Wednesday, September 10, 2025

জেন-জি: নতুন রাজনৈতিক দিগন্ত

 🌐 ✨বৈশ্বিক রাজনীতির ইতিহাসে প্রতিটি প্রজন্মই পরিবর্তনের বার্তাবাহক। তবে জেন-জি প্রজন্ম সেই ধারাবাহিকতায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। 

১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্ম নেওয়া প্রজন্মকে জেন-জি (Generation Z) বলা হয়। মিলেনিয়ালের পর এরা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুবশক্তি। এরা জন্ম থেকেই ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে বড় হয়েছে। তাই সীমান্ত পেরিয়ে এরা নিজেদেরকে দেখে বিশ্ব নাগরিক হিসেবে। তথ্যপ্রবাহ, প্রযুক্তি, আর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তাদের চিন্তাকে করেছে মুক্ত, প্রশ্নশীল ও বৈশ্বিক।


এই প্রজন্ম পুরোনো ধারার রাজনীতি, নেপোটিজম, বৈষম্য আর স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা মেনে নিতে রাজি নয়। নেপাল ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান সেটাই স্পষ্ট করে প্রমাণ করেছে।


🚩 নেপোটিজম ও ক্ষমতার উত্তরাধিকার প্রত্যাখ্যান-

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাসে নেপোটিজম বা বংশপরম্পরার নেতৃত্ব এক দীর্ঘস্থায়ী বাস্তবতা। কিন্তু জেন-জি প্রজন্ম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে—ক্ষমতা কোনো পরিবারের সম্পত্তি নয়, তাদের প্রশ্ন  “যোগ্যতা কোথায়?” এ প্রজন্ম নেতার পরিচয় নয়, নেতার কর্ম এবং নৈতিকতাকেই মূল্যায়নের মানদণ্ডে দাঁড় করিয়েছে। #ডাকসু নির্বাচনেও সেটির প্রতিফলন ঘটেছে।


⚡ ফ্যাসিস্ট ও অলিগার্কি মানসিকতার অশনীসংকেত-

বাংলাদেশে ২০২৪ সাল বা নেপালের চলমান গণঅভ্যুত্থানে তরুণদের প্রতিবাদ দেখিয়েছে, ফ্যাসিস্ট শাসন কিংবা অলিগার্কির জন্য ভবিষ্যৎ আর নিরাপদ নয়। রাষ্ট্রযন্ত্রের দমননীতি, দুর্নীতি, বৈষম্য—এসবের বিরুদ্ধে জেন-জি নির্ভীকভাবে রাস্তায় নেমেছে। তাঁদের প্রযুক্তি-সচেতনতা, সোশ্যাল মিডিয়ার সংগঠিত শক্তি এবং বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পুরোনো রাজনীতিকে ক্রমেই অচল করে দিচ্ছে।


📱 বিশ্ব নাগরিকের মনোজগৎ-

জেন-জি প্রজন্ম জন্ম থেকে ইন্টারনেট, স্মার্টফোন ও সোশ্যাল মিডিয়ার ভেতর বেড়ে উঠেছে। তারা শুধু নিজের দেশ নয়, বরং গোটা বিশ্বের সাথে একইসাথে সংযুক্ত। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, বৈষম্য, বা গণতন্ত্র—সব প্রশ্নই তাদের কাছে স্থানীয় নয়, বরং বৈশ্বিক। তারা “বিশ্ব নাগরিক” হিসেবে নিজেকে দেখে এবং পুরোনো ভৌগলিক সীমানা-ভিত্তিক রাজনীতিকে প্রায়ই অপ্রাসঙ্গিক মনে করে। এই ডিজিটাল অভিজ্ঞতাই তাদের মনোজগতকে মুক্তমনা, তথ্যনির্ভর এবং সংবেদনশীল করে তুলেছে।


🌍 রাজনৈতিক দল নয়, রাষ্ট্রব্যবস্থা মুখ্য-

জেন-জি প্রজন্মের কাছে অন্ধ দলীয় আনুগত্যের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ—রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা। তারা চায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সমান সুযোগ এবং মানবিক মর্যাদার নিশ্চয়তা। কোন দল ক্ষমতায় আছে, সেটা মুখ্য নয়; রাষ্ট্র পরিচালনায় ন্যায়বিচার ও সুশাসন আছে কি না, সেটাই তাদের প্রশ্ন।


✨ জেন-জি প্রজন্ম দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিকে নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছে। পুরোনো ধ্যানধারণা, ক্ষমতার উত্তরাধিকার, বৈষম্য ও স্বৈরতন্ত্রের দিন শেষের পথে। এ প্রজন্ম প্রমাণ করেছে, পরিবর্তন কেবল স্লোগান নয়, বরং বাস্তব শক্তি। ইতিহাস তাই নতুন অধ্যায় লিখছে—যেখানে রাজনৈতিক দল নয়, গণমানুষের অধিকার আর রাষ্ট্রব্যবস্থার ন্যায়সঙ্গত রূপই হবে প্রধান বিচার্য বিষয়।


রাজনৈতিক নেতৃত্বকে বুঝতে হবে—তাদের ভাষা এখন ভিন্ন। জেন-জির প্রশ্ন, চাহিদা ও স্বপ্নকে উপেক্ষা করলে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব বা সরকার টিকবে না। যে নেতৃত্ব এই ভাষা বুঝবে, সাড়া দেবে, তিনিই হতে পারবেন তাদের নেতা।

#MRKR

No comments:

কটসওল্ডস: ইংল্যান্ডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এলাকা

 🌿 কটসওল্ডস (Cotswolds) ইংল্যান্ডের একটি অঞ্চল, যা প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, ঐতিহ্যবাহী গ্রাম এবং ইতিহাসের এক অনন্য সংমিশ্রণ। এটি ইংল্যান্ডের...