Saturday, December 12, 2020

প্রতিদিন গোসল করা কি প্রয়োজন?

 শীতের দিনে গোসল করা নিয়ে অনেকেই উৎকণ্ঠায় থাকেন, বিশেষ করে গরম পানির ব্যবস্থা না থাকলে। গোসলে ত্বকে জমে থাকা ধুলাবালি ময়লা দুর হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য প্রতিদিন গোসল করা কি জরুরি? আসলে প্রতিদিন গোসল করা একটি সামাজিক রীতি এবং কিছুটা ব্যক্তিগত অভ্যাসও বটে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন গোসল করা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আসুন গোসলের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পর্ক নিয়ে কিছু বিষয় জেনে নেই।


কতবার গোসল প্রয়োজন?

প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা একমত হলেও সপ্তাহে ঠিক কতবার গোসলের প্রয়োজন এই বিষয়ে নানা মত রয়েছে। ত্বকের ধরনের উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে এক বা দুইদিন কিংবা ১/২/৩ দিন পরপর গোসল করা যেতে পারে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা ১/২ দিন পরপর আর যাদের  ত্বক শুস্ক তারা সপ্তাহে ১/২ দিন গোসল করতে পারেন। তবে যাদের ত্বকে অতিরিক্ত ঘাম তৈরী হয়, শারীরিক পরিশ্রম, ব্যায়াম করেন কিংবা স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে কাজ করেন তাদের প্রতিদিনই গোসল করা প্রয়োজন। প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন না থাকলেও হাত এবং মুখ পরিস্কার ও যত্ন নিতে হবে অবশ্যই।

প্রতিদিন গোসলের ক্ষতি কি?

আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয় যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও ত্বকের বাইরে স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু বাস করে যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভুমিকা রাখে। গোসলের সময় ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং এসব জীবাণু পরিস্কার হয়ে যায়, যা ত্বক এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসখসে রুপ নিতে পারে, যে কারণে চুলকানি অনুভূতি হতে পারে। ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে সংক্রামক রোগও হতে পারে।


কিভাবে গোসল করবেন?

• কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে দ্রুত গোসল সেরে ফেলুন।

• গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় এবং তেলযুক্ত সাবান ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন শরিরের সব স্থানে এবং প্রতিবার গোসলেই সাবানের প্রয়োজনীয়তা নেই। হাত, মুখ, বগল,এবং উরু এলাকায় সাবান ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

• গোসলের সময় বেশি জোরে ত্বক ঘষাঘষি করবেন না। নরম স্পঞ্জ বা কাপড় ব্যবহার করেতে পারেন।

• গোসল না করলে তোয়ালে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে পারেন।

• গোসলের পর নিজের পছন্দমত বা ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।


মনে রাখবেন শীতকালে ত্বক শুষ্ক থাকে তাই প্রতিদিন গোসল নিয়ে উৎকণ্ঠিত হওয়ার কোন‌ কারন নেই, বরং প্রতিদিন গোসল না করাই স্বাস্থ্যকর। তবে এজন্য ধুলা-বালি এবং স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশ এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিদিন গোসল করা যেমন স্বাস্থ্যকর নয়, তেমনি একবারে গোসল না করলেও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি রয়েছে।  প্রতিদিন গোসল না করলে হাত, পা এবং মুখ নিয়মিত পরিস্কার এবং যত্ন নিতে হবে অবশ্যই। তাই আপনার ত্বকের ধরন এবং পেশার উপর ভিত্তি করে সপ্তাহে গোসলের রুটিন ঠিক করে নিন। ত্বকের ধরন নির্ণয় করতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।



লেখক

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 22, 2020

শীতকালে ত্বকের যত্ন

ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজেই সুস্থ ও সুন্দর ত্বক সুস্থ শরীরের জন্য অপরিহার্য একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এজন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে।

ত্বকে অবস্থিত গ্রন্থির নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুস্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস এবং অ্যালার্জি জনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদেরও এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম প্রতিপালন করে শীতে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।


গোসল

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুস্ক হয়ে যায়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বাথ, সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার

একজিমা, সরিয়াসিস,ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করা উচিত। ময়েসচারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তার পাশাপাশি  ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। ক্রিম, লোশান, জেল এমনকি সাবান হিসেবেও এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

পোশাক

টাইট ফিট এবং সিনথেটিক/কৃত্রিম তন্তুর পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারন হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিনেন, নাইলন ইত্যাদির পরিবর্তে কটন, সিল্কের তৈরি পোশাক পরিধান করুন।

হিউমিডিফায়ার

কক্ষে জলীয় বাস্প ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যাবহার করতে পারেন। এটির মাধ্যমে রুমের জলীয় বাস্প ৪০-৬০% এ রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

মনে রাখবেন একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন শীতকালে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস এবং পরজীবিজনিত ত্বকের সংক্রামণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কাজেই শীতে তকের যত্ন নিন। সর্বোপরি খোলামেলা আলোকিত পরিবেশে দুঃশ্চিন্তামুক্ত, পরিস্কার-পরিছন্ন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন।

লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 8, 2020

শ্বেতি ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক রোগ নয়


শ্বেতি নামে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় ভিটিলোগো (vitiligo) বলা হয়ে থাকে। এটি ত্বকের বিবর্ণজনিত একটি রোগ, যা ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক নয় তবে সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে থাকে অবশ্যই। সাধারণত যাদের গাঢ় বা শ্যামলা বর্ণের ত্বক তাদেরই বেশি দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের যে কোন স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে, এমন কি চোখের ভ্রুসহ সমস্ত শরীর বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগে আক্রান্তের হার  ১-২%, তবে এশিয়ান ও আফ্রিকানদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ রোগ না হলেও সৌন্দর্য হানি এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণে আক্রান্তরা মানসিক হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। আক্রান্তদের অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার শ্বেতি আর কুষ্ঠ (leprosy) একই রোগ বলে ভুল ধারনা পোষণ করেন। কুষ্ঠ একটি জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ কিন্তু শ্বেতি তা নয়। 

 

কিভাবে বুঝবেন : এ রোগে ত্বকের এক বা একাধিক স্থানে রং হালকা থেকে দুগ্ধসাদা হয়ে যেতে পারে। রং পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ অন্যকোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে হালকা চুলকানি অনুভূত হতে পারে। এটি খুব ধীরগতিতে বিস্তার লাভ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটতে পারে। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত মুখ, কনুই, হাঁটু, হাত, পা এবং কোমরে বেশি দেখা যায়।

 

কিভাবে শ্বেতি হয় : ত্বকে মেলানিন (melanin) নামে এক ধরনের পিগমেন্ট/রঞ্জক থাকে, যার কারণে রং গাঢ় বা ফর্সা হয়। যাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তারা কালো এবং যাদের কম তারা ফর্সা হয়ে থাকেন।

 

সারা শরীরে একই অনুপাত বা ঘনত্বে মেলানিন থাকে যা, ত্বকের বর্ণ হিসেবে প্রকাশ পায়। মেলানোসাইট নামে একধরনের কোষ মেলানিন উৎপাদন করে থাকে।কোনো কারণে মেলানিন নষ্ট বা তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটলে নির্দিষ্ট স্থানে বিবর্ণ হতে থাকে। শ্বেতি আক্রান্ত স্থানে ত্বকের অন্য স্বাভাবিক স্থানের চেয়ে মেলানিন কম বা থাকে না।

 

কি কারণে হয় : শ্বেতির নিশ্চিত কোনো কারণ অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে প্রধান দুটি কারণ হলো বংশগত (১০-১৫%) এবং শরীরে এক ধরনের স্ব-প্রণোদিত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় স্থানভেদে মেলানিন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও আরো কিছু কারণে শ্বেতি হতে পারে,

 

*রোগ : থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, ডায়াবেটিস এবং বিশেষ ধরনের রক্ত শূন্যতা।

 

*পুষ্টিজনিত ঘাটতি যা কোনো রোগ অথবা খাদ্যজনিত কারণে হতে পারে।

 

*ত্বকে সংক্রমণ বা আঘাতজনিত

 

*অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও রোদ্রতাপ

 

*কিছু ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ।

 

প্রতিরোধ : শ্বেতির প্রকৃত কারন না জানার কারণে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি।

 

জটিলতা : সাধারণভাবে এটি কোনো জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোদে পুড়িয়ে যাওয়া বা সান বার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের সামান্য ঝুঁকি রয়েছে।

 

চিকিৎসা : এ রোগের কোন নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নির্ণিত হয়নি। চিকিৎসার মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বেতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। নানা উপায়ে শ্বেতির চিকিৎসা করা হলেও ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। শ্বেতির চিকিৎসা সাধারণত যেভাবে করা যায়, সেগুলো হলো,

 

-খাবার ঔষধ এবং ত্বকে ব্যবহার করার ঔষধের মাধ্যমে;

 -আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি এবং লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে ;

 - শ্বেতির সম্ভাব্য কারণসমূহ নির্ণয় করে সেটির চিকিৎসা। যেমন পুষ্টিজনিত ঘাটতি বা থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা।

 -সার্জারির মাধ্যমে মেলানিন উৎপাদন কারী কোষ মেলানোসাইট গ্রাফট বা সম্পূর্ণ স্কিন গ্রাফট।

 

মনে রাখবেন কুষ্ঠ এবং ত্বকের আরো কিছু রোগে ত্বক বিবর্ণ হতে পারে। ত্বকের কোনো স্থান বিবর্ণ বা সাদা হয়ে গেলে তা শ্বেতি বা অন্য কারণে হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শ্বেতির লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে শ্বেতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি কোনো ছোঁয়াচে  বা মারাত্মক রোগ নয়। শ্বেতি রোগে আক্রান্তের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করুন এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন-যাপনে উৎসাহিত করুন।

 

লেখক

ডা. এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, October 25, 2020

চুল পড়া রোধে পিআরপি থেরাপি

চুল ঝরে যাওয়া এবং টাক নিয়ে আধুনিক মানুষের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, যা ব্যক্তি বিশেষে আত্মবিশ্বাসের উপর প্রভাব ফেলে থাকে। অদ্যাবধি টাক মাথায় চুল গজানোর কোন আশাব্যাঞ্জক চিকিৎসা আবিষ্কার না হলেও (হেয়ার গ্রাফ্টিং বাদে), ব্যয়বহুল অপচিকিৎসার শিকারে পরিনত হয়ে থাকে অনেকেই। 

চুলের বাইরের অংশ ত্বকের নিচে থাকা গোঁড়া থেকে বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে জীবনচক্র শেষে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে চুলের বাইরের অংশ ঝরে যায়, তবে গোড়া থেকে যায় যা থেকে আবার নুতন চুল গজায়। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৫০-১০০টি চুল পড়ে যায়। অনেকসময় একসাথে গজানো অনেক চুল একসাথে ঝরে যেতে পারে, যেটি নিয়ে অনেকে উৎকণ্ঠায় ভূগে থাকেন। আবার কিছু রোগ এবং বংশজনিত কারণেও চুল পড়ে থাকে। পুরুষ মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে অনেকের মাথার দুই পাশের চুল হালকা হতে থাকে যা পুরো মাথায় বিস্তৃত হয়ে টাকে পরিনত হয়। এটি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া, যেক্ষেত্রে গোঁড়া সহ চুলের বিলুপ্তি ঘটে।

কোন কারণে ত্বকের নিচে থাকা গোঁড়া নষ্ট হয়ে চুল পড়ে গেলে তা আর গজানোর কোন সম্ভবনা থাকে না। কোন কারনে চুলের বাহিরের অংশ ঝরে পড়লেও গোঁড়া অটুট থাকে, যা থেকে পরবর্তীতে স্বাভাবিক চুল গজিয়ে থাকে। যদি গোঁড়া অক্ষত থাকে তাহলে কিছু চিকিৎসা চুল গজাতে সাহায্য করে থাকে। তারই একটি #পিআরপি চিকিৎসা।

পিআরপি অর্থ প্লাজমা রিচ প্রোটিন থেরাপি। এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে রোগীর দেহের রক্ত আহরণ করে তা থেকে কিছু উপাদান যন্ত্রের মাধ্যমে আলাদা করে প্লাজমা সমৃদ্ধ করা হয়ে থাকে। তারপর এই প্লাজমা সমৃদ্ধ রক্তের অংশ সিরিঞ্জের মাধ্যমে পড়ে যাওয়া চুলের গোঁড়ায় প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। সাধারনত প্রথম তিন মাস প্রতিমাসে একবার এই চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তারপর প্রতি চার মাস অন্তর এই চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হয়। চুল গজানোর উপর ভিত্তি করে কতদিন চিকিৎসা প্রদান করা হবে তা চিকিৎসক নির্ধারণ করে থাকেন।

মনে রাখবেন চুলের গোঁড়া সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে এই চিকিৎসা কোন উপকারে আসবে না। তবে চুল ঝরতে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন, যিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে সিদ্ধান্ত দিবেন। চিকিৎসা নেয়ার আগে চুল গজানোর সম্ভাবনা এবং সম্ভাব্য খরচ সমন্ধে জেনে নেয়া উচিত।

Tuesday, September 22, 2020

চুল গজাতে বায়োটিনের অপব্যবহার

 ইদানিং


অনেকে চুল পড়ে যাওয়া রোধ করতে বা চুল গজাতে বিদেশ থেকে আমদানি করা দামি #বায়োটিন ঔষধ হিসেবে খাচ্ছেন। কিছু চিকিৎসক রোগীদের বায়োটিন গ্রহনে উৎসাহিত করছেন বলেও প্রতীয়মান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বায়োটিন চুল গজাতে কাজ করে কি, কিংবা বাড়তি বায়োটিন আদৌ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা। সাধারণত অপুষ্টিতে না ভুগলে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের শরীরে বায়োটিনের ঘাটতি হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম।

*বায়োটিন কি

বায়োটিন ভিটামিন বি গোত্রের একটি ভিটামিন, যা ভিটামিন এইচ নামেও পরিচিত। এটি শরীরে তৈরি হয় না, কাজেই দৈনন্দিন খাবারের মাধ্যমেই চাহিদা পুরন করতে হয়। আবার বেশি মাত্রায় গ্রহণ করলেও এটি শরিরে জমে থাকে না, বরং সমস্যা তৈরি করতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০-১০০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন প্রয়োজন হয়, যা দৈনন্দিন খাবার থেকে মেটানোর জন্য যথেষ্ট। বায়োটিনের ঘাটতি ছাড়াও চুল পড়ার আরো অনেক কারণ রয়েছে। ঘাটতি নিশ্চিত না হয়ে ঢালাওভাবে বায়োটিন গ্রহন করা থেকে বিরত থাকা উচিত।


*বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার: 

যে কোন ধরনের ডাল, সয়াবিন, চাল,গম, ভুট্টা, বাদাম, ফুলকপি, ডিমের কুসুম, কলিজা, কলা, মাশরুম, চিনা/কাজু বাদামে যথেষ্ট পরিমাণ বায়োটিন থাকে। 

দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাদ্যের যে কোন একটি থাকলেও বায়োটিন ঘাটতির সম্ভাবনা নেই।


*কি কাজ করে

চুল, ত্বক, এবং নখের গঠনে বায়োটিনের ভুমিকা রয়েছে। এ ছাড়াও বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো, প্রদাহ বা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। খারাপ কোলেস্টেরল কমানো বা ভালো কোলেস্টেরল বাড়িয়ে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে থাকে এটি।

*অভাবে কি ঘটে?

বায়োটিনের অভাব ঘটলে ত্বক খসখসে বা লাল হয়ে যায়, চুল ঝরে পড়া ত্বরান্বিত করে। তবে বায়োটিন চুল গজিয়ে উঠতে কাজ করে কিনা এই বিষয়ে অদ্যাবধি কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ বা গবেষণা নেই। 


*করণীয়

দৈনন্দিন খাবার তালিকায় বায়োটিন সমৃদ্ধ খাদ্য রাখুন।

শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োটিন ঔষধ হিসেবে গ্রহন করতে পারেন।


লেখক

এম আর করিম রেজা

ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ


Monday, September 7, 2020

গরমে ত্বকের সমস্যা


 মানব দেহের একক বৃহৎ অঙ্গ। শরীরের আবরণ হিসেবে কাজ করে বিধায় ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব সর্বাগ্রে ত্বকে পরিলক্ষিত হয়। ষড়ঋতুর প্রত্যেকটিতে আলাদাভাবে লক্ষণীয় পরিবর্তন না হলেও, শীত এবং গরমের প্রভাব ত্বকের উপর সুস্পষ্ট। ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরম এবং আদ্র আবহাওয়ার কারণে ত্বকের বিশেষ কিছু রোগের প্রাদুর্ভাব দেখতে দেয়।

গরমে ত্বকের উপর পরিবর্তন দু'ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।


সূর্যালোকের কারণে ত্বকের পরিবর্তন :

সূর্যালোকের কারণে ত্বকে সোলার ডার্মাটাইটিস বা সানবার্ন, সোলার একজিমা, সোলার আর্টিকেরিয়া, একনিটিক রেটিকুলয়েড, ত্বকের ক্যান্সার এবং মেছতা বা ক্লোজমা হতে পারে। সূর্যালোকের আলট্রা ভয়োলেট রশ্মিই সাধারণত এ জন্য দায়ী। গরমে সূর্যালোকের কারণে হিট-স্ট্রোক বা সানবার্ন হতে পারে

গরমে সৃষ্ট ঘামের কারণে পরিবর্তন :

গরমের সঙ্গে বায়ুমণ্ডলে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ত্বকের সোয়েট গ্লানড বা ঘর্মগ্রন্থি নিৎসরিত ঘাম তৈরি হয়। ঘামের কারণে #ঘামাচি দেখা দেয়। এ ছাড়া ঘামে ডার্মাটাইটিস্, ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত ত্বকের রোগ বিস্তার লাভ করে।

#ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের রোগ যেমন ইমপেটিগো বা সামার বয়েল, ফলিকুলাইটিস, ইরাইসিপেলস, ফারাঙ্ককেল, কারবাংকেল ইত্যাদি। শিশুরা গরমে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয় যা সামার বয়েল নামে পরিচিত।

গরম এবং আদ্র আবহাওয়ায় শরীরে প্রচুর ঘাম হয়ে থাকে যা ছত্রাক বা ফাঙ্গাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে টিনিয়া ভারসিকলার/ছুঁলি,  ক্যানডিডিয়াসিস, ইরাইথ্রাসমা, দাদ জাতীয় রোগ (টিনিয়া ক্যাপিটিস, টিনিয়া পেডিস, টিনিয়া কর্পোরিস) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গরম এবং ঘামের কারণে ব্রণ এবং এ্যালার্জি বৃদ্ধি পায়।

আমাদের দেশে এ সময়ে মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, যে কারনে মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুতে ত্বক লালচে ছোপছোপ চুলকানি হয়।


চিকিৎসা :

গরমে ত্বকের সমস্যা জটিল হতে পারে। কি ধরনের পরিবর্তন হয়েছে, সেটি নির্ধারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে।


প্রতিরোধের উপায় :

*সরাসরি সূর্যালোকে যাবেন না, ছাতা, হ্যাট এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।

*দীর্ঘক্ষণ সূর্যালোকে থাকবেন না, সান ব্লকের লোশন ক্রিম বা জেল ব্যবহার করুন।

*ভারী জামা-কাপড়, টাইটফিট অন্তর্বাস পরিহার করুন।

*নাইলন, পলিয়েস্টার ইত্যাদি সিনথেটিক পোশাক পরিধান না করে, সুতি এবং প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পোশাক ব্যবহার করুন,

*একবার ব্যবহার করা পোশাক ও অন্তর্বাস পুনরায় ধৌত করার পর ব্যবহার করুন;

*ঘাম তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকিয়ে ফেলুন বা মুছে নিন, প্রয়োজনে গোসল করতে পারেন;

*প্রচুর পরিমানে পানীয় পান করুন।

*ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করবেন না। পাউডার ঘর্মগ্রন্থির মুখ বন্ধ করে দেয় ফলে ঘামাচি সহ ত্বকের অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

*সতর্কতা অবলম্বন করার পরেও ত্বকের সমস্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ

Thursday, August 20, 2020

মাস্ক পরায় সৃষ্ট ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়

 চলমান কোভিড-১৯ মহামারির কারণে এখন মাস্ক পরা দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাস্ক একদিকে যেমন কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে, তেমনি এর কারণে মুখের ত্বকে সমস্যা হতে পারে।

মাস্কের কারণে ঘাম, ত্বকের নিঃসৃত তেল, ময়লা ও জলীয়বাষ্প মুখের ওপর আটকে যায়। আবার মাস্কের ঘর্ষণের ফলেও ত্বকের পরিবর্তন ঘটে। ফলে ব্রণ, ত্বক লালচে হয়ে যাওয়া, চুলকানি, প্রদাহ, জ্বালাপোড়া, আ্যলার্জি, ডার্মাটাইটিস, রোসাছিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

এসব সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ব্রণ (Acne)। জলীয়বাষ্প, ঘাম, তৈলাক্ত ত্বক ইত্যাদি ব্রণ ও জীবাণুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে। মাস্ক পরার ফলে সৃষ্ট ব্রণ ইতোমধ্যেই মাস্কনি (Mask+Acne) হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।


কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই মাস্কনি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।

* পরিষ্কার, শুকনো, আরামদায়ক মাস্ক পরিধান করুন। প্রাকৃতিক তন্তু যেমন সুতি বা সিল্কের তৈরি নরম ও মোলায়েম মাস্ক তৈরি করে নিতে পারেন। রুক্ষ ও সিনথেটিক কাপড়ের মাস্ক পরা থেকে বিরত থাকুন।

* মাস্ক পরার আগে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন। ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা ও মাস্ক নাড়াচাড়ার সুবিধার্থে ময়েশ্চারাইজার বা ব্যারিয়ার ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। মাস্ক খোলার পর দ্রুত মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন।

* মাস্কের কারণে মুখের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে থাকে। তাই মেকআপ বা প্রসাধন চর্চা না করাই ভালো। গরম ও ঘামে মাস্কের আবদ্ধ পরিবেশে প্রসাধনী পণ্য ব্রণ তৈরিতে সহায়তা করে।

* কর্মস্থলে আলাদা কক্ষের সুবিধা থাকলে অন্য কারো সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ছাড়া মাস্ক না পরলেও রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। এভাবে স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা করে, ঝুঁকি না নিয়ে যতটুকু সম্ভব মাস্ক মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে পারেন।

* সাবধানতা অবলম্বনের পরও ত্বকের সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

Sunday, August 2, 2020

গরুর চামড়া একটি পুষ্টিকর ও হালাল খাবার

ত্বক বা চামড়া যে কোন প্রানীর সবচেয়ে বড় অঙ্গ। গরুর আকারভেদে একটি চামড়া ১০ থেকে ৫০ কেজি ওজন হতে পারে। সাধারণত পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে পোশাক, জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ইত্যাদি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার পশুর চামড়া থেকে জিলাটিন বের করে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ঔষধ, প্রসাধনীতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে মানুষের খাবার হিসেবেও পশুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। যদিও হালাল নয় তবে শুকরের চামড়া খুব জনপ্রিয় খাবার। আবার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়ার মুসলমান ধর্মালম্বীরা গরুর চামড়া দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে থাকে। বাংলাদেশেও বৃহত্তর চট্টগ্রামের কোন কোন এলাকায় পশুর চামড়ার তৈরি খাবারের প্রচলন রয়েছে।
খাদ্যমান হিসেবেও গরুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলো ক্যালোরি শক্তি থাকে। উপাদান হিসেবে এই ১০০ গ্রামে ৪৭ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি, ০.০২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪৫ গ্রাম পানি থাকে। গরুর চামড়ার প্রোটিন সাধারণত জিলাটিন হিসেবে থাকে। জিলাটিন হাড় এবং ত্বকের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও গরুর চামড়ায় ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে না বললেই চলে। তবে খুবই সামান্য পরিমাণ চর্বি থাকায় শরীরে কোন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।
পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা একটু ঝামেলা। গরু ছাগলের ভুড়ি খাবার হিসেবে প্রস্তুত করতেও কিন্তু ঝামেলা কম নয়। চামড়া থেকে লোম ছাড়ানোর পদ্ধতি ইউটিউবে দেখে নিতে পারেন। লোম ছাড়ানোর পর এটি নিজস্ব স্বাদে বিভিন্ন মসলা দিয়ে কারি বা ভাজা বা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়া/মালয়েশিয়ায় কিকিল (Kikil) বা নাইজেরিয়ায় পনমো (Ponmo) খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
বিগত কয়েকবছর ধরে আমাদের দেশে গরু ছাগলের চামড়ার দাম একেবারে কমে গিয়েছে। কোরবানির পরে অনেকেই পশুর চামড়া মাটিতে পুতে রাখছেন বা ফেলে দিচ্ছেন, যা নিতান্তই সম্পদের অপচয়। অথচ খাবার সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে এই বিশাল  অনাকাঙ্ক্ষিত অপচয় থেকে মুক্তি পেতে পারি আমরা।

লেখক:
ডাঃ এম আর করিম রেজা
ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Thursday, July 2, 2020

বর্ষায় ত্বকের রোগ এবং প্রতিকার


বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়ায় তাপমাত্রা এবং জলীয়বাষ্প বেশি থাকে, এজন্য কয়েক ধরনের ত্বকের রোগের আধিক্য দেখা দিতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রায় সৃষ্ট ঘাম, বাতাসে জলীয় বাস্প, এবং সুর্যালোকের কারণে পরজীবী, ফাঙ্গাস, এবং ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের রোগের পাশাপাশি ত্বকের প্রদাহজনিত রোগ দেখা দিতে পারে এই মৌসুমে।

*ফাঙ্গাস জনিত রোগ: উচ্চ তাপমাত্রা এবং জলীয়বাষ্প ত্বকে ফাঙ্গাস বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বগল, কুচকি, হাত-পায়ের আঙ্গুলের ফাকে, নখে বা শরীরের অন্য যে কোন স্থানে ফাঙ্গাস বৃদ্ধি পেয়ে রোগের সৃষ্টি করে। চুলকানি, লালচে চাকা ইত্যাদি এ রোগের লক্ষণ। দাদ এমনি একটি ত্বকের রোগ।
*ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ: বর্ষা মৌসুমের আবহাওয়া ফাঙ্গাসের মতো ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুলের গোড়ায় ফুস্কড়ি উঠে পুজ হতে পারে।
* ত্বকে পরজীবী আক্রান্ত স্ক্যাবিস বা খোসপচড়া দেখা দিতে পারে। 
*উচ্চ তাপমাত্রা, ঘাম এবং তৈলাক্ত ত্বকের কারণে একজিমা, সোরিয়াসিস, মেছতা, ঘামাচি এবং ব্রণ বেড়ে যেতে পারে।

#প্রতিকার
* নিয়মিত গোসল, হাত, পা, মুখ পরিস্কার এবং শুস্ক রাখতে হবে।
* আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তুর তৈরি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করতে হবে। আন্ডার গার্মেন্টস  একবার ব্যবহার করার পর না ধুয়ে পরিধান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
*সুর্যালোক এবং বৃষ্টি এড়িয়ে চলতে ছাতা ব্যবহার করার বিকল্প নেই। ত্বকের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শে সানস্ক্রিন বা সানব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে।
*কৃত্রিম জুয়েলারি ব্যবহার না করাই ভালো। এই মৌসুমে নাক-কান ফোড়ানো, শরীরে ট্যাট্টু আকা থেকে বিরত থাকুন।
*ত্বকে যে কোন ধরনের লক্ষণ অনুভূত হওয়ার সাথে সাথেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক:
এম আর করিম রেজা
চিকিৎসক, ত্বক, সৌন্দর্যের, এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ

Sunday, May 31, 2020

মহামারি পরিবেশে নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি জরুরি অনুসঙ্গ


চলমান কোভিড মহামারি কতোদিন স্থায়ী হতে পারে সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার মানুষের জীবন জীবিকাও মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেমে থাকলে চলবে না। সেজন্যই মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের পর আবারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। তবে মহামারি চলাকালে সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে হবে অবশ্যই। যেটি এখন নুতন স্বাভাবিক বা #NewNormal হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতা হিসেবে এই নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাড়তি জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে: *ফেসমাস্ক: রেডিমেড মাস্কের চেয়ে সুতি কাপড়ে ২/৩ লেয়ার দিয়ে কয়েকটি তৈরি করে নিতে পারেন। এগুলো ডিটারজেন্টে পরিস্কার করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। পরিধান করাটি ছাড়াও অতিরিক্ত ২/১টি সাথে রাখুন। *স্যানিটাইজার: সব জায়গায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। তাই স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। *ফেসশিল্ড/সানগ্লাস: যারা সার্বক্ষণিক চশমা ব্যবহার করেন তাদের ফেসশিল্ড ব্যবহার না করলেও চলে, তবে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে পরিধান করলে অসুবিধা নেই। বাজারে এখন নানা ধরনের ফেসশিল্ড পাওয়া যাচ্ছে। *ভেজা আ্যন্টি সেপটিক টিস্যু: বাহিরে কোন কিছু স্পর্শ করার আগে মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। স্যানিটাইজারও মোছার কাজ করতে পারে অবশ্যই। *চামচ/কাটাচামচ, গ্লাস, প্লেট: বাহিরে খাওয়া দাওয়া করতে ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল এগুলো ডিসপোজাবল হিসেবে পাওয়া যায়। *হেলমেট: যারা ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকে যাতায়াত করেন তাদের নিজস্ব হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। *জায়নামাজ: যারা নামাজ পড়েন তাদের নিজস্ব জায়নামাজ সঙ্গে রাখতে হবে। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

Tuesday, May 12, 2020

মহামারি নিয়ন্ত্রণে জোন পদ্ধতি


জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী মহামারি পরিস্থিতিতে রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। #লকডাউন তেমনি একটি ব্যবস্থা, যেটি সমগ্র দেশে বা এলাকাভিত্তিক প্রয়োগ করে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো হয়। লকডাউন বলতে যেটি বোঝায় সেটি বাংলাদেশে জারি করা হয়নি, বরং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। মাসখানেক এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকার পর ইতিমধ্যেই কারখানা, মার্কেটশপিংমল, উপাসনালয় ইত্যাদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, গণপরিবহন চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও সম্ভবত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সতর্কতার উপর গুরুত্ব এবং দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আচরণগত কারণে এসব সতর্ক বাণী কতোটা কাজে আসবে সেটি অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করে সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে এখনো। সনাক্ত করা রোগীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে জোনে বিভক্ত করে সংক্রমণ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে শহরের একটি এলাকা বা উপজেলা ভিত্তিক এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা খুব একটা দুরহ নয়। *#লাল বা রেড জোনে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে, প্রয়োজনে কার্ফ্যূ জারি করে। একটি এলাকায় ৪০-৫০ জনের উর্ধ্বে রোগী সনাক্ত হলেই সেটিকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। *৪০ জনের নীচে সনাক্ত রোগী রয়েছে যে এলাকায় সেটি #ইয়েলো বা হলুদ জোন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সীমিত আকারে কঠোরভাবে সামাজিক নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করে কর্মকাণ্ড চালু রাখার সুযোগ রয়েছে। * যে এলাকায় কোন রোগী সনাক্ত করা যায় নি, সেটি #গ্রীন বা সবুজ জোন হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সামাজিক দুরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলতে পারে। তবে এই এলাকায় প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এলাকার বাহিরের কেউ কোন কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে বহিরাগত কেউ অবস্থান করতে চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারিন্টিনে রাখতে হবে। নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে কতোটুকু গুরুত্ব পাবে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে, একজন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে নিজের জ্ঞান এবং বিভিন্ন দেশে নেয়া পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমি এই প্রস্তাবনাটি তৈরি করেছি। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, May 10, 2020

রেমডেসিভির করোনার ঔষধ নয়!


চলমান কোভিড ১৯ মহামারি চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে। নিশ্চিত কোন ঔষধ না থাকায় মুলত উপসর্গের উপর ভিত্তি করেই এ রোগের চিকিৎসা চলছে। এই তালিকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের আ্যন্টিবায়োটিক, আ্যন্টি-ভাইরাল, আ্যন্টি ম্যালেরিয়াল এমনকি খুজলী-পচরার ঔষধও ব্যবহার করা হয়েছে এ পর্যন্ত। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (FDA) গিলিয়াড সায়েন্স (Gilead Sciences Inc) নামে একটি কোম্পানীর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির (Remdesivir) কোভিড ১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সাথে সাথেই বিশ্বের অনেক ঔষধ কোম্পানী এই ঔষধ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন এবং ভাইরাস বিরোধী আ্যভিগানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ঔষধটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অনুমোদন চেয়েছে। তবে এই ঔষধ নিয়ে যেমন অতি আশাবাদী বা উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই, ঠিক তেমনি এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। #রেমডেসিভির একটি ভাইরাস বিরোধী ঔষধ, যা ইতিপূর্বে হেপাটাইটিস সি, ইবোলা, মার্স এবং সার্স করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কোনটিতেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে চীনে কোভিড ১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে ফলাফল সন্তোষজনক নয় বলে সেখানকার গবেষকরা মতামত প্রদান করেছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস সহ আরো কয়েকটি দেশে কোভিড ১৯ রোগীদের উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী রেমডেসিভির শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ৩২% কোভিড ১৯ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সময় ৪/৫ দিন কমিয়ে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান। গবেষণা অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মৃত্যুহার কমিয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোন সায়েন্টিফিক জার্ণালে প্রকাশিত হয় নি। শুধুমাত্র গিলিয়াড কোম্পানি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল জানিয়েছে, তবে একইসাথে তারা এই বিষয়ে আরো গবেষণা করার সুপারিশও করেছে। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড ১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধটির জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মুলত আমেরিকার কারণেই বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং উৎপাদনের হিড়িক লেগে গিয়েছিল। পরবর্তীতে গবেষণায় কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসায় এটির ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত হয়েছে। রেমডেসিভির মুখে খাওয়ার ঔষধ নয়, বরং শিরায় প্রয়োগ করার একটি দামি ঔষধ। প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫/৬ হাজার টাকা, যেটি রোগীর অবস্থাভেদে ১০-১৫টি প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের একটি ঔষধ উৎপাদন করা গেলেও সেটি বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বহুলভাবে প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কাজেই শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে নয়, বরং যথাযথ এবং যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করেই এই ঔষধটির বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া উচিত। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

শপিং করতে গেলে যেভাবে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন!


ঈদ উপলক্ষে আগামী ১০ মে থেকে শপিং মল এবং দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলমান কোভিড ১৯ মহামারীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বের হওয়াতেই যখন সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে কেনাকাটা করার জন্য শপিং মল বা মার্কেটে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে অবশ্যই। উপসর্গ ছাড়া আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ কোভিড ১৯ আক্রান্ত অনেকেই কেনাকাটা করতে আসবেন। তাদের মাধ্যমে কোভিড ১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে খুব সহজেই। আসুন জেনে নেই কিভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। *রিকশা, ট্যাক্সি ইত্যাদি #যানবাহনের মাধ্যমে কারণ আপনি যেটিতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করছেন সেটি কিছুক্ষণ আগে হয়তো কোন কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীকে বহন করেছে। *মানুষের ভিড়ে শপিং মলের এসি, টয়লেট, লিফট, ফুডকোর্ট, এটিএম, টাকা পয়সা লেনদেনের সময় সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। *আপনি ট্রায়ালের জন্য যে পোশাকটি গায়ে তুলেছেন সেটিও হয়তো কোন কোভিড ১৯ রোগী ট্রায়াল দিয়ে থাকতে পারে কিছুক্ষণ আগে। *দরদাম করে কেনাকাটায় অভ্যস্ত বাংলাদেশের মানুষ বিস্তার কথাবার্তা বলে থাকে। দোকানের বদ্ধ পরিবেশে যেটি #আ্যরোসল পদ্ধতিতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বৈকি। *শপিং এবং ভ্যানিটি ব্যাগ থেকেও সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। #সতর্কতা মহামারী চলাকালীন সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে স্বশরীরে কেনাকাটা না করে অনলাইনে শপিং করতে পারেন। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলে সাথে স্যানিটাইজার রাখুন, ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন। বর্ণিত যে কোন কাজ করার সাথে সাথেই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করুন। মনে রাখবেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বের হয়ে আপনি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলছেন। মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিজে সুস্থ থাকুন অন্যকেও সুস্থ থাকতে সহায়ক ভূমিকা পালন করুন। লেখক: ত্বক, সৌন্দর্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হটলাইন: ০১৮৬৭৭১১৭৯৩

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু!


প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে নিজের পেশা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরমধ্যেই জাকার্তা অবস্থান কালে বন্ধুতে পরিণত হওয়া এক চীনা চিকিৎসক WeChat এর মাধ্যমে তার মাতৃভূমিতে শুরু হওয়া একটি ভাইরাসজনিত নুতন শ্বাসকষ্ট রোগের সংবাদ জানালো। সে তখন তার জন্মস্থান চীনের হুবেই প্রদেশে ফিরে গিয়েছে। বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে তখনও বিষয়টি শিরোনাম হয়নি। ঢাকায় ফিরে আমার নিজের পেশাগত জীবনে ব্যস্ততা শুরু হয়নি বিধায় রোগটি সমন্ধে কৌতূহলী হয়ে জানার চেষ্টা করতে থাকলাম। চীনা বন্ধুর কাছ থেকে রোগটির ভয়াবহতা জেনে অজান্তেই শিউরে উঠেছিলাম। সে জানিয়েছিল হয়তো রোগটি মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না। ততোদিনে বিষয়টি বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছিল। জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে চীন সরকার ঘোষণা দিল রোগটি হয়তো মানুষের মাধ্যমে সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে, যদিও WHO তখনও বলছিল মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না। ইন্টারনেট ঘেটে যতোদুর সম্ভব নুতন এই রোগটি সমন্ধে জানার চেষ্টা করছিলাম আমি। যেহেতু চীনের একাধিক নগরীর সংগে আমাদের বিমান যোগাযোগ রয়েছে তাই মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণের খবরে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। উল্লেখ্য আমি একজন ত্বকের চিকিৎসক হলেও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে মাষ্টার্স করেছি এবং বিশ্বের জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে উৎসাহ বোধকরি। যাই হোক জানুয়ারির ১৫ তারিখেই দেশের আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে করোনা নিয়ে পোষ্ট দেয়া শুরু করলাম। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে সেগুলোর সচিত্র পোষ্ট করার চেষ্টা করেছি আমি। বলাবাহুল্য আমাদের বন্দরগুলো তখনও গা ছাড়া ঢিলেঢালা ভাবেই চলছিল। একপর্যায়ে জনমতের চাপে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে প্রত্যাগত বাংলাদেশী দের বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টিনে নেয়া হলো। তারপর বেশ সন্তূষ্ট চিত্তে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আমরা বিদেশ প্রত্যাগতদের কোয়ারিন্টিনে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা ভুলেই বসলাম। ইতিমধ্যেই এশিয়া পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। সেখানকার সংবাদ মাধ্যমেও নজর রাখছিলাম, গুগল মামার সাহায্য নিয়ে অনুবাদ করে সেগুলো পড়তাম। একদিন সন্ধ্যায় দেখলাম ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশী ভর্তি উড়োজাহাজ ছাড়ছে, যা শিরোনাম হয়েছে সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে। ইতালি থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে নেয়ার গুরুত্ব দিয়ে পোষ্ট করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে দেশের মানুষ এবং সংবাদ মাধ্যম তখন সচেতন এবং সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ইতালি থেকে প্রবাসী বহনকারী সেই প্রথম উড়োজাহাজটি পরদিন সকালে বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীদের কোয়ারিন্টিনে নেয়া হলো বটে কিন্তু তাদেরকে রাখার স্থানটিতে কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই। তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে সরকার বাড়িতে কোয়ারিন্টিনে থাকার শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো। আমরা কোভিড ১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে বড়ো সুযোগটি হেলায় ফেলায় হাতছাড়া করলাম চুড়ান্ত অব্যবস্থাপনার কারণে। তারপর আরো অনেক উড়োজাহাজ অবতরণ করেছে, যাত্রীরা সবাই বাড়িতে কোয়ারিন্টিনের শর্তে ছাড়া পেয়ে ঘুরে ফিরে বেড়িয়েছে, নিমন্ত্রণ খেয়েছে, রোগ ছড়িয়েছে নিজের অজান্তেই। মার্চের ৮ তারিখে সরকারি ভাবে বাংলাদেশে কোভিড ১৯ রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেয়া হলো। পরিস্থিতি মোকাবেলায় একপর্যায়ে দুরপাল্লার যানবাহন বন্ধ না করে, জনগণকে নির্দেশনা বা সতর্কবার্তা না দিয়েই লকডাউনের নামে ছুটি ঘোষণা করা হলো। মানুষ ঈদের আমেজে স্রোতের মতো যানবাহনে গাদাগাদি করে বড় শহর ছেড়ে পাড়ি জমালো গ্রামের বাড়িতে। এসব মানুষের মাধ্যমে কোভিড ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে সেটি এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কফিনে সবশেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অতপর সীমিত পরিসরের নামে কলকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। শপিং মল, দোকানপাট , ধর্মীয় উপাসনালয়ও খুলে দেয়া হয়েছে, যদিও মে মাসের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড রোগীর সংখ্যা। অবকাঠামো, চিকিৎসা সরন্জামের অপ্রতুলতা এবং সর্বোপরি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই পরিস্থিতি আমরা কিভাবে মোকাবেলা করবো সেটি এখন অনেকটাই প্রকৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। দ্রুত উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির চাকা হঠাৎ থেমে গিয়েছে। সঠিক এবং সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে না পারলে মহামারীতে মানুষের মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। সময়ে এক ফোড়, অসময়ে দশফোড় এই প্রবাদ বাক্যটি মেনে চলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেও কোভিড ১৯ মহামারী আমাদের দেশে প্রবেশ করতো অবশ্যই। জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুসারে যে রোগের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই, সেই রোগের মহামারি মোকাবেলা করতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করাটা সবচেয়ে ভালো পন্থা। দক্ষিনপুর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় আমরা কিভাবে সুযোগ হাতছাড়া করে উন্নয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কতোটা ভূল করে ফেলেছি এবং এখনও করছি। সম্ভবত আমরা হেলায়ফেলায় আত্মহুতি দিয়ে একটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে চলেছি😢! লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ #COVID19 #MRKR

Wednesday, March 4, 2020

কোভিড ১৯ প্রতিরোধে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে সতর্কতা


গণপরিবহন আধুনিক নগরের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভিড়ের কারণে গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে বড় শহরগুলোর গণপরিবহনে যাত্রী সংখ্যা কমে গিয়েছে। বাস, ট্রেন, ফেরি ইত্যাদি গণপরিবহনে ভ্রমনের সময় কিছু নিয়ম মেনে চললে সংক্রামনের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সংক্রামক রোগের মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই। #করণীয় *যাত্রাশেষে দ্রুত স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করে ফেলুন। *সাথে বহন করা ব্যাগ বা অন্যান্য জিনিস যদি যানবাহনের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেগুলোতে জীবানু নাশক স্প্রে করুন বা ধুয়ে ফেলুন। *ভ্রমনকালে মোবাইল ফোন বা অন্যান্য গেজেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। *ভ্রমনকালে কোন খাবার গ্রহন করবেন না। *কেউ হাঁচিকাশি দিলে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নিন। *সম্ভব হলে সকাল সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে গণপরিবহন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন। #COVID19 #CoronaVirus জনস্বার্থে: ডাঃ এম আর করিম রেজা ত্বক, সৌন্দর্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এইমস্ হসপিটাল লিমিটেড বাড্ডা জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেড

ত্বকে বয়সের ছাপ: কারণ এবংপ্রতিকার


ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। শরীরবৃত্তীয় বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি ত্বক মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রধান মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। সাধারণত চল্লিশোর্ধ্ব বয়সে ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির বিভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। তবে ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে এসব লক্ষণ অপরিপক্ক বয়সেও আবির্ভূত হতে পারে। ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির স্বাভাবিক লক্ষণ স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না হলেও, সামাজিকভাবে মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। শরীরের অভ্যন্তরীণ এবং পারিপার্শ্বিক নানা কারণেই ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণকে ত্বরান্বিত করতে পারে। *লক্ষণ: বলিরেখা, ভাজ, দাগ, ঝুলে যাওয়া, ঔজ্জ্বল্যতা কমে যাওয়া, পাতলা, রুক্ষ, খসখসে ত্বক বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। বয়স, বংশোদ্ভূত বা জ্বীনগত, সূর্যরশ্মি, বায়ুদূষণ, ধুমপান এবং প্রাত্যহিক জীবযাপন পদ্ধতি ইত্যাদি নানা কারণ ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণকে প্রভাবিত করে থাকে। বয়োঃবৃদ্ধির কারনে ত্বকের কোষ বৃদ্ধির হার কমে গিয়ে ধীরে ধীরে ত্বক পাতলা হয়ে যায়। ত্বকের বিভিন্ন স্তরের চর্বি, ইলাষ্টিন, কোলাজেন ইত্যাদি কোষ কমে যায়। ফলে স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা কমে যাওয়ার কারণে ত্বকে বলিরেখার আবির্ভাব হয়, ত্বক ঝুলে পড়ে। ত্বকের গ্রন্থি থেকে তেল নিঃসরণ ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে খসখসে এবং রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকে চর্বি কমে গর্ত সৃষ্টি এবং অস্থির ক্ষয়ের কারণে গিয়ে মুখাবয়বের পরিবর্তন ঘটে থাকে। রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়ায় ত্বকের পুষ্টির অভাব ঘটে। বয়োঃবৃদ্ধির সাথে ইষ্ট্রোজেন হরমোন কমে গিয়ে মেয়েদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে ত্বকে বয়সজনিত লক্ষণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে থাকে। বংশোগত প্রভাব, সূর্যরশ্মি, বায়ুদূষণ বর্ণিত বয়োঃবৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে থাকে। ধুমপান, খাদ্যাভ্যাস, অতিরিক্ত ওজন, ত্বকের যত্ন, এমনকি ঘুমানোর ধরনও ত্বকের বয়স জনিত বৃদ্ধি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। *প্রতিকার #বয়স এবং বংশোদ্ভূত কারনে সৃষ্ট ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যা প্রতিরোধে সৌন্দর্য বর্ধক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কিছু করার নেই। #সূর্যালোকের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে ছাতা বা হ্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। #বায়ুদূষণের জন্য সানস্ক্রিন এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ত্বকের উপযোগী সাবান/ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিস্কার এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। #ধুমপান পরিহার এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। #ভিটামিন এ, সি, ডি, ই এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হবে। #শাকসব্জি, ফলমূল এবং পর্যাপ্ত পানীয় গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। *চিকিৎসা ত্বকে বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণ কমাতে রোগীর ত্বকের ধরন, বয়স এবং লক্ষণ বিবেচনা করে খাবার ঔষধ, ব্যবহার করার ক্রিম/লোশন থেকে শল্য চিকিৎসা ইত্যাদি নানা ধরনের চিকিৎসা প্রদান করা হয়ে থাকে। #আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট বা ভিটামিন জাতীয় ঔষধ সেবন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবে চিকিৎসক বিবেচনা করে দিতে পারেন। #ক্রিম/লোশন হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং প্রসাধনী বয়োঃবৃদ্ধির লক্ষণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। #ত্বকের বয়োঃবৃদ্ধি জনিত ভাজ, দাগ, ঝুলে যাওয়া, গর্ত হওয়া, ঔজ্জ্বল্যতা কমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দুর করতে আজকাল নানা ধরনের সৌন্দর্য বর্ধক চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে যেমন কেমিক্যাল পিলিং, মাইক্রোডার্মাব্রেশন, কোলাজেন ফিলার এবং বোটক্স ইনজেকশন, লেজার, পিআরপি, অটোলোগাস ফ্যাট থেরাপি, ইলেক্ট্রোথেরাপি, হাইড্রোথেরাপি, থ্রেড লিফ্ট ইত্যাদি। এ সকল চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন হয় না। #কসমেটিক_সার্জারির মাধ্যমেও অবয়ব পরিবর্তন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি থাকার প্রয়োজন হতে পারে। মনে রাখবেন এসব চিকিৎসা স্থায়ী নয় এবং অনেক সময় আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায় না। কাজেই চিকিৎসার ফলাফল, স্থায়িত্ব এবং খরচ সমন্ধে ধারনা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা উচিত। https://www.bd-pratidin.com/health/2019/12/19/484680 লেখক: এম আর করিম রেজা ত্বক এবং সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এইমস হসপিটাল লিঃ হটলাইন:০১৮৬৭৭১১৭৯৩

করোনা সংক্রমণ রোধে সচেতনতা এবং ফেসমাস্ক


বিশ্বজুড়ে কোভিড ১৯ ভাইরাস নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ পর্যন্ত ৭০টি দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ৯২ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৩২০০ মৃত্যুবরণ করেছে। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতে ৬ জন আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এখন পর্যন্ত কারও দেহে এই ভাইরাস সনাক্ত হয়নি। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, সংক্রামক রোগের মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতার বিকল্প নেই। কী করবেন *আ্যলকোহল সমৃদ্ধ জীবাণুনাশক হ্যান্ড রাব (স্পিরিট, হেক্সিসল), সাবান বা সাবান জাতীয় জিনিস দিয়ে ঘনঘন হাত ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। *অপ্রয়োজনে নাক, চোখ, মুখে হাত দেয়ার প্রবণতা পরিহার করতে হবে। *অপরিচিত কারো সাথে হ্যান্ডশেক করার পর হাত ধোয়া না পর্যন্ত নাক, কান, চোখমুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। *রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ এবং পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করার সময় সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার করতে হবে। *জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। *যেখানে সেখানে কফ, থুথু ফেলবেন না। হাঁচি কাশি দেয়ার সময় সতর্ক থাকুন। *গলা ভিজিয়ে রাখতে পর্যাপ্ত পানীয় পান করুন। *শুধু মাস্ক ব্যবহার কোভিড ১৯ সংক্রমণ রোধে কার্যকরী নয়। নিজে সর্দি-জ্বর, হাঁচি-কাশি, ফ্লুতে আক্রান্ত হলে এই মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেটি অন্যকে আক্রান্ত করার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। ফেসমাস্ক চীনের উহানে করোনা ভাইরাস প্রথম সনাক্ত হওয়ার পর থেকেই দেশে দেশে সুস্থ মানুষের মধ্যে ফেসমাস্ক কেনা এবং ব্যবহার করার হিড়িক লেগেছে। এই সুযোগে প্রস্ততকারক কোম্পানির ব্যবসা ভালো হলেও সেটি কোভিড ১৯ প্রতিরোধে কতোটা কার্যকর তা জেনে নেয়া উচিত। সাধারণ ফেসমাস্ক বায়ুদূষণ থেকে কিছুটা পরিত্রাণ দিলেও রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে না। সংক্রমণ প্রতিরোধে N95 নামে রেসপিরেটরি মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। তবে এই মাস্ক পরিধানকারীর শরীর থেকে রোগ ছড়ানো যতোটা প্রতিরোধ করে, বাহির থেকে শরীরে রোগ অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে ততোটা কার্যকর নয়। শুধু তাই নয় সঠিকভাবে ব্যবহার না জানলে এই মাস্ক থেকেই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী শুধু আক্রান্ত রোগীর যত্ন নেয়া এবং সংস্পর্শে আসলে এই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে ফেসমাস্ক ব্যবহারের নিয়ম *হাত পরিষ্কার করে মাস্ক লাগাতে হবে। *নাকমুখ ঢাকার পর মুখমণ্ডল এবং মাস্কের ভিতর কোন ফাঁক রাখা যাবে না। * হাত পরিষ্কার না করে কখনো পরিধান করা মাস্ক স্পর্শ করা যাবে না। *খোলার সময় পেছন থেকে খুলতে হবে, মাস্ক স্পর্শ করা যাবে না। *মেয়াদত্তীর্ণ অপরিস্কার, নোংরা মাস্ক যত দ্রুত সম্ভব আবর্জনা বাক্সে ফেলে দিন। মনে রাখবেন কোভিড ১৯ ভাইরাস হাঁচি-কাশি ছাড়া সাধারণভাবে স্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায় না। কাজেই হুজুগে ফেসমাস্ক ব্যবহার না করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এটি প্রতিরোধে সচেতন হওয়ার চেষ্টা করুন।

Saturday, February 15, 2020

কিটো ডায়েট


অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও শরীরের জন্য ভালো কি মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোন যৌক্তিকতা নেই। কিটো ডায়েট শুরু করার পর অসুস্থতাবোধ এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদি সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। *কিটো ডায়েট অনুযায়ী শরীরবৃত্তীয় চাহিদা মেটাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার (চাল, ভুট্টা, গম ইত্যাদির তৈরি খাবার) পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করার ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কম বা গ্রহন না করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের মুল উদ্দেশ্য। এই ইনসুলিন একদিকে যেমন শর্করা ভাঙ্গে অন্যদিকে চর্বি ও প্রোটিন জমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু শর্করা না থাকলে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে পারে না। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেট মেটাবলিজম বন্ধ হয়ে গেলে চর্বি ভেঙ্গে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। কিটো এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। * মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙ্গে তৈরি হয়। মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। দীর্ঘদিন ডায়েটিং করলে একসময় মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু কিটোন মস্তিষ্কের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর সে সমন্ধে প্রয়োজনীয় কোন গবেষণা লব্ধ ফলাফল নেই। দীর্ঘমেয়াদে কিটোডায়েটে স্মৃতি ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। *কিটো ডায়েট চলাকালীন চর্বি ভেঙ্গে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে জমে তা বন্ধ করে দিতে পারে। যা হার্ট এ্যটাকের কারণ হতে পারে। রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়। * কিটো ডায়েট চলাকালীন শুধুমাত্র চর্বিই ভাঙ্গে না প্রোটিনও ভাঙ্গে। শরীরের বাহ্যিক গঠন যেমন মাংসপেশী ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রধানত প্রোটিন দিয়েই তৈরি। কিটো ডায়েট চলাকালীন মাংসপেশী এবং হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলে। ক্রীড়াবিদদের হাড়ে ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটিন ভেঙ্গে অপুষ্টির মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী কম শর্করা জাতীয় খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। কিটো ডায়েট গ্রহণকারীদের মধ্য মৃত্যুর হারও বেশি বলে গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। মনে রাখবেন সুস্থ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অস্বাভাবিক কিটো ডায়েট নয়। উঠতি বা যুবা বয়সে কিটো ডায়েট ক্রেজে আক্রান্ত না হয়ে বরং সুষম খাবার উপভোগ করে সেটি পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঝড়িয়ে ফেলার পর বিশ্রাম নিন, জীবনটাকে উপভোগ করুন। https://www.health.com/weight-loss/keto-diet-side-effects

জিন্নাহর বংশোধর

ওয়াদিয়া গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইরান থেকে আসা পার্সি লোভজি নুসারওয়াঞ্জি ওয়াদিয়া ১৭৩৬ সালে বোম্বে ড্রাইডক কোম্পান...