Tuesday, February 20, 2024

পানিতে সন্তান প্রসব


পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে ইদানিং বাথটাবে সন্তান জন্ম দেয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পৃথিবীর বেশ কিছু অঞ্চলে নদী বা সুমদ্রে সন্তান প্রসবের সংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে অনেক আগে থেকেই। যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ও ন্যাশনাল চাইল্ড বার্থ ট্রাষ্ট সন্তান জন্ম দেয়ার এই প্রক্রিয়া অনুমোদন দিলেও এখনো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এই সেবা দেয়া শুরু করে নাই। তবে ধাত্রী বা চিকিৎসকের উপস্থিতিতে বাড়ি বা অন্য কোন সুবিধাজনক স্থানে তার চিকিৎসকের অনুমোদন সাপেক্ষে পানিতে সন্তান প্রসব করতে পারেন গর্ভবতী। এই সেবা দেয়ার জন্য বেশকিছু কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। পানির নিচে সন্তান প্রসবের পদ্ধতিটি চিকিৎসা পরিভাষায় ওয়াটার বার্থ নামে পরিচিত।

যে কোন গর্ভবতী চিকিৎসকের অধীনে নিয়মিত গর্ভকালীন পরীক্ষায় থেকে সাধারণভাবে সন্তান প্রসবে সক্ষম সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। প্রসব বেদনা উঠার পর গর্ভবতী বাথটাব বা সুইমিংপুলে স্থান নেন। ধাত্রীর উপস্থিতিতে স্বামী বা পরিবারের সদস্যরা বাথটাবের চারপাশে উপস্থিত থাকতে পারেন।

এই পদ্ধতিতে প্রসব বেদনার তীব্রতা তুলনামূলক কম হয়। এছাড়াও দুঃশ্চিন্তামুক্ত পারিবারিক আনন্দঘন পরিবেশে সন্তান জন্মলাভ করে। হাসপাতাল বা স্থাস্থ্য কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসবের সঙ্গে তুলনা করলে এই পদ্ধতির প্রধান সুবিধা হচ্ছে মানসিক চাপ মুক্ত পরিবেশ।


তবে প্রসবকালীন সময়ে জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালে স্থানান্তরের ঝুঁকি রয়েছে।

#MRKR

Monday, February 19, 2024

স্লিপ ডিভোর্স



কোন দম্পতি বিশেষ কারণে এক বিছানা বা রুমে না ঘুমালে সেটিকে স্লিপ ডিভোর্স বলা হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক তৃতীয়াংশ এবং যুক্তরাজ্যের এক চতুর্থাংশ দম্পতি এই বিশেষ ধরনের #ডিভোর্স জীবনযাপন করছেন। ঐতিহাসিকদের মতে এই ব্যবস্থা অতীতে খুব সাধারণ বিষয় ছিল। বিশেষ করে যাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ভালো ছিল, যেমন জমিদার বা রাজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে। করোনা মহামারীর পর বর্তমানে এই ব্যবস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে।

নাক ডাকা, ঘুমের মাঝে হাত -পা নাড়ানো, স্লিপ ওয়াকিং, অর্থাৎ ঘুমের ঘোরে হাঁটার অভ্যাস বা শারীরিক সমস্যার কারণে তারা ঘনঘন বাথরুমে যাওয়ায় সঙ্গীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে বা বিরক্ত হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে স্লিপ ডিভোর্স পালন করা হয়ে থাকে। স্লিপ ডিভোর্স অসম্মানজনক নয়, বরং জনপ্রিয়তা লাভ করেছে মুলত সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে।

ঘুম না হলে মেজাজ খারাপ হতে পারে। সঙ্গীর সাথে তর্কে জড়ানোর সম্ভাবনা তাদের বেশি থাকে। সঙ্গীর প্রতি বিরক্তি জন্মাতে পারে, যা দাম্পত্য সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া সহ আরো কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে স্লিপ ডিভোর্স পালনকারী দম্পতির সম্পর্ক, সান্নিধ্য বা পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক বিছানায় ঘুমানো দম্পতির মধ্যে যে জৈবিক বন্ধন সৃষ্টি হয় স্লিপ ডিভোর্সে তা ভেঙে যায়। তাছাড়া যারা একা ঘুমাতে পারেন না, তাদের জন্য ব্যবস্থাটি মেনে নেয়া কষ্টকর। কাজেই সম্পর্কে থাকা দুজনের সম্মতির ভিত্তিতে স্লিপ ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত‌। সেটি না হলে স্থায়ী ডিভোর্সের ঝুঁকি সৃষ্টি করবে।

#MRKR

Sunday, January 21, 2024

ইষ্ট লন্ডন মসজিদ

 বৃটিশ


ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে অনেক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ থাকলেও সাম্রাজ্যের রাজধানী লন্ডনে মুসলমানদের প্রার্থনা করার জন্য কোন মসজিদ ছিল না।  একটি মসজিদ স্থাপনের উদ্যোগ হিসেবে ১৯১০ সালের ৯ ডিসেম্বর লন্ডনে বসবাসকারী গণ্যমান্য মুসলিমরা রিজ হোটেলে মিলিত হয়ে 'লন্ডন মসজিদ ফান্ড' গঠন করেন। সেই মিটিংয়ে লন্ডনের প্রভাবশালী খৃষ্টান ও ইহুদি ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

'লন্ডন মসজিদ ফান্ড' গঠনে উল্লেখযোগ্য দাতাদের মধ্যে ছিলেন (হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর চাচা, অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের নানা শ্বশুর) ডা: হাসান সোহরাওয়ার্দী, সৈয়দ আমীর আলী, তৃতীয় আগা খাঁন প্রমুখ। খৃষ্টান ধর্মের ইতিহাসবিদ টি. ডাব্লিও আরনল্ড এই ফান্ডের সচিব এবং হাসান সোহরাওয়ার্দী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন। স্যার জন উডহেডকে কোষাধক্ষ্যের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়াও ইউরোপের ধনাঢ্য ইহুদি পরিবার এবং ব্যাংকিং জগতের পথিকৃৎ রথচাইল্ড পরিবারের নাথান রথচাইল্ডকে ট্রাষ্টি হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

এই ফান্ডের সহায়তায় ১৯১০ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত লন্ডনের বিভিন্ন স্থান ভাড়া নিয়ে জামায়াত ও জুমার নামাজ আয়োজন করা হতো। ১৯৪০ সালে পুর্ব লন্ডনে জমি ক্রয় করা হয় এবং ১৯৪১ সালের ২ আগষ্ট 'ইষ্ট লন্ডন মসজিদ ' উদ্বোধন করা হয়।

১৯৮৫ সালে সৌদি আরব, কুয়েত ও বৃটিশ সরকারের অর্থ সহায়তায় পুর্নাঙ মসজিদ ও মুসলিম কাউন্সিল কমপ্লেক্সের নির্মাণ শেষ হয়। ২০০১ ও ২০০৯ সালে মসজিদের আরো সংস্কার ও সম্প্রসারন কাজ করা হয়। বর্তমান মসজিদটি ইউরোপের অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ। একসঙ্গে কমবেশি ৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রয়েছে ইষ্ট লন্ডন মসজিদে।

Tuesday, October 17, 2023

হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ: আতঙ্ক নয় সচেতনতা দরকার

বাংলাদেশের সর্বত্র হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (HFMD) ছড়িয়ে পড়েছে। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন‌। ভাইরাসজনিত এই রোগটি ইতোপূর্বে  আমাদের দেশে বেশি পরিলক্ষিত হতো না। মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে যে কোন বয়সীরা এই রোগ আক্রান্ত হতে পারেন। এটি খুবই ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগ। তবে এটি মারাত্মক জটিল ধরনের কোন রোগ নয়, জীবনহানির ঝুঁকিও নেই।

কক্সাকি নামক একধরনের ভাইরাস এই রোগের জন্য দায়ী। 

✓কিভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির ফোস্কা থেকে নির্গত রস, হাঁচি কাশি, ব্যবহত পোশাক এবং স্পর্শ করা যে কোন জিনিস, এমনকি মলের মাধ্যমেও এটি ছড়ায়। 

জনসমাগম যে সব জায়গায় বেশি সেখান থেকেই এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

✓লক্ষণ

হালকা জ্বরের সঙ্গে গলা ব্যথা, শরীরে নানা জায়গায় পানিভর্তি ফুস্কুড়ি, মুখের ভেতরে ক্ষত, মুখ দিয়ে ক্রমাগত লালা নিঃসরণ, খাবারে অরুচি ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। হাত, পা এবং জিহ্বাতে সাধারণত ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও হতে পারে।

ত্বকের ফোস্কা বা ফুস্কুড়ি অনেকটা জলবসন্তের মতো। 'ফুট অ্যান্ড মাউথ' নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যার সঙ্গে এটির কোন সম্পর্ক নেই।

✓চিকিৎসা

ভাইরাসজনিত এই রোগের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোন ঔষধের ভূমিকা নেই। ৭-১০ দিনের মধ্যে সাধারণত আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়। 

অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধের কোনো ভূমিকা নেই এই রোগের চিকিৎসায়।

লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। পরিচর্যা, পর্যাপ্ত পানীয় দিতে হবে তবে ফলের জুস মুখ ও গলার ব্যাথা বৃদ্ধি করে বিধায়, বিরত থাকাই ভালো।  নরম ও কম মশলাযুক্ত খাবার দেয়া উচিত।


✓প্রতিরোধ

শিশুকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এবং হাঁচিকাশি থেকে দূরে থাকতে হবে।

জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত শিশুকে স্কুলে পাঠানো যাবে না। আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অবশ্যই।

Saturday, October 14, 2023

ডেঙ্গির টিকা


#ডেঙ্গি প্রতিরোধে জাপানের তাকেদা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি টিকা 'কিউডেঙ্গা'র অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য গত ২ অক্টোবর এই অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পাওয়া আগেই এই টিকা ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড ও আর্জেন্টিনা।

দুই ডোজের এই টিকা শুধুমাত্র ৬ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর আগে সানোফি-এ্যাভেন্টিজের তৈরি ডেঙ্গি টিকা 'ডেঙ্গাভেস্কিয়া'র অনুমোদন দিয়েছে কয়েকটি দেশ। বাংলাদেশে আইসিডিডিআরবির সহায়তায় 'টিভি০০৫' নামে একটি #ডেঙ্গি টিকার ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই পরীক্ষার প্রথম দুই ধাপে তারা সফলতা পেয়েছে। তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা সফল হলে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে।

বাংলাদেশে এ বছর মহামারি আকারে দেখা দিয়েছে ডেঙ্গি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য সর্বশেষ অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৩৭ হাজার ২৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, যাদের মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ১৫৮ জন।

ডেঙ্গি আক্রান্ত ও মৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু ও কিশোর রয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা চরিত্র পরিবর্তন করায় মশক নিয়ন্ত্রণ ও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

ভাইরাসজনিত অনেক রোগ প্রতিরোধে টিকার ব্যবহার ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি ধরনের বিরুদ্ধেই 'কিউডেঙ্গা' টিকা কার্যকরী বলে জানানো হয়েছে।


যেহেতু ডেঙ্গি আক্রান্তদের একটি বড় অংশ শিশু ও কিশোর, তাই এই টিকা ব্যবহার করে জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে ডেঙ্গি থেকে নিরাপদ রাখা সম্ভব। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে যত দ্রুত সম্ভব এই টিকা আমদানি ও বিতরণের ব্যবস্থা করা জরুরি। পাশাপাশি বাংলাদেশ পরীক্ষা চলা 'টিভি০০৫' টিকা দেশেই তৈরির বিষয়ে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গেও আলোচনা শুরু করা দরকার।

https://bangla.thedailystar.net/health/news-523421

#dengue #denguefever #DenguePrevention

Thursday, October 5, 2023

সুখ


গবেষকরা ‘সুখ’-এর তত্ত্বতালাশ করে আসছেন মানব সভ্যতার শুরু থেকেই। প্রায় আড়াইহাজার বছর আগে হিমালয়ের এক রাজ্যের রাজপুত্র রাজ্যত্যাগ করেছিল সুখের সন্ধানে। ১৭৮৫ সালের গ্রাউন্ডওয়ার্ক অব দ্য মেটাফিজ়িক্স অব মরালস-এ দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট লিখেছেন, “হ্যাপিনেস ইজ় নট অ্যান আইডিয়াল অব রিজ়ন, বাট অব ইমাজিনেশন।” ২৫০ বছর আগে টমাস জেফারসনের সময় আমেরিকান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয় ‘পারসুট অব হ্যাপিনেস’। আধুনিক জমানায় 'সুখ’ মাপার ধারণাটাও অবশ্য এসেছে হিমালয়ের ছোট্ট দেশ ভুটান থেকেই। 

সুখ আর আনন্দ এক বিষয় নয় এই উপলব্ধিটি বোঝার সক্ষমতা নেই বেশিরভাগ মানুষের। অর্থবিত্তে সাময়িক আনন্দ কেনা যায় বটে তবে সুখ অধরাই থেকে যায়। অর্থের সঙ্গে সুখের উত্তরণ ঘটে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ক্ষেত্রে। আয়ের সঙ্গে ‘সুখ’ বাড়ে বটে, কিন্তু আয় যখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছলতা নিশ্চিত করে, তখন আয় বাড়লেও #সুখ আর বাড়ে না। গল্পের কপর্দকশূন্য চালচুলোহীন ভিখারির সুখের শেষ নেই। কিন্তু অর্থবিত্ত আর ক্ষমতা থাকলেও রাজামশাইয়ের অসুখ সারে না। তাই অভাবকে নয়, অভাবের বোধকে অতিক্রম করতে পারাই সুখী হওয়ার মন্ত্র।

মহাভারতের যুধিষ্ঠিরকে যক্ষ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ”সুখী কে? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, “যাহার ঋণ নাই, আর নিজের ঘরে থাকিয়া দিনের শেষে যে চারিটি শাক-ভাত খাইতে পায়, সেই সুখী।"

তুরস্কের বিখ্যাত কবি নাজিম হিকমত রান বন্ধু চিত্রকর আবেদিন দিনোকে অনুরোধ করেছিলেন সুখের একটি ছবি আঁকার জন্য। আবেদিন দিনো বন্ধুর অনুরোধে এই ছবিটি এঁকে দেন।

সুখের সন্ধানে মানুষের নিরন্তর সাধনা চলতেই থাকবে সেটি নিশ্চিত।

#MRKR

Sunday, October 1, 2023

কফির ইতিবৃত্ত


প্রতিবছর ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক কফি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কফি (Coffee) পৃথিবীতে সর্বাধিক বিক্রিত প্রাকৃতিক পানীয়। প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি কাপ কফি পান হয় পৃথিবীতে। কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ, যা পোড়ানোর পর গুঁড়ো করে কফি তৈরি করা হয়। কফির বীজ বিশ্বের সত্তরটিরও বেশি দেশে উৎপাদিত হয়। ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া, কলাম্বিয়া, ভারত কফির প্রধান উৎপাদনকারী দেশ এখন।

কফির উৎপত্তি নিয়ে একাধিক কল্পকাহিনী প্রচলিত রয়েছে যার কোনো প্রমাণ নেই। তেমনি একটি কল্পকাহিনী হলো, নবম শতকে ইথিওপিয়ায় বাস করতো খালদি নামের এক নিঃসঙ্গ মেষপালক। অন্যান্য দিনের চেয়ে তার ছাগলের পালের দুরন্তপনা একটু বেড়ে গেছে বলে মনে হলো তার। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে খেয়াল করে, লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে তার ছাগলেরা। ধর্মপ্রাণ খালদি সাথে সাথে সেই ফলটি নিয়ে হাজির হয় স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। কাঁচা খাওয়া অসম্ভব দেখে ইমাম আগুনে ছুঁড়ে দিলেন ফলগুলোকে। তার কাছে প্রথমে এগুলোকে শয়তানের প্রলোভন বলে মনে হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরেই আসতে লাগলো দারুণ সুঘ্রাণ, যা আজ জগদ্বিখ্যাত। ইমামের ছাত্ররা চিন্তা করে দেখলেন, সিদ্ধ করে খেলে কেমন হয়। যে-ই ভাবা সেই কাজ, রোস্ট করা বীজগুলোকে নিয়ে এক কড়াই গরম পানিতে সিদ্ধ করা হলো। এভাবেই তৈরি হয় পৃথিবীর প্রথম কাপ কফি। ইমাম এবং তার শিষ্যরা চমৎকৃত হয়ে আবিষ্কার করলেন যে এই পানীয়টি খেয়ে তারা রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা জেগে থাকতে পারছেন। প্রার্থনার জন্য ব্যাপারটি বেশ কার্যকরী মনে হলো তাদের। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো গরম পানীয়টির সুনাম।

কফি আবিষ্কারের সময়কাল নবম শতাব্দী বলে মেনে নেয়া হয়েছে। ১৫ শতকে ইথিওপিয়া থেকে, লোহিত সাগরের ওপারে বাণিজ্যের মাধ্যমে ইয়েমেনে কফি আনা হতো। সুফিরা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে জাগ্রত থাকতে কফি পান করতেন। 

তুরস্কের কনস্টান্টিনোপল, বর্তমান ইস্তানবুলে ১৪৭৫ সালে পৃথিবীর প্রথম কফি হাউজ চালু হয়। ষোড়শ শতকের মধ্যেই সিরিয়া, তুরস্ক, পারস্য, মিশরে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠে কফি হাউজ। ১৬২৩ খ্রিস্টাব্দে ইস্তাম্বুলে ছয় শতেরও বেশি কফি হাউজ ছিল। আরবরা কয়েক শতাব্দী কফির ঘ্রাণে মুগ্ধ হওয়ার পর ইউরোপে কফি যেতে শুরু করে। মুসলমানদের আবিষ্কার হলেও অনেক মুসলমান রাষ্ট্রে কফিকে বাঁকাচোখে দেখা হতো।

১৫১১ সালে মক্কার পণ্ডিতেরা কফি খাওয়া নিষিদ্ধ করেন। তৎকালীন মক্কার গভর্নর খায়ের বেগ মনে করতেন, কফির আড্ডায় জনগণের চাপা রোষ জেগে উঠবে। ফলে তার সরকারের পতন ঘটবে। জোর করে কফিকে হারাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কফি আসলেই বিষাক্ত কি না, তা নিয়ে মতভেদ ছিলো। প্রায় তেরো বছর এ নিয়ে ঝামেলা লেগে থাকে। অবশেষে, ১৫২৪ সালে ওসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিম ফতোয়া জারি করে কফি খাওয়া আবার চালু করেন। খায়ের বেগকে অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়। এরপরে ১৫৩২ সালে কায়রোতে কফি খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তখন সেখানকার সব কফিহাউজ ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছিল।


মধ্যপ্রাচ্য, তুরস্ক ও বলকান অঞ্চল হয়ে কফি ইতালিতে যাত্রা করে। বণিকদের মাধ্যমে ইতালির ভেনিসে কফি পৌঁছে যায় ১৬১৫ সালে। মধ্যপ্রাচ্য এবং তুরস্কের মতো ইউরোপেও কফিকে সন্দেহের চোখে দেখা হতো। যেহেতু কফি আবিষ্কারের সাথে মুসলমানদের নাম জড়িয়ে ছিল, তার ওপর এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত পবিত্র পানীয় রেড ওয়াইনের জায়গা দখল করে নিচ্ছিল। তাই কট্টর ক্যাথলিকেরা একে ‘শয়তানের তিক্ত আবিষ্কার’ বলে ডাকতো। যে কোনো অনুষ্ঠানে এর ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। ইউরোপিয়ান পর্যটকেরা কারো তোয়াক্কা না করেই এর গুণগান করতে থাকলেন। এই নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ লেগে গেলে এগিয়ে আসেন তৎকালীন পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট। তিনি কফির স্বাদ নিয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। ঘোষণা দেন, কফি কেবল মুসলমানদের একার নয়, খ্রিস্টানদেরও পানীয়।

তারপর থেকে কফিকে অনেকটা প্রশংসাসূচকভাবেই ‘শয়তানের পানীয়’ কিংবা ‘শয়তানের পেয়ালা’ নামে ডাকা হয়।

এরপর দ্রুতই ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। ডাচদের মাধ্যমে পশ্চিমে আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকায় কফির প্রচলন ঘটে। ঔপনিবেশিক ডাচরাই ইন্দোনেশিয়ায় কফি উৎপাদন শুরু করে। ১৬৭০ সালে একজন ভারতীয় কফির বীজ নিয়ে আসেন। উপমহাদেশে কফির উৎপাদন শুরু হয় তখন থেকেই।

#InternationalCoffeeDay #MRKR

সৌন্দর্য ধরে রাখার ইঞ্জেকশন—প্রভাব, অপব্যবহার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন!

 ✅ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ত্বকে বয়সের ছাপ খুঁজে পেয়ে আতঙ্কে ভোগেন। আবার অনেকে নিজের বাহ্যিক অবয়বে সন্তুষ্ট না হয়ে সৌন্দর্য  খুঁজে ব...