ভূমিকা
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS – Rashtriya Swayamsevak Sangh) ভারতের একটি ডানপন্থী, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এটি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক বিশাল প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান, যার আদর্শ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ও আলোচনা চলছে।
প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক উদ্দেশ্য
আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, নাগপুরে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার, যিনি কংগ্রেস দল ও হিন্দু মহাসভা–র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
সংগঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল:
•ভারতীয় হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা,
•হিন্দুদের "আত্মরক্ষা" ও "শক্তি" অর্জনের পথে পরিচালিত করা,
•হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ।
হিন্দুত্ববাদী দর্শন
আরএসএস "হিন্দুত্ব" (Hindutva) মতবাদে বিশ্বাসী, যার মূল ধারণা দেন **বিনায়ক দামোদর সাভারকর**। হিন্দুত্ববাদের মূল বক্তব্য হলো:
• ভারত হলো শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি হিন্দু সংস্কৃতির জন্মভূমি ও পূণ্যভূমি।
•যারা ভারতকে তাদের পিতৃভূমি ও ধর্মভূমি হিসেবে মানে না (বিশেষ করে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের দিকে ইঙ্গিত), তারা হিন্দু জাতির মূল ধারার বাইরে।
এই মতবাদের মাধ্যমে আরএসএস একটি একধর্মীয়, সংস্কৃতিনির্ভর জাতি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে, যেখানে হিন্দু সংস্কৃতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে।
কর্মপদ্ধতি ও সাংগঠনিক কাঠামো
আরএসএস একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে শুরু হলেও, এর রাজনৈতিক শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে ভারতীয় জনসংঘ ও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)।
আরএসএস এর বিভিন্ন শাখা ও প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে:
•যুবকদের "শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ
•দেশপ্রেম ও হিন্দু ঐতিহ্যের শিক্ষাদান,
•সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।
বিতর্ক ও সমালোচনা
আরএসএস বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে:
•১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল (যদিও হত্যাকারী নাথুরাম গডসে সরাসরি সদস্য ছিলেন না বলে দাবি করা হয়)।
•ধর্মনিরপেক্ষতা, সংখ্যালঘু অধিকার ও বহুত্ববাদী ভারতের ধারণার বিরোধী বলেও অনেকেই মনে করেন।
•বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটি মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
বর্তমান প্রভাব
আজ আরএসএস ভারতের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যার হাজার হাজার শাখা ও কোটি সদস্য রয়েছে।এটি শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষা, সমাজসেবা, ইতিহাস চর্চা, ধর্মীয় সংস্কার ও অর্থনৈতিক চিন্তাধারায়ও প্রভাব বিস্তার করছে।বর্তমান ভারতের শাসক দল BJP ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও আরএসএস থেকে উঠে আসা একজন সদস্য।
উপসংহার
আরএসএস ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে বিতর্কিত নাম।
একদিকে এটি হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ও ঐক্যের এক রূপক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র, সংখ্যালঘু অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যার দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, আরএসএস যে ভারতের সমাজ-রাজনীতি ও ভবিষ্যতের গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, তা অস্বীকার করা যায় না।
No comments:
Post a Comment