নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব নিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী উগ্রপন্থী কেউ না কেউ ইতিহাসে প্রায় সবসময়ই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো নানা কুতর্ক হাজির করেছেন। ঐতিহাসিক একটি ঘটনা থেকে ইসলাম ধর্মে নারীর অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
হযরত আয়েশা (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম বিশিষ্ট নারী সাহাবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর স্ত্রী। তিনি শুধু একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে "জঙ্গ-ই-জমল" বা "উটের যুদ্ধ" (Battle of the Camel) ইসলামের ইতিহাসে একটি আলোচিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা।
হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন তাঁকে হত্যা করা হলে ইসলামী বিশ্বে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। হযরত আলী (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হলে অনেকে এই হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন, বিশেষত হযরত আয়েশা (রাঃ), তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ)। তারা মনে করতেন, হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অপরদিকে হযরত আলী (রাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা মনে করতেন, প্রথমে শাসনব্যবস্থা সুসংহত করতে হবে, তারপর বিচারের ব্যবস্থা হবে। এই মতপার্থক্য থেকেই বসরার কাছে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে (৩৬ হিজরি) সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক “উটের যুদ্ধ”।
হযরত আয়েশা (রাঃ) মক্কা থেকে বসরার দিকে রওনা হন যাতে মুসলিমদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা যায়। যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি উটে চড়ে উপস্থিত ছিলেন, এবং সেই উটকে ঘিরেই উভয় পক্ষের লড়াই সংঘটিত হয়। উটকে কেন্দ্র করেই সেই যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছিল, তাই এটিকে বলা হয় "জঙ্গ-ই-জমল" বা “উটের যুদ্ধ”।
হযরত আলী (রাঃ)-এর বাহিনী এই যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে তিনি হযরত আয়েশাকে (রাঃ) বন্দি করেননি, বরং অত্যন্ত সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে তাঁকে মদিনায় ফেরত পাঠান।
যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) বিজয়ী হতে না পারলেও, এটি ছিল কোন মুসলিম নারীর জন্য প্রথম সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘটনা। হযরত আয়েশা (রাঃ) যুদ্ধ পরিচালনায় সক্রিয় অস্ত্র ধরেননি, কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অভিপ্রায় থেকে।
No comments:
Post a Comment