Monday, May 5, 2025

জিন্নাহ হাউস

ভারতের বোম্বে শহরের অভিজাত মালাবার হিল এলাকায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক প্রাসাদসদৃশ ভবন জিন্নাহ হাউস, যা পূর্বে সাউথ কোর্ট ম্যানশন নামে পরিচিত ছিল। এটি ১৯৩৬ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ নির্মাণ করেন এবং ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি এখানেই বসবাস করেন।

বিলেত থেকে ফিরে এসে মুসলিম লীগের নেতৃত্ব নেওয়ার পর জিন্নাহ এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। বিখ্যাত ব্রিটিশ স্থপতি ক্লড ব্যাটলি বাড়িটির নকশা তৈরি করেন, যার মধ্যে ইন্দো-সারাসেনিক শৈলীর প্রভাব রয়েছে। বাড়িটি নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল ইতালীয় মার্বেল, ওয়ালনাট কাঠ। বিদেশি কারিগর আনা হয়েছিল এটি নির্মাণের জন্য। জিন্নাহ নিজে বাড়ির নির্মাণ তদারকি করেন এবং প্রতিটি ইট-পাথর নিজে দেখভাল করেন। সেইসময় বাড়িটি নির্মাণে ২ লক্ষ রপি ব্যয় হয়েছিল।

এই ভবনটি একটি অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন, যেখানে ভারতীয় ও ইউরোপীয় নকশার সমন্বয় রয়েছে। ধনুকাকৃতির দরজা, উঁচু খিলান, কাঠের কারুকাজ এবং প্রশস্ত বারান্দা, যা সেই সময়ের আভিজাত্য প্রকাশ করে।

এই বাড়িতেই জিন্নাহ ও মহাত্মা গান্ধীর মধ্যে ১৯৪৪ সালে এবং নেহরুর সাথে ১৯৪৬ সালের ভারত বিভাজন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভারত পাকিস্তান বিভাজনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

১৯৪৭ সালের পরে জিন্নাহ পাকিস্তানে চলে গেলে, এই বাড়ি ব্রিটিশ ডেপুটি হাই কমিশনের দখলে ছিল ১৯৮০-এর দশক পর্যন্ত। তারপর এটি ভারতের সরকারের অধীনে যায় এবং ‘ইভাকুই প্রপার্টি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নেহেরু ভবনটি পাকিস্তানকে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু মন্ত্রী পরিষদ তাঁর সেই প্রস্তাব অনুমোদন করে নাই। ২০০৭ সালে জিন্নাহর একমাত্র কন্যা দিনা ওয়াদিয়া এই সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করে আদালতে মামলা করেন, তবে ভারত সরকার সেটি মেনে নেয়নি।

পাকিস্তান বহুবার এই ভবনকে মুম্বাইয়ে তাদের কনস্যুলেট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছে, কিন্তু ভারত সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

২০২৩ সালে মুম্বাই হেরিটেজ কনজারভেশন কমিটি এটি সংরক্ষণযোগ্য ঐতিহাসিক ভবন হিসেবে চিহ্নিত করে।

বর্তমানে এটি সংস্কারের কাজের জন্য অনুমোদিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে একে কূটনৈতিক ভবন হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তাব রয়েছে।

#history #heritage #Jinnah #India #Pakistan #Mumbai #trend #viralpost2025 #photo #MRKR

Sunday, May 4, 2025

উটের 🐫 যুদ্ধ: ইসলামে নারী স্বাধীনতার মাইলফলক

নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব নিয়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী উগ্রপন্থী কেউ না কেউ ইতিহাসে প্রায় সবসময়ই নিজেদের খেয়াল খুশিমতো নানা কুতর্ক হাজির করেছেন। ঐতিহাসিক একটি ঘটনা থেকে ইসলাম ধর্মে নারীর অবস্থান সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

হযরত আয়েশা (রাঃ) ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম বিশিষ্ট নারী সাহাবি ও রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর স্ত্রী। তিনি শুধু একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বই ছিলেন না, বরং রাজনৈতিক ইতিহাসেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে "জঙ্গ-ই-জমল" বা "উটের যুদ্ধ" (Battle of the Camel) ইসলামের ইতিহাসে একটি আলোচিত আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা।



হযরত উসমান (রাঃ) খলিফা থাকাকালীন তাঁকে হত্যা করা হলে ইসলামী বিশ্বে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়। হযরত আলী (রাঃ) খলিফা নির্বাচিত হলে অনেকে এই হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন, বিশেষত হযরত আয়েশা (রাঃ), তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ)। তারা মনে করতেন, হযরত উসমান (রাঃ)-এর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অপরদিকে হযরত আলী (রাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা মনে করতেন, প্রথমে শাসনব্যবস্থা সুসংহত করতে হবে, তারপর বিচারের ব্যবস্থা হবে। এই মতপার্থক্য থেকেই বসরার কাছে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে (৩৬ হিজরি) সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক “উটের যুদ্ধ”।

হযরত আয়েশা (রাঃ) মক্কা থেকে বসরার দিকে রওনা হন যাতে মুসলিমদের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা যায়। যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) একটি উটে চড়ে উপস্থিত ছিলেন, এবং সেই উটকে ঘিরেই উভয় পক্ষের লড়াই সংঘটিত হয়। উটকে কেন্দ্র করেই সেই যুদ্ধের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু তৈরি হয়েছিল, তাই এটিকে বলা হয় "জঙ্গ-ই-জমল" বা “উটের যুদ্ধ”।

হযরত আলী (রাঃ)-এর বাহিনী এই যুদ্ধে জয়লাভ করে। তবে তিনি হযরত আয়েশাকে (রাঃ) বন্দি করেননি, বরং অত্যন্ত সম্মান ও নিরাপত্তার সঙ্গে তাঁকে মদিনায় ফেরত পাঠান।

যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) বিজয়ী হতে না পারলেও, এটি ছিল কোন মুসলিম নারীর জন্য প্রথম সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বের ঘটনা। হযরত আয়েশা (রাঃ) যুদ্ধ পরিচালনায় সক্রিয় অস্ত্র ধরেননি, কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছেন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অভিপ্রায় থেকে।

Friday, May 2, 2025

টিউলিপ

 টিউলিপ শুধু একটি ফুল নয়—এটির সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এই ফুলটি প্রেম, সৌন্দর্য এবং নান্দনিকতার প্রতীক হলেও এর অতীত রয়েছে চমকপ্রদ উত্থান-পতনে ভরা। প্রাচীন পারস্য থেকে শুরু করে আধুনিক নেদারল্যান্ডস পর্যন্ত, বিশ্বজুড়ে বিস্ময় ও বিস্তার ঘটিয়েছে টিউলিপ।

টিউলিপের জন্মস্থান মধ্য এশিয়া। পাহাড়ি অঞ্চল, বিশেষ করে কাস্পিয়ান সাগরের কাছাকাছি অঞ্চল ছিল এটির প্রাকৃতিক আবাস। পারস্য এবং পরে তুরস্কে এর পরিচিতি বাড়তে থাকে। ফারসি শব্দ “dulband” (পাগড়ি) থেকেই ‘টিউলিপ’ নামটির উৎপত্তি, কারণ ফুলটির আকার আকৃতি অনেকটা পাগড়ির মতো।


১৬শ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যে টিউলিপ ফুল রাজকীয় সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতে থাকে। সুলতানদের বাগিচাজুড়ে টিউলিপের বাহার ছড়িয়ে পড়ে। ১৭১৮ থেকে ১৭৩০ সাল পর্যন্ত সময়কে বলা হয় “টিউলিপ যুগ” (Tulip Era)—এই সময় অটোমান সংস্কৃতিতে শিল্প, কবিতা এবং বাগান নির্মাণে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটে।

টিউলিপ ইউরোপে পৌঁছায় ১৬০০ সালের দিকে, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডসে। ডাচ উদ্ভিদবিদ Carolus Clusius টিউলিপের বৈজ্ঞানিক চাষ শুরু করেন।‌ শুরু হয় ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। নেদারল্যান্ডস টিউলিপ জনপ্রিয় হতে শুরু করলে বিত্তবানরা এটিকে বিলাসবহুল জিনিস হিসেবে কিনতে শুরু করে। একেকটি টিউলিপ বাল্বের দাম এতটাই বেড়ে যায় যে মানুষ বাড়ি, জমি বা গয়নাগাটি বিক্রি করে বাল্ব (চারা) কিনতে থাকে। কিন্তু ১৬৩৭ সালে হঠাৎ করে এই চাহিদা ধসে পড়ে। বাল্বের দাম রাতারাতি পড়ে যায়, ফলে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এই ঘটনা ইতিহাসে "Tulip Mania" নামে পরিচিত, যেটি পৃথিবীর প্রথম বড় অর্থনৈতিক "বুদবুদ" বা বাজার ধসের উদাহরণ।

টিউলিপ ফুলের বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন বার্তা বহন করে (লাল টিউলিপ – গভীর প্রেম ও ভালোবাসা, হলুদ টিউলিপ – আনন্দ ও উজ্জ্বলতা, সাদা টিউলিপ – ক্ষমা ও শান্তি, বেগুনি টিউলিপ – রাজকীয়তা ও মর্যাদা)। বর্তমান বিশ্বে নেদারল্যান্ডসকে বলা হয় “টিউলিপের স্বর্গ”। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিউলিপ উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক। শীতের শেষে মার্চ থেকে মে মাসে টিউলিপ বাল্ব থেকে ফুল হিসেবে বেরিয়ে আসে। প্রতিবছর বসন্তে নেদারল্যান্ডের কিউকেনহফ টিউলিপ উৎসবে লাখো টিউলিপ প্রেমী মানুষ ছুটে যায়।

#history #flowers #flowerlovers #tulips #trend #viralpost2025 #photo #MRKR #farming

Thursday, May 1, 2025

খোসপাঁচড়া (Scabies)

 এবছর অনেকটা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে স্ক্যাবিস (scabies) বা খোসপাঁচড়া। এটি একটি প্যারাসাইটিক বা পরজীবীজনিত অত্যন্ত ছোঁয়াচে চর্মরোগ। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই (Sarcoptes scabiei) নামক পরজীবীর সংক্রমণে স্ক্যাবিস হয়ে থাকে। আবালবৃদ্ধবনিতা যে কেউ স্ক্যাবিস আক্রান্ত হতে পারেন।

কিভাবে ছড়ায় 

স্ক্যাবিস আক্রান্ত কারো সরাসরি সংস্পর্শ, সংক্রমিত ব্যক্তির জামা-কাপড়, বিছানা, তোয়ালেসহ ব্যবহৃত জিনিসপত্রের মাধ্যমে স্ক্যাবিসের পরজীবী ছড়ায়। 

পরিবার, হোস্টেল, মেসে কেউ একজন আক্রান্ত হলে বাকি সদস্যরাও আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকেন। অপরিচ্ছন্ন, ঘিঞ্জি, ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশ, বস্তি এলাকা, হোস্টেল, ডরমিটরি, মেস যেখানে অনেকে একসঙ্গে থাকেন সেখানে স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া খুব দ্রুত এবং সহজে ছড়ায়।


লক্ষণ কি?

পরজীবী মাইট ত্বকের বহিরাবরণ (এপিডার্মিস) ভেদ করে চামড়ার নিচে প্রবেশ করে, ফলে তীব্র চুলকানি ও চামড়ার প্রদাহ সৃষ্টি হয়।

•সারা শরীর বিশেষ করে আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, বুকের নিচে, বগলের নিচে, পেটে, নাভির চারপাশে, পায়ের দুই পাশে চুলকানি বেশি অনুভূত হয়। চুলকানি রাতে বেশি হয়।

•আক্রান্ত স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র র‌্যাশ বা ফুসকুঁড়ি হয়। সঠিক চিকিৎসা না হলে চুলকানির কারণে একসময় জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে যায়।

•রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, অনেক বেশি বয়স, কোনো রোগের কারণে দীর্ঘদিন বিছানায়, এইচআইভি আক্রান্তের মধ্যে নরওয়েজিয়ান স্ক্যাবিস বা ক্রাস্টেড স্ক্যাবিস নামে এক ধরনের স্ক্যাবিস দেখা যায়। এই ধরনের স্ক্যাবিস আক্রান্ত হলে স্কেলিং বা চামড়া উঠতে থাকে, এবং চামড়ার স্তর জমে জমে পুরু হয়ে যায়।

জটিলতা

√সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে স্ক্যাবিসের কারণে কিডনিতে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

√অনুজীব সংক্রমণের ফলে শরীরে ব্যাথা, জ্বর অনূভুত হতে পারে। আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে যায়।

প্রতিরোধ 

√পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত গোসল করতে হবে। 

√স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক ও ব্যবহৃত যে কোন জিনিস ব্যবহার করা যাবে না। স্ক্যাবিস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র আলাদা করে দিতে হবে। 

√ ঘিঞ্জি ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

√পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নিতে হবে। লক্ষণ না থাকলেও পরিবারের বাকি সবার চিকিৎসা নিতে হবে।

চিকিৎসা 

লক্ষণ ও আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থাভেদে স্ক্যাবিসের নানা ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়ে থাকে। সাধারণত গায়ে মাখা ক্রিম, লোশন এবং খাবার ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে। এটির চিকিৎসা খুব সহজ হলেও নিরাময় পেতে চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুসরণ করে সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করার বিকল্প নেই। সঠিক নিয়মে ও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চিকিৎসা না নিলে রোগ পুনরায় ফিরে আসতে পারে।

আক্রান্ত হলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

#health #disease #infection #treatment #doctor #trend #healthylifestyle #healthyliving #MRKR #scabies

Wednesday, April 30, 2025

ফল অফ সায়গন

১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল ইতিহাসে চিরস্মরণীয় একটি দিন—এই দিনে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সায়গন (বর্তমান হো চি মিন সিটি) পতন ঘটে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরিণতিতে সংঘটিত এই ঘটনা শুধু একটি শহরের দখল নয়, বরং ছিল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় ভূ-রাজনৈতিক ব্যর্থতা এবং একটি আদর্শগত দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভিয়েতনাম উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে ফরাসিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে দেশটি উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে বিভক্ত হয়—উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত সাম্যবাদী সরকার এবং দক্ষিণে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত পুঁজিবাদী সরকার। শুরু হয় ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল এই যুদ্ধে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামকে সমর্থন করে এবং লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েন করে। কিন্তু ভিয়েত কংগ (উত্তর ভিয়েতনাম সমর্থক গেরিলা বাহিনী) ও উত্তর ভিয়েতনামের নিয়মিত বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অজস্র বোমা হামলা, রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ও ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় হলেও মার্কিন বাহিনী জনগণের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়।


একপর্যায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাহিনী প্রত্যাহার শুরু করে এবং ১৯৭৩ সালে প্যারিস শান্তি চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু উত্তর ভিয়েতনাম তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে। ১৯৭৫ সালের মার্চে তারা পূর্ণাঙ্গ সামরিক অভিযান শুরু করে এবং একের পর এক শহর দখল করে এগিয়ে আসে।

৩০ এপ্রিল, ১৯৭৫—উত্তর ভিয়েতনামের ট্যাংক সায়গনের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে প্রবেশ করে। পশ্চিমা সমর্থিত দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ডুং ভান মিন আত্মসমর্পণ ঘোষণা করেন। হেলিকপ্টারে মার্কিন কূটনীতিক ও নির্দিষ্ট লোকজনের শেষ মুহূর্তের উৎকণ্ঠাপূর্ণ উদ্ধার অভিযানের দৃশ্য পুরো পৃথিবীকে হতবাক করে দেয়।

সায়গনের পতনের মধ্য দিয়ে ভিয়েতনাম একত্রিত হয় এবং সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রী ভিয়েতনাম গঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বিশাল ব্যর্থতা হিসেবে এই পতন চিহ্নিত হয় এবং তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে মার্কিন প্রভাবের ব্যাপক পরিবর্তন সূচনা করে। অন্যদিকে, এই ঘটনা মার্কসবাদী আন্দোলনের জন্য একটি প্রতীকী বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হয়।

সায়গনের পতন শুধু একটি সামরিক ঘটনা নয়, বরং একটি  অধ্যায়ের অবসান। অস্ত্রের শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, জনগণের ইচ্ছা ও ঐক্য তারচেয়েও শক্তিশালী হতে পারে, সায়গনের পতন সেটি আবারো প্রমাণ করে।

#history #war #civilwar #politics #vietnam #trend #MRKR #viralpost2025 #sketch #photo

Tuesday, April 29, 2025

দলিত: ভারতের অভিশপ্ত জনগোষ্ঠী

ভারতের সামাজিক বৈষম্যের একটি বাস্তব ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা হলো বর্ণ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার চতুর্বর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র) বাইরের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী দীর্ঘকাল ধরে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এদেরই একটি বড় অংশ দলিত নামে পরিচিত-যারা সমাজে ‘অস্পৃশ্য’ ! ভারতের জনসংখ্যার কমবেশি ১৭% #দলিত

ভারতের অতি প্রাচীনকালের সমাজেও দলিতদের অশুচি বা ‘অস্পৃশ্য’ মনে করা হতো। তাদের হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের অধিকার ছিল না, উচ্চবর্ণের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়া-বসা নিষিদ্ধ ছিল, পানি তোলার জন্য আলাদা কুয়া বা জলাশয় ব্যবহার করতে হতো। বর্তমান ভারত সাংবিধানিকভাবে #অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ এবং অনেক দলিত মানুষ উচ্চশিক্ষা, প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হলেও সমাজের গভীরে এটি প্রথিত হয়ে আছে।


শিক্ষা, সরকারি চাকরি ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বে দলিত কোটা রয়েছে ভারতে। লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভায় সংরক্ষিত আসনও রাখা হয়েছে। তবে গ্রামীণ ভারতে এখনো দলিতরা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। জাতপাতের কারণে পিটিয়ে হত্যা বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না তাদের। স্কুলে দলিত শিশুদের আলাদা বসানো বা খাবার পরিবেশন করা হয়। উচ্চশিক্ষা এবং চাকরিতে কোটা থাকা সত্ত্বেও সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে।

ভারতে দলিতদের ইতিহাস একটি দীর্ঘ বঞ্চনা ও যন্ত্রণার ইতিহাস। ভারতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আজও চলমান। জনসংখ্যার বিপুল একটি অংশকে সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্যতা দিতে না পারলে উন্নত দেশ হিসেবে ভারতের উত্তরন স্বপ্নই থেকে যাবে।

#humanity #humanrights #castesystem #racist #India #trend #viralpost2025 #photo #sketch

Monday, April 28, 2025

গ্রীনউইচ মান সময়

মানবজাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারগুলোর একটি- #সময়। একসময় বিশ্বের পৃথক পৃথক দেশ ও শহর নিজের ইচ্ছামতো সময় নির্ধারণ করতো। লন্ডন, প্যারিস, নিউইয়র্ক, বেইজিং বা জাকার্তা— প্রত্যেকের ঘড়ি চলতো আলাদা নিয়মে। সময় ছিল অপেক্ষাকৃত "স্থানীয়" — সূর্যের অবস্থান দেখে সময় নির্ধারণ করা হতো। যখন বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ, পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিকাশ ঘটতে শুরু করলো, তখন বিশ্বের জন্য একটি অভিন্ন সময় নির্ধারণ জরুরি হয়ে পড়ে। এভাবেই জন্ম নেয় গ্রীনউইচ মান সময় (GMT) — সময় গণনার আন্তর্জাতিক মান।

নাবিকদের সঠিক নেভিগেশনে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়ে ১৬৭৫ সালে বিলেতের রাজা দ্বিতীয় চার্লস বর্তমান লন্ডনের গ্রীনউইচে একটি অবজারভেটরি স্থাপন করেন। এখানে সূক্ষ্ম জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়, যার মধ্যে ছিল পৃথিবীর ঘূর্ণনের ভিত্তিতে সময় পরিমাপ।

১৮৮৪ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে International Meridian Conference-এ বিশ্বের ২৫টি দেশ একত্রিত হয়। সম্মেলনে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, গ্রীনউইচ অবজারভেটরির ওপর পৃথিবীর শূন্য দ্রাঘিমাংশ (Prime Meridian) নির্ধারিত হবে। এই রেখা সময় গণনার সূচনা বিন্দু হিসেবে ধরা হবে। সম্মেলনের ফলস্বরূপ, GMT হয়ে উঠল আন্তর্জাতিক সময়ের মানদণ্ড। 

গ্রীনউইচ মান সময় সূর্যের গতিপথের উপর ভিত্তি করে ঠিক করে — যখন সূর্য গ্রীনউইচের ওপর মধ্য গগনে থাকে, তখন সময় ধরা হয় দুপুর ১২টা। এরপর পূর্ব-পশ্চিমে দ্রাঘিমাংশ অনুযায়ী প্রতি ১৫° ভিন্ন ভিন্ন সময় অঞ্চল নির্ধারিত হয়।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর ঘূর্ণনও যে সামান্য অনিয়মিত, তা নিশ্চিত হয়ে যায়। তাই GMT একসময় পরিবর্তিত হয়ে "Coordinated Universal Time" (UTC)-তে রূপ নেয়। যদিও GMT এখনো জনপ্রিয় টার্ম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তবে মূল মানদণ্ড এখন UTC।


Greenwich, London, UK -the point from where time begins its count!

সৌন্দর্য ধরে রাখার ইঞ্জেকশন—প্রভাব, অপব্যবহার ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন!

 ✅ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ত্বকে বয়সের ছাপ খুঁজে পেয়ে আতঙ্কে ভোগেন। আবার অনেকে নিজের বাহ্যিক অবয়বে সন্তুষ্ট না হয়ে সৌন্দর্য  খুঁজে ব...