Saturday, June 14, 2025

অ্যানোফাইল্যাকটিক শক: কারণ, প্রক্রিয়া ও করণীয়

 কিছু জিনিস মানবদেহে একধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা অ্যালার্জি নামে পরিচিত। সাধারণত এই অ্যালার্জি হালকা ধরনের হয়—ত্বকে চুলকানি, হাঁচি-কাশি, চোখে পানি ইত্যাদি। তবে কখনো কখনো শরীর এতোটাই অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়া দেখায় যা জীবনহানির কারণ হতে পারে। এই অবস্থাকেই অ্যানোফাইল্যাকটিক শক বলা হয় (Anaphylactic Shock)।

🌿 এই শক কী?

অ্যানোফাইল্যাকটিক শক হলো শরীরের মাত্রাতিরিক্ত অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া, যা খুবই দ্রুত ঘটে এবং একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে একসাথে আক্রমণ করে। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, রক্তচাপ খুব কমে যায়, এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে যদি সময়মতো চিকিৎসা না হয়।


⚠️ কী কী জিনিসে এমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে?

অ্যানোফাইল্যাকটিক শকের প্রধান কারণগুলো হলো:

🐝 মৌমাছি বা বোলতা কামড়

🥜 বাদাম বা দুধজাত খাবারে অ্যালার্জি (বিশেষ করে চিনাবাদাম, গরুর দুধ, ডিম, সামুদ্রিক মাছ)

💉 কিছু ওষুধ (যেমন: পেনিসিলিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক)

💉 রক্ত বা ইনজেকশনের প্রতিক্রিয়া

🌾 ধুলাবালি, ছত্রাক বা ফুলের রেণু

 🏋️‍♀️ কখনো কখনো শারীরিক ব্যায়ামের সঙ্গে মিলে খাবারও শক ডেকে আনতে পারে


🔬 কীভাবে এই শক কাজ করে (প্রক্রিয়া)?

যখন শরীর কোনো উপাদানকে "বিপজ্জনক" ভেবে ফেলে (যদিও সেটা আদতে ক্ষতিকর নয়), তখন ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইমিউনোগ্লোবিন ই (IgE)‌নামের একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করে। এর ফলে শরীর থেকে হিস্টামিন ও অন্যান্য রাসায়নিক দ্রুত নির্গত হয়। এই হিস্টামিন শরীরের:

* রক্তনালিগুলোকে প্রসারিত করে দেয় (রক্তচাপ পড়ে যায়)

* শ্বাসনালির চারপাশ ফুলে যায় (শ্বাস কষ্ট হয়)

* হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয়ে যায়

* ত্বকে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ দেখা দেয়

সব মিলিয়ে এক ধরণের সিস্টেমিক রিঅ্যাকশন , অর্থাৎ পুরো শরীর সমন্বিত প্রতিক্রিয়া দেখায়।


🚨 লক্ষণগুলো কী রকম?

* গলা বা জিভ ফুলে শ্বাস নিতে কষ্ট

* হঠাৎ মাথা ঘোরা, অজ্ঞান হওয়া

* চামড়ায় লালচে দাগ, ফুসকুড়ি, চুলকানি

* রক্তচাপ দ্রুত পড়ে যাওয়া

* বমি, পেট ব্যথা বা পাতলা পায়খানা

* চোখ-মুখে পানি, নাক দিয়ে জল পড়া

* অনেক সময় শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়

এই লক্ষণগুলো সাধারণত পোকামাকড়ের সংস্পর্শ/ দংশন বা অ্যালার্জেন প্রবেশের কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা দেয়।

🩺 কি করণীয়?

√প্রথমে জরুরি পরিষেবায় ফোন (৯৯৯)

√EpiPen (ইপিনেফ্রিন ইনজেকশন) থাকলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে

√আক্রান্ত ব্যক্তিকে শুইয়ে দিতে হবে, তবে শ্বাস কষ্ট থাকলে আধা বসা অবস্থাই ভালো

√নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে **CPR শুরু** করতে হবে

√চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতাল পর্যন্ত নিতে হবে, কারণ দ্বিতীয়বার শক (biphasic reaction) হওয়ার ঝুঁকি থাকে।


🛡️ প্রতিরোধই মূল উপায়

√যাদের এমন অ্যালার্জি আছে, তাদের সবসময় EpiPen সঙ্গে রাখা উচিত

√অ্যালার্জি পরীক্ষা করিয়ে জানা দরকার কী কী উপাদানে প্রতিক্রিয়া হয়

√মেডিকেল আইডি ব্রেসলেট ব্যবহার করা ভালো

√পোকামাকড়ের আশপাশ এড়ানো, সন্দেহজনক খাবার খাওয়ার আগে নিশ্চিত হওয়া

√ নতুন ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসককে জানানো


🔍অ্যানোফাইল্যাকটিক শক মারাত্মক কিছু নয়—এমন ভুল ধারণাই মারাত্মক হতে পারে। মনে রাখবেন এটি একটি জরুরি চিকিৎসা পরিস্থিতি। সময়মতো সঠিক পদক্ষেপই জীবন বাঁচাতে পারে। তাই অ্যালার্জির প্রতি অবহেলা নয়, বরং সচেতনতা আর প্রস্তুতিই হোক রক্ষাকবচ।

---

No comments:

বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ: জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক এক হুমকি!

 🧬অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পর থেকে মানবসভ্যতা যেন এক নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। আগে যেসব সংক্রমণে মানুষ মৃত্যুবরণ করত, সেগুলো অ্যান্টিবায়ো...