১৭শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী শক্তি ইংরেজ, ফরাসি, পর্তুগিজ ও ডাচ কোম্পানি বানিজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে বসে। শক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC)। রাজশাহী ছিল এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে তারা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল।
ডাচরা রাজশাহীতে আসে মূলত রেশম ব্যবসা কেন্দ্র করে।রাজশাহী অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকেই মুলবুটি (মসলিনের বিকল্প সূক্ষ্ম কাপড়) এবং তুঁত সিল্কের জন্য বিখ্যাত ছিল।
ডাচরা এই সূক্ষ্ম কাপড় ইউরোপে রপ্তানি করত। উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য তারা গুদামঘর (factory house) স্থাপন করে। এখনও বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক স্থাপনা টিকে রয়েছে।
নদীপথের কারণে রাজশাহী সহজেই বন্দর এলাকা ও অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, যা ডাচদের ব্যবসার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক সুবিধা তৈরি করত। এসব কারণেই ডাচরা রাজশাহীতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল।
১৭৪০ সালের দিকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজশাহী শহরে পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় বড়কুঠি নির্মাণ করে। এটি ছিল মূলত একটি কুঠি বা ফ্যাক্টরি হাউজ, যেখানে তারা সিল্ক ও অন্যান্য পণ্য সংগ্রহ ও রপ্তানির জন্য ব্যবহার করত।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তীতে তা সরকারি মালিকানায় আসে। এটি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থাপনাটি আংশিকভাবে সংরক্ষিত, তবে সময়ের সাথে এর কিছু অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এটি রাজশাহীর অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত, যেখানে ইতিহাসপ্রেমী ও স্থাপত্যবিদরা ঘুরতে আসেন।