Tuesday, October 17, 2023

হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ: আতঙ্ক নয় সচেতনতা দরকার

বাংলাদেশের সর্বত্র হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (HFMD) ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন‌। ভাইরাসজনিত এই রোগটি ইতোপূর্বে  আমাদের দেশে বেশি পরিলক্ষিত হতো না। মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে যে কোন বয়সীরা এই রোগ আক্রান্ত হতে পারেন। এটি খুবই ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগ। তবে এটি মারাত্মক জটিল ধরনের কোন রোগ নয়, জীবনহানির ঝুঁকিও নেই।

কক্সাকি নামক একধরনের ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী। 

✓কিভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির ফোস্কা থেকে নির্গত রস, হাঁচি কাশি, ব্যবহত পোশাক এবং স্পর্শ করা যে কোন জিনিস, এমনকি মলের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। 

জনসমাগম যে সব জায়গায় বেশি সেখান থেকেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

✓লক্ষণ

হালকা জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, শরীরে নানা জায়গায় পানিভর্তি ফুস্কুড়ি, মুখের ভেতরে ক্ষত, মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা নিঃসরণ, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। হাত, পা এবং জিহ্বাতে সাধারণত ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও হতে পারে।

ত্বকের ফোস্কা বা ফুস্কুড়ি অনেকটা জলবসন্তের মতো। 'ফুট অ্যান্ড মাউথ' নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যার সঙ্গে এটির কোন সম্পর্ক নেই।

✓চিকিৎসা

ভাইরাসজনিত এই রোগের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোন ঔষধের ভূমিকা নেই। ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারণত আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। 

অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই এই রোগের চিকিৎসায়।

লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। পরিচর্যা, পর্যাপ্ত পানীয় দিতে হবে তবে ফলের জুস মুখ ও গলার ব্যাথা বৃদ্ধি করে বিধায়, বিরত থাকাই ভালো।  নরম ও কম মশলাযুক্ত খাবার দেয়া উচিত।


✓প্রতিরোধ

শিশুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এবং হাঁচিকাশি থেকে দূরে থাকতে হবে।

জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত শিশুকে স্কুলে পাঠানো যাবে না। আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই।

Saturday, October 14, 2023

#ডেঙ্গি_টিকা


#ডেঙ্গি প্রতিরোধে জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা 'কিউডেঙ্গা'র অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য গত ২ অক্টোবর এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া আগেই এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা।

দুই ডোজের এই টিকা শুধুমাত্র ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর আগে সানোফি-এ্যাভেন্টিজের তৈরি ডেঙ্গি টিকা 'ডেঙ্গাভেস্কিয়া'র অনুমোদন দিয়েছে কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবির সহায়তায় 'টিভি০০৫' নামে একটি #ডেঙ্গি টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই পরীক্ষার প্রথম দুই ধাপে তারা সফলতা পেয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।

বাংলাদেশে এ বছর মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য সর্বশেষ অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ১৫৮ জন।

ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও কিশোর রয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা চরিত্র পরিবর্তন করায় মশক নিয়ন্ত্রণ ও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

ভাইরাসজনিত অনেক রোগ প্রতিরোধে টিকার ব্যবহার ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই 'কিউডেঙ্গা' টিকা কার্যকরী বলে জানানো হয়েছে।


যেহেতু ডেঙ্গি আক্রান্তদের একটি বড় অংশ শিশু ও কিশোর, তাই এই টিকা ব্যবহার করে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ডেঙ্গি থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব এই টিকা আমদানি ও বিতরণের ব্যবস্থা করা জরুরি। পাশাপাশি বাংলাদেশ পরীক্ষা চলা 'টিভি০০৫' টিকা দেশেই তৈরির বিষয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করা দরকার।

https://bangla.thedailystar.net/health/news-523421

#dengue #denguefever #DenguePrevention

Thursday, October 5, 2023

সুখ


গবেষকরা ‘সুখ’-এর তত্ত্বতালাশ করে আসছেন মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। প্রায় আড়াইহাজার বছর আগে হিমালয়ের এক রাজ্যের রাজপুত্র রাজ্যত্যাগ করেছিল সুখের সন্ধানে। ১৭৮৫ সালের গ্রাউন্ডওয়ার্ক অব দ্য মেটাফিজ়িক্স অব মরালস-এ দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট লিখেছেন, “হ্যাপিনেস ইজ় নট অ্যান আইডিয়াল অব রিজ়ন, বাট অব ইমাজিনেশন।” ২৫০ বছর আগে টমাস জেফারসনের সময় আমেরিকান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় ‘পারসুট অব হ্যাপিনেস’। আধুনিক জমানায় 'সুখ’ মাপার ধারণাটাও অবশ্য এসেছে হিমালয়ের ছোট্ট দেশ ভুটান থেকেই। 

সুখ আর আনন্দ এক বিষয় নয় এই উপলব্ধিটি বোঝার সক্ষমতা নেই বেশিরভাগ মানুষের। অর্থবিত্তে সাময়িক আনন্দ কেনা যায় বটে তবে সুখ অধরাই থেকে যায়। অর্থের সঙ্গে সুখের উত্তরণ ঘটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্ষেত্রে। আয়ের সঙ্গে ‘সুখ’ বাড়ে বটে, কিন্তু আয় যখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করে, তখন আয় বাড়লেও #সুখ আর বাড়ে না। গল্পের কপর্দকশূন্য চালচুলোহীন ভিখারির সুখের শেষ নেই। কিন্তু অর্থবিত্ত আর ক্ষমতা থাকলেও রাজামশাইয়ের অসুখ সারে না। তাই অভাবকে নয়, অভাবের বোধকে অতিক্রম করতে পারাই সুখী হওয়ার মন্ত্র।

মহাভারতের যুধিষ্ঠিরকে যক্ষ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ”সুখী কে? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, “যাহার ঋণ নাই, আর নিজের ঘরে থাকিয়া দিনের শেষে যে চারিটি শাক-ভাত খাইতে পায়, সেই সুখী।"

তুরস্কের বিখ্যাত কবি নাজিম হিকমত রান বন্ধু চিত্রকর আবেদিন দিনোকে অনুরোধ করেছিলেন সুখের একটি ছবি আঁকার জন্য। আবেদিন দিনো বন্ধুর অনুরোধে এই ছবিটি এঁকে দেন।

সুখের সন্ধানে মানুষের নিরন্তর সাধনা চলতেই থাকবে সেটি নিশ্চিত।

#MRKR

Sunday, October 1, 2023

কফির ইতিবৃত্ত


প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কফি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কফি (Coffee) পৃথিবীতে সর্বাধিক বিক্রিত প্রাকৃতিক পানীয়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান হয় পৃথিবীতে। কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ, যা পোড়ানোর পর গুঁড়ো করে কফি তৈরি করা হয়। কফির বীজ বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে উৎপাদিত হয়। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া, কলাম্বিয়া, ভারত কফির প্রধান উৎপাদনকারী দেশ এখন।

কফির উৎপত্তি নিয়ে একাধিক কল্পকাহিনী প্রচলিত রয়েছে যার কোনো প্রমাণ নেই। তবে কফি আবিষ্কারের সময়কাল নবম শতাব্দী বলে মেনে নেয়া হয়েছে। ১৫ শতকে ইথিওপিয়া থেকে, লোহিত সাগরের ওপারে বাণিজ্যের মাধ্যমে ইয়েমেনে কফি আনা হতো। সুফিরা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে জাগ্রত থাকতে কফি পান করতেন। 

তুরস্কের কনস্টান্টিনোপল, বর্তমান ইস্তানবুলে ১৪৭৫ সালে পৃথিবীর প্রথম কফি হাউজ চালু হয়। ষোড়শ শতকের মধ্যেই সিরিয়া, তুরস্ক, পারস্য, মিশরে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে কফি হাউজ। ১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্তাম্বুলে ছয় শতেরও বেশি কফি হাউজ ছিল। আরবা কয়েক শতাব্দী কফির ঘ্রাণে মুগ্ধ হওয়ার পর ইউরোপে কফি যেতে শুরু করে।

মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক ও বলকান অঞ্চল হয়ে কফি ইতালিতে যাত্রা করে। এরপর দ্রুতই ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ডাচদের মাধ্যমে পশ্চিমে আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকায় কফির প্রচলন ঘটে। ঔপনিবেশিক ডাচরাই ইন্দোনেশিয়ায় কফি উৎপাদন শুরু করে। ১৬৭০ সালে একজন ভারতীয় কফির বীজ নিয়ে আসেন। উপমহাদেশে কফির উৎপাদন শুরু হয় তখন থেকেই।

#InternationalCoffeeDay #MRKR

Wednesday, September 20, 2023

বিষাক্ত তেলাপিয়া

সংবাদমাধ্যমে বিগত কয়েকদিনে আমেরিকায় তেলাপিয়া 🐟 মাছ খাওয়ার কারনে এক নারীর হাত-পা কেটে ফেলার খবর প্রকাশ হয়েছে। হেডলাইন দেখে সাধারণ মানুষ তেলাপিয়াকে বিষাক্ত মাছ মনে করতে পারে। এই ভুল বার্তা নিম্নবিত্ত মানুষেরা দৈনন্দিন প্রোটিন গ্রহণে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। আসলে যে কোন মাছ বা সি-ফুড থেকেই এই ধরনের মারাত্মক খাদ্য বিষক্রিয়াজনিত জটিলতা হতে পারে।


ভিব্রিও ভালনিফিকস (Vibrio vulnificus) নামে একটি ব্যাকটেরিয়া পানিতে থাকে, যেটি মানুষের দেহে সংক্রমণের কারণে জীবনহানি ঘটতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কমবেশি ৮০ হাজার মানুষ এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে। ঠান্ডা পানিতে এটি বংশবিস্তার করতে পারে না। যে পানিতে ভিব্রিও ভালনিফিকস থাকে সেখানে থাকা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রানীর শরীরেও এটি থাকে। জলজ প্রানীর জন্য ক্ষতিকর বা জীবনহানির কারণ না হলেও এটি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর।

কিভাবে ছড়ায়?

©কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ বা কম রান্না করা মাছ, সি-ফুড ইত্যাদি খাওয়ার মাধ্যমে। সাধারণত শেলফিস এবং ওয়েষ্টার থেকেই সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে।

©এছাড়া ত্বকের ক্ষত দিয়ে পানির মাধ্যমে সরাসরি শরীরে প্রবেশ করতে পারে এই ব্যাকটেরিয়া।

লক্ষণ কি

খাওয়ার পর বমি, পাতলা পায়খানা, তীব্র পেটব্যথা ও জ্বর হয়ে থাকে। খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ এগুলো। ত্বকে সংক্রমিত হলে আক্রান্ত স্থান লালচে হয়ে ব্যাথা, গরম অনুভুতি, ফুলে কালচে বর্ণ হয়ে যেতে পারে। ক্ষতস্থান দিয়ে জ্বলীয় নিঃসরণ হতে পারে।

সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে পড়লে জীবনহানির শংকা সৃষ্টি হয়। সাধারণত যাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা লিভারের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি। রক্ত নালীতে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে ফোস্কা ও গ্যাংরিন হতে পারে। সেপটিক শকে মৃত্যু ঘটে থাকে।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

©কাঁচা বা অর্ধসিদ্ধ মাছ বা সি-ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

©পানিতে নামার পর ত্বকের কোন স্থানে লালচে, ফুলে যাওয়া, ব্যাথা ইত্যাদি অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

©ত্বকে ক্ষত থাকলে পুকুর, নদী বা সমুদ্রে নামা থেকে বিরত থাকুন।

©মাছ বা সি-ফুড খাওয়ার পর উল্লেখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

Tuesday, August 8, 2023

হাঁটাহাটি করি, উৎফুল্ল থাকি!


 সুস্থতার জন্য হাঁটাহাটির প্রয়োজনীয়তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, হাড়ের ক্ষয়রোধ ইত্যাদি নানা দৈহিক সমস্যায় হাঁটাহাটি অত্যাবশ্যক বলে চিকিৎসা সেবায় গ্রহণ করে নেয়া হয়েছে। কিন্তু হাঁটাহাঁটির সঙ্গে মানসিক চাপ কমানো বা বিষন্নতা থেকে মুক্ত থাকার বিষয়টি তেমনভাবে আলোচিত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে মাত্র ১০ মিনিট হাঁটলেই মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা অনেকাংশে কমে যায়।

হাঁটাহাঁটির সময় মানুষ সাধারণত পারিপার্শ্বিক বিষয় থেকে বিমুক্ত হয়ে নিজের মনের সঙ্গে একান্ত সময় কাটাতে পারে। মস্তিস্কে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। যে কারণে এন্ডোরফিন নামে #সুখী হরমোন বেশি নিঃসরণ হয়ে থাকে। এড্রেনালিন নামক আরেকটি হরমোনের নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়, যেটি মনকে চাঙ্গা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। ঘুমের সঙ্গে যে মানসিক অবস্থার সম্পর্ক রয়েছে, সেটি সবাই অবগত। হাঁটার সময় ঘুমের সঙ্গে সম্পর্কিত হরমোন নিঃসরণও বৃদ্ধি পায়। মাংসপেশীর কাঠিন্য কমে যায়। ফলে ভালো ঘুম হয়ে থাকে। তবে সেজন্য শোয়ার আগে হাঁটাহাটি করতে হবে।

ঘরের ভিতর হাঁটাহাটি বা ট্রেডমিল করে মানসিক চাপ বা বিষন্নতা কমাতে তেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে না। মানসিক চাপ কমাতে বা বিষন্নতা দূর করতে বাইরে হাঁটার বিকল্প নেই।

Saturday, August 5, 2023

জন্মদিন


 মানুষের জীবনে বছরের একটি বিশেষ দিন হলো জন্মদিন। কারন এই দিনটি পঞ্জিকা বর্ষের সেই দিন যেদিন তার পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল। মানুষ এই দিনটি উদযাপন করার জন্য নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অনুযায়ী রীতিনীতি তৈরি করেছে।

মানুষের জন্মদিন পালন শুরুর সঠিক ইতিহাস জানা নেই। তবে মিসরে ফেরাউনদের বার্ষিক উদযাপনের রীতি ছিল। সাধারণ মানুষের জন্মদিন পালনের রীতি চালু হয় প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে। খৃষ্টধর্ম প্রবর্তনের পর এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে।

জন্মদিন উদযাপনের একটি শক্তিশালী মানসিক প্রভাব রয়েছে।  দিনটি মূল্যবান এবং প্রিয় বোধ করার একটি উপলক্ষ কারণ বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা এই দিনে শুভেচ্ছা এবং উপহার দিয়ে থাকে। দিনটি প্রিয়জনের সাথে সময় কাটানো এবং শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করার একটি সুযোগ তৈরি করে। শুধুমাত্র উদযাপন নয়, বরং

এই জীবনের প্রতিটি মুহুর্তের কৃতজ্ঞতা এবং প্রশংসার একটি উপলক্ষ হলো জন্মদিন।

যে কোন ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতে জন্মদিন মানব জীবনের একটি বিশেষ এবং অনন্য মুহূর্ত।


 

Saturday, July 8, 2023

দেশের স্বাস্থ্য সেবা রক্ষা করতে দৃষ্টি আকর্ষন

 স


রকারি দলের মহাসচিব, ক্ষমতাধর মন্ত্রী মহোদয় মধ্য রাতে বুকে ব্যাথা নিয়ে #বিএসএমএমইউ জরুরি বিভাগে হাজির হলেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক পাঁজরের হাড়ের উপর শক্ত চাপ দিয়ে হৃদযন্ত্র সচল রেখেছেন। সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষা করলে তাঁর মৃত্যু ছিল অবধারিত। পরবর্তীতে তাঁকে চিকিৎসা দিতে প্রতিবেশী দেশের বিশ্বখ্যাত হার্ট সার্জন এসেছিলেন। অবস্থার উন্নতি হলে সেই ক্ষমতাধর রোগী উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে উড়ে যান।

বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক নিউইয়র্কে গেলেন বৃহদান্ত্রের সার্জারি করতে। অপারেশন পরবর্তী জটিলতায় তাঁর পরিপাক নালী ফুটো হয়ে গিয়েছিল। তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নামী মানুষ হাসপাতাল ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা করে বিপুল অর্থ প্রাপ্তির সম্ভবনা ছিল।

বেসরকারি হাসপাতালের নামী বিশেষজ্ঞ নিজের একটি রোগের রোবটিক সার্জারির জন্য সিঙ্গাপুরের নামীদামী হাসপাতালে গেলেন। অথচ তার নিজের হাসপাতালেই রোবট ছাড়া এই চিকিৎসা অহরহ চলে। বড় রক্তনালী কেটে যাওয়ার কারণে অপারেশন টেবিলেই তার মৃত্যু ঘটে। যে সার্জন রোবট দিয়ে অপারেশন করছিলেন তিনি ও তাঁর দল এই বিষয়ে দক্ষ ছিলেন। তারপরও এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয় নাই। কোন মামলা হয়নি বা পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। তবে হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি মতামত দেন যে 'জটিলতা বা মৃত্যু চিকিৎসার অংশ। তাঁরা এই রোগীর চিকিৎসায় কোন গাফিলতি করেননি, নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।'

ঘটনা তিনটি স্মরণ করলাম দেশের চিকিৎসাসেবায় বিরাজমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি নিয়ে দুয়েকটি কথা বলাই উদ্দেশ্য। কোন চিকিৎসক স্বেচ্ছায় রোগীর চিকিৎসায় জটিলতা সৃষ্টি করেন না। কোন কোন ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলা বা গাফিলতি হতে পারে। সেজন্য বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে সভ্য দেশগুলোতে। রোগী বা স্বজন অভিযোগ তুললেই চিকিৎসককে দায়ি করা যৌক্তিক হতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে পুলিশ, মামলা বা আদালত সমাধান দিতে পারে না। কারণ তারা এই বিষয়ে সম্যক জ্ঞান রাখেন না। তবে বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটির রিপোর্টে চিকিৎসককে দায়ি করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী আদালত তার শাস্তির রায় দিতে পারেন।

শুধুমাত্র রোগী বা স্বজনের অভিযোগের ভিত্তিতে কোন চিকিৎসক বা হাসপাতালের মিডিয়া ট্রায়াল এবং পুলিশি হয়রানি এদেশের চিকিৎসক ও রোগী উভয়ের আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছে ইতিমধ্যেই। জরুরি চিকিৎসার জন্য অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে রোগীর জীবন বাঁচাতে হয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে জরুরি চিকিৎসাসেবায় দায়িত্বরত চিকিৎসক রোগীর জীবন বাঁচাতে কোন ঝুঁকি নেয়ার উদ্যম হারিয়ে ফেলবেন, উপযুক্ত চিকিৎসা ছাড়াই রোগীর মৃত্যুর ঘটবে তখন। আবার দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে সাধারণ চিকিৎসার জন্যও দেশের মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাবে আরো বেশি বেশি। রোগীর নিজের অর্থের অপচয় এবং দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার খরচ হবে এজন্য।

এধরনের ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয়ের দ্রুত হস্তক্ষেপ করার বিকল্প নেই। চিকিৎসাসেবা প্রদানে সকল অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব তাদের। তদন্ত কমিটি গঠন করে চিকিৎসায় অবহেলা বা গাফিলতি সহ চিকিৎসা সেবায় বিরাজমান নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য দায়ী সকলের শাস্তি নিশ্চিত করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর/মন্ত্রণালয়কেই।দেশের সংবাদমাধ্যম, পুলিশ ও আদালত এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ উঠলেই সংবাদ প্রচার/গ্রেফতার করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজের সকল স্তরের দায়িত্বশীল ভূমিকা বিরাজমান এই সংকট থেকে উত্তরণে সহায়তা করবে।

Sunday, June 4, 2023

প্লাষ্টিক দূষণ ও জনস্বাস্থ্য


 প্রতিবছর ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এই বছর এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় 'প্লাষ্টিক দূষণ দুর করো'। 

প্লাস্টিক কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি পলিমার। এটি জীবাশ্ম জ্বালানি বা প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি করা হয়। নমনীয় ক্ষয়রোধী, দীর্ঘস্থায়ী ও দামে সাশ্রয়ী হওয়ার কারণে প্লাষ্টিকের তৈরি পণ্য মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে সাগরের তলদেশ থেকে মাউন্ট এভারেস্ট পৃথিবীর সর্বত্র এমনকি মেরু অঞ্চলেও প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মাটি, পানি, বায়ুমণ্ডল, বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এই প্লাষ্টিক দূষণ।

বর্তমান পৃথিবীর মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্লাষ্টিক ছাড়া কল্পনাতীত। প্রায় সকল ধরনের মোড়ক ও বোতল প্লাষ্টিকের তৈরি। ব্যবহত প্লাষ্টিকের কিছু অংশ রিসাইকেল করা হলেও বেশিরভাগই বর্জ্য হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৪৫ কোটি টন প্লাষ্টিক বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে। প্লাষ্টিক বর্জ্য ৪০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে বিরাজ করে জীব ও প্রকৃতির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নত দেশে সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকায় ব্যবহত প্লাষ্টিক পরিবেশে কম ছড়িয়ে পড়ে। তবে চিন সহ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের ৫১% প্লাষ্টিক দূষণকারী। প্লাষ্টিক দূষণকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে।

প্লাস্টিক বর্জ্য (বিসফেনল-এ, ফথেলেটস, বিসফেনোন, অর্গানোটিনস, পার ও পলি ফ্লোরোঅ্যালকাইল এবং ব্রোমিনেটেড ফেইম রিটারডেন্টস ইত্যাদি) মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশে নিঃসরণ করে।

ন্যানো এবং মাইক্রো কণা হিসেবে এসব ক্ষতিকর পদার্থ খাদ্য চক্র ও পানির মাধ্যমে প্রাণীকুলের দেহে প্রবেশ করছে। মাইক্রো ও ন্যানো প্লাষ্টিক কণায় থাকা এসব পদার্থ যে কোন জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার বিরুপ পরিবর্তন ঘটাতে পারে। 

প্লাষ্টিক বর্জ্য মাইক্রো ও ন্যানো কণায় থাকা ক্ষতিকর পদার্থ মানুবদেহে বিরাজমান হরমোনজনিত পরিবেশ পরিবর্তন করে শুক্রানু ও ডিম্বানু তৈরি ব্যাহত করতে পারে। স্নায়ু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে মস্তিস্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের নানা রোগের কারণ হতে পারে। কোষের জীনগত পরিবর্তন করে ক্যান্সার সহ আরো নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও প্লাষ্টিক পণ্যের সরাসরি সংস্পর্শে ত্বকের রোগ হতে পারে।

প্লাষ্টিকের তৈরি বিভিন্ন দ্রব্য ছাড়া আধুনিক জীবন অচল। প্লাষ্টিক পণ্য নিষিদ্ধ করে দূষন নিয়ন্ত্রণ করার পদক্ষেপ সেজন্যই যৌক্তিক নয়। বহুল ব্যবহৃত প্লাষ্টিকে তৈরি পলিথিন ব্যাগ দূষণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। পলিথিনের পরিবর্তে কাগজ, পাট বা প্রাকৃতিক তন্তের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার উৎসাহিত করতে হবে, প্রয়োজনে পলিথিনের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা যেতে পারে। তবে পলিথিন ও অন্যান্য প্লাষ্টিক দ্রব্য সহ সকল ধরনের বর্জ্যের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বিকল্প নেই। যত্রতত্র ময়লা বা বর্জ্য না ফেলার জন্য জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। আধুনিক বিশ্বে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে প্লাষ্টিক দূষণ। আন্তর্জাতিক ভাবে ইতিমধ্যেই গৃহীত পদক্ষেপের সঙ্গে সমন্বয় করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে প্লাষ্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত।

Monday, March 6, 2023

ছোঁয়াচে রোগ জলবসন্ত


শীতের শেষে বসন্তের আগমনে বাংলাদেশে জল ও গুটি, দুটি বসন্ত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যেত একসময়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে জীবনহানিকর মারাত্মক গুটি বসন্ত চার দশক আগে পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়ে গিয়েছে। তবে জলবসন্ত বা চিকেনপক্সের প্রাদুর্ভাব এখনো রয়েছে। বসন্ত ঋতু ছাড়া অন্য সময়েও এই রোগটি দেখা গেলেও তুলনামূলক আক্রান্তের সংখ্যা হিসেবে নগন্য। জলবসন্ত জীবনহানিকর মারাত্মক কোন রোগ নয়। শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব বয়সীদের এই রোগ হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। সাধারণত একবার আক্রান্ত হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। পুনঃ সংক্রমণের কারণে অনেকসময় হারপিজ জোষ্টার নামে আরেকটি রোগ হয়ে থাকে।

◆কি কারণে হয়

জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই ছোঁয়াচে রোগ, যা ভেরিসেলা জোষ্টার নামে একটি ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে হয়ে থাকে। 

◆কিভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি, ত্বকের সংস্পর্শ, ব্যবহত পোশাকের মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়িয়ে থাকে। আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকে ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২ দিন আগে থেকে শুকিয়ে যাওয়া ফুস্কড়ির খোসা থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশি এবং ফুস্কড়ির খোসা বাতাসে বাহিত হয়েও ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগেই এটি ছড়াতে শুরু করে।

◆লক্ষণ কি

ভাইরাস শরীরে প্রবেশের ১০-১২ দিনের মধ্যেই লক্ষণ প্রকাশ হয়ে থাকে। ত্বকে প্রথমে ঘামাচির মতো গুটি উঠতে থাকে যা ফুস্কড়িতে পরিণত হয়। ফুস্কড়ি দেখা দেয়ার ২/৩ আগে থেকেই শরীর ব্যথা অনুভূত হয়, জ্বর দেখা দেয়, পেট ব্যথা হতে পারে। লালচে ফুস্কড়িতে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া অনুভূতি হয়। ফুস্কড়িতে পানি জমে যা পরবর্তীতে শুকিয়ে কালো বর্ণের খোসায় পরিণত হয়।কাশি এবং পাতলা পায়খানা হতে পারে। সাধারণত দুই সপ্তাহ থেকে একমাস পর্যন্ত এই রোগের স্থায়িত্ব হয়ে থাকে। 

◆জটিলতা

আক্রান্ত শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসনালী ও পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে জীবনহানির কারণ হতে পারে। ত্বকে জীবাণু সংক্রমণ হয়ে গর্তের সৃষ্টি করতে পারে।

◆প্রতিরোধ

আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা করে রাখতে হবে। যে কোন বয়সীরা জল বসন্তের টিকা নিতে পারেন। একবার আক্রান্ত হলে সাধারণত পুনঃ সংক্রমণ হয় না।

◆চিকিৎসা

ভাইরাস জনিত রোগ বিধায় এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। সাবধানতা অবলম্বন ও পরামর্শ মেনে চললে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। তবে অনেক সময় লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ দেয়া হয়। যেমন জ্বর বা চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য। আবার রোগের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে কখনো কখনো ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া নাশক ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে।

মনে রাখবেন জলবসন্ত বা চিকেনপক্স একটি খুবই সাধারণ তবে ছোঁয়াচে একটি রোগ। সাবধানতা অবলম্বন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে কোন রকম জটিলতা ছাড়াই এটি থেকে সুস্থতা লাভ করা যায়।

Sunday, February 19, 2023

উপশমকারী চিকিৎসা



আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু বেঁচে থাকা ৩৯ তম প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ২০১৫ সালে লিভারের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তারপর থেকে ৯৮ বছর বয়সী নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মানুষটি বৃদ্ধ বয়সে নানা শারীরিক জটিলতায় নিয়ে হাসপাতালে আসা যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। গতকাল তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাড়িতে থেকেই উপশমকারী চিকিৎসা গ্রহণ করবেন।

হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ারের (Hospice palliative care) সঠিক বাংলা করা কষ্টকর। তবে এই পদ্ধতিতে কোন রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমে আর রোগ নিরাময়ের উপায় না থাকলে তখন সেই রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে রোগের যন্ত্রনা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়া থাকে। বাড়ি বা চিকিৎসা কেন্দ্রে এই ধরনের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। পারিবারিক পরিবেশে উপশমকারী চিকিৎসায় দক্ষ চিকিৎসক ও নার্সের তত্ত্বাবধানে এই পদ্ধতিতে রোগীর মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি পরিবারের উপর চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝাও লাঘব হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এধরনের চিকিৎসায় হাসপাতালে নিবিড় চিকিৎসা নেয়া রোগীর চেয়েও বেশিদিন বেঁচে থাকেন। এধরনের চিকিৎসায় রোগ থেকে মুক্তি লাভের জন্য নয় বরং ব্যাথা কমানো, ঘুম বা রোগীর প্রশান্তির জন্য দরকারি ঔষধ ও সেবা দেয়া হয়ে থাকে। বয়সের ভারে ন্যুজ একজন মানুষের শেষ পর্যায়ের ক্যান্সার চিকিৎসা দিয়ে নিরাময় হয় না কখনো। কাজেই চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে যে সব রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যু মোটামুটি নিশ্চিত তাদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনে আইসিইউতে অচেতন জীবনের চেয়ে বাড়িতে পরিবার পরিজন বেষ্টিত অবস্থায় মৃত্যু অনেক বেশি প্রশান্তিকর।

আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এখনো প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা দেয়ার পদ্ধতি গড়ে উঠেনি। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও আর্থিক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও অনেক পরিবার চিকিৎসার নামে আইসিইউতে এধরনের রোগীর চিকিৎসা করাতে নিঃস হয়ে পড়ার অগুনিত ঘটনা ঘটছে। বিত্তবানদের ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধা না হলেও পরিবারের সদস্যরা শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে ছোটাছুটি করতে গিয়ে চরম মানসিক চাপ ও কষ্টে ভুগে থাকেন। আক্রান্ত রোগীও জীবনের শেষ মুহূর্তে পরিবার পরিজন বেষ্টিত হয়ে প্রশান্তি সহকারে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সুযোগটি থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে প্যালিয়েটিভ কেয়ার বা উপশমকারী চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

Friday, February 10, 2023

অকালে চুল পাকা


অল্পবয়সে অকালে চুল পেকে গেলে মনঃকষ্টে ভোগেন অনেকে। চুল পেকে যাওয়া মানুষের জীবনচক্রের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। জাতি-গোষ্ঠির ভিন্নতায় বিভিন্ন বয়সে চুল পাকা শুরু হয়। যেমন ককেশীয়দের ক্ষেত্রে ২০-২৫ বছর বয়সেই চুল পাকতে শুরু করে। আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর এটি শুরু হয়। এই বয়সের আগে চুল পাকলে তাকে অকালপক্ব চুল (premature grey hair) বলা হয়। 

ত্বকের মেলানোসাইট নামক কোষ থেকে মেলানিন নামে রঞ্জকের ঘনত্বের উপর ত্বকের রং নির্ধারিত হয়ে থাকে। মেলানিনের ঘনত্ব বেশি হলে কালো এবং কম হলে সেই অনুযায়ী গায়ের রঙ অপেক্ষাকৃত ফর্সা হয়ে থাকে। চুল যেখান থেকে গজিয়ে থাকে ত্বকের সেই গোড়ার জায়গার মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতার উপর চুলের রঙ নির্ধারিত হয়ে থাকে। কোন কারণে মেলানিন উৎপাদন ক্ষমতা কমে বা নষ্ট হয়ে গেলে চুল পাকতে শুরু করে। সাধারণত যেসব কারণে চুল পাকে, সেগুলো হলো,


◆বংশগত

চুল পাকার সঙ্গে জেনেটিক বা বংশগত সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্যই কারো কারো ক্ষেত্রে চুল অন্যদের তুলনায় আগে পাকা শুরু করে।

◆রোগ জনিত

থাইরয়েডের সমস্যা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জনিত রোগ, শ্বেতি, আ্যলার্জি, পরিপাকতন্ত্রের রোগ, রক্ত শুন্যতা, প্রোজেরিয়া ও প্যানজেরিয়া ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হলে কম বয়সে চুল পাকতে শুরু করে।

◆খাবার উপাদানের ঘাটতি জনিত

শরীরে ভিটামিন বি১২, বি ৬, বায়োটিন, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন ই, আয়রন ও কপারের ঘাটতির কারণে অকালে চুল পাকতে পারে।

◆ ঔষধ

কিছু ঔষধ যেমন ক্যান্সার চিকিৎসায় কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা ঔষধ, ম্যালেরিয়ার ঔষধ ইত্যাদির কারণে সাময়িকভাবে চুল পেকে যায়।

◆ দুশ্চিন্তা

অতিরিক্ত চিন্তা চুলের বৃদ্ধি ও গঠন প্রক্রিয়ার উপর প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। এ ছাড়া যাঁরা অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধুমপান অকালে চুল পাকার কারণ হতে পারে।


●সমাধান

কোন রোগের কারণে চুল পাকতে শুরু করলে সেই রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পাকা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। বংশজনিত কারণে চুল পাকার প্রক্রিয়া প্রতিরোধ করা যায় না। খাবার উপাদানের ঘাটতি পুরণের জন্য সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। ফল ও শাক-সবজি খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম এবং মদ্যপান ও ধুমপান নিয়ন্ত্রণ বা পরিত্যাগ করতে হবে।

●চিকিৎসা

চুল পড়ে যাওয়ার কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। সরাসরি চুলের গোড়ায় ষ্টেম সেল, গ্রোথ ফ্যাক্টর বা পিআরপি চিকিৎসা চুল পাকা রোধ করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে অনেকসময়‌।

মনে রাখবেন চুল পাকা মারাত্মক জীবনহানিকর কোন রোগ নয়। মূলত সৌন্দর্য বিচারে বেশিরভাগ মানুষ মন খারাপ করে থাকেন। চিকিৎসার মাধ্যমে অকালে চুল পেকে যাওয়া থেকে পরিত্রাণ না পেলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে দৈনন্দিন জীবনযাপন করার চেষ্টা করুন। দরকার হলে পছন্দ মতো চুলে রঙ ব্যবহার করতে পারেন।

Wednesday, January 18, 2023

হাত দিয়ে খাবার উপকারিতা


পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে কাঁটাচামচ এবং পুর্ব এশিয়ায় চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করার রীতি রয়েছে। বাদবাকি বিশ্বে হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করা সংস্কৃতির অংশ। পাশ্চাত্যের রীতি অনুসরণ করে এখন অনেকে নিজেকে আধুনিক ও সভ্য প্রমানের চেষ্টায় আবহমান কালের সংস্কৃতি পরিত্যাগ করে কাঁটাচামচ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেন। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণকে অসভ্যতা এবং অপরিস্কার জীবনযাপনের অংশ বলে নাক সিঁটকাতেও দেখা যায় কাউকে। 

অনেকেই হয়তো জানেন না হাত পরিস্কার করে খাবার গ্রহণ করা বরং স্বাস্থ্যকর একটি অভ্যেস। হাত দিয়ে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে গবেষণায় প্রমাণিত কিছু উপকার জেনে নেই।


©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। খাবার মাখানোর সময় আঙ্গুলের ত্বকে অবস্থিত স্নায়ু খাবার ধরন মস্তিষ্কে জানিয়ে দেয় এবং সেই অনুযায়ী পরিপাকতন্ত্রে হজমের জন্য প্রয়োজনীয় পরিপাক রস নিঃসরণের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। কাঁটাচামচ বা চপষ্টিক দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে হজম সহায়ক এই ধাপটি বাদ থেকে যায়। 

হাতের ত্বকে হজমসহায়ক একধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে, যা হাত পরিস্কার করার পরেও থেকে যায়। যারা বদহজমে (Irritable bowel syndrome) ভুগে থাকেন তাদের জন্য হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ হজমে সহায়তা করে থাকে।

© গবেষণায় দেখা গিয়েছে দ্রুত খাবার গ্রহণ টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কাঁটাচামচ বা ষ্টিক দিয়ে হাতের তুলনায় তাড়াতাড়ি খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। তাই হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ ডায়াবেটিস-২ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

©হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ স্নায়ুর মাধ্যমে পরিমিত খাবার গ্রহণ করার জন্য মস্তিস্কের মাধ্যমে পাকস্থলীকে নির্দেশনা দিয়ে থাকে, যা স্থুলতা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে থাকে।

সর্বোপরি হাত দিয়ে খাবার গ্রহণ করলে খাবারের নানা পদ সংমিশ্রণ করে স্বাদের বৈচিত্র্য এবং পরিতৃপ্তি লাভ করা যায়। মনে রাখবেন খাবার আগে সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ ডিটারজেন্ট দিয়ে অবশ্যই হাত পরিষ্কার করতে হবে।

Friday, January 13, 2023

ভাতঘুম



অনেকে দুপুরে খাওয়ার পর কিছুটা ঘুমিয়ে নেন, যাকে বাংলায় বলা হয় ভাত-ঘুম। দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমানোকে যদিও অনেক সময় আলসেমি মনে করা হয়, কিন্তু ভাত-ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। দিনভর কাজের চাপের মাঝে কম্পিউটারের 'রিফ্রেশ বাটনের' মতো কাজ করে ভাত-ঘুম। এমনকি নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো মানুষকে আরও বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করে।

ভাত-ঘুম বাঙালির বদভ্যাস বলে মনে করা হলেও এই সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের অনেক দেশেই। ইউরোপের অনেক ভাষায় ভাত-ঘুমকে বলা হয় 'সিয়েস্তা', আর ইংরেজিতে 'পাওয়ার ন্যাপ'। গ্রীস ও স্পেনে সিয়েস্তা নামে পরিচিত ভাত-ঘুম সেখানকার মানুষের জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এমনকি ইউরোপের কিছু শহরে কর্মজীবী মানুষের জন্য সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।

রাতে ঘুমের পর যে ধরনের কর্মস্পৃহা নিয়ে দিনের শুরু হয় সেটি সময় গড়ানোর সাথে সাথে কমে আসতে শুরু করে। ন্যাপ বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে, যা কর্মস্পৃহা বাড়িয়ে দেয়। জেগে থেকে কাজ করার সাথে সাথে মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে। ভাত-ঘুমের সময় এডেনোসিনের ব্যবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মন-মেজাজে ভালো বোধ করি।

ভাত-ঘুমের স্থায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নানামতে এটি সর্বনিম্ন ২০ মিনিট থেকে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ইদানিং বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীদের জন্য ভাত-ঘুমের উপযোগী চেয়ারের ব্যবস্থা করেছে।

Wednesday, January 11, 2023

ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

 করোনা মহামারি ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ডিজিটাল করার চলমান প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। করোনা মহামারির সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব চলাকালীন দেশটির যানবাহনে চলাচল এবং শপিংমল বা যে কোন জনসমাগমস্থলে প্রবেশাধিকারের জন্য ২০২১ সালে একটি আ্যপ চালু করা হয়। এই আ্যপে করোনা পরীক্ষা, টিকা দেয়ার রেকর্ড এবং অন্যান্য কয়েকটি স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এন্ট্রি করার পর প্রত্যেকের জন্য আলাদা একটি কিউআর কোড তৈরি হয়, যেটি ব্যবহার করে চলাচল বা প্রবেশাধিকার পাওয়া যায়। স্মার্টফোনে এই আ্যপটি ব্যবহার শুরু করার পর নির্দিষ্ট ব্যক্তির চলাচলের একটি ম্যাপিংও স্বয়ংক্রিয়ভাবে  তৈরি হয়।

২০২৩ সালের শুরুতে ইন্দোনেশিয়া করোনা মহামারির জন্য নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কাজেই মহামারির জন্য চালু করা আ্যপটিও ব্যবহার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। ভবিষ্যতে সকল নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য সমন্বয় করার বিষয়টি মাথায়  রেখেই এই আ্যপটি চালু করা হয়েছিল।

ইন্দোনেশিয়ার সকল স্বাস্থসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল, কমিউনিটি ক্লিনিক, প্যাথোলজি পরীক্ষা কেন্দ্র ও ফার্মেসি এই আ্যপের মাধ্যমে সংযুক্ত হচ্ছে। বর্তমানে অনলাইন ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে সেবাগ্রহনকারীর স্বাস্থ্য রেকর্ড সংরক্ষণ করে থাকে। তবে এই আ্যপের মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিকের ঔষধ কেনা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত  সকল তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। সেবাদানকারী যেকোন প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট কোডের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতার রেকর্ড দেখতে পারবেন। সেবাগ্রহীতাও তার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ড দেখতে পারবেন এবং প্রেসক্রিপশনসহ যে কোন রিপোর্ট আ্যপের মাধ্যমেই সংগ্রহ করে নিতে পারবেন। ২০২৩ সালের মধ্যেই এই সমন্বয় করার প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং আগামী বছর থেকে এর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে। উল্লেখ্য ২০১৪ সাল থেকে ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য সেবা সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দুর করা স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহার এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা চালু করার বিকল্প নেই। দক্ষ জনবল, সরঞ্জাম এবং অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের উদ্যোগ নিতে হবে অবশ্যই।


মানবদেহের জন্য ৪টি ভয়ঙ্কর ছত্রাক সংক্রমণ




ছত্রাক বা ফাংগাস প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যমান। এগুলোর মধ্যে কিছু মানবদেহে সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে। মানবদেহে সংক্রামিত ছত্রাকের বেশিরভাগ ত্বকে নানা ধরনের রোগ তৈরি করে। সাধারণত ছত্রাক সংক্রমণ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়, তবে কিছু ছত্রাক জীবনহানির কারণ হতে পারে। সাম্প্রতিক কালে কিছু ছত্রাক ঔষধ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চারটি ছত্রাক সম্পর্কে সতর্কতা জারি করেছে।

◆ক্রিপটোকক্কাস নিয়োফরম্যানস

এটি মস্তিষ্কে সংক্রমণ করে জীবনহানির কারণ হতে পারে। সাধারণত পাখির মল দিয়ে ফলের মাধ্যমে এই ছত্রাক শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শেও এটি ছড়াতে পারে।

◆আ্যসপারগিলাস ফিউমিগ্যটাস

এই ছত্রাক ঘরেবাইরে পরিবেশে বিদ্যমান। সাধারণত মরা পাতা, পচণধরা শব্জি ও ফলমূল, সংরক্ষিত শস্য ও খাবার, ঘরের কার্পেটে এটি জন্ম নিয়ে থাকে। সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন মানুষের ক্ষেত্রে এটি রোগ সৃষ্টি করতে পারে না। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়েছে, বয়স্ক ও শিশুদের ক্ষেত্রে এটি ফুসফুস ও সাইনাসে সংক্রমণ করে থাকে।

◆ক্যানডিডা অরিস

সাধারণত এই ফাঙাস স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত কর্মীরা এটি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে আক্রান্ত স্বাস্থ্য কর্মী চিকিৎসক ও নার্সের সংস্পর্শে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন‌। এটির সংক্রমনে তীব্র জ্বর ও শীত অনুভূত হয়ে থাকে।

◆ক্যানডিডা আ্যলবিকানস্

ফাঙাস বা ছত্রাক দ্বারা সৃষ্ট রোগের অন্যতম প্রধান কারণ এটি। ত্বকের নানা স্থানে এই ফাঙাস সংক্রমণ করে থাকে। সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে খুব সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়। তবে ইদানিং এই ফাঙাস ঔষধ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রচলিত ঔষধ কাজ করে না বিধায় আক্রান্তরা দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগে থাকেন।

◆প্রতিরোধের উপায়

●ফলমূল ও শাকসবজি ভালো করে পরিষ্কার করুন।

● পচণধরা ফলমুল ও শাকসবজি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন।

● ঘরের কার্পেটে নিয়মিত পরিষ্কার করুন।

●হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রয়োজনের বেশি সময় অবস্থান করবেন না।

●চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফাঙাস বিরোধী ঔষধ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।


ডাঃ এম আর করিম রেজা

ত্বক ও সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ

জিন্নাহর বংশোধর

ওয়াদিয়া গ্রুপ ভারতের সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইরান থেকে আসা পার্সি লোভজি নুসারওয়াঞ্জি ওয়াদিয়া ১৭৩৬ সালে বোম্বে ড্রাইডক কোম্পান...