দেশে বা এলাকাভিত্তিক প্রয়োগ করে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো হয়। লকডাউন বলতে যেটি বোঝায় সেটি বাংলাদেশে জারি করা হয়নি, বরং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। মাসখানেক এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকার পর ইতিমধ্যেই কারখানা, মার্কেটশপিংমল, উপাসনালয় ইত্যাদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, গণপরিবহন চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও সম্ভবত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সতর্কতার উপর গুরুত্ব এবং দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আচরণগত কারণে এসব সতর্ক বাণী কতোটা কাজে আসবে সেটি অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করে সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে এখনো। সনাক্ত করা রোগীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে জোনে বিভক্ত করে সংক্রমণ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে শহরের একটি এলাকা বা উপজেলা ভিত্তিক এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা খুব একটা দুরহ নয়।
*#লাল বা রেড জোনে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে, প্রয়োজনে কার্ফ্যূ জারি করে। একটি এলাকায় ৪০-৫০ জনের উর্ধ্বে রোগী সনাক্ত হলেই সেটিকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
*৪০ জনের নীচে সনাক্ত রোগী রয়েছে যে এলাকায় সেটি #ইয়েলো বা হলুদ জোন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সীমিত আকারে কঠোরভাবে সামাজিক নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করে কর্মকাণ্ড চালু রাখার সুযোগ রয়েছে।
* যে এলাকায় কোন রোগী সনাক্ত করা যায় নি, সেটি #গ্রীন বা সবুজ জোন হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সামাজিক দুরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলতে পারে। তবে এই এলাকায় প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এলাকার বাহিরের কেউ কোন কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে বহিরাগত কেউ অবস্থান করতে চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারিন্টিনে রাখতে হবে।
নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে কতোটুকু গুরুত্ব পাবে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে, একজন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে নিজের জ্ঞান এবং বিভিন্ন দেশে নেয়া পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমি এই প্রস্তাবনাটি তৈরি করেছি।
লেখক:
চিকিৎসক, ত্বক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
No comments:
Post a Comment