ভারতের বোম্বে শহরের অভিজাত মালাবার হিল এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদসদৃশ ভবন জিন্নাহ হাউস, যা পূর্বে সাউথ কোর্ট ম্যানশন নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৩৬ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নির্মাণ করেন এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি এখানেই বসবাস করেন।
বিলেত থেকে ফিরে এসে মুসলিম লীগের নেতৃত্ব নেওয়ার পর জিন্নাহ এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি বাড়িটির নকশা তৈরি করেন, যার মধ্যে ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর প্রভাব রয়েছে। বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল ইতালীয় মার্বেল, ওয়ালনাট কাঠ। বিদেশি কারিগর আনা হয়েছিল এটি নির্মাণের জন্য। জিন্নাহ নিজে বাড়ির নির্মাণ তদারকি করেন এবং প্রতিটি ইট-পাথর নিজে দেখভাল করেন। সেইসময় বাড়িটি নির্মাণে ২ লক্ষ রপি ব্যয় হয়েছিল।
এই ভবনটি একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন, যেখানে ভারতীয় ও ইউরোপীয় নকশার সমন্বয় রয়েছে। ধনুকাকৃতির দরজা, উঁচু খিলান, কাঠের কারুকাজ এবং প্রশস্ত বারান্দা, যা সেই সময়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে।
এই বাড়িতেই জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে ১৯৪৪ সালে এবং নেহরুর সাথে ১৯৪৬ সালের ভারত বিভাজন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারত পাকিস্তান বিভাজনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
১৯৪৭ সালের পরে জিন্নাহ পাকিস্তানে চলে গেলে, এই বাড়ি ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের দখলে ছিল ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত। তারপর এটি ভারতের সরকারের অধীনে যায় এবং ‘ইভাকুই প্রপার্টি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নেহেরু ভবনটি পাকিস্তানকে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মন্ত্রী পরিষদ তাঁর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই। ২০০৭ সালে জিন্নাহর একমাত্র কন্যা দিনা ওয়াদিয়া এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করে আদালতে মামলা করেন, তবে ভারত সরকার সেটি মেনে নেয়নি।
পাকিস্তান বহুবার এই ভবনকে মুম্বাইয়ে তাদের কনস্যুলেট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
২০২৩ সালে মুম্বাই হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি এটি সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে।
বর্তমানে এটি সংস্কারের কাজের জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে একে কূটনৈতিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে।
#history #heritage #Jinnah #India #Pakistan #Mumbai #trend #viralpost2025 #photo #MRKR
No comments:
Post a Comment