Tuesday, May 13, 2025

আরএসএস (RSS): প্রতিষ্ঠা, হিন্দুত্ববাদী উদ্দেশ্য ও ইতিহাস

ভূমিকা

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (RSS – Rashtriya Swayamsevak Sangh) ভারতের একটি ডানপন্থী, হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এটি ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে এক বিশাল প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিষ্ঠান, যার আদর্শ ও কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক ও আলোচনা চলছে।

প্রতিষ্ঠা ও প্রাথমিক উদ্দেশ্য

আরএসএস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, নাগপুরে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার, যিনি কংগ্রেস দল ও হিন্দু মহাসভা–র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সংগঠনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল:

•ভারতীয় হিন্দু সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা,

•হিন্দুদের "আত্মরক্ষা" ও "শক্তি" অর্জনের পথে পরিচালিত করা,

•হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ।


হিন্দুত্ববাদী দর্শন

আরএসএস "হিন্দুত্ব" (Hindutva) মতবাদে বিশ্বাসী, যার মূল ধারণা দেন **বিনায়ক দামোদর সাভারকর**। হিন্দুত্ববাদের মূল বক্তব্য হলো:

• ভারত হলো শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি হিন্দু সংস্কৃতির জন্মভূমি ও পূণ্যভূমি।

•যারা ভারতকে তাদের পিতৃভূমি ও ধর্মভূমি হিসেবে মানে না (বিশেষ করে মুসলমান ও খ্রিস্টানদের দিকে ইঙ্গিত), তারা হিন্দু জাতির মূল ধারার বাইরে।

এই মতবাদের মাধ্যমে আরএসএস একটি একধর্মীয়, সংস্কৃতিনির্ভর জাতি গঠনের লক্ষ্যে কাজ করে, যেখানে হিন্দু সংস্কৃতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে।


কর্মপদ্ধতি ও সাংগঠনিক কাঠামো

আরএসএস একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে শুরু হলেও, এর রাজনৈতিক শাখা হিসেবে গড়ে ওঠে ভারতীয় জনসংঘ ও পরে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)।

আরএসএস এর বিভিন্ন শাখা ও প্রশিক্ষণ শিবিরের মাধ্যমে:

•যুবকদের "শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণ

•দেশপ্রেম ও হিন্দু ঐতিহ্যের শিক্ষাদান,

•সামাজিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করে।

বিতর্ক ও সমালোচনা

আরএসএস বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে:

•১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর সংগঠনটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল (যদিও হত্যাকারী নাথুরাম গডসে সরাসরি সদস্য ছিলেন না বলে দাবি করা হয়)।

•ধর্মনিরপেক্ষতা, সংখ্যালঘু অধিকার ও বহুত্ববাদী ভারতের ধারণার বিরোধী বলেও অনেকেই মনে করেন।

•বিভিন্ন সময়ে সংগঠনটি মুসলমান ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতা ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

বর্তমান প্রভাব

আজ আরএসএস ভারতের সবচেয়ে বড় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যার হাজার হাজার শাখা ও কোটি সদস্য রয়েছে।এটি শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, শিক্ষা, সমাজসেবা, ইতিহাস চর্চা, ধর্মীয় সংস্কার ও অর্থনৈতিক চিন্তাধারায়ও প্রভাব বিস্তার করছে।বর্তমান ভারতের শাসক দল BJP ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেও আরএসএস থেকে উঠে আসা একজন সদস্য।

উপসংহার

আরএসএস ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে বিতর্কিত নাম।

একদিকে এটি হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ও ঐক্যের এক রূপক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র, সংখ্যালঘু অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।


যার দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, আরএসএস যে ভারতের সমাজ-রাজনীতি ও ভবিষ্যতের গতিপথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে, তা অস্বীকার করা যায় না।


No comments:

সৌন্দর্য ধরে রাখার ইঞ্জেকশন—প্রভাব, অপব্যবহার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন!

 ✅ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ত্বকে বয়সের ছাপ খুঁজে পেয়ে আতঙ্কে ভোগেন। আবার অনেকে নিজের বাহ্যিক অবয়বে সন্তুষ্ট না হয়ে সৌন্দর্য  খুঁজে ব...