Wednesday, January 18, 2023

হাত দিয়ে খাবার উপকারিতা


পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে কাঁটাচামচ এবং পুর্ব এশিয়ায় চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করার রীতি রয়েছে। বাদবাকি বিশ্বে হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সংস্কৃতির অংশ। পাশ্চাত্যের রীতি অনুসরণ করে এখন অনেকে নিজেকে আধুনিক ও সভ্য প্রমানের চেষ্টায় আবহমান কালের সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেন। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণকে অসভ্যতা এবং অপরিস্কার জীবনযাপনের অংশ বলে নাক সিঁটকাতেও দেখা যায় কাউকে। 

অনেকেই হয়তো জানেন না হাত পরিস্কার করে খাবার গ্রহণ করা বরং স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যেস। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে গবেষণায় প্রমাণিত কিছু উপকার জেনে নেই।


©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। খাবার মাখানোর সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত স্নায়ু খাবার ধরন মস্তিষ্কে জানিয়ে দেয় এবং সেই অনুযায়ী পরিপাকতন্ত্রে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিপাক রস নিঃসরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কাঁটাচামচ বা চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে হজম সহায়ক এই ধাপটি বাদ থেকে যায়। 

হাতের ত্বকে হজমসহায়ক একধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে, যা হাত পরিস্কার করার পরেও থেকে যায়। যারা বদহজমে (Irritable bowel syndrome) ভুগে থাকেন তাদের জন্য হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমে সহায়তা করে থাকে।

© গবেষণায় দেখা গিয়েছে দ্রুত খাবার গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কাঁটাচামচ বা ষ্টিক দিয়ে হাতের তুলনায় তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাই হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ ডায়াবেটিস-২ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ স্নায়ুর মাধ্যমে পরিমিত খাবার গ্রহণ করার জন্য মস্তিস্কের মাধ্যমে পাকস্থলীকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে, যা স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে থাকে।

সর্বোপরি হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে খাবারের নানা পদ সংমিশ্রণ করে স্বাদের বৈচিত্র্য এবং পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। মনে রাখবেন খাবার আগে সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ ডিটারজেন্ট দিয়ে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে।

Friday, January 13, 2023

ভাতঘুম



অনেকে দুপুরে খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নেন, যাকে বাংলায় বলা হয় ভাত-ঘুম। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোকে যদিও অনেক সময় আলসেমি মনে করা হয়, কিন্তু ভাত-ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। দিনভর কাজের চাপের মাঝে কম্পিউটারের 'রিফ্রেশ বাটনের' মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। এমনকি নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো মানুষকে আরও বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করে।

ভাত-ঘুম বাঙালির বদভ্যাস বলে মনে করা হলেও এই সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশেই। ইউরোপের অনেক ভাষায় ভাত-ঘুমকে বলা হয় 'সিয়েস্তা', আর ইংরেজিতে 'পাওয়ার ন্যাপ'। গ্রীস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমনকি ইউরোপের কিছু শহরে কর্মজীবী মানুষের জন্য সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।

রাতে ঘুমের পর যে ধরনের কর্মস্পৃহা নিয়ে দিনের শুরু হয় সেটি সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমে আসতে শুরু করে। ন্যাপ বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে, যা কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। জেগে থেকে কাজ করার সাথে সাথে মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে। ভাত-ঘুমের সময় এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মন-মেজাজে ভালো বোধ করি।

ভাত-ঘুমের স্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নানামতে এটি সর্বনিম্ন ২০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইদানিং বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য ভাত-ঘুমের উপযোগী চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে।

Wednesday, January 11, 2023

ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

করোনা মহামারি ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ডিজিটাল করার চলমান প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মহামারির সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব চলাকালীন দেশটির যানবাহনে চলাচল এবং শপিংমল বা যে কোন জনসমাগমস্থলে প্রবেশাধিকারের জন্য ২০২১ সালে একটি আ্যপ চালু করা হয়। এই আ্যপে করোনা পরীক্ষা, টিকা দেয়ার রেকর্ড এবং অন্যান্য কয়েকটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি করার পর প্রত্যেকের জন্য আলাদা একটি কিউআর কোড তৈরি হয়, যেটি ব্যবহার করে চলাচল বা প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। স্মার্টফোনে এই আ্যপটি ব্যবহার শুরু করার পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির চলাচলের একটি ম্যাপিংও স্বয়ংক্রিয়ভাবে  তৈরি হয়।

২০২৩ সালের শুরুতে ইন্দোনেশিয়া করোনা মহামারির জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কাজেই মহামারির জন্য চালু করা আ্যপটিও ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ভবিষ্যতে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সমন্বয় করার বিষয়টি মাথায়  রেখেই এই আ্যপটি চালু করা হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার সকল স্বাস্থসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, প্যাথোলজি পরীক্ষা কেন্দ্র ও ফার্মেসি এই আ্যপের মাধ্যমে সংযুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে সেবাগ্রহনকারীর স্বাস্থ্য রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। তবে এই আ্যপের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের ঔষধ কেনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত  সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সেবাদানকারী যেকোন প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোডের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার রেকর্ড দেখতে পারবেন। সেবাগ্রহীতাও তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ড দেখতে পারবেন এবং প্রেসক্রিপশনসহ যে কোন রিপোর্ট আ্যপের মাধ্যমেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ২০২৩ সালের মধ্যেই এই সমন্বয় করার প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী বছর থেকে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য সেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দুর করা স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু করার বিকল্প নেই। দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নিতে হবে অবশ্যই।


মানবদেহের জন্য ৪টি ভয়ঙ্কর ছত্রাক সংক্রমণ




ছত্রাক বা ফাংগাস প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে কিছু মানবদেহে সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে। মানবদেহে সংক্রামিত ছত্রাকের বেশিরভাগ ত্বকে নানা ধরনের রোগ তৈরি করে। সাধারণত ছত্রাক সংক্রমণ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়, তবে কিছু ছত্রাক জীবনহানির কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক কালে কিছু ছত্রাক ঔষধ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চারটি ছত্রাক সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে।

◆ক্রিপটোকক্কাস নিয়োফরম্যানস

এটি মস্তিষ্কে সংক্রমণ করে জীবনহানির কারণ হতে পারে। সাধারণত পাখির মল দিয়ে ফলের মাধ্যমে এই ছত্রাক শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এটি ছড়াতে পারে।

◆আ্যসপারগিলাস ফিউমিগ্যটাস

এই ছত্রাক ঘরেবাইরে পরিবেশে বিদ্যমান। সাধারণত মরা পাতা, পচণধরা শব্জি ও ফলমূল, সংরক্ষিত শস্য ও খাবার, ঘরের কার্পেটে এটি জন্ম নিয়ে থাকে। সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ফুসফুস ও সাইনাসে সংক্রমণ করে থাকে।

◆ক্যানডিডা অরিস

সাধারণত এই ফাঙাস স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা এটি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মী চিকিৎসক ও নার্সের সংস্পর্শে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন‌। এটির সংক্রমনে তীব্র জ্বর ও শীত অনুভূত হয়ে থাকে।

◆ক্যানডিডা আ্যলবিকানস্

ফাঙাস বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এটি। ত্বকের নানা স্থানে এই ফাঙাস সংক্রমণ করে থাকে। সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে ইদানিং এই ফাঙাস ঔষধ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রচলিত ঔষধ কাজ করে না বিধায় আক্রান্তরা দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগে থাকেন।

◆প্রতিরোধের উপায়

●ফলমূল ও শাকসবজি ভালো করে পরিষ্কার করুন।

● পচণধরা ফলমুল ও শাকসবজি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

● ঘরের কার্পেটে নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

●হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রয়োজনের বেশি সময় অবস্থান করবেন না।

●চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফাঙাস বিরোধী ঔষধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।


ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Wednesday, April 27, 2022

মুদিক: ইন্দোনেশিয়ায় ঈদে বাড়ি ফেরা

ইন্দোনেশীয় ভাষার 'মুদিক' শব্দটির বাংলা অর্থ 'বাড়ি যাচ্ছি'। মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতরে ইন্দোনেশিয়ার কয়েক কোটি মানুষ তাদের কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি যাবেন।

চীনা নববর্ষে সবচেয়ে বেশি মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত করেন। এরপরই ইন্দোনেশিয়ায় ঈদ উল ফিতরের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ ভ্রমণ করে থাকে।


বাংলাদেশে প্রতি বছর অন্তত দুই বার, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহায় আমরাও মানুষের ঘরমুখী যাত্রা দেখি। উড়োজাহাজ, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ফেরি, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল—যে যেভাবে পারেন নাড়ির টানে ঘরে ফেরেন। এমনকি পায়ে হেঁটে, রিকশা, ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাড়ির ফেরা মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। আবার একই রকম ভোগান্তি সহ্য করে সবাই ফেরেন কর্মস্থলে।

 ভোগান্তির চিত্র কমবেশি আমাদের সবারই জানা। তবে, এই যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পরেন নিম্ন আয়ের মানুষ। ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েন। একসঙ্গে অনেক মানুষের চাপ পড়ায় উড়োজাহাজ, বাস, লঞ্চসহ প্রায় সব যানবাহনের ভাড়া বেড়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত হয়ে যায়। যাদের স্বাভাবিক ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করা কঠিন, তাদের জন্য এই বাড়তি ভাড়া হয়ে ওঠে অসহনীয়।

করোনা মহামারির ২ বছরে ইন্দোনেশিয়ায় মুদিক ভ্রমণকারী মানুষের সংখ্যা কম ছিল। তবে, এ বছরের মুদিক ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় সাড়ে ৮ কোটি থেকে ৯ কোটি মানুষ মুদিক যাত্রা করবেন এ বছর।

মুদিক যাত্রার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের একটি বিশেষ শাখা মাসখানেক আগে থেকে কাজ শুরু করে। দ্বীপ দেশটির এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যাতায়াতের ব্যবস্থা আকাশ বা জলপথে। এ বছর ৬০ থেকে ৭০ লাখ মানুষ জলপথে, ৮০ থেকে ৯০ লাখ মানুষ আকাশপথে এবং ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ ট্রেনে মুদিক যাত্রা করবেন। ইন্দোনেশিয়ায় শুধু জাভা ও সুমাত্রা দ্বীপে রেল যোগাযোগ রয়েছে। বাকি ৬ থেকে ৭ কোটি মানুষ সড়কপথে মুদিক যাত্রা করবেন।

একই দ্বীপে মুদিক যাত্রার জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে সড়কপথ। তবে এ ক্ষেত্রে গণপরিবহন বাস ব্যবহারের পরিবর্তে ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ইন্দোনেশিয়ানরা। যার ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। টোল এক্সপ্রেস হাইওয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ হলেও নন-টোল ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক মোটরসাইকেলে মানুষ মুদিক যাত্রা করেন।

বিগত কয়েক বছর ধরে মোটরসাইকেলে মুদিক যাত্রা নিরুৎসাহিত করতে লরি, ট্রেন, জাহাজে গন্তব্যস্থলে বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার।

এ বছর কেবলমাত্র করোনার বুস্টার ডোজ টিকা নেওয়া নাগরিকরা মুদিক ভ্রমণ করতে পারবেন। সেইসঙ্গে মুদিক যাত্রীদের সেবা দিতে মহাসড়ক, স্টেশন ও বন্দরে প্রায় ১৪ হাজার জরুরি চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।ইন্দোনেশিয়ার সরকার দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় সাহায্য করে থাকে। দেশটির ৮ থেকে ৯ শতাংশ নিম্ন আয়ের মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মুদিক যাত্রার জন্য জাহাজ, ট্রেন, বাসের টিকেট বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারেন। এ বছর দরিদ্র মানুষের মুদিক যাত্রায় নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৫ হাজার বাস।

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নিম্নআয়ের মানুষের বড় অবদান রয়েছে। জীবিকার তাগিদে শহরে আসা এই শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ ঈদে বাড়িমুখী হয় তাদের পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে। ইন্দোনেশিয়ার মতো ব্যবস্থা এ দেশেও নেওয়া হলে তাদের ঘরে ফেরার আনন্দটা বেড়ে যেতে পারে।

Wednesday, April 13, 2022

চৈত্র সংক্রান্তি/বৈসাবি


আজ চৈত্র মাসের শেষ দিন 'চৈত্র সংক্রান্তি'। বাংলা সন ১৪২৮ বিদায় নেবে, আসবে নতুন বছর ১৪২৯।

চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে লোকউৎসব। বাংলা সনের শেষ দিনটিকে ঘিরে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে এই দিনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস প্রভৃতি ক্রিয়াকর্ম করে থাকে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ চড়ক পুজা, বেসম পুজা, শাকান্ন উৎসব, নীল উৎসব, ইত্যাদি নানা আয়োজনে পালন করে থাকে।
চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব ছিল #চড়ক পুজা এবং মেলা। বৈশাখের উদ্দীপনায় চাপা পড়ে গেলেও গ্রামবাংলায় একসময় চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে আচার অনুষ্ঠানের অন্ত ছিল না। সারারাত ধরে চলতো কীর্তন, গৃহিণীরা সংক্রান্তি উপলক্ষে ঘরদোর লেপা-পোছা করতেন। সংক্রান্তি উপলক্ষে গৃহস্থ নারীরা মাসজুড়ে ব্রত পালন করতেন স্বামী, সংসার এবং ফসলের শুভ কামনা করে। চৈত্র সংক্রান্তির মেলা উপলক্ষে গ্রামাঞ্চলের গৃহস্থরা মেয়ে-জামাইকে সমাদর করে বাড়ি নিয়ে আসতেন। অবস্থা সম্পন্ন গৃহস্থরা সকলকে নতুন জামাকাপড় উপহার দিতেন এবং হরেক রকম খাবার-দাবারের আয়োজন করা হতো।
পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করা উপলক্ষে উপজাতীয়রা তিন দিনব্যাপী বর্ষবরণ উৎসব সেই প্রাচীনকাল থেকে পালন করে আসছে। চাকমারা #বিজু', মারমারা #সাংগ্রাই এবং ত্রিপুরারা #বৈসু বলে অভিহিত করলেও পুরো পার্বত্য জেলায় তা #বৈসাবি নামেই পরিচিত। বৈসাবি অহিংসার প্রতীক, বন্ধুত্বের প্রতীক এবং মৈত্রীর সুদৃঢ় বন্ধন।
'

বৈসাবির প্রথম অক্ষর 'বৈ' দিয়ে, বৈশাখী বলা যেতে পারে। বৈ+সা+বি=বৈসাবি অর্থাৎ 'বৈ' মানে 'বৈসু'_ এটি ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'সা' মানে 'সাংগ্রাই', এটি মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা। 'বি' মানে বিজু, এটি চাকমা সম্প্রদায়ের ভাষা। সুতরাং বছরের প্রথম দিনকে ত্রিপুরা সম্প্রদায় 'বৈসু', মারমা সম্প্রদায় 'সাংগ্রাই' এবং চাকমা সম্প্রদায় 'বিজু' নামে অভিহিত করে থাকে। তিন সম্প্রদায়ের উৎসবের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত হয়েছে 'বৈসাবি'।

Tuesday, March 22, 2022

বায়ুদূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

বিগত পরপর তিনবছর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বায়ুদূষণ কবলিত দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের রাজধানী শহরের তালিকায় দিল্লির পরেই দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে ঢাকা। বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট রোগে মারা যায়। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ৪০ হাজার শিশুর মৃত্যু সরাসরি বায়ুদূষণের কারণে ঘটেছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।

 বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দৈনিক অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বিশ্বের মোট জিডিপির ৩- ৪%।

বায়ুদূষণ কি: বায়ুতে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫ থাকে। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এটির মাত্রার উপর ভিত্তি করে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী দৈনন্দিন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য প্রতি ঘনমিটারে পিএম-২.৫ এর মাত্রা ১০ এর নিচে থাকা প্রয়োজন। 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউএয়ার’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২১ সালে বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ৭৬.৯, যা গ্রহনযোগ্য মাত্রার চেয়ে প্রায় ৮ গুন বেশি।

বায়ুদূষণের কারণে কি রোগ হয়: ক্যান্সার, হৃদ্‌রোগ, ত্বকের বিভিন্ন রোগ, হাঁপানি সহ ফুসফুসের অন্যান্য অসুখ এবং আরো অনেক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ বায়ুদূষণ। সাম্প্রতিক সময়ে বায়ুদূষণের কারণে এসব রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গিয়েছে। বায়ুদূষণের কারণে স্নায়বিক এবং প্রজনন সমস্যা হতে পারে বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছে। গর্ভবতী মায়ের দেহে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাবের কারণে নবজাতকের মৃত্যু হতে পারে। শিশুর ক্ষেত্রে ফুসফুস এবং ত্বকের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় বায়ুদূষণের কারণে। সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট শারীরিক সমস্যা মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং গড় আয়ু কমিয়ে দেয়।

বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত থাকার উপায় কি: বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি সরকারি নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িত। কলকারখানা, যানবাহন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণেই মুলত বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। জনগণকে বায়ুদূষণের বিরুপ প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার করলে বায়ুদূষণের বিরূপ প্রভাব থেকে কিছুটা মুক্ত থাকা যায়।


দ্য গ্রেট লন্ডন ফায়ার

১৬৬৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সিটি অফ লন্ডন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল, যা ইতিহাসে 'দ্য গ্রেট লন্ডন ...