Monday, September 7, 2020

গরমে ত্বকের সমস্যা


 মানব দেহের একক বৃহৎ অঙ্গ। শরীরের আবরণ হিসেবে কাজ করে বিধায় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বাগ্রে ত্বকে পরিলক্ষিত হয়। ষড়ঋতুর প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে লক্ষণীয় পরিবর্তন না হলেও, শীত এবং গরমের প্রভাব ত্বকের উপর সুস্পষ্ট। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম এবং আদ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকের বিশেষ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখতে দেয়।

গরমে ত্বকের উপর পরিবর্তন দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।


সূর্যালোকের কারণে ত্বকের পরিবর্তন :

সূর্যালোকের কারণে ত্বকে সোলার ডার্মাটাইটিস বা সানবার্ন, সোলার একজিমা, সোলার আর্টিকেরিয়া, একনিটিক রেটিকুলয়েড, ত্বকের ক্যান্সার এবং মেছতা বা ক্লোজমা হতে পারে। সূর্যালোকের আলট্রা ভয়োলেট রশ্মিই সাধারণত এ জন্য দায়ী। গরমে সূর্যালোকের কারণে হিট-স্ট্রোক বা সানবার্ন হতে পারে

গরমে সৃষ্ট ঘামের কারণে পরিবর্তন :

গরমের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ত্বকের সোয়েট গ্লানড বা ঘর্মগ্রন্থি নিৎসরিত ঘাম তৈরি হয়। ঘামের কারণে #ঘামাচি দেখা দেয়। এ ছাড়া ঘামে ডার্মাটাইটিস্, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের রোগ বিস্তার লাভ করে।

#ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের রোগ যেমন ইমপেটিগো বা সামার বয়েল, ফলিকুলাইটিস, ইরাইসিপেলস, ফারাঙ্ককেল, কারবাংকেল ইত্যাদি। শিশুরা গরমে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয় যা সামার বয়েল নামে পরিচিত।

গরম এবং আদ্র আবহাওয়ায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে যা ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে টিনিয়া ভারসিকলার/ছুঁলি,  ক্যানডিডিয়াসিস, ইরাইথ্রাসমা, দাদ জাতীয় রোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস, টিনিয়া পেডিস, টিনিয়া কর্পোরিস) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গরম এবং ঘামের কারণে ব্রণ এবং এ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশে এ সময়ে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যে কারনে মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে ত্বক লালচে ছোপছোপ চুলকানি হয়।


চিকিৎসা :

গরমে ত্বকের সমস্যা জটিল হতে পারে। কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।


প্রতিরোধের উপায় :

*সরাসরি সূর্যালোকে যাবেন না, ছাতা, হ্যাট এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

*দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকবেন না, সান ব্লকের লোশন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন।

*ভারী জামা-কাপড়, টাইটফিট অন্তর্বাস পরিহার করুন।

*নাইলন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি সিনথেটিক পোশাক পরিধান না করে, সুতি এবং প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পোশাক ব্যবহার করুন,

*একবার ব্যবহার করা পোশাক ও অন্তর্বাস পুনরায় ধৌত করার পর ব্যবহার করুন;

*ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলুন বা মুছে নিন, প্রয়োজনে গোসল করতে পারেন;

*প্রচুর পরিমানে পানীয় পান করুন।

*ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন না। পাউডার ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয় ফলে ঘামাচি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

*সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ

Thursday, August 20, 2020

মাস্ক পরায় সৃষ্ট ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়

 চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখন মাস্ক পরা দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক একদিকে যেমন কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, তেমনি এর কারণে মুখের ত্বকে সমস্যা হতে পারে।

মাস্কের কারণে ঘাম, ত্বকের নিঃসৃত তেল, ময়লা ও জলীয়বাষ্প মুখের ওপর আটকে যায়। আবার মাস্কের ঘর্ষণের ফলেও ত্বকের পরিবর্তন ঘটে। ফলে ব্রণ, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া, আ্যলার্জি, ডার্মাটাইটিস, রোসাছিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

এসব সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ব্রণ (Acne)। জলীয়বাষ্প, ঘাম, তৈলাক্ত ত্বক ইত্যাদি ব্রণ ও জীবাণুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। মাস্ক পরার ফলে সৃষ্ট ব্রণ ইতোমধ্যেই মাস্কনি (Mask+Acne) হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।


কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই মাস্কনি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

* পরিষ্কার, শুকনো, আরামদায়ক মাস্ক পরিধান করুন। প্রাকৃতিক তন্তু যেমন সুতি বা সিল্কের তৈরি নরম ও মোলায়েম মাস্ক তৈরি করে নিতে পারেন। রুক্ষ ও সিনথেটিক কাপড়ের মাস্ক পরা থেকে বিরত থাকুন।

* মাস্ক পরার আগে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা ও মাস্ক নাড়াচাড়ার সুবিধার্থে ময়েশ্চারাইজার বা ব্যারিয়ার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। মাস্ক খোলার পর দ্রুত মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

* মাস্কের কারণে মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে থাকে। তাই মেকআপ বা প্রসাধন চর্চা না করাই ভালো। গরম ও ঘামে মাস্কের আবদ্ধ পরিবেশে প্রসাধনী পণ্য ব্রণ তৈরিতে সহায়তা করে।

* কর্মস্থলে আলাদা কক্ষের সুবিধা থাকলে অন্য কারো সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ছাড়া মাস্ক না পরলেও রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। এভাবে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে, ঝুঁকি না নিয়ে যতটুকু সম্ভব মাস্ক মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে পারেন।

* সাবধানতা অবলম্বনের পরও ত্বকের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

Sunday, August 2, 2020

গরুর চামড়া একটি পুষ্টিকর ও হালাল খাবার

ত্বক বা চামড়া যে কোন প্রানীর সবচেয়ে বড় অঙ্গ। গরুর আকারভেদে একটি চামড়া ১০ থেকে ৫০ কেজি ওজন হতে পারে। সাধারণত পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে পোশাক, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ইত্যাদি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার পশুর চামড়া থেকে জিলাটিন বের করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ঔষধ, প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে মানুষের খাবার হিসেবেও পশুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। যদিও হালাল নয় তবে শুকরের চামড়া খুব জনপ্রিয় খাবার। আবার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়ার মুসলমান ধর্মালম্বীরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকে। বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোন কোন এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে।
খাদ্যমান হিসেবেও গরুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলো ক্যালোরি শক্তি থাকে। উপাদান হিসেবে এই ১০০ গ্রামে ৪৭ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি, ০.০২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪৫ গ্রাম পানি থাকে। গরুর চামড়ার প্রোটিন সাধারণত জিলাটিন হিসেবে থাকে। জিলাটিন হাড় এবং ত্বকের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও গরুর চামড়ায় ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে না বললেই চলে। তবে খুবই সামান্য পরিমাণ চর্বি থাকায় শরীরে কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা একটু ঝামেলা। গরু ছাগলের ভুড়ি খাবার হিসেবে প্রস্তুত করতেও কিন্তু ঝামেলা কম নয়। চামড়া থেকে লোম ছাড়ানোর পদ্ধতি ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন। লোম ছাড়ানোর পর এটি নিজস্ব স্বাদে বিভিন্ন মসলা দিয়ে কারি বা ভাজা বা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়া/মালয়েশিয়ায় কিকিল (Kikil) বা নাইজেরিয়ায় পনমো (Ponmo) খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
বিগত কয়েকবছর ধরে আমাদের দেশে গরু ছাগলের চামড়ার দাম একেবারে কমে গিয়েছে। কোরবানির পরে অনেকেই পশুর চামড়া মাটিতে পুতে রাখছেন বা ফেলে দিচ্ছেন, যা নিতান্তই সম্পদের অপচয়। অথচ খাবার সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে এই বিশাল  অনাকাঙ্ক্ষিত অপচয় থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।

লেখক:
ডাঃ এম আর করিম রেজা
ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Thursday, July 2, 2020

বর্ষায় ত্বকের রোগ এবং প্রতিকার


বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়ায় তাপমাত্রা এবং জলীয়বাষ্প বেশি থাকে, এজন্য কয়েক ধরনের ত্বকের রোগের আধিক্য দেখা দিতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় সৃষ্ট ঘাম, বাতাসে জলীয় বাস্প, এবং সুর্যালোকের কারণে পরজীবী, ফাঙ্গাস, এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের রোগের পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ দেখা দিতে পারে এই মৌসুমে।

*ফাঙ্গাস জনিত রোগ: উচ্চ তাপমাত্রা এবং জলীয়বাষ্প ত্বকে ফাঙ্গাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বগল, কুচকি, হাত-পায়ের আঙ্গুলের ফাকে, নখে বা শরীরের অন্য যে কোন স্থানে ফাঙ্গাস বৃদ্ধি পেয়ে রোগের সৃষ্টি করে। চুলকানি, লালচে চাকা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। দাদ এমনি একটি ত্বকের রোগ।
*ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ: বর্ষা মৌসুমের আবহাওয়া ফাঙ্গাসের মতো ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলের গোড়ায় ফুস্কড়ি উঠে পুজ হতে পারে।
* ত্বকে পরজীবী আক্রান্ত স্ক্যাবিস বা খোসপচড়া দেখা দিতে পারে। 
*উচ্চ তাপমাত্রা, ঘাম এবং তৈলাক্ত ত্বকের কারণে একজিমা, সোরিয়াসিস, মেছতা, ঘামাচি এবং ব্রণ বেড়ে যেতে পারে।

#প্রতিকার
* নিয়মিত গোসল, হাত, পা, মুখ পরিস্কার এবং শুস্ক রাখতে হবে।
* আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে। আন্ডার গার্মেন্টস  একবার ব্যবহার করার পর না ধুয়ে পরিধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
*সুর্যালোক এবং বৃষ্টি এড়িয়ে চলতে ছাতা ব্যবহার করার বিকল্প নেই। ত্বকের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে।
*কৃত্রিম জুয়েলারি ব্যবহার না করাই ভালো। এই মৌসুমে নাক-কান ফোড়ানো, শরীরে ট্যাট্টু আকা থেকে বিরত থাকুন।
*ত্বকে যে কোন ধরনের লক্ষণ অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক:
এম আর করিম রেজা
চিকিৎসক, ত্বক, সৌন্দর্যের, এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ

Sunday, May 31, 2020

মহামারি পরিবেশে নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি জরুরি অনুসঙ্গ


চলমান কোভিড মহামারি কতোদিন স্থায়ী হতে পারে সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার মানুষের জীবন জীবিকাও মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেমে থাকলে চলবে না। সেজন্যই মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের পর আবারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। তবে মহামারি চলাকালে সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে হবে অবশ্যই। যেটি এখন নুতন স্বাভাবিক বা #NewNormal হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতা হিসেবে এই নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাড়তি জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে: *ফেসমাস্ক: রেডিমেড মাস্কের চেয়ে সুতি কাপড়ে ২/৩ লেয়ার দিয়ে কয়েকটি তৈরি করে নিতে পারেন। এগুলো ডিটারজেন্টে পরিস্কার করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। পরিধান করাটি ছাড়াও অতিরিক্ত ২/১টি সাথে রাখুন। *স্যানিটাইজার: সব জায়গায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। তাই স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। *ফেসশিল্ড/সানগ্লাস: যারা সার্বক্ষণিক চশমা ব্যবহার করেন তাদের ফেসশিল্ড ব্যবহার না করলেও চলে, তবে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে পরিধান করলে অসুবিধা নেই। বাজারে এখন নানা ধরনের ফেসশিল্ড পাওয়া যাচ্ছে। *ভেজা আ্যন্টি সেপটিক টিস্যু: বাহিরে কোন কিছু স্পর্শ করার আগে মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। স্যানিটাইজারও মোছার কাজ করতে পারে অবশ্যই। *চামচ/কাটাচামচ, গ্লাস, প্লেট: বাহিরে খাওয়া দাওয়া করতে ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল এগুলো ডিসপোজাবল হিসেবে পাওয়া যায়। *হেলমেট: যারা ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকে যাতায়াত করেন তাদের নিজস্ব হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। *জায়নামাজ: যারা নামাজ পড়েন তাদের নিজস্ব জায়নামাজ সঙ্গে রাখতে হবে। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

Tuesday, May 12, 2020

মহামারি নিয়ন্ত্রণে জোন পদ্ধতি


জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী মহামারি পরিস্থিতিতে রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। #লকডাউন তেমনি একটি ব্যবস্থা, যেটি সমগ্র দেশে বা এলাকাভিত্তিক প্রয়োগ করে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো হয়। লকডাউন বলতে যেটি বোঝায় সেটি বাংলাদেশে জারি করা হয়নি, বরং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। মাসখানেক এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকার পর ইতিমধ্যেই কারখানা, মার্কেটশপিংমল, উপাসনালয় ইত্যাদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, গণপরিবহন চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও সম্ভবত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সতর্কতার উপর গুরুত্ব এবং দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আচরণগত কারণে এসব সতর্ক বাণী কতোটা কাজে আসবে সেটি অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করে সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে এখনো। সনাক্ত করা রোগীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে জোনে বিভক্ত করে সংক্রমণ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে শহরের একটি এলাকা বা উপজেলা ভিত্তিক এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা খুব একটা দুরহ নয়। *#লাল বা রেড জোনে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে, প্রয়োজনে কার্ফ্যূ জারি করে। একটি এলাকায় ৪০-৫০ জনের উর্ধ্বে রোগী সনাক্ত হলেই সেটিকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। *৪০ জনের নীচে সনাক্ত রোগী রয়েছে যে এলাকায় সেটি #ইয়েলো বা হলুদ জোন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সীমিত আকারে কঠোরভাবে সামাজিক নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করে কর্মকাণ্ড চালু রাখার সুযোগ রয়েছে। * যে এলাকায় কোন রোগী সনাক্ত করা যায় নি, সেটি #গ্রীন বা সবুজ জোন হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সামাজিক দুরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলতে পারে। তবে এই এলাকায় প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এলাকার বাহিরের কেউ কোন কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে বহিরাগত কেউ অবস্থান করতে চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারিন্টিনে রাখতে হবে। নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে কতোটুকু গুরুত্ব পাবে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে, একজন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে নিজের জ্ঞান এবং বিভিন্ন দেশে নেয়া পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমি এই প্রস্তাবনাটি তৈরি করেছি। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, May 10, 2020

রেমডেসিভির করোনার ঔষধ নয়!


চলমান কোভিড ১৯ মহামারি চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে। নিশ্চিত কোন ঔষধ না থাকায় মুলত উপসর্গের উপর ভিত্তি করেই এ রোগের চিকিৎসা চলছে। এই তালিকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের আ্যন্টিবায়োটিক, আ্যন্টি-ভাইরাল, আ্যন্টি ম্যালেরিয়াল এমনকি খুজলী-পচরার ঔষধও ব্যবহার করা হয়েছে এ পর্যন্ত। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (FDA) গিলিয়াড সায়েন্স (Gilead Sciences Inc) নামে একটি কোম্পানীর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির (Remdesivir) কোভিড ১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সাথে সাথেই বিশ্বের অনেক ঔষধ কোম্পানী এই ঔষধ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন এবং ভাইরাস বিরোধী আ্যভিগানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ঔষধটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অনুমোদন চেয়েছে। তবে এই ঔষধ নিয়ে যেমন অতি আশাবাদী বা উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই, ঠিক তেমনি এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। #রেমডেসিভির একটি ভাইরাস বিরোধী ঔষধ, যা ইতিপূর্বে হেপাটাইটিস সি, ইবোলা, মার্স এবং সার্স করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কোনটিতেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে চীনে কোভিড ১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে ফলাফল সন্তোষজনক নয় বলে সেখানকার গবেষকরা মতামত প্রদান করেছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস সহ আরো কয়েকটি দেশে কোভিড ১৯ রোগীদের উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী রেমডেসিভির শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ৩২% কোভিড ১৯ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সময় ৪/৫ দিন কমিয়ে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান। গবেষণা অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মৃত্যুহার কমিয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোন সায়েন্টিফিক জার্ণালে প্রকাশিত হয় নি। শুধুমাত্র গিলিয়াড কোম্পানি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল জানিয়েছে, তবে একইসাথে তারা এই বিষয়ে আরো গবেষণা করার সুপারিশও করেছে। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড ১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধটির জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মুলত আমেরিকার কারণেই বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং উৎপাদনের হিড়িক লেগে গিয়েছিল। পরবর্তীতে গবেষণায় কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসায় এটির ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত হয়েছে। রেমডেসিভির মুখে খাওয়ার ঔষধ নয়, বরং শিরায় প্রয়োগ করার একটি দামি ঔষধ। প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫/৬ হাজার টাকা, যেটি রোগীর অবস্থাভেদে ১০-১৫টি প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের একটি ঔষধ উৎপাদন করা গেলেও সেটি বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বহুলভাবে প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কাজেই শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে নয়, বরং যথাযথ এবং যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করেই এই ঔষধটির বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া উচিত। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...