Monday, November 4, 2024

কলকাতার সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে অবাঙালি নবাব

সময়টা উনিশ শতক। ব্রিটিশ শাসন পুরোপুরি কায়েম হয়ে গেলেও কিছু কিছু দেশীয় রাজ্য তখনও স্বমহিমায় বিরাজ করছে। তেমনই এক রাজ্য অযোধ্যা। বসন্ত এসেছে, রঙ লেগেছে নবাবের মনেও। কবে যে আবির মেখে উদযাপন করবেন! কিন্তু হঠাৎ নবাবের কানে এল, হিন্দুরা নাকি এবছর হোলি খেলবে না। কিন্তু কেন? রাজদরবারে ডাক পড়ল কয়েকজন ব্রাহ্মণের। তাঁরা নবাবকে জানালেন, যেহেতু একই দিনে মহরম এবং হোলির দিন পড়েছে, তাই সেবছরের জন্য রং মাখার অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইসলাম ধর্মে রংকে হারাম মনে করা হয়। শরীরের কোথাও রঙ লেগে থাকলে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মসজিদে প্রবেশ করেন না। কিন্তু হোলির দিনে তো গোটা শহর রঙে ভরে উঠবেই। অওধে হিন্দুদের এই কথা শুনে মৌলভিদেরও ডেকে পাঠালেন নবাব। আর জানিয়ে দিলেন, দুই ধর্মের অনুষ্ঠানই একইরকম মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হবে। নিজে মুসলমান পরিবারে জন্মালেও প্রজাদের ধর্মই যে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের ধর্ম। সেখানে হিন্দু মুসলমান ভেদ নেই। সেবারের হোলির অনুষ্ঠানে যথারীতি রং মেখে হাজির হয়েছিলেন নবাব নিজেও। 

ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাসে নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ এক কিংবদন্তি। ১৮৫৫ সালে প্রবল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যেও তিনি অযোধ্যার হনুমান গঢ়ী মন্দির রক্ষা করেছিলেন। তবে ব্রিটিশ সরকারকে চিনেছিলেন শত্রু বলেই। চরম এক প্রতিকূল পরিবেশে অনেক বাধা বিপত্তি এড়িয়ে রাজ্য চালাতে হয়েছে তাঁকে। 

সময়টা ১৮৫৬ সাল। কোম্পানির কাছে অযোধ্যার নবাবী হারালেন ওয়াজেদ আলী শাহ। পেনশন নিয়ে লখনউয়ের কোনও প্রাসাদে নিশ্চিন্তে থাকতেই পারতেন। তবে লখনৌ থেকে বেনারস হয়ে তাঁর বজরা নিয়ে পৌঁছলেন কলকাতার বিচালিঘাটে। তার ইচ্ছে ছিল কোম্পানির কাছে সওয়াল করবেন সিংহাসন উদ্ধারের জন্য। সফল না হলে যাবেন লন্ডনে, রানি ভিক্টোরিয়ার কাছে। ইংরেজের ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে তাঁর মোহ তখনও কাটেনি। 

বছর না ঘুরতেই ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে যোগ দিল অযোধ্যা। কলকাতায় গ্রেফতার করে ওয়াজিদ আলী শাহকে রাখা হলো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে। মহাবিদ্রোহের পরাজয় দিয়েই লক্ষ্ণৌ শহরে নবাবি শাসনের ইতি ঘটল।‌ দুই বছর বন্দি জীবন শেষে তিনি কলকাতাতেই পেনশন নিয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে গড়ে উঠল নির্বাসিত নবাবের নতুন নবাবিয়ানা। যতই নির্বাসন হোক, নবাবিয়ানায় সহজে ছেদ পড়া মুশকিল। নবাব ওয়াজেদ আলি তাই সঙ্গে করে আনলেন ফেলে আসা স্মৃতি। জাঁকজমক বজায় রাখতে কলকাতা শহরের মধ্যেই গড়ে তুলেছিলেন তাঁর পরিচিত দ্বিতীয় এক টুকরো লক্ষ্মৌ। নবাবি সংস্কৃতি, আমোদ আহ্লাদ, এমনকি নবাবি খাবারও তাঁর হাত ধরে কলকাতায় পাড়ি দিল। একদিকে চিড়িয়াখানা, বাইজি সংস্কৃতি আর অন্যদিকে বিরিয়ানি কিংবা পাখির লড়াই অথবা ঘুড়ি ওড়ানো কলকাতার অন্দরমহলে দিব্যি জায়গা করে নিল তাঁর আমলে। 

তবে জৌলুশ জাঁকজমকপূর্ণ নবাবি সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গে ওয়াজিদ আলী শাহ ছিলেন সাহিত্য, সঙ্গীত, নৃত্যশিল্পের অনুরাগী ও পৃষ্ঠপোষক। মেটিয়াবুরুজে নবাবের বাসগৃহ রীতিমতো শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের আড্ডায় পরিণত হয়েছিল। লখনউয়ে ওয়াজিদ আলির দরবারেই ঠুমরি জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায়। আর মেটিয়াবুরুজ থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার বুকে।

অনেক গান রচনা করেছেন তিনি। মাতৃভূমি লখনউ থেকে তাঁর বিচ্ছিন্নতা প্রকাশ করতে গিয়ে 'বাবুল মোরা নাইয়াহার ছুটো হি যায়ে (বাবা, আমার বাড়ি এখন আমার কাছে হারিয়ে গেছে)' রচনা করেছিলেন। এই ঠুমরির মধ্যে আছে তাঁর বিলাপ, 'আংরেজ বাহাদুর আয়ে, মুলক লেঁই লিহোঁ (সাহসী ইংরেজরা এসে দেশ কেড়ে নিয়েছে)।'

তাঁর দরবার যন্ত্রসংগীতেও ছিল তুলনাহীন। সরোদ, সানাই, তবলাকেও কলকাতায় জনপ্রিয় করে তোলেন তিনি। কত্থক নৃত্যশৈলীকে তিনি এতটাই আত্মস্থ করেছিলেন যে অনেক নৃত্যনাটিকাও তৈরি করেছিলেন। তিনি কত্থকের নতুন এক লখনউ ঘরানা তৈরি করে ফেলেছিলেন। কত্থক সর্বভারতীয় নৃত্যকলায় জনপ্রিয় করার কৃতিত্ব তাঁর।

লেখনী ও মঞ্চেও পারদর্শী ছিলেন এই নবাব। ১৮৪৩ সালে লেখা নাটক ‘রাধা কানহাইয়া কা কিস্সা’ মঞ্চস্থ করেন। এই কিস্সাকেই বলা যায় প্রথম আধুনিক উর্দু নাটক। হিন্দুস্তানি থিয়েটারের প্রথম নাট্যকার হিসেবে তাঁকে উল্লেখ করা হয়ে থাকে। 

বাংলায় যখন নবজাগরণের ঢেউ চলছে ঠিক তখন লক্ষ্ণৌ ঘরানার সাংস্কৃতিক চর্চা চলছিল নবাবের মেটিয়াবুরুজের দরবারে। ঘুড়ি উৎসব, আলু বিরিয়ানি, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি আরো অনেক কিছুই কলকাতার সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিনত করার কৃতিত্ব নবাব ওয়াজিদ আলী শাহকে দেয়া হয়ে থাকে।

(সংগৃহিত ও সম্পাদিত)

Friday, November 1, 2024

মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা


 মিষ্টি কুমড়া বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় একটি সবজি। এটির রয়েছে নানা রকম উপকারিতা এবং পুষ্টিকর গুনাগুণ, যার জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের 'পাওয়ার হাউস' বলা হয়ে থাকে। বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদানেও সমৃদ্ধ এই সবজি। তাই মিষ্টি কুমড়া মানবদেহে নানা উপকারী ভূমিকা পালন করে।

ত্বক

মিষ্টি কুমড়ায় থাকে ভিটামিন এ, সি এবং ই- যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে। ভিটামিন সি কোলাজেন বাড়ায়,  আর ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ‘ফ্রি র‌্যাডিকেল’ থেকে সৃষ্টি ক্ষতি পূরণ করতে ভূমিকা পালন করে। কুমড়ায় থাকা বেটা ক্যারোটিন ভিটামিন এ যে পরিনত হয়, যা সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে প্রতিরোধ করে।

চোখ

ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। মিষ্টি কুমড়ায় লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন থাকে। বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে এই দুইটি উপাদান।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা 

উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এ এবং সি থাকার কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে মিষ্টি কুমড়া।অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ মিষ্টি কুমড়া ক্যানসার প্রতিরোধেঝ সাহায্য করে।

হৃৎপিন্ড ও রক্তচাপ 

পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কুমড়া হৃৎপিন্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে নানা ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।

 পটাসিয়ামের উৎস

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। স্বাভাবিক রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন ও মাংসপেশীর কার্যকারিতার জন্য পটাশিয়াম অপরিহার্য। এছাড়াও পটাসিয়ামের অভাবে কিডনিতে পাথর হওয়া ও হাড় ভঙ্গুর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।

পরিপাকতন্ত্র

মিষ্টি কুমড়ায় থাকা আঁশ পাকস্থলীর জন্য উপকারী। কুমড়া প্রোবায়োটিকসের উৎস, যা পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার জন্য দরকারি। আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। রক্তে কোলেস্টেরল ও কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা ঠিক রাখতেও ভূমিকা রাখে আঁশ।

মিষ্টি কুমড়ার আয়রন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

মিষ্টি কুমড়ার বীজেও উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। এছাড়াও জিঙ্ক থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

কলকাতার সংস্কৃতিতে প্রভাব বিস্তার করেছিলেন যে অবাঙালি নবাব

সময়টা উনিশ শতক। ব্রিটিশ শাসন পুরোপুরি কায়েম হয়ে গেলেও কিছু কিছু দেশীয় রাজ্য তখনও স্বমহিমায় বিরাজ করছে। তেমনই এক রাজ্য অযোধ্যা। বসন্ত এসেছে, ...