🌱 কল্পবিজ্ঞান বই বা সিনেমায় দেখা ল্যাব থেকে সৃষ্ট মানবশিশুর জন্য বাবা-মা দরকার হয় না। শুধু গল্পে সিনেমায় নয়, সময় বদলানোর সাথে সাথে ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে, আমরা সেই গল্প সিনেমার অনেকটা কাছাকাছি এসে গেছি।
হ্যাঁ, ল্যাবে শুক্রাণু আর ডিম্বাণু তৈরি করে সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রযুক্তি এখন কল্পনা নয়—বাস্তবের অপেক্ষায়।
🔬 In Vitro Gametogenesis: বিজ্ঞানের এক মুগ্ধ করা নাম
নামটা একটু কঠিন In Vitro Gametogenesis সংক্ষেপে IVG। সহজ করে বললে, বিজ্ঞানীরা এখন দেহের যেকোনো কোষ (যেমন ত্বকের কোষ) থেকে গ্যামেট, মানে শুক্রাণু বা ডিম্বাণু বানাতে পারছেন। আর সেই গ্যামেট মিলিয়ে বানানো যাবে ভ্রূণ।
সমলিঙ্গের যুগল, সন্তান নিতে চাওয়া একক নারী বা পুরুষ, এমনকি বন্ধ্যাত্বে ভোগা অসংখ্য মানুষ—এই প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়তো নিজের জিন দিয়েই বাবা-মা হতে পারবেন।
⚖️ নৈতিকতার চশমা দিয়ে তাকালে যা দেখি:
তবে এমন প্রযুক্তি সঠিক না ভুল সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠেছে।
"সন্তান কি তবে প্রকৃতির এক অভিজ্ঞান? নাকি মানুষের তৈরি প্রকল্প?"
যখন বিজ্ঞান জিন বাছাইয়ের ক্ষমতা দিয়েছে—তখনই শুরু হয়েছিল "ডিজাইনার বেবি"-র সম্ভবনা।
Gattaca সিনেমার গল্পের মতো যেখানে মানুষ জিনগত 'দক্ষতা' দিয়ে মূল্যায়িত হয়! এমন একটা সমাজ যদি তৈরি হয়, যেখানে শুধু "উন্নত বাচ্চা" চাওয়া হয়—তাহলে সাধারণ শিশুরা কি পিছিয়ে পড়বে না?
আরো একটি বড় প্রশ্ন, ভালোবাসা কি তখনও থাকবে, নাকি থাকবে শুধু বেছে নেওয়ার মানসিকতা?
🧪 বিজ্ঞান আমাদের কোথায় নিয়ে যেতে চায়?
তবে শুধু ভয় দেখলে হবে না। বিজ্ঞান তো কেবল ভয় পেতে শেখায় না, সম্ভাবনাও দেখায়!
এই প্রযুক্তি যদি সত্যি নিরাপদ হয়, তবে—
√ সন্তান নিতে পারবে তারা, যাদের আজ কোনো উপায় নেই।
√দান করা শুক্রাণু বা ডিম্বাণু না নিয়েও নিজের জিনে গড়া সন্তান সম্ভব হবে।
√জিনগত রোগ প্রতিরোধে অগ্রিম ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
এইসব সম্ভাবনার মাঝেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে এজন্য দরকার সচেতনতা। কারণ মানব শরীরের অনেক কিছুই এখনও অনেকটা অজানা। কোনো ভুল হলে সেটার দায় তো সেই শিশুটিকেই বইতে হবে।
👪 পরিবার—নতুন সংজ্ঞায়
সবচেয়ে মজার বিষয়, এই প্রযুক্তি আমাদের "পরিবার" নিয়ে প্রচলিত সংজ্ঞাই বদলে দিচ্ছে। সমলিঙ্গের যুগল নিজের জিনে সন্তান নিতে পারবেন, এমনকি ভবিষ্যতে হয়তো তিন বা চারজন ব্যক্তির জিন মিলিয়েও সন্তান সম্ভব হবে।
তখন "মা" বা "বাবা" শব্দগুলো একেবারে নতুন অর্থ পাবে।
কিন্তু যা বদলাবে না—সেটা হলো দায়িত্ব, ভালোবাসা, আর মানুষ গড়ার পথচলা।
সন্তান তো শুধু দেহে নয়, গড়ে ওঠে সাহচর্যে।
✍️ এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন নুতন দিগন্ত উন্মোচিত করছে তেমনি সমাজবিজ্ঞানীরা এটির প্রয়োগ নিয়ে আবার দ্বিধান্বিতও। কারণ এটা শুধু একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যৎ মানবসভ্যতার দিকনির্দেশনা সম্পর্কিত একটি সিদ্ধান্ত।
আর সেই ভবিষ্যৎ যেন ভালোবাসাহীন না হয়, বরং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, আরও মানবিক হয়—সেই চেষ্টা দরকার।
যারা এখনও বলছেন, “এটা তো প্রকৃতির বিরুদ্ধে”—তাঁদের কথা ফেলনা নয়। কিন্তু প্রকৃতি তো সবসময় বদলায়। শুধু আমরা যেন বদলাতে গিয়ে ভুলে না যাই **আমরা মানুষ**!
---
No comments:
Post a Comment