Sunday, May 31, 2020

মহামারি পরিবেশে নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনের কয়েকটি জরুরি অনুসঙ্গ


চলমান কোভিড মহামারি কতোদিন স্থায়ী হতে পারে সেটি এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। আবার মানুষের জীবন জীবিকাও মহামারির কারণে দীর্ঘদিন থেমে থাকলে চলবে না। সেজন্যই মহামারি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের পর আবারও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ। তবে মহামারি চলাকালে সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে পরিবর্তন করতে হবে অবশ্যই। যেটি এখন নুতন স্বাভাবিক বা #NewNormal হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতা হিসেবে এই নুতন স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনে কিছু বাড়তি জিনিস সঙ্গে রাখতে হবে: *ফেসমাস্ক: রেডিমেড মাস্কের চেয়ে সুতি কাপড়ে ২/৩ লেয়ার দিয়ে কয়েকটি তৈরি করে নিতে পারেন। এগুলো ডিটারজেন্টে পরিস্কার করে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। পরিধান করাটি ছাড়াও অতিরিক্ত ২/১টি সাথে রাখুন। *স্যানিটাইজার: সব জায়গায় সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। তাই স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখুন। *ফেসশিল্ড/সানগ্লাস: যারা সার্বক্ষণিক চশমা ব্যবহার করেন তাদের ফেসশিল্ড ব্যবহার না করলেও চলে, তবে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে পরিধান করলে অসুবিধা নেই। বাজারে এখন নানা ধরনের ফেসশিল্ড পাওয়া যাচ্ছে। *ভেজা আ্যন্টি সেপটিক টিস্যু: বাহিরে কোন কিছু স্পর্শ করার আগে মোছার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। স্যানিটাইজারও মোছার কাজ করতে পারে অবশ্যই। *চামচ/কাটাচামচ, গ্লাস, প্লেট: বাহিরে খাওয়া দাওয়া করতে ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল এগুলো ডিসপোজাবল হিসেবে পাওয়া যায়। *হেলমেট: যারা ভাড়ায় চালিত মোটরবাইকে যাতায়াত করেন তাদের নিজস্ব হেলমেট ব্যবহার করতে হবে। *জায়নামাজ: যারা নামাজ পড়েন তাদের নিজস্ব জায়নামাজ সঙ্গে রাখতে হবে। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

Tuesday, May 12, 2020

মহামারি নিয়ন্ত্রণে জোন পদ্ধতি


জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুযায়ী মহামারি পরিস্থিতিতে রোগের চিকিৎসার চেয়ে রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করা হয়। #লকডাউন তেমনি একটি ব্যবস্থা, যেটি সমগ্র দেশে বা এলাকাভিত্তিক প্রয়োগ করে সংক্রমন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কমানো হয়। লকডাউন বলতে যেটি বোঝায় সেটি বাংলাদেশে জারি করা হয়নি, বরং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। মাসখানেক এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকার পর ইতিমধ্যেই কারখানা, মার্কেটশপিংমল, উপাসনালয় ইত্যাদি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, গণপরিবহন চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে। মহামারি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকলেও সম্ভবত অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সরকার ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সচেতনতা এবং সতর্কতার উপর গুরুত্ব এবং দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন পদ্ধতি এবং আচরণগত কারণে এসব সতর্ক বাণী কতোটা কাজে আসবে সেটি অবশ্য প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে পরিস্থিতি বিবেচনা করে এলাকাভিত্তিক কঠোর লকডাউন প্রয়োগ করে সংক্রমন নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে এখনো। সনাক্ত করা রোগীর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে জোনে বিভক্ত করে সংক্রমণ কমানোর জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। লাল, হলুদ এবং সবুজ জোনে শহরের একটি এলাকা বা উপজেলা ভিত্তিক এই পদ্ধতির প্রয়োগ করা খুব একটা দুরহ নয়। *#লাল বা রেড জোনে কঠোরভাবে লকডাউন করতে হবে, প্রয়োজনে কার্ফ্যূ জারি করে। একটি এলাকায় ৪০-৫০ জনের উর্ধ্বে রোগী সনাক্ত হলেই সেটিকে রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। *৪০ জনের নীচে সনাক্ত রোগী রয়েছে যে এলাকায় সেটি #ইয়েলো বা হলুদ জোন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সীমিত আকারে কঠোরভাবে সামাজিক নিরাপদ দুরত্ব নিশ্চিত করে কর্মকাণ্ড চালু রাখার সুযোগ রয়েছে। * যে এলাকায় কোন রোগী সনাক্ত করা যায় নি, সেটি #গ্রীন বা সবুজ জোন হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। এই এলাকায় সামাজিক দুরত্ব মেনে, মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলতে পারে। তবে এই এলাকায় প্রবেশাধিকারে কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। এলাকার বাহিরের কেউ কোন কাজের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চাইলে তাকে প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে অনুমতি দেয়া যেতে পারে। তবে বহিরাগত কেউ অবস্থান করতে চাইলে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারিন্টিনে রাখতে হবে। নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে কতোটুকু গুরুত্ব পাবে সেটি বিবেচনায় না নিয়ে, একজন চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে নিজের জ্ঞান এবং বিভিন্ন দেশে নেয়া পদক্ষেপ পর্যালোচনা করে আমি এই প্রস্তাবনাটি তৈরি করেছি। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, May 10, 2020

রেমডেসিভির করোনার ঔষধ নয়!


চলমান কোভিড ১৯ মহামারি চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত অনেক ঔষধ ব্যবহার করা হয়েছে। নিশ্চিত কোন ঔষধ না থাকায় মুলত উপসর্গের উপর ভিত্তি করেই এ রোগের চিকিৎসা চলছে। এই তালিকায় প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের আ্যন্টিবায়োটিক, আ্যন্টি-ভাইরাল, আ্যন্টি ম্যালেরিয়াল এমনকি খুজলী-পচরার ঔষধও ব্যবহার করা হয়েছে এ পর্যন্ত। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (FDA) গিলিয়াড সায়েন্স (Gilead Sciences Inc) নামে একটি কোম্পানীর অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির (Remdesivir) কোভিড ১৯ চিকিৎসায় ব্যবহার করার জন্য অনুমোদন দিয়েছে। সাথে সাথেই বিশ্বের অনেক ঔষধ কোম্পানী এই ঔষধ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। উল্লেখ্য ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন এবং ভাইরাস বিরোধী আ্যভিগানের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানি ঔষধটি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার অনুমোদন চেয়েছে। তবে এই ঔষধ নিয়ে যেমন অতি আশাবাদী বা উৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই, ঠিক তেমনি এটিকে সঠিকভাবে প্রয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। #রেমডেসিভির একটি ভাইরাস বিরোধী ঔষধ, যা ইতিপূর্বে হেপাটাইটিস সি, ইবোলা, মার্স এবং সার্স করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে কোনটিতেই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়নি। ইতিপূর্বে চীনে কোভিড ১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে ফলাফল সন্তোষজনক নয় বলে সেখানকার গবেষকরা মতামত প্রদান করেছিল। পরবর্তীতে আমেরিকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস সহ আরো কয়েকটি দেশে কোভিড ১৯ রোগীদের উপর বিভিন্ন আঙ্গিকে রেমডেসিভিরের কার্যকারিতা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং গবেষণা চলমান রয়েছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী রেমডেসিভির শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ৩২% কোভিড ১৯ রোগীর ক্ষেত্রে সুস্থ হওয়ার সময় ৪/৫ দিন কমিয়ে দিয়েছে বলে প্রতীয়মান। গবেষণা অনুযায়ী এই ঔষধ ব্যবহার করার ফলে মৃত্যুহার কমিয়েছে বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এই গবেষণার ফলাফল এখন পর্যন্ত স্বীকৃত কোন সায়েন্টিফিক জার্ণালে প্রকাশিত হয় নি। শুধুমাত্র গিলিয়াড কোম্পানি একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গবেষণার ফলাফল জানিয়েছে, তবে একইসাথে তারা এই বিষয়ে আরো গবেষণা করার সুপারিশও করেছে। এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে শুধুমাত্র হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোভিড ১৯ রোগীর চিকিৎসা দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধটির জরুরি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মুলত আমেরিকার কারণেই বিশ্বজুড়ে ম্যালেরিয়ার ঔষধ হাইড্রক্সিক্লোরকুইন নিয়ে অতিমাত্রায় উৎসাহিত পরিলক্ষিত হয়েছিল এবং উৎপাদনের হিড়িক লেগে গিয়েছিল। পরবর্তীতে গবেষণায় কোভিড ১৯ রোগের চিকিৎসায় এটির ক্ষতিকর প্রভাব প্রমাণিত হয়েছে। রেমডেসিভির মুখে খাওয়ার ঔষধ নয়, বরং শিরায় প্রয়োগ করার একটি দামি ঔষধ। প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫/৬ হাজার টাকা, যেটি রোগীর অবস্থাভেদে ১০-১৫টি প্রয়োজন হতে পারে। এ ধরনের একটি ঔষধ উৎপাদন করা গেলেও সেটি বাংলাদেশের মতো একটি দেশে বহুলভাবে প্রয়োগ করা যুক্তিযুক্ত কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যায়। কাজেই শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে নয়, বরং যথাযথ এবং যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করেই এই ঔষধটির বাজারজাত করার অনুমোদন দেয়া উচিত। লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

শপিং করতে গেলে যেভাবে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন!


ঈদ উপলক্ষে আগামী ১০ মে থেকে শপিং মল এবং দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলমান কোভিড ১৯ মহামারীতে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বের হওয়াতেই যখন সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে, সেখানে কেনাকাটা করার জন্য শপিং মল বা মার্কেটে গেলে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে অবশ্যই। উপসর্গ ছাড়া আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ কোভিড ১৯ আক্রান্ত অনেকেই কেনাকাটা করতে আসবেন। তাদের মাধ্যমে কোভিড ১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে খুব সহজেই। আসুন জেনে নেই কিভাবে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। *রিকশা, ট্যাক্সি ইত্যাদি #যানবাহনের মাধ্যমে কারণ আপনি যেটিতে সওয়ার হয়ে যাতায়াত করছেন সেটি কিছুক্ষণ আগে হয়তো কোন কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীকে বহন করেছে। *মানুষের ভিড়ে শপিং মলের এসি, টয়লেট, লিফট, ফুডকোর্ট, এটিএম, টাকা পয়সা লেনদেনের সময় সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। *আপনি ট্রায়ালের জন্য যে পোশাকটি গায়ে তুলেছেন সেটিও হয়তো কোন কোভিড ১৯ রোগী ট্রায়াল দিয়ে থাকতে পারে কিছুক্ষণ আগে। *দরদাম করে কেনাকাটায় অভ্যস্ত বাংলাদেশের মানুষ বিস্তার কথাবার্তা বলে থাকে। দোকানের বদ্ধ পরিবেশে যেটি #আ্যরোসল পদ্ধতিতে সংক্রমণ ছড়াতে পারে বৈকি। *শপিং এবং ভ্যানিটি ব্যাগ থেকেও সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। #সতর্কতা মহামারী চলাকালীন সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে স্বশরীরে কেনাকাটা না করে অনলাইনে শপিং করতে পারেন। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলে সাথে স্যানিটাইজার রাখুন, ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন। বর্ণিত যে কোন কাজ করার সাথে সাথেই স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করুন। মনে রাখবেন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসার বের হয়ে আপনি পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্যকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলছেন। মহামারীর সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি সচেতনতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করুন, নিজে সুস্থ থাকুন অন্যকেও সুস্থ থাকতে সহায়ক ভূমিকা পালন করুন। লেখক: ত্বক, সৌন্দর্য এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হটলাইন: ০১৮৬৭৭১১৭৯৩

একটি স্বপ্নের অপমৃত্যু!


প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে নিজের পেশা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এরমধ্যেই জাকার্তা অবস্থান কালে বন্ধুতে পরিণত হওয়া এক চীনা চিকিৎসক WeChat এর মাধ্যমে তার মাতৃভূমিতে শুরু হওয়া একটি ভাইরাসজনিত নুতন শ্বাসকষ্ট রোগের সংবাদ জানালো। সে তখন তার জন্মস্থান চীনের হুবেই প্রদেশে ফিরে গিয়েছে। বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে তখনও বিষয়টি শিরোনাম হয়নি। ঢাকায় ফিরে আমার নিজের পেশাগত জীবনে ব্যস্ততা শুরু হয়নি বিধায় রোগটি সমন্ধে কৌতূহলী হয়ে জানার চেষ্টা করতে থাকলাম। চীনা বন্ধুর কাছ থেকে রোগটির ভয়াবহতা জেনে অজান্তেই শিউরে উঠেছিলাম। সে জানিয়েছিল হয়তো রোগটি মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না। ততোদিনে বিষয়টি বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্ব পেতে শুরু করেছিল। জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখে চীন সরকার ঘোষণা দিল রোগটি হয়তো মানুষের মাধ্যমে সংক্রমনের ঝুঁকি রয়েছে, যদিও WHO তখনও বলছিল মানুষের মাধ্যমে ছড়ায় না। ইন্টারনেট ঘেটে যতোদুর সম্ভব নুতন এই রোগটি সমন্ধে জানার চেষ্টা করছিলাম আমি। যেহেতু চীনের একাধিক নগরীর সংগে আমাদের বিমান যোগাযোগ রয়েছে তাই মানুষের মাধ্যমে সংক্রমণের খবরে কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। উল্লেখ্য আমি একজন ত্বকের চিকিৎসক হলেও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে মাষ্টার্স করেছি এবং বিশ্বের জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে উৎসাহ বোধকরি। যাই হোক জানুয়ারির ১৫ তারিখেই দেশের আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সামাজিক মাধ্যমে করোনা নিয়ে পোষ্ট দেয়া শুরু করলাম। তারপর বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করছে সেগুলোর সচিত্র পোষ্ট করার চেষ্টা করেছি আমি। বলাবাহুল্য আমাদের বন্দরগুলো তখনও গা ছাড়া ঢিলেঢালা ভাবেই চলছিল। একপর্যায়ে জনমতের চাপে চীনের হুবেই প্রদেশ থেকে প্রত্যাগত বাংলাদেশী দের বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টিনে নেয়া হলো। তারপর বেশ সন্তূষ্ট চিত্তে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আমরা বিদেশ প্রত্যাগতদের কোয়ারিন্টিনে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা ভুলেই বসলাম। ইতিমধ্যেই এশিয়া পাড়ি দিয়ে ইউরোপের ইতালি হয়ে উঠেছে মৃত্যুপুরী। সেখানকার সংবাদ মাধ্যমেও নজর রাখছিলাম, গুগল মামার সাহায্য নিয়ে অনুবাদ করে সেগুলো পড়তাম। একদিন সন্ধ্যায় দেখলাম ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশী ভর্তি উড়োজাহাজ ছাড়ছে, যা শিরোনাম হয়েছে সেদেশের সংবাদ মাধ্যমে। ইতালি থেকে প্রত্যাবর্তনকারীদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিনে নেয়ার গুরুত্ব দিয়ে পোষ্ট করেছিলাম। সামাজিক মাধ্যমের কল্যাণে দেশের মানুষ এবং সংবাদ মাধ্যম তখন সচেতন এবং সোচ্চার হয়ে উঠেছে। ইতালি থেকে প্রবাসী বহনকারী সেই প্রথম উড়োজাহাজটি পরদিন সকালে বিমানবন্দরে অবতরণের পর যাত্রীদের কোয়ারিন্টিনে নেয়া হলো বটে কিন্তু তাদেরকে রাখার স্থানটিতে কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই। তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের মুখে সরকার বাড়িতে কোয়ারিন্টিনে থাকার শর্তে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো। আমরা কোভিড ১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে বড়ো সুযোগটি হেলায় ফেলায় হাতছাড়া করলাম চুড়ান্ত অব্যবস্থাপনার কারণে। তারপর আরো অনেক উড়োজাহাজ অবতরণ করেছে, যাত্রীরা সবাই বাড়িতে কোয়ারিন্টিনের শর্তে ছাড়া পেয়ে ঘুরে ফিরে বেড়িয়েছে, নিমন্ত্রণ খেয়েছে, রোগ ছড়িয়েছে নিজের অজান্তেই। মার্চের ৮ তারিখে সরকারি ভাবে বাংলাদেশে কোভিড ১৯ রোগী সনাক্তের ঘোষণা দেয়া হলো। পরিস্থিতি মোকাবেলায় একপর্যায়ে দুরপাল্লার যানবাহন বন্ধ না করে, জনগণকে নির্দেশনা বা সতর্কবার্তা না দিয়েই লকডাউনের নামে ছুটি ঘোষণা করা হলো। মানুষ ঈদের আমেজে স্রোতের মতো যানবাহনে গাদাগাদি করে বড় শহর ছেড়ে পাড়ি জমালো গ্রামের বাড়িতে। এসব মানুষের মাধ্যমে কোভিড ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের আনাচে কানাচে সেটি এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কফিনে সবশেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অতপর সীমিত পরিসরের নামে কলকারখানা খুলে দেয়া হয়েছে। শপিং মল, দোকানপাট , ধর্মীয় উপাসনালয়ও খুলে দেয়া হয়েছে, যদিও মে মাসের শুরু থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কোভিড রোগীর সংখ্যা। অবকাঠামো, চিকিৎসা সরন্জামের অপ্রতুলতা এবং সর্বোপরি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা দৃশ্যমান হয়েছে ইতিমধ্যেই। এই পরিস্থিতি আমরা কিভাবে মোকাবেলা করবো সেটি এখন অনেকটাই প্রকৃতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। দ্রুত উন্নয়নশীল একটি দেশের অর্থনীতির চাকা হঠাৎ থেমে গিয়েছে। সঠিক এবং সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে না পারলে মহামারীতে মানুষের মৃত্যুর চেয়েও মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে আমাদের সামনে। সময়ে এক ফোড়, অসময়ে দশফোড় এই প্রবাদ বাক্যটি মেনে চলে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেও কোভিড ১৯ মহামারী আমাদের দেশে প্রবেশ করতো অবশ্যই। জনস্বাস্থ্যের নিয়ম অনুসারে যে রোগের নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই, সেই রোগের মহামারি মোকাবেলা করতে চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেয়ে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহন করাটা সবচেয়ে ভালো পন্থা। দক্ষিনপুর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় আমরা কিভাবে সুযোগ হাতছাড়া করে উন্নয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে কতোটা ভূল করে ফেলেছি এবং এখনও করছি। সম্ভবত আমরা হেলায়ফেলায় আত্মহুতি দিয়ে একটি স্বপ্নের মৃত্যু ঘটাতে চলেছি😢! লেখক: চিকিৎসক, ত্বক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ #COVID19 #MRKR

জিন্নাহর বংশোধর

ওয়াদিয়া গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইরান থেকে আসা পার্সি লোভজি নুসারওয়াঞ্জি ওয়াদিয়া ১৭৩৬ সালে বোম্বে ড্রাইডক কোম্পান...