১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইতিহাসে চিরস্মরণীয় একটি দিন—এই দিনে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন (বর্তমান হো চি মিন সিটি) পতন ঘটে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিণতিতে সংঘটিত এই ঘটনা শুধু একটি শহরের দখল নয়, বরং ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় ভূ-রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনাম উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ফরাসিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে দেশটি উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্ত হয়—উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সাম্যবাদী সরকার এবং দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পুঁজিবাদী সরকার। শুরু হয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল এই যুদ্ধে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করে এবং লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন করে। কিন্তু ভিয়েত কংগ (উত্তর ভিয়েতনাম সমর্থক গেরিলা বাহিনী) ও উত্তর ভিয়েতনামের নিয়মিত বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অজস্র বোমা হামলা, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ও ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় হলেও মার্কিন বাহিনী জনগণের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়।
একপর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাহিনী প্রত্যাহার শুরু করে এবং ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনাম তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ১৯৭৫ সালের মার্চে তারা পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করে এবং একের পর এক শহর দখল করে এগিয়ে আসে।
৩০ এপ্রিল, ১৯৭৫—উত্তর ভিয়েতনামের ট্যাংক সায়গনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে প্রবেশ করে। পশ্চিমা সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ডুং ভান মিন আত্মসমর্পণ ঘোষণা করেন। হেলিকপ্টারে মার্কিন কূটনীতিক ও নির্দিষ্ট লোকজনের শেষ মুহূর্তের উৎকণ্ঠাপূর্ণ উদ্ধার অভিযানের দৃশ্য পুরো পৃথিবীকে হতবাক করে দেয়।
সায়গনের পতনের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনাম একত্রিত হয় এবং সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী ভিয়েতনাম গঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিশাল ব্যর্থতা হিসেবে এই পতন চিহ্নিত হয় এবং তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাবের ব্যাপক পরিবর্তন সূচনা করে। অন্যদিকে, এই ঘটনা মার্কসবাদী আন্দোলনের জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়।
সায়গনের পতন শুধু একটি সামরিক ঘটনা নয়, বরং একটি অধ্যায়ের অবসান। অস্ত্রের শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, জনগণের ইচ্ছা ও ঐক্য তারচেয়েও শক্তিশালী হতে পারে, সায়গনের পতন সেটি আবারো প্রমাণ করে।
#history #war #civilwar #politics #vietnam #trend #MRKR #viralpost2025 #sketch #photo
No comments:
Post a Comment