অনেকেই মনে করেন ফিশ অ্যান্ড চিপসই বুঝি ব্রিটেনের আসল খাবার। কিন্তু একটু পেছনে তাকালে দেখা যাবে, তারও আগে ব্রিটেনের রান্নাঘরে জায়গা করে নিয়েছিল ভারতীয় **কারি**। আর এই কারির গল্পটা জড়িয়ে আছে ব্রিটিশদের উপনিবেশ চালানোর সময়ের সঙ্গে—বিশেষ করে তখনকার ভারতের সঙ্গে।
১৭০০ সালের দিকে যখন ব্রিটিশ সেনা, অফিসার আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়ীরা ভারতে কাজ করতে যেত, তখন তারা এখানকার ঝাল-মশলাদার খাবারে একেবারে মজে যেত। ফিরে এসে তারা এই স্বাদ সঙ্গে করে ব্রিটেনে নিয়ে যায়। তখন থেকেই ব্রিটিশদের মধ্যে কারির প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে।
এই আগ্রহ থেকেই ১৮১০ সালে লন্ডনে চালু হয় **Hindoostane Coffee House**, ব্রিটেনের ইতিহাসে প্রথম কারি রেস্তোরাঁ। এটি চালু করেছিলেন একজন ভারতীয়, নাম ছিল **সাকি ডিন মহম্মদ**। তিনি একসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতেও কাজ করতেন। তাঁর এই রেস্তোরাঁয় লন্ডনের মানুষ প্রথমবারের মতো ভারতীয় খাবারের স্বাদ নিতে শুরু করে।
আর ফিশ অ্যান্ড চিপস? সেটা তো এল আরও অনেক পরে, ১৮৬০-এর দশকে। ভাজা মাছের ধারণা এসেছিল সেফার্দিক ইহুদি অভিবাসীদের থেকে। আর চিপস, মানে ভাজা আলু, জনপ্রিয় হয় যখন ব্রিটেনে আলুর চাষ বেড়ে যায় আর বড় করে ভাজার কৌশল আসে। এই দুইয়ের মিলনেই তৈরি হয় বিখ্যাত ফিশ অ্যান্ড চিপস।
এই খাবারটা খুব সহজ, সস্তা আর খেতে বেশ ভাল, তাই দ্রুতই **শ্রমজীবী মানুষের পছন্দের খাবার** হয়ে ওঠে। কেউ বলে লন্ডনে প্রথম শুরু হয়, আবার কেউ বলে উত্তর ইংল্যান্ডের কোনো শহরে।
কিন্তু এখানেই কারির গল্প থামে না। বরং ২০ শতকে যখন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে প্রচুর মানুষ ব্রিটেনে গিয়ে বসবাস শুরু করলেন, তখন কারির রঙ, ঘ্রাণ আর স্বাদ আরও জোরে ঢুকে পড়ে ব্রিটিশ রান্নাঘরে। শুধু বিরিয়ানি বা কোরমা নয়, **চিকেন টিক্কা মাসালা** নামের একটা খাবার তো আজকাল অনেকেই ব্রিটিশদের জাতীয় খাবার বলে মনে করেন।
সত্যি বলতে কি, কারি কখনোই “বিদেশি” ছিল না ব্রিটেনে। এটা তো **ফিশ অ্যান্ড চিপসেরও আগেই** মানুষের পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছিল। এখন যখন কেউ বলে “ব্রিটিশ খাবার”, তখন শুধু ভাজা মাছ বা আলু না—সঙ্গে থাকে কারিও, ইতিহাসের একটা পুরনো ঝাঁঝ আর রসনার এক টুকরো গল্প।---
#কারির\_গল্প #ফিশঅ্যান্ডচিপস #ব্রিটিশখাবারেরইতিহাস #সাকিডিনমহম্মদ #টিক্কামাসালাইসব্রিটিশ #MRKR #food
No comments:
Post a Comment