বলিউডের চলচ্চিত্র পরিচালক করন জোহরের চেহারা ও শরীরের গঠন পরিবর্তন নিয়ে বিতর্ক চলছে সম্প্রতি। পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসন চেহারার পরিবর্তনে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সম্ভবত এরা দুজনেই 'বডি ডিসমরফিয়া' নামক রোগে আক্রান্ত।
বডি ডিসমরফিয়া (Body Dysmorphic Disorder, BDD) হলো একটি মানসিক রোগ, যেখানে একজন ব্যক্তি তার শারীরিক গঠন, চেহারা বা শরীরের কোনো অংশের প্রতি অতিরিক্ত বা বাস্তবের বাইরে উদ্বেগ অনুভব করেন। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি তার শারীরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমস্যায় ভোগেন এবং মনে করেন যে, তাদের শরীর বা কোনো নির্দিষ্ট অংশের চেহারা বিকৃত বা আকৃতির ত্রুটি রয়েছে, যদিও সেটি বাস্তবিকভাবে খুবই ছোট বা অনুপস্থিত হতে পারে।
এতে আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত কসমেটিক সার্জারি বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ সংশোধনমূলক অস্ত্রোপচারের দিকে বেশী ঝুঁকে পড়েন।
✅লক্ষণ কি?
√অতিরিক্ত উদ্বেগ: এক বা একাধিক শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ অনুভব করা, যেমন চেহারা, ত্বক, দাঁত, চুল বা শরীরের অন্য কোনো অংশ।
√নিজের শরীরের প্রতি নেতিবাচক অনুভূতি: এমন অনুভূতি যে শরীরের কোনো অংশ "অভ্যন্তরীণ ত্রুটি" রয়েছে, যা অন্যরা লক্ষ্য করে এবং সমালোচনা করে।
√নিরবচ্ছিন্ন আয়না বা অন্যদের চেহারা পরখ করা: নিয়মিত আয়নায় নিজের চেহারা দেখা বা অন্যদের কাছে শরীরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বারবার প্রশ্ন করা।
√প্রতিনিয়ত শরীর বা চেহারার সংশোধন: বিভিন্ন ধরনের সার্জারি, প্রসাধনী বা মেকআপ ব্যবহারের মাধ্যমে শরীর বা চেহারা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা।
√অন্যদের সঙ্গে তুলনা: নিজের শরীর বা চেহারা নিয়ে সঙ্গী, বন্ধু বা পরিচিতদের সঙ্গে তুলনা করা এবং তাদের মন্তব্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া।
√সমাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতা: শরীরের কোনো অংশের নিয়ে উদ্বেগের কারণে সামাজিক পরিবেশ বা জনসমক্ষে যাওয়া থেকে বিরত থাকা।
✅কারণ কি?
√জেনেটিক বা পারিবারিক ইতিহাস: যদি পরিবারে কেউ মানসিক রোগে ভুগে থাকে, তবে সেই ব্যক্তিরও BDD হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে।
√মানসিক বা শারীরিক ট্রমা: ছোটবেলায় বা বড় হওয়ার সময় কোনো শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন, অপমান বা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে হাস্যরস করা।
√মিডিয়ার প্রভাব: বর্তমান সমাজে "পারফেক্ট" শরীরের চিত্র প্রচার করে এমন মিডিয়া (যেমন: ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি, টেলিভিশন, সোশ্যাল মিডিয়া) BDD এর বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে।
√আত্মবিশ্বাসের অভাব: কম আত্মবিশ্বাস, উদ্বেগ বা হতাশার কারণে এক ব্যক্তি তার শরীর বা চেহারার প্রতি অতিরিক্ত নেতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে পারে।
✅চিকিৎসা কি?
বডি ডিসমরফিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ, যেটি সাইকোথেরাপি, ঔষধ ও পারিবারিক সহযোগিতার সমন্বয় করে চিকিৎসা দেয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য কসমেটিক সার্জারি কেবল শারীরিক চেহারা পরিবর্তন করতে পারে, তার অন্তর্নিহিত মানসিক সমস্যার চিকিৎসা না করলে এটি থেকে মুক্তি মিলবে না।
No comments:
Post a Comment