স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ার পাশাপাশি এবছর দাদ এর বিস্তৃত সংক্রমণ ঘটেছে দেশে। এটি ত্বকের পরিচিত ও সাধারণ রোগ হলেও আশঙ্কার বিষয় হলো ঔষধ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে দাদ। ত্বকের এই ছোঁয়াচে রোগটি ছত্রাক বা ফাঙ্গাস সংক্রমণের কারণে ঘটে। ট্রাইকোফাইটন, মাইক্রোস্পোরাম ও এপিডার্মোফাইটন ধরনের ফাঙ্গাস জাতীয় জীবাণু দাদ সৃষ্টি করে। ইংরেজিতে এটিকে রিংওয়ার্ম (Ringworm) বলা হয়ে থাকে।
মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের যে কোনো জায়গায় শিশু নারী-পুরুষ নির্বিশেষে দাদ আক্রান্ত হতে পারেন। তবে শিশু, বয়স্ক, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি হয়ে থাকে।
☑️কিভাবে ছড়ায়
দাদ একটি ছোঁয়াচে ছত্রাকজনিত ত্বকের রোগ।
•আক্রান্ত ব্যক্তি কিংবা তার ব্যবহার্য জিনিসের সংস্পর্শ থেকে (চিরুনি, তোয়ালে ও বিছানার চাদর ইত্যাদি)
•দাদ আক্রান্ত গৃহপালিত প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে (কুকুর, বিড়াল, গরু, ছাগল ও ঘোড়া)
•দাদ রোগের জীবাণু আছে এমন পরিবেশ, বিশেষ করে স্যাঁতস্যাঁতে স্থান থেকে
☑️লক্ষণ কি
•ফুসকুড়ি বা র্যাশ দাদের প্রধান লক্ষণ এই র্যাশ দেখতে সাধারণত আংটির মতো গোল হয়ে থাকে। রঙ হয় লালচে। তবে রোগীর ত্বকের বর্ণভেদে এটি রূপালি দেখাতে পারে। আবার আশেপাশের ত্বকের চেয়ে গাঢ় বর্ণও ধারণ করতে পারে। দাদ রোগে ত্বকের বর্ণ পরিবর্তনের পাশাপাশি র্যাশের উপরিভাগে ছোটো ছোটো আঁশ থাকতে পারে।
•চুলকানি
• আক্রান্ত স্থান ত্বক খসখসে বা শুকনো এবং ফুলে যেতে পারে
•ত্বকের অংশে চুল অথবা লোম থাকলে সেগুলো পড়ে যেতে পারে।
শরীরের যে কোন স্থানে যেমন কুঁচকি, মাথার ত্বক, হাত, পা, পায়ের পাতা, এমনকি হাত-পায়ের নখেও সংক্রমণ হতে পারে। আক্রান্ত স্থানের ওপর নির্ভর করে দাদের লক্ষন ভিন্ন হতে পারে। এমনকি চিকিৎসা পরিভাষায় রোগের নামও আলাদা হয়ে থাকে।
কুঁচকিতে দাদ হলে সাধারণত ঊরুর ভেতরের দিকের ভাঁজে লাল লাল র্যাশ হিসেবে দেখা যায়। র্যাশে আঁইশ থাকে এবং চুলকানি হয়।
পা ও আঙ্গুলের ফাঁক আক্রান্ত হলে ত্বক উঠে যেতে থাকে। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে চুলকানি হয়। বিশেষ করে পায়ের সবচেয়ে ছোটো আঙুল দুটির মাঝখানের অংশে চুলকানি হয়ে থাকে। পায়ে দাদ হলে পায়ের পাতা ও গোড়ালিও আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি গুরুতর ক্ষেত্রে পায়ের ত্বকে ফোস্কা পড়তে পারে। নখ দাদ আক্রান্ত হলে আকৃতি ও রঙের পরিবর্তন হয়।
মাথার ত্বকে দাদ হলে সাধারণত আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে গিয়ে টাক সৃষ্টি হয়। টাক পড়া অংশে লালচে, গোলাকার ও ছোটো ছোটো আঁশযুক্ত র্যাশ তৈরি হয়। এতে চুলকানি থাকতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে টাক পড়া অংশের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে এবং মাথার ত্বকে দাদ রোগের একাধিক র্যাশ তৈরি হতে পারে।
গাল, চিবুক ও গলার ওপরের অংশেও দাদ হতে পারে। এই ধরনের দাদ লাল লাল র্যাশ হিসেবে দেখা যায়, যাতে আঁশ থাকে এবং চুলকানি হয়। দাঁড়িতে দাদ হলে অনেক সময় র্যাশের ওপরে চলটা পড়ে। আবার ভেতরে পুঁজও জমতে পারে। একই সাথে আক্রান্ত অংশের চুল পড়ে যেতে পারে।
☑️প্রতিরোধের উপায়
•আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ ও ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে দূরে থাকুন।
•গৃহপালিত পশুপাখির সংস্পর্শে আসার পর সাবান বা অন্য কোন জীবাণু নাশক দিয়ে হাত পা পরিস্কার করে ফেলুন।
•নিয়মিত গোসল ও পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকুন।
•ঘাম ছত্রাকের খাবার, ঘর্মাক্ত হলে মুছে বা ধুয়ে ফেলুন।
• স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ ছত্রাক জন্মাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আলো বাতাস আছে এমন পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
• আঁটোসাঁটো পোশাক ও জুতো পরিধান করা থেকে বিরত থাকুন। পারলে প্রাকৃতিক তন্তুর (সুতি, সিল্ক) পোশাক পরিধান করুন।
• অন্তর্বাস (গেঞ্জি, জাঙ্গিয়া, বক্ষবন্ধনী, মোজা) একবার ব্যবহার করার পর না ধুয়ে পুনরায় গায়ে ওঠাবেন না।
☑️চিকিৎসা কি
আক্রান্ত স্থান, বয়স, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ইত্যাদি বিচার করে দাদ চিকিৎসা করা হয়। ফাঙ্গাস বা ছত্রাক বিরোধী নানা রকম ঔষধ মুখে খাওয়া, ক্রিম, লোশন, শ্যাম্পু এমনকি ইঞ্জেকশন হিসেবে দাদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
☑️জটিলতা
সঠিক সময় যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ না করলে দাদ আক্রান্ত স্থান ও তীব্রতা বেড়ে যায়। দাদে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটলে সেরে যাওয়ার পরেও আক্রান্ত স্থানে দাগ ও ক্ষত থেকে যায়।
কাজেই দাদ আক্রান্ত হলে যতো দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
#health #skincare #skindisease #infection #MRKR #doctor #treatment #healthylifestyle #trend #photo #viralpost #viralpost2025シ