Sunday, November 22, 2020

শীতকালে ত্বকের যত্ন

ত্বক শরীরের একক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজেই সুস্থ ও সুন্দর ত্বক সুস্থ শরীরের জন্য অপরিহার্য একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে শরীরের স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ। এজন্য ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে।

ত্বকে অবস্থিত গ্রন্থির নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় থাকে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়। ফলে ত্বক শুস্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস এবং অ্যালার্জি জনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদেরও এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনে কিছু নিয়ম প্রতিপালন করে শীতে ত্বকের শুষ্কতা থেকে মুক্ত থাকা যেতে পারে।


গোসল

অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুস্ক হয়ে যায়। কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বাথ, সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।

ময়েশ্চারাইজার

একজিমা, সরিয়াসিস,ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যাবহার করা উচিত। ময়েসচারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তার পাশাপাশি  ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভাল। ক্রিম, লোশান, জেল এমনকি সাবান হিসেবেও এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।

পোশাক

টাইট ফিট এবং সিনথেটিক/কৃত্রিম তন্তুর পোশাক ত্বককে আরও শুষ্ক ও রুক্ষ করে এবং অ্যালার্জির কারন হতে পারে। কাজেই আরামদায়ক এবং প্রাকৃতিক তন্তু দ্বারা তৈরি পোশাক পরিধান করুন। পলিয়েস্টার, লিনেন, নাইলন ইত্যাদির পরিবর্তে কটন, সিল্কের তৈরি পোশাক পরিধান করুন।

হিউমিডিফায়ার

কক্ষে জলীয় বাস্প ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যাবহার করতে পারেন। এটির মাধ্যমে রুমের জলীয় বাস্প ৪০-৬০% এ রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকরী ভুমিকা রাখে।

মনে রাখবেন একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন শীতকালে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস এবং পরজীবিজনিত ত্বকের সংক্রামণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, কাজেই শীতে তকের যত্ন নিন। সর্বোপরি খোলামেলা আলোকিত পরিবেশে দুঃশ্চিন্তামুক্ত, পরিস্কার-পরিছন্ন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন।

লেখক:

ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

Sunday, November 8, 2020

শ্বেতি ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক রোগ নয়


শ্বেতি নামে পরিচিত রোগটিকে চিকিৎসা পরিভাষায় ভিটিলোগো (vitiligo) বলা হয়ে থাকে। এটি ত্বকের বিবর্ণজনিত একটি রোগ, যা ছোঁয়াচে কিংবা মারাত্মক নয় তবে সৌন্দর্যহানি ঘটিয়ে থাকে অবশ্যই। সাধারণত যাদের গাঢ় বা শ্যামলা বর্ণের ত্বক তাদেরই বেশি দেখা দেয়। শিশু, বয়স্ক, নারী, পুরুষ সবাই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শরীরের যে কোন স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে, এমন কি চোখের ভ্রুসহ সমস্ত শরীর বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীব্যাপী এ রোগে আক্রান্তের হার  ১-২%, তবে এশিয়ান ও আফ্রিকানদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। ঝুঁকিপূর্ণ রোগ না হলেও সৌন্দর্য হানি এবং সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়ার কারণে আক্রান্তরা মানসিক হীনমন্যতায় ভুগে থাকেন। আক্রান্তদের অনেকে অপচিকিৎসার শিকার হয়ে থাকেন। কেউ কেউ আবার শ্বেতি আর কুষ্ঠ (leprosy) একই রোগ বলে ভুল ধারনা পোষণ করেন। কুষ্ঠ একটি জীবাণুঘটিত সংক্রামক রোগ কিন্তু শ্বেতি তা নয়। 

 

কিভাবে বুঝবেন : এ রোগে ত্বকের এক বা একাধিক স্থানে রং হালকা থেকে দুগ্ধসাদা হয়ে যেতে পারে। রং পরিবর্তন ছাড়া সাধারণ অন্যকোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে রোগের প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থানে হালকা চুলকানি অনুভূত হতে পারে। এটি খুব ধীরগতিতে বিস্তার লাভ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খুব দ্রুত বিস্তার ঘটতে পারে। শরীরের যেকোনো স্থান শ্বেতি আক্রান্ত হতে পারে। সাধারণত মুখ, কনুই, হাঁটু, হাত, পা এবং কোমরে বেশি দেখা যায়।

 

কিভাবে শ্বেতি হয় : ত্বকে মেলানিন (melanin) নামে এক ধরনের পিগমেন্ট/রঞ্জক থাকে, যার কারণে রং গাঢ় বা ফর্সা হয়। যাদের ত্বকে মেলানিন বেশি তারা কালো এবং যাদের কম তারা ফর্সা হয়ে থাকেন।

 

সারা শরীরে একই অনুপাত বা ঘনত্বে মেলানিন থাকে যা, ত্বকের বর্ণ হিসেবে প্রকাশ পায়। মেলানোসাইট নামে একধরনের কোষ মেলানিন উৎপাদন করে থাকে।কোনো কারণে মেলানিন নষ্ট বা তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটলে নির্দিষ্ট স্থানে বিবর্ণ হতে থাকে। শ্বেতি আক্রান্ত স্থানে ত্বকের অন্য স্বাভাবিক স্থানের চেয়ে মেলানিন কম বা থাকে না।

 

কি কারণে হয় : শ্বেতির নিশ্চিত কোনো কারণ অদ্যাবধি জানা যায়নি। তবে প্রধান দুটি কারণ হলো বংশগত (১০-১৫%) এবং শরীরে এক ধরনের স্ব-প্রণোদিত প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়ায় স্থানভেদে মেলানিন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও আরো কিছু কারণে শ্বেতি হতে পারে,

 

*রোগ : থাইরয়েড গ্রন্থির রোগ, ডায়াবেটিস এবং বিশেষ ধরনের রক্ত শূন্যতা।

 

*পুষ্টিজনিত ঘাটতি যা কোনো রোগ অথবা খাদ্যজনিত কারণে হতে পারে।

 

*ত্বকে সংক্রমণ বা আঘাতজনিত

 

*অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও রোদ্রতাপ

 

*কিছু ওষুধ ও রাসায়নিক পদার্থ।

 

প্রতিরোধ : শ্বেতির প্রকৃত কারন না জানার কারণে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় অদ্যাবধি আবিষ্কৃত হয়নি।

 

জটিলতা : সাধারণভাবে এটি কোনো জটিলতা তৈরি করে না। তবে রোদে পুড়িয়ে যাওয়া বা সান বার্ন এবং ত্বকের ক্যান্সারের সামান্য ঝুঁকি রয়েছে।

 

চিকিৎসা : এ রোগের কোন নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নির্ণিত হয়নি। চিকিৎসার মাধ্যমে কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বেতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটি আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। নানা উপায়ে শ্বেতির চিকিৎসা করা হলেও ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। শ্বেতির চিকিৎসা সাধারণত যেভাবে করা যায়, সেগুলো হলো,

 

-খাবার ঔষধ এবং ত্বকে ব্যবহার করার ঔষধের মাধ্যমে;

 -আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি এবং লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে ;

 - শ্বেতির সম্ভাব্য কারণসমূহ নির্ণয় করে সেটির চিকিৎসা। যেমন পুষ্টিজনিত ঘাটতি বা থাইরয়েড রোগের চিকিৎসা।

 -সার্জারির মাধ্যমে মেলানিন উৎপাদন কারী কোষ মেলানোসাইট গ্রাফট বা সম্পূর্ণ স্কিন গ্রাফট।

 

মনে রাখবেন কুষ্ঠ এবং ত্বকের আরো কিছু রোগে ত্বক বিবর্ণ হতে পারে। ত্বকের কোনো স্থান বিবর্ণ বা সাদা হয়ে গেলে তা শ্বেতি বা অন্য কারণে হয়েছে কি না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শ্বেতির লক্ষণ প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা নিলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

কুষ্ঠ রোগের সঙ্গে শ্বেতির কোনো সম্পর্ক নেই এবং এটি কোনো ছোঁয়াচে  বা মারাত্মক রোগ নয়। শ্বেতি রোগে আক্রান্তের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করুন এবং দৈনন্দিন স্বাভাবিক জীবন-যাপনে উৎসাহিত করুন।

 

লেখক

ডা. এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

জিন্নাহর বংশোধর

ওয়াদিয়া গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইরান থেকে আসা পার্সি লোভজি নুসারওয়াঞ্জি ওয়াদিয়া ১৭৩৬ সালে বোম্বে ড্রাইডক কোম্পান...