Friday, May 9, 2025

দাদ

স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ার পাশাপাশি এবছর দাদ এর বিস্তৃত সংক্রমণ ঘটেছে দেশে। এটি ত্বকের পরিচিত ও সাধারণ রোগ হলেও আশঙ্কার বিষয় হলো ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে দাদ। ত্বকের এই ছোঁয়াচে রোগটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণে ঘটে। ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম ও এপিডার্মোফাইটন ধরনের ফাঙ্গাস জাতীয় জীবাণু দাদ সৃষ্টি করে। ইংরেজিতে এটিকে রিংওয়ার্ম (Ringworm) বলা হয়ে থাকে।

মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের যে কোনো জায়গায় শিশু নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দাদ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশু, বয়স্ক, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে। 

☑️কিভাবে ছড়ায়

দাদ একটি ছোঁয়াচে ছত্রাকজনিত ত্বকের রোগ।

•আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তার ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শ থেকে (চিরুনি, তোয়ালে ও বিছানার চাদর ইত্যাদি)

•দাদ আক্রান্ত গৃহপালিত প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে (কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল ও ঘোড়া)

•দাদ রোগের জীবাণু আছে এমন পরিবেশ, বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে স্থান থেকে

☑️লক্ষণ কি 

•ফুসকুড়ি বা র‍্যাশ দাদের প্রধান লক্ষণ এই র‍্যাশ দেখতে সাধারণত আংটির মতো গোল হয়ে থাকে। রঙ হয় লালচে। তবে রোগীর ত্বকের বর্ণভেদে এটি রূপালি দেখাতে পারে। আবার আশেপাশের ত্বকের চেয়ে গাঢ় বর্ণও ধারণ করতে পারে। দাদ রোগে ত্বকের বর্ণ পরিবর্তনের পাশাপাশি র‍্যাশের উপরিভাগে ছোটো ছোটো আঁশ থাকতে পারে। 

•চুলকানি

• আক্রান্ত স্থান ত্বক খসখসে বা শুকনো এবং ফুলে যেতে পারে

•ত্বকের অংশে চুল অথবা লোম থাকলে সেগুলো পড়ে যেতে পারে।

শরীরের যে কোন স্থানে যেমন কুঁচকি, মাথার ত্বক, হাত, পা, পায়ের পাতা, এমনকি হাত-পায়ের নখেও সংক্রমণ হতে পারে। আক্রান্ত স্থানের ওপর নির্ভর করে দাদের লক্ষন ভিন্ন হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা পরিভাষায় রোগের নামও আলাদা হয়ে থাকে।

কুঁচকিতে দাদ হলে সাধারণত ঊরুর ভেতরের দিকের ভাঁজে লাল লাল র‍্যাশ হিসেবে দেখা যায়। র‍্যাশে আঁইশ থাকে এবং চুলকানি হয়।

পা ও আঙ্গুলের ফাঁক আক্রান্ত হলে ত্বক উঠে যেতে থাকে। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি হয়। বিশেষ করে পায়ের সবচেয়ে ছোটো আঙুল দুটির মাঝখানের অংশে চুলকানি হয়ে থাকে। পায়ে দাদ হলে পায়ের পাতা ও গোড়ালিও আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে পায়ের ত্বকে ফোস্কা পড়তে পারে। নখ দাদ আক্রান্ত হলে আকৃতি ও রঙের পরিবর্তন হয়।

মাথার ত্বকে দাদ হলে সাধারণত আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে গিয়ে টাক সৃষ্টি হয়। টাক পড়া অংশে লালচে, গোলাকার ও ছোটো ছোটো আঁশযুক্ত র‍্যাশ তৈরি হয়। এতে চুলকানি থাকতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে টাক পড়া অংশের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং মাথার ত্বকে দাদ রোগের একাধিক র‍্যাশ তৈরি হতে পারে।

গাল, চিবুক ও গলার ওপরের অংশেও দাদ হতে পারে। এই ধরনের দাদ লাল লাল র‍্যাশ হিসেবে দেখা যায়, যাতে আঁশ থাকে এবং চুলকানি হয়। দাঁড়িতে দাদ হলে অনেক সময় র‍্যাশের ওপরে চলটা পড়ে। আবার ভেতরে পুঁজও জমতে পারে। একই সাথে আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে যেতে পারে।


☑️প্রতিরোধের উপায়

•আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকুন।

•গৃহপালিত পশুপাখির সংস্পর্শে আসার পর সাবান বা অন্য কোন জীবাণু নাশক দিয়ে হাত পা পরিস্কার করে ফেলুন।

•নিয়মিত গোসল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন। 

•ঘাম ছত্রাকের খাবার, ঘর্মাক্ত হলে মুছে বা ধুয়ে ফেলুন।

• স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ছত্রাক জন্মাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আলো বাতাস আছে এমন পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।

• আঁটোসাঁটো পোশাক ও জুতো পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন। পারলে প্রাকৃতিক তন্তুর (সুতি, সিল্ক) পোশাক পরিধান করুন।

• অন্তর্বাস (গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, বক্ষবন্ধনী, মোজা) একবার ব্যবহার করার পর না ধুয়ে পুনরায় গায়ে ওঠাবেন না।

☑️চিকিৎসা কি

আক্রান্ত স্থান, বয়স, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি বিচার করে দাদ চিকিৎসা করা হয়। ফাঙ্গাস বা ছত্রাক বিরোধী নানা রকম ঔষধ মুখে খাওয়া, ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু এমনকি ইঞ্জেকশন হিসেবে দাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

☑️জটিলতা

সঠিক সময় যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করলে দাদ আক্রান্ত স্থান ও তীব্রতা বেড়ে যায়। দাদে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে সেরে যাওয়ার পরেও আক্রান্ত স্থানে দাগ ও ক্ষত থেকে যায়।

কাজেই দাদ আক্রান্ত হলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

#health #skincare #skindisease #infection #MRKR #doctor #treatment #healthylifestyle #trend #photo #viralpost #viralpost2025シ

Thursday, May 8, 2025

চেহারা ও শরীরের গঠন নিয়ে মানসিক রোগ

 বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক করন জোহরের চেহারা ও শরীরের গঠন পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক চলছে সম্প্রতি। পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন চেহারার পরিবর্তনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সম্ভবত এরা দুজনেই 'বডি ডিসমরফিয়া' নামক রোগে আক্রান্ত।

বডি ডিসমরফিয়া (Body Dysmorphic Disorder, BDD) হলো একটি মানসিক রোগ, যেখানে একজন ব্যক্তি তার শারীরিক গঠন, চেহারা বা শরীরের কোনো অংশের প্রতি অতিরিক্ত বা বাস্তবের বাইরে উদ্বেগ অনুভব করেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তার শারীরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমস্যায় ভোগেন এবং মনে করেন যে, তাদের শরীর বা কোনো নির্দিষ্ট অংশের চেহারা বিকৃত বা আকৃতির ত্রুটি রয়েছে, যদিও সেটি বাস্তবিকভাবে খুবই ছোট বা অনুপস্থিত হতে পারে। 

এতে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত কসমেটিক সার্জারি বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সংশোধনমূলক অস্ত্রোপচারের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়েন।

✅লক্ষণ কি?

√অতিরিক্ত উদ্বেগ: এক বা একাধিক শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করা, যেমন চেহারা, ত্বক, দাঁত, চুল বা শরীরের অন্য কোনো অংশ।

√নিজের শরীরের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি: এমন অনুভূতি যে শরীরের কোনো অংশ "অভ্যন্তরীণ ত্রুটি" রয়েছে, যা অন্যরা লক্ষ্য করে এবং সমালোচনা করে।

√নিরবচ্ছিন্ন আয়না বা অন্যদের চেহারা পরখ করা: নিয়মিত আয়নায় নিজের চেহারা দেখা বা অন্যদের কাছে শরীরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বারবার প্রশ্ন করা।

√প্রতিনিয়ত শরীর বা চেহারার সংশোধন: বিভিন্ন ধরনের সার্জারি, প্রসাধনী বা মেকআপ ব্যবহারের মাধ্যমে শরীর বা চেহারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা।

√অন্যদের সঙ্গে তুলনা: নিজের শরীর বা চেহারা নিয়ে সঙ্গী, বন্ধু বা পরিচিতদের সঙ্গে তুলনা করা এবং তাদের মন্তব্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া।

√সমাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা: শরীরের কোনো অংশের নিয়ে উদ্বেগের কারণে সামাজিক পরিবেশ বা জনসমক্ষে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।


✅কারণ কি?

√জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারে কেউ মানসিক রোগে ভুগে থাকে, তবে সেই ব্যক্তিরও BDD হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।

√মানসিক বা শারীরিক ট্রমা: ছোটবেলায় বা বড় হওয়ার সময় কোনো শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অপমান বা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে হাস্যরস করা।

√মিডিয়ার প্রভাব: বর্তমান সমাজে "পারফেক্ট" শরীরের চিত্র প্রচার করে এমন মিডিয়া (যেমন: ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া) BDD এর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।

√আত্মবিশ্বাসের অভাব: কম আত্মবিশ্বাস, উদ্বেগ বা হতাশার কারণে এক ব্যক্তি তার শরীর বা চেহারার প্রতি অতিরিক্ত নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারে।

✅চিকিৎসা কি?

বডি ডিসমরফিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ, যেটি সাইকোথেরাপি, ঔষধ ও পারিবারিক সহযোগিতার সমন্বয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কসমেটিক সার্জারি কেবল শারীরিক চেহারা পরিবর্তন করতে পারে, তার অন্তর্নিহিত মানসিক সমস্যার চিকিৎসা না করলে এটি থেকে মুক্তি মিলবে না।

Tuesday, May 6, 2025

রাজশাহীর বড়কুঠি

১৭শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপীয় উপনিবেশবাদী শক্তি ইংরেজ, ফরাসি, পর্তুগিজ ও ডাচ কোম্পানি বানিজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে বসে। শক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC)। রাজশাহী ছিল এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেখানে তারা তাদের প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিল।



ডাচরা রাজশাহীতে আসে মূলত রেশম ব্যবসা কেন্দ্র করে।রাজশাহী অঞ্চল প্রাচীনকাল থেকেই মুলবুটি (মসলিনের বিকল্প সূক্ষ্ম কাপড়) এবং তুঁত সিল্কের জন্য বিখ্যাত ছিল।

ডাচরা এই সূক্ষ্ম কাপড় ইউরোপে রপ্তানি করত। উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য তারা গুদামঘর (factory house) স্থাপন করে।‌ এখনও বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক স্থাপনা টিকে রয়েছে।

নদীপথের কারণে রাজশাহী সহজেই বন্দর এলাকা ও অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, যা ডাচদের ব্যবসার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক সুবিধা তৈরি করত। এসব কারণেই ডাচরা রাজশাহীতে ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। 

১৭৪০ সালের দিকে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি রাজশাহী শহরে পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় বড়কুঠি নির্মাণ করে। এটি ছিল মূলত একটি কুঠি বা ফ্যাক্টরি হাউজ, যেখানে তারা সিল্ক ও অন্যান্য পণ্য সংগ্রহ ও রপ্তানির জন্য ব্যবহার করত।

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে এটি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয় এবং পরবর্তীতে তা সরকারি মালিকানায় আসে। এটি বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্থাপনাটি আংশিকভাবে সংরক্ষিত, তবে সময়ের সাথে এর কিছু অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। এটি রাজশাহীর অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত, যেখানে ইতিহাসপ্রেমী ও স্থাপত্যবিদরা ঘুরতে আসেন।

Monday, May 5, 2025

জিন্নাহ হাউস

ভারতের বোম্বে শহরের অভিজাত মালাবার হিল এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদসদৃশ ভবন জিন্নাহ হাউস, যা পূর্বে সাউথ কোর্ট ম্যানশন নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৩৬ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নির্মাণ করেন এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি এখানেই বসবাস করেন।

বিলেত থেকে ফিরে এসে মুসলিম লীগের নেতৃত্ব নেওয়ার পর জিন্নাহ এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি বাড়িটির নকশা তৈরি করেন, যার মধ্যে ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর প্রভাব রয়েছে। বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল ইতালীয় মার্বেল, ওয়ালনাট কাঠ। বিদেশি কারিগর আনা হয়েছিল এটি নির্মাণের জন্য। জিন্নাহ নিজে বাড়ির নির্মাণ তদারকি করেন এবং প্রতিটি ইট-পাথর নিজে দেখভাল করেন। সেইসময় বাড়িটি নির্মাণে ২ লক্ষ রপি ব্যয় হয়েছিল।

এই ভবনটি একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন, যেখানে ভারতীয় ও ইউরোপীয় নকশার সমন্বয় রয়েছে। ধনুকাকৃতির দরজা, উঁচু খিলান, কাঠের কারুকাজ এবং প্রশস্ত বারান্দা, যা সেই সময়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে।

এই বাড়িতেই জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে ১৯৪৪ সালে এবং নেহরুর সাথে ১৯৪৬ সালের ভারত বিভাজন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারত পাকিস্তান বিভাজনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

১৯৪৭ সালের পরে জিন্নাহ পাকিস্তানে চলে গেলে, এই বাড়ি ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের দখলে ছিল ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত। তারপর এটি ভারতের সরকারের অধীনে যায় এবং ‘ইভাকুই প্রপার্টি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নেহেরু ভবনটি পাকিস্তানকে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মন্ত্রী পরিষদ তাঁর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই। ২০০৭ সালে জিন্নাহর একমাত্র কন্যা দিনা ওয়াদিয়া এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করে আদালতে মামলা করেন, তবে ভারত সরকার সেটি মেনে নেয়নি।

পাকিস্তান বহুবার এই ভবনকে মুম্বাইয়ে তাদের কনস্যুলেট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০২৩ সালে মুম্বাই হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি এটি সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে।

বর্তমানে এটি সংস্কারের কাজের জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে একে কূটনৈতিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে।

#history #heritage #Jinnah #India #Pakistan #Mumbai #trend #viralpost2025 #photo #MRKR

Sunday, May 4, 2025

উটের 🐫 যুদ্ধ: ইসলামে নারী স্বাধীনতার মাইলফলক

নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব নিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী উগ্রপন্থী কেউ না কেউ ইতিহাসে প্রায় সবসময়ই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো নানা কুতর্ক হাজির করেছেন। ঐতিহাসিক একটি ঘটনা থেকে ইসলাম ধর্মে নারীর অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

হযরত আয়েশা (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম বিশিষ্ট নারী সাহাবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর স্ত্রী। তিনি শুধু একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে "জঙ্গ-ই-জমল" বা "উটের যুদ্ধ" (Battle of the Camel) ইসলামের ইতিহাসে একটি আলোচিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা।



হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন তাঁকে হত্যা করা হলে ইসলামী বিশ্বে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। হযরত আলী (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হলে অনেকে এই হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন, বিশেষত হযরত আয়েশা (রাঃ), তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ)। তারা মনে করতেন, হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অপরদিকে হযরত আলী (রাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা মনে করতেন, প্রথমে শাসনব্যবস্থা সুসংহত করতে হবে, তারপর বিচারের ব্যবস্থা হবে। এই মতপার্থক্য থেকেই বসরার কাছে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে (৩৬ হিজরি) সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক “উটের যুদ্ধ”।

হযরত আয়েশা (রাঃ) মক্কা থেকে বসরার দিকে রওনা হন যাতে মুসলিমদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা যায়। যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি উটে চড়ে উপস্থিত ছিলেন, এবং সেই উটকে ঘিরেই উভয় পক্ষের লড়াই সংঘটিত হয়। উটকে কেন্দ্র করেই সেই যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছিল, তাই এটিকে বলা হয় "জঙ্গ-ই-জমল" বা “উটের যুদ্ধ”।

হযরত আলী (রাঃ)-এর বাহিনী এই যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে তিনি হযরত আয়েশাকে (রাঃ) বন্দি করেননি, বরং অত্যন্ত সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে তাঁকে মদিনায় ফেরত পাঠান।

যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) বিজয়ী হতে না পারলেও, এটি ছিল কোন মুসলিম নারীর জন্য প্রথম সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘটনা। হযরত আয়েশা (রাঃ) যুদ্ধ পরিচালনায় সক্রিয় অস্ত্র ধরেননি, কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অভিপ্রায় থেকে।

Friday, May 2, 2025

টিউলিপ

 টিউলিপ শুধু একটি ফুল নয়—এটির সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই ফুলটি প্রেম, সৌন্দর্য এবং নান্দনিকতার প্রতীক হলেও এর অতীত রয়েছে চমকপ্রদ উত্থান-পতনে ভরা। প্রাচীন পারস্য থেকে শুরু করে আধুনিক নেদারল্যান্ডস পর্যন্ত, বিশ্বজুড়ে বিস্ময় ও বিস্তার ঘটিয়েছে টিউলিপ।

টিউলিপের জন্মস্থান মধ্য এশিয়া। পাহাড়ি অঞ্চল, বিশেষ করে কাস্পিয়ান সাগরের কাছাকাছি অঞ্চল ছিল এটির প্রাকৃতিক আবাস। পারস্য এবং পরে তুরস্কে এর পরিচিতি বাড়তে থাকে। ফারসি শব্দ “dulband” (পাগড়ি) থেকেই ‘টিউলিপ’ নামটির উৎপত্তি, কারণ ফুলটির আকার আকৃতি অনেকটা পাগড়ির মতো।


১৬শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যে টিউলিপ ফুল রাজকীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। সুলতানদের বাগিচাজুড়ে টিউলিপের বাহার ছড়িয়ে পড়ে। ১৭১৮ থেকে ১৭৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে বলা হয় “টিউলিপ যুগ” (Tulip Era)—এই সময় অটোমান সংস্কৃতিতে শিল্প, কবিতা এবং বাগান নির্মাণে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।

টিউলিপ ইউরোপে পৌঁছায় ১৬০০ সালের দিকে, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসে। ডাচ উদ্ভিদবিদ Carolus Clusius টিউলিপের বৈজ্ঞানিক চাষ শুরু করেন।‌ শুরু হয় ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। নেদারল্যান্ডস টিউলিপ জনপ্রিয় হতে শুরু করলে বিত্তবানরা এটিকে বিলাসবহুল জিনিস হিসেবে কিনতে শুরু করে। একেকটি টিউলিপ বাল্বের দাম এতটাই বেড়ে যায় যে মানুষ বাড়ি, জমি বা গয়নাগাটি বিক্রি করে বাল্ব (চারা) কিনতে থাকে। কিন্তু ১৬৩৭ সালে হঠাৎ করে এই চাহিদা ধসে পড়ে। বাল্বের দাম রাতারাতি পড়ে যায়, ফলে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এই ঘটনা ইতিহাসে "Tulip Mania" নামে পরিচিত, যেটি পৃথিবীর প্রথম বড় অর্থনৈতিক "বুদবুদ" বা বাজার ধসের উদাহরণ।

টিউলিপ ফুলের বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন বার্তা বহন করে (লাল টিউলিপ – গভীর প্রেম ও ভালোবাসা, হলুদ টিউলিপ – আনন্দ ও উজ্জ্বলতা, সাদা টিউলিপ – ক্ষমা ও শান্তি, বেগুনি টিউলিপ – রাজকীয়তা ও মর্যাদা)। বর্তমান বিশ্বে নেদারল্যান্ডসকে বলা হয় “টিউলিপের স্বর্গ”। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিউলিপ উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক। শীতের শেষে মার্চ থেকে মে মাসে টিউলিপ বাল্ব থেকে ফুল হিসেবে বেরিয়ে আসে। প্রতিবছর বসন্তে নেদারল্যান্ডের কিউকেনহফ টিউলিপ উৎসবে লাখো টিউলিপ প্রেমী মানুষ ছুটে যায়।

#history #flowers #flowerlovers #tulips #trend #viralpost2025 #photo #MRKR #farming

Thursday, May 1, 2025

খোসপাঁচড়া (Scabies)

 এবছর অনেকটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্যাবিস (scabies) বা খোসপাঁচড়া। এটি একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবীজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই (Sarcoptes scabiei) নামক পরজীবীর সংক্রমণে স্ক্যাবিস হয়ে থাকে। আবালবৃদ্ধবনিতা যে কেউ স্ক্যাবিস আক্রান্ত হতে পারেন।

কিভাবে ছড়ায় 

স্ক্যাবিস আক্রান্ত কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের পরজীবী ছড়ায়। 

পরিবার, হোস্টেল, মেসে কেউ একজন আক্রান্ত হলে বাকি সদস্যরাও আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকেন। অপরিচ্ছন্ন, ঘিঞ্জি, ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ, বস্তি এলাকা, হোস্টেল, ডরমিটরি, মেস যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন সেখানে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব দ্রুত এবং সহজে ছড়ায়।


লক্ষণ কি?

পরজীবী মাইট ত্বকের বহিরাবরণ (এপিডার্মিস) ভেদ করে চামড়ার নিচে প্রবেশ করে, ফলে তীব্র চুলকানি ও চামড়ার প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

•সারা শরীর বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়। চুলকানি রাতে বেশি হয়।

•আক্রান্ত স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র র‌্যাশ বা ফুসকুঁড়ি হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে চুলকানির কারণে একসময় জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে যায়।

•রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অনেক বেশি বয়স, কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন বিছানায়, এইচআইভি আক্রান্তের মধ্যে নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস বা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস নামে এক ধরনের স্ক্যাবিস দেখা যায়। এই ধরনের স্ক্যাবিস আক্রান্ত হলে স্কেলিং বা চামড়া উঠতে থাকে, এবং চামড়ার স্তর জমে জমে পুরু হয়ে যায়।

জটিলতা

√সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

√অনুজীব সংক্রমণের ফলে শরীরে ব্যাথা, জ্বর অনূভুত হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে যায়।

প্রতিরোধ 

√পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। 

√স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক ও ব্যবহৃত যে কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে দিতে হবে। 

√ ঘিঞ্জি ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

√পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে। লক্ষণ না থাকলেও পরিবারের বাকি সবার চিকিৎসা নিতে হবে।

চিকিৎসা 

লক্ষণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থাভেদে স্ক্যাবিসের নানা ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত গায়ে মাখা ক্রিম, লোশন এবং খাবার ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে। এটির চিকিৎসা খুব সহজ হলেও নিরাময় পেতে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করার বিকল্প নেই। সঠিক নিয়মে ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না নিলে রোগ পুনরায় ফিরে আসতে পারে।

আক্রান্ত হলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

#health #disease #infection #treatment #doctor #trend #healthylifestyle #healthyliving #MRKR #scabies

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি!

 🧬অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে মানবসভ্যতা যেন এক নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। আগে যেসব সংক্রমণে মানুষ মৃত্যুবরণ করত, সেগুলো অ্যান্টিবায়ো...